প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের ঠিক পরেই বর্ষাকালের দ্বিতীয় মাসে রাজগৃহে অনুষ্ঠিত বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসের প্রথম পরিষদ।

প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতির স্থান সপ্তপর্ণী গুহা

প্রেক্ষাপট

বিনয়পিটকের চূলবগ্গ অংশে প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা রয়েছে। কুশীনগরে গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর সময় তার শিষ্য মহাকশ্যপ তার নিকট উপস্থিত ছিলেন না। কুশীনগর যাত্রাকালে একজন সন্ন্যাসী তাকে গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের সংবাদ জানালেন। সুভদ্র নামক এক ভিক্ষু এই সংবাদে হতাশ ও ক্রন্দনরত ভিক্ষুদেরকে দুঃখপ্রকাশের পরিবর্তে আনন্দ প্রকাশ করতে বলেন। তিনি গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত ধর্মাচারণ না মেনে নিজের খুশি মত জীবনযাপনের কথা বলেন। সুভদ্রের এই মন্তব‍্যে গৌতম বুদ্ধের প্রধান শিষ‍্য মহাকশ্যপ স্থবির গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা ও ধম্মের পবিত্রতা রক্ষার ব্যাপারে আশঙ্কিত হয়ে পড়েন। গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পর তার শিক্ষা যাতে অবলুপ্ত না হয়ে যায়, সেই উদ্দেশ্যে তিনি এক সঙ্গীতি আহ্বান করেন [1]:৩১ যা ইতিহাসে প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি হিসেবে পরিচিত। উল্লেখ‍্য এই সংগীতি বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের তিন মাস পরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

স্থান

প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি ন্যাগ্রোধ গুহায় হয়েছিল বলে পরবর্তীকালে তিব্বতী গ্রন্থগুলিতে এবং গৃধ্রকূট পাহাড়ের ইন্দ্রসালা গুহায় হয়েছিল বলে অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিতে উল্লেখ থাকলেও এক্ষেত্রে চূলবগ্গ অংশে উল্লিখিত রাজগৃহের নিকটবর্তী সপ্তপর্ণী গুহাকে প্রমাণ্য স্থান বলে মনে করা হয়। লোকোত্তরবাদ ঐতিহ্যানুসারে, বৈভর পাহাড়ের উত্তর দিকে এই বৌদ্ধ সঙ্গীতি হয়েছিল। সপ্তপর্ণী গুহা এই পাহাড়েই অবস্থিত বলে তিপিটকে উল্লেখিত রয়েছে। প্রশস্ত স্থান থাকায় ও খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহের সুব্যবস্থা থাকায় এই স্থানকে নির্বাচিত করা হয়। সম্রাট অজাতশত্রু খাদ্য ও বাসস্থানের সুব্যবস্থা করেছিলেন বলে মহাবংশ, সমন্তপসাদিকা ও তিব্বতী গ্রন্থগুলিতে উল্লেখ থাকলেও চূলবগ্গ অংশে অজাতশত্রুর কোন উল্লেখ নেই।[1]:৩২

আনন্দের বিচার

চূলবগ্গদীপবংশ অনুযায়ী গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ভিক্ষুদের মতের ভিত্তিতে সঙ্গীতিতে অংশগ্রহণের জন্য মহাকশ্যপ চারশো নিরানব্বইজন ভিক্ষুকে নির্বাচিত করেন। কিন্তু সঙ্গীতিতে গৌতম বুদ্ধের অন্যতম শিষ্য আনন্দের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিবাদ উপস্থিত হয়। একজন অর্হত না হওয়ায় আনন্দের অংশগ্রহণের ব্যাপারে মহাকশ্যপের আপত্তি ছিল। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয় বলে বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। সংঘে নারীদের প্রবেশের ব্যাপারে আনন্দের সক্রিয়তা, গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুশয্যায় তাকে জলপান না করানো, গৌতম বুদ্ধের মৃতদেহে প্রথমে নারীদের স্পর্শ করানো ইত্যাদি অভিযোগের যথাযথ উত্তর দেওয়ায় সন্তুষ্ট ভিক্ষুগণ আনন্দকে সংগীতিতে যোগদানে অনুমতি প্রদান করেন। সুত্তপিটকের পাঁচটি নিকায়ের বিভিন্ন বিষয়কে প্রশ্নের আকারে উপস্থিত করা হয়, যার যথাযথ উত্তর আনন্দ দিতে সক্ষম হন, ফলে সুত্তপিটকের অবয়ব তৈরী করা সম্ভব হয়।।[1]:৩৩,৩৪,৩৫

উপলির ভূমিকা

সংঘের অনুমতিতে মহাকশ্যপ বিনয়ের বিভিন্ন পারাজিকা সম্বন্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। ভিক্ষুদের জীবনযাপন সম্বন্ধে এই নীতিমালার ব্যাপারে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ভিক্ষু উপলি দিতে সক্ষম হন। সেই অনুযায়ী, সংগীতিতে বিনয়পিটক সম্বন্ধে ঐকমত্য্য প্রতিষ্ঠিত হয়।[1]:৩৩

ছন্নের শাস্তি

এই সংগীতিতে সিদ্ধার্থ গৌতমের সারথী ও পরবর্তীকালে তার শিষ্য ভিক্ষু ছন্নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ছন্ন একজন দাম্ভিক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন এবং তিনি সংঘের কোন ভিক্ষুর প্রতিই শদ্ধা প্রদর্শন করতেন না। সংগীতির সমস্ত অংশগ্রহণকারী তাকে ব্রহ্মদণ্ড প্রদান করে সামাজিক ভাবে ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেন। এই সংবাদে ছন্ন অনুতপ্ত হন ও অর্হত প্রাপ্ত হন।[1]:৩৫

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.