নিম্ন ভূ-কক্ষপথ বা লিও একধরনের পৃথিবীকেন্দ্রিক কক্ষপথ যার কক্ষীয় পর্যায়কাল ১২৮ মিনিট বা কম (অর্থাৎ এক দিনে কমপক্ষে ১১.২৫টি পরিক্রমা) এবং কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ০.২৫-এর কম।[1] মহাকাশের বেশিরভাগ কৃত্রিম বস্তু নিম্ন ভূ-কক্ষপথে অবস্থিত এবং তাদের উচ্চতা পৃথিবীর ব্যাসার্ধের এক-তৃতীয়াংশের বেশি নয়।[2]

"লিও অঞ্চল" শব্দটি ২০০০ কিলোমিটারের (পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ) নিচের মহাকাশের অঞ্চলকেও বোঝায়।[3] এই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে গেছে এমন কক্ষপথে অবস্থিত বস্তুগুলির উপর কঠোর নজরদারি রাখা হয়, যদিও তাদের অপভূ অঞ্চলটির বাইরে বা বস্তুটি উপকক্ষীয়, যেহেতু এগুলি নিম্ন ভূ-কক্ষপথে অবস্থিত কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটাতে পারে।

আজ পর্যন্ত সমস্ত মহাকাশ স্টেশন নিম্ন ভূ-কক্ষপথের মধ্যে অবস্থিত। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত অ্যাপোলো কর্মসূচির চন্দ্রাভিযান মানুষদের নিম্ন ভূ-কক্ষপথের বাইরে পাঠিয়েছিল। অ্যাপোলো কর্মসূচির পর কোনো মানব মহাকাশ যাত্রা নিম্ন ভূ-কক্ষপথের বাইরে যায়নি।

বৈশিষ্ট্য

উচ্চতা

বিভিন্ন রকমের উৎস[4][5][6] নিম্ন ভূ-কক্ষপথকে উচ্চতার দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। উপবৃত্তাকার কক্ষপথে কোনো বস্তুর উচ্চতা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়। আবার, বৃত্তাকার কক্ষপথের ক্ষেত্রে পৃথিবীর স্ফীত আকার ও স্থানীয় ভূসংস্থানের জন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৩০ কিমির মতো পরিবর্তিত হতে পারে। উচ্চতাভিত্তিক সংজ্ঞা সহজাতভাবে দ্ব্যর্থতামূলক হলেও এর বেশিরভাগই ১২৮ মিনিটের কক্ষীয় পর্যায়কালের মধ্যে পড়ে কারণ, কেপলারের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী এটি ৮৪১৩ কিমির অর্ধ-পরাক্ষের সঙ্গে জড়িত। বৃত্তাকার কক্ষপথের ক্ষেত্রে এটি পৃথিবীর গড় সমুদ্রস্তর থেকে ২০৪২ কিমি উচ্চতার সঙ্গে জড়িত, যা নিম্ন ভূ-কক্ষপথের কিছু সংজ্ঞায় উচ্চ উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গত।

Thumb

ব্যবহার

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের প্রায় অর্ধেক কক্ষপথের দৃশ্য।

নিম্ন ভূ-কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ বসানোর জন্য সবচেয়ে কম পরিমাণের শক্তির প্রয়োজন। এটি অনেক বড় ব্যান্ডউইথ এবং কম যোগাযোগ লেটেন্সি প্রদান করে। নিম্ন ভূ-কক্ষপথে অবস্থিত কৃত্রিম উপগ্রহগুলি মহাকাশচারী ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও অভিগম্য।

বাস্তব উদাহরণ

  • আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, পৃথিবীর চারিদিকে আবর্তনশীল সবচেয়ে বড় কৃত্রিম উপগ্রহ, নিম্ন ভূ-কক্ষপথে অবস্থিত। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০–৪২০ কিমি উপরে অবস্থিত।[7] কক্ষপথের ক্ষয়ের জন্য এর গতিবেগ নিয়মিত বাড়ানো হয়।
  • চীনের থিয়েনকুং মহাকাশ স্টেশন প্রায় ৩৪০–৪৫০ কিমি কক্ষপথে আবর্তন করে।
  • মার্কিন ইরিডিয়াম টেলিযোগাযোগ উপগ্রহগুলি প্রায় ৭৮০ কিমি কক্ষপথে আবর্তন করে।
  • মার্কিন হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র প্রায় ৫৪০ কিমি কক্ষপথে আবর্তন করে।

কল্পবিজ্ঞান

  • ২০০১: অ্য স্পেস ওডিসি কল্পবৈজ্ঞানিক চলচ্চিত্রে পৃথিবীর ট্রানজিট স্টেশন (স্পেস স্টেশন ৫) পৃথিবী থেকে ৩০০ কিমি উপরে পৃথিবীর চারিদিকে আবর্তন করত।[8]

মহাকাশ আবর্জনা

মহাকাশে ব্যাপক হারে বস্তুর উৎক্ষেপণের জন্য নিম্ন ভূ-কক্ষপথের পরিবেশটি মহাকাশ আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।[9] বিগত বছরে এটি এক ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সৃষ্টি করছে, কারণ কক্ষীয় বেগে সংঘর্ষ ভয়ানক, এমনকি মারাত্মক হতে পারে। সংঘর্ষের ফলে আরও মহাকাশ আবর্জনা তৈরি হতে পারে, যা কেসলার সিনড্রোম নামক এক ডমিনো ইফেক্টের সৃষ্টি করে। নাসার "অরবিটাল ডেব্রি প্রোগ্রাম" নিম্ন ভূ-কক্ষপথে ১০ সেমির বড় এমন ২৫,০০০-এর বেশি বস্তুর উপর নজরদারি করে। সেখানে ১–১০ সেমি ব্যাসের বস্তুর সংখ্যা প্রায় ৫,০০,০০০। ১ মিমির বড় এমন কণার সংখ্যা ১০ কোটি ছাপিয়ে গেছে।[10] এই কণাগুলি ১৭,৫০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা (৭.৮ km/s; ২৮,২০০ কিমি/ঘ) পর্যন্ত বেগে গতিশীল, সুতরাং এমনকি এক ছোট কণাও কোনো মহাকাশযানের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।[11]

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.