পার্বতীপুর উপজেলা
দিনাজপুর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দিনাজপুর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পার্বতীপুর উপজেলা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের অন্তর্গত দিনাজপুর জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
পার্বতীপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে পার্বতীপুর উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৩৯′১১.৮৮″ উত্তর ৮৮°৫৪′৫৫.৮০″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | দিনাজপুর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৩৯৫ বর্গকিমি (১৫৩ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ৩,৬৫,১০৩ |
• জনঘনত্ব | ৯২০/বর্গকিমি (২,৪০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৩.৯% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫২৫০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ২৭ ৭৭ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
ইতিহাসে জানা গেছে যে, পার্বতীপুরের খোলাহাটির নিকটে কিচন বা কিচক [2] নামে এক রাজার গড় বা বিলাসকেন্দ্র ছিল। রাজার অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে ছিল যার নাম পায়রাবতী । পায়রাবতী বাল্যবিধবা ছিল । গড়ের অনতিদুরে দুর্বৃত্ত কর্তৃক অপহুত হবার পর তার শ্লীলতাহানী হয় । অতপর পায়রাবতী দীঘির জলে আত্নহত্যা করে । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে এ স্থানের নাম পায়রাবতীপুর হয় । যা পরবর্তীতে পার্ব্বতীপুর হিসেবে ও বর্তমানে পরিবর্তিত হয়ে পার্বতীপুর হয় ।। [3]
পার্বতীপুর পূর্বে রংপুর জেলার হাবড়া থানার অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীতে ১৮০০ সালে হাবড়া থানা বিলুপ্ত করে পার্বতীপুর থানা সৃষ্টি করে রংপুর থেকে দিনাজপুর জেলায় স্থানান্তর করা হয় এবং পার্বতীপুর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ভারত থেকে অনেক অবাঙ্গালী মানুষ পার্বতীপুরে এসে বসতি গড়ে তোলে। পাকিস্তান আমলে এই জনগোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্র নানা ভাবে এই শহরে ধ্বংস যজ্ঞ চালায় এবং শহরে অবস্থিত সকল ঘর-বাড়ী, দোকান পাঠ, ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের কিছুদিন পরেই পার্বতীপুর পৌরসভার জন্ম হয়। প্রথমের দিকে ছিলো ৩য় শ্রেনীর পৌরসভা হিসাবে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ ইং সালে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে পৌরসভাকে ২য় শ্রেনীতে উন্নিত করা হয়।[4]
এ উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে রয়েছে নানা ঐতিহ্য; যেমন হরিরামপুর ঢিবি, হীরাজিরার ভিটা, পলাশবাড়ী ইউনিয়নের খোলাহাটির কিচন রাজার গড় ও মনমথপুর ইউনিয়নের দেওলের গড় বা পঞ্চরত্ন এছাড়াও হাবড়া ঐতাহাসিক প্রসিদ্ধ স্থান। এই উপজেলার তীর্থস্থান হিসেবে প্রতি বছর খোলাহাটির করতোয়া নদীর তীরে পালিত হয় চৈত্র্ সংক্রামিত্মতে বারনী পুঁজা। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে রেলপথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হলো এই পার্বতীপুর। এখানে স্থাপিত হয়েছে চর্তুমুখী রেলপথ। এজন্য এটি অন্যতম বৃহত্তর রেলওয়ে জংশন ও কারখানার গৌরব এবং খনিজ সম্পদে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় উপজেলা।[5]
পার্বতীপুর উপজেলার আয়তন ৩৯৫.১০ বর্গ কিলোমিটার। ২৫°১০´ থেকে ২৫°৪৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৯´ থেকে ৮৯°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পার্বতীপুর উপজেলার অবস্থান। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৩২ কিলোমিটার এবং রংপুর থেকে ৩৯ কিলোমিটার । এ উপজেলার উত্তরে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলা, দক্ষিণে ফুলবাড়ী উপজেলা ও নবাবগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে চিরিরবন্দর উপজেলা।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বতীপুর উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৩,৬৫,১০৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৮৩,৭৭২ জন এবং মহিলা ১,৮১,৩৩১ জন। মোট পরিবার ৮৮,৭২৫টি।[6]
পার্বতীপুর থানা গঠিত হয় ১৮০০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। এ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বতীপুর উপজেলার শিক্ষার হার ৫৩.৯% (পুরুষ ৫৬.৫%, মহিলা ৫১.২%)। এ উপজেলায় ১১টি কলেজ, ৬০টি উচ্চবিদ্যালয়, ৮১টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৫টি মাদ্রাসা, ১টি ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ২৪টি স্যাটেলাইট বিদ্যালয়, ১১টি কমিউনিটি বিদ্যালয়, ১টি বিএড কলেজ রয়েছে।
পার্বতীপুর উপজেলায় ১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২টি বেসরকারি হাসপাতাল, ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ২টি এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে।
মানুষের প্রধান পেশা কৃষি হলেও বর্তমানে মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, চাকরি ইত্যাদি পেশায় যুক্ত। প্রধান প্রধান ফসল ধান, গম, পাট, রাই-সরিষা, আলু, ইক্ষু ও ভুট্টা। এছাড়া ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেপে উৎপন্ন হয়। রফতানী যোগ্য পন্য বলতে ধান, চাল, পাট ও আলু।ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে ধান, চাল, চামড়া ও আলু ইত্যাদি ফসল আছে। পার্বতীপুর উপজেলায় অবস্থিত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প, পেট্রোবাংলার ডিজেল হেড ডিপো, রেলওয়ের কেন্দ্রীয় ইঞ্জিন কারখানা।[7] এছাড়াও আছে পলাশবাড়ী, হরিরামপুর, হামিদপুর ও হাবড়া ইউনিয়নে ১৯২৪.৪৯ একর বনজ সম্পদে ভরপুর।
দিনাজপুর জেলা সদরের সাথে পার্বতীপুর উপজেলায় প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা রেল ও সড়ক পথের মাধ্যমে। রেল ও সড়ক পথে ঢাকার সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে পার্বতীপুর উপজেলার। রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫ কিলোমিটার, পাকা রাস্তা ১১২ কিলোমিটার, আধাপাকা রাস্তা ২৬ কিলোমিটার, কাঁচা রাস্তা ৬৭৫ কিলোমিটার। রেল স্টেশনের সংখ্যা ৫টি – বেলাইচন্ডি, মন্মথপুর, খোলাহাটি, পার্বতীপুর ও ভবানীপুর।
পার্বতীপুর উপজেলায় ৪৫০টি মসজিদ, ৪২টি মন্দির ও ১টি গীর্জা রয়েছে।
পার্বতীপুরে ছয়টি নদী রয়েছে। নদী ছয়টি হচ্ছে খড়খড়িয়া নদী, ছোট যমুনা নদী, চিরনাই নদী, নলশিশা নদী এবং ইছামতি নদী (দিনাজপুর),করতোয়া নদী। [8] ধলবাড়ি বিল এই উপজেলায় অবস্থিত। ৬ নং মোমিনপুর ইউনিয়নের, হোসেনপুর গ্রামে বালাহার নামে একটা বিল আছে। নল বিল নামে একটি বিল আছে হাবড়া ইউনিয়ানের পচ্ছিমে সংকরপুর গ্রামের পাশে।
এই নদীর মধ্যে খড়খড়িয়া বা তিলাই নদী পার্বতীপুর শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীর উপর একটি রেল ও আরেকটি সড়ক সেতু আছে;[8] যা পার্বতীপুর-দিনাজপুর এরমধ্যে যোগাযগ স্থাপনের সহজ করেছে। এই নদীতে জোয়ারভাটার প্রভাব নেই। ছোট যমুনা নদী পার্বতীপুর উপজেলার বড় চণ্ডীপুর বিল হতে উৎপত্তি হয়।[8] পার্বতীপুর উপজেলায় বগুড়া সেচ প্রকল্প নামে একটি ক্যানেল আছে, যা জমি সেচের জন্য তৈরি হয়েছে ।[9]
পার্বতীপুর উপজেলায় ৪টি বাজার ও ২৩টি হাট রয়েছে।
পার্বতীপুর উপজেলার প্রাচীন নিদর্শনাদির মধ্যে রয়েছে:
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল খোলাহাটি ও বদরগঞ্জ রেল লাইনের দক্ষিণে রামকৃষ্ণপুর, বাগবাড় ও পেয়াদাপাড়ায় পাকসেনারা ৩০০ লোককে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.