পুঁতি
এক ধরনের ছোট ও আকর্ষণীয় বস্তু উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পুঁতি হলো একধরনের ছোট ও আকর্ষণীয় বস্তু, যেটি বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে তৈরি হতে পারে, যেমনঃ কাঁচ, হাড়, পাথর, প্লাস্টিক ইত্যাদি। সাধারণত সেলাই করার জন্য বা বাধার জন্য এগুলোর কেন্দ্রে ছোট ছিন্দ্র থাকে যেখান দিয়ে সুতা ঢুকানো হয়। পুঁতির আকার ব্যাস অনুযায়ী ১ মিলিমিটার (০.০৩৯ ইঞ্চি) থেকে ১ সেন্টিমিটার (০.৩৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে। নাসরিস সমুদ্রের শামুকের দেহ থেকে তৈরি একজোড়া পুঁতিকে সবচেয়ে প্রাচীণ গহনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যেগুলো প্রায় ১০০,০০০বছর পুরোনো। [১][২] পুঁতিরকাজ হলো পুঁতি দিয়ে বানানো একধরনের শিল্প। পুঁতিকে বিভিন্ন নমনীয় সুতা ব্যবহার করে কাপড়ে লাগানো যায়।

বিভিন্ন প্রকার পুঁতি

পুঁতিকে কি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে, কি প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করা হয়েছে, কোন জায়গায় পাওয়া গিয়েছে বা উৎপন্ন হয়েছে, পুঁতির গায়ে কেমন নকশা রয়েছে, পুঁতির আকার কেমন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে পুঁতিকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। আবার কিছু পুঁতিকে আলাদা আলাদা ভাবে বিভিন্ন শ্রেণিতে রাখা যায়, যেমনঃ মিল্লেফিয়োরি এবং ক্লোইসোন পুঁতি।
উপাদান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
পুঁতিকে বিভিন্ন জিনিস থেকে তৈরি করা যায়। প্রথম দিককার পুঁতিগুলো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হতো, যেগুলোতে ছিদ্র করা ও আকার দেওয়া সহজ ছিলো। মানুষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে নানা ধরনের উপাদান পুঁতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় যেগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম উপাদান।
আধুনিক বাজারে, বহুল প্রচলিত পুঁতিগুলো কাঠ, প্লাস্টিক, কাচ, লোহা এবং পাথরের তৈরি।
প্রাকৃতিক উপাদান
পুঁতিকে এখনো নানা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি করা হয়, জীব ও জড় উভয় থেকেই। তবে এইসকল উপাদানের মাঝে কিছু উপাদানকে নিয়মিত আকার দেয়া ও ছিদ্র করার পাশাপাশি বাড়তি প্রক্রিয়ায় যেতে হয় যেমন; রঙ করা।
প্রাকৃতিক জীব উপাদানের মাঝে রয়েছে হাড়, সিং, আইভোরি, বীজ, প্রাণী দেহের খোল এবং কাঠ। মানব ইতিহাসে প্রাকৃতিক উপাদানের মাঝে মুক্তাই ছিলো সবচেয়ে দামী পুঁতি তাদের দুর্লোভ্যতার কারণে; তবে আধুনিক মুক্তা চাষের কারণে মুক্তা এখন অতি সাধারণ হয়ে গিয়েছে।
প্রাকৃতিক জড় উপাদানের মাঝে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাথর।
কৃত্রিম উপাদান


পুঁতি বানানোর জন্য সবচেয়ে পুরোনো কৃত্রিম উপাদান হলো সিরামিক এবং কাঁচ। পুঁতি ব্রোঞ্জের মতো নানা পুরোনো ধাতু থেকেও তৈরি হতো কিন্তু এগুলো নানা ক্ষেত্রে দুর্বল ছিল।
বর্তমানে পুঁতি বানানোর জন্য বিভিন্ন প্রকারের কাঁচ ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর বেশিরভাগের নিজস্ব নাম রয়েছে। স্বচ্ছ লেডের পুঁতিগুলোতে কাচেঁর মাঝে অধিক মাত্রায় লেড অক্সাইড থাকে, যা প্রতিফলনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যান্য কাচেরও নানা সূত্র ও নকচা রয়েছে পুঁতিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য।
বাজারজাতকরণ
আধুনিক বাজারে থাকা পুঁতিগুলো সাধারণত উপাদান ও নকশার ভিত্তিতে খোদাই করে আকার দেয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে যেমনটা করা হয় ক্লোইসোন পুঁতি তৈরিতে।
কাঁচের কাজ


বেশিরভাগ কাঁচের পুঁতি চ্যাপ্টা কাঁচের নির্মিত। এগুলোকে ব্যাপক আকারে তৈরির জন্য নির্দিষ্ট রঙের কাঁচকে গলিয়ে একটি ব্যাচ তৈরি করা হয় এবং নির্দিষ্ট আকার পাওয়ার জন্য সেটিকে একটি ছাচে ফেলা হয়। প্লাস্টিকের পুঁতিও অনেকটা এভাবেই তৈরি করা হয়।
বিশেষ কাঁচ পদ্ধতি এবং ধরন


বিভিন্ন ধরনের বিশেষ কাঁচের পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া রয়েছে যেগুলো পুঁতির শরীরে আকর্ষনীয় রূপ দেয়।
উৎপন্নের সময় বা জায়গা

আফ্রিকা বাণিজ্য পুঁতি বা দাস পুঁতি পুরাতন পুঁতিগুলো হয়তো ইউরোপে প্রক্রিয়াজাত করা যেগুলো কলোনিয়াল সময়ে বাণিজ্যে ব্যবহার করা হতো, যেমন সেবরন পুঁতি; বা সেগুলো হয়তো পশ্চিম আফ্রিকা আফ্রিকানদের জন্য তৈরি করেছিল, যেমন মোরিটানিয়ান কিফা পুঁতি, ঘানার এবং নাইজেরিয় গুঁড়া কাঁচ পুঁতি, বা আফ্রিকানদের তৈরি ব্রাস পুঁতি।
চেক পুঁতিগুলো চেক রিপাবলিকে তৈরি করা হয়, বিশেষত জাবলোনেক মাদ নিসোউ নামক স্থানে। এই স্থানে কাঁচ পুঁতি তৈরি করা হয় ১৪শ শতাব্দী থেকে, যদিও নানা নিয়মে এটির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ঐতিহ্যের জন্য এটির মানের সুখ্যাতী রয়েছে।
ভিন্টেজ পুঁতি, হলো সংগ্রহশালা বা পুরোনো জিনিসপত্রের দোকানে থাকা ২৫ বা তার অধিক পুরোনো পুঁতি। ভিন্টেজ পুঁতিগুলোকে লোহা, কাঁচ, প্লাস্টিক উপাদানে পাওয়া যায়।
আকার
গোল
এটি হলো পুঁতির সবচেয়ে সাধারণ আকার যেটিকে সুতায় বেধে নামা ধরনের গহনা তৈরি করা হয়। একাধিক গোলাকার পুঁতি একসাথে দেখতে চমৎকার লাগে। গোলাকাট পুঁতি কাচ, পাথর, লোহা, কাঠ এবং সিরামিকের তৈরি হয়।
বর্গাকার
বর্গাকার পুঁতিগুলো নেকলেসের দারুন নকশা হিসেবে কাজ করে, শুধুমাত্র বর্গাকার পুঁতি দিয়েই একটি নেকলেস তৈরি করে ফেলা যায়। বর্গাকার পুঁতির নেকলেসগুলো সাধারণত সমুদ্রে পড়া হয় এবং রোজারি বা প্রার্থনার নেকলেস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ডিম্বাকার
নলাকার
পটেটো হেয়ার পাইপ পুঁতি প্রকৃতভাবে এল্কের বুকের হাড় নলাকার হেয়ার পাইপ পুঁতি তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এই ধরনের পুঁতিগুলল বাইসোন ও ষাঁড়ের হাঁড় থেকে তৈরি করা হয় যেগুলো ইন্ডিয়ানদের কাছে গহণা হিসেবে জনপ্রিয়। এই ধরনের পুঁতির কালোগুলো প্রাণীর শিং থেকে তৈরি করা হয়।
বীজ পুঁতি যেকোন ধরনের ছোট পুঁতিকেই বীজ পুঁতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এগুলো সাধারণত একাধিক নলাকার পুঁতি যেগুলোর আকার কয়েক সেন্টিমিটার থেকে কয়েক মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
নানা জাতিগত পুঁতি
তিবেতান দ্বিজি পুঁতি এবং রুদ্রক্ষ পুঁতিগুলো যথাক্রমে বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের মালা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।মগাতমা হলো জাপানের ঐতিহ্যগত পুঁতি, এবং চীনে পুঁতি বানানোর জন্য অনেক সময় সিঁদুর ব্যবহার করা হতো। ওয়াম্পাম হলো একধরনের নলাকার সাদা বা বেগুনি রঙের পুঁতি যা আদি আমেরিকান জাতিরা উত্তর আটলান্টিক খালের শামুক থেকে তৈরি করে। মেক্সিকোর কেওয়া পুয়েব্লো জনগণ পাথর বা খোলস থেকে হেইশে নামক পুঁতি তৈরি করে।
পুঁতির নানা অর্থ
বিশ্বের নানা প্রান্তে পুঁতিকে নানা কাজে ব্যবহার করা হয়, উদাহরণ হিসেবেঃ
- এবাদত বা উপাসনার জন্য - যথাঃ রোমান ক্যাথলিকদের রোজারি পুঁতি, মুসলমানদের মিসবাহ, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিন্তো ও কিছু শিখদের জন্য জপমালা/ নেন্জু পুঁতি।
- চিন্তা দূর করার যন্ত্র হিসেবে, যথাঃ চিন্তা বা ওরি পুঁতি
- মুদ্রা বা অর্থ হিসেবে যথাঃ ঘানার আগ্রে পুঁতি
- খেলাধুলার জন্য যথাঃ মনকলার জন্য ওয়ারি পুঁতি
- ক্রিটের জন্য গ্রীক কম্বোলই পুঁতি
ইতিহাস
মানব সভ্যতার শুরুর দিকে পুঁতিকেই বাণিজ্যের কাজে ব্যবহার করা হতো। মনে করা হয় পুঁতি বাণিজ্যের কারণেই মানুষ ভাষার উদ্ভাবন করে।[৩] আমাদের ইতিহাসে পুঁতিই সবচেয়ে ব্যবহৃত হয়েছে ও বাণিজ্যের কাজে লেগেছে। সবচেয়ে পুরোনো পুঁতি পাওয়া যায় ব্লমভোস গুহায়, যেগুলো ৭২,০০০বছরের পুরোনো।[৪] আবার লেবাননের কেসর আকিলে পাওয়া পুঁতিগুলো ৪০,০০০বছরের পুরোনো।
নকশা
কাচঁ ও স্বচ্ছ পুঁতিকে আকার দেয়ার পর এগুলোর সৌন্দর্য আরও বাড়ানো যায় এগুলোর উপর রঙের আলাদা প্রলেপ দিয়ে। "অরোরা বোরিয়ালিস" হলো একধরনের প্রলেপ যেটি আলোকে রঙধনুতে পরিণত করে। অন্যান্য প্রলেপ হলো ভিট্রেইল, মুনলাইট, ডোরাডো, সাতিন এবং হেলিওট্রোপ।
ফক্স পুঁতি হলো এমন পুঁতি যেগুলো দেখতে দামি উপাদানের তৈরি বলে মনে হয়, বিশেষ করে মুক্তা ও পাথর। তাছাড়া, দামী ধাতুরও অনুরূপে এগুলো বানানো হয়।
সারা বিশ্বে আইভোরি বাণিজ্য নিষিদ্ধ হওয়ায় দক্ষিণ আমেরিকাতে তোহা নাট নামক পুঁতিগুলো আইভোরির পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়।
আরও দেখুন

উইকিমিডিয়া কমন্সে পুঁতি সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.