Loading AI tools
দাঁতের মাড়ির একটি রোগ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পায়োরিয়া (মাড়ি রোগ হিসেবেও পরিচিত) হলো দাঁতের একধরনের রোগ যা দাঁতের আশেপাশের কোষকলাকে আক্রান্ত করে।[3] এটির প্রথম স্তরে, এটিকে গিঙ্গিভিটিস বলা হয়, যখন মাড়ি ফুলে যায়, লাল হয় এমনকি রক্তও পড়তে পারে।[3] এটির গুরুতর অবস্থাকে বলা হয় "পেরিয়োডোন্টিটিস", এসময় মাড়ি দাঁত থেকে সরে যেতে পারে, হাঁড় ক্ষয় হয় এবং দাঁতও পড়ে যায়।[3] মাঝে মাঝে মুখের শ্বাসে দুর্গন্ধও থাকতে পারে[1]
পায়োরিয়া রোগ | |
---|---|
প্রতিশব্দ | গাম রোগ, পেরিয়োন্ডনটিটিস |
একটি দাঁতের (কালো এলাকা) দুটি গোড়ার মাঝে হাঁড় ক্ষয়ের রেডিয়োগ্রাফ। দাঁতের নিচে সংক্রমণের কারণে নমনীয় হাঁড়টি ক্ষয় পাচ্ছে, যা দাঁতকে দুর্বল করে দিচ্ছে। | |
উচ্চারণ |
|
বিশেষত্ব | দন্ত্যচিকিৎসা |
লক্ষণ | লাল, দাঁত নড়ভড়ে হয়ে যাওয়া, ব্যাথা করা, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ[1] |
জটিলতা | দাঁত পড়ে যাওয়া[1][2] |
কারণ | ব্যাকটেরিয়া[1] |
ঝুঁকির কারণ | ধূমপান, বহুমূত্ররোগ, এইডস[1] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | দন্ত্যপরীক্ষা, এক্সরে[1] |
চিকিৎসা | মুখের ভালো যত্ন নেয়া, নিয়মিত পরীষ্কার করা[3] |
সংঘটনের হার | ৫৩৮ মিলিয়ন (২০১৫)[4] |
পায়োরিয়া সাধারণত দাঁতের চারপাশের কোষে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়।[3] এ অবস্থায় ঝুঁকি হলো ধূমপান করা, যাদের বহুমূত্ররোগ রয়েছে, এইডস আক্রান্তদের এবং কিছু ওষুধে।[1][5]
চিকিৎসার মাঝে রয়েছে মুখ ভালো পরিষ্কার রাখা এবং নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা।[3] মুখ পরিষ্কারের নিয়ম অনুসারে নিয়মিত দাঁত মাঝতে হবে।[3] কিছু ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক এবং দাঁতের অপারেশন করতেও বলা হয়।[6] ২০১৫ সালে বৈশ্বিকভাবে ৫৩৮ মিলিয়ন লোক আক্রান্ত হয়েছিল।[4] যুক্তরাজ্যে, ৩০ বছরের উপরে অর্ধেক লোক এটি দ্বারা হালকা আক্রান্ত এবং ৬৫ বছরের উপরে ৭০% লোকের গুরুতর অবস্থা রয়েছে।[3] নারীদের থেকে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হয়।
প্রথম স্তরে, পায়োরিয়ার খুব অল্প সংখ্যক লক্ষণ থাকে, এবং দেখা যায় চিকিৎসা করার পূর্বে রোগটি ব্যাপক মাত্রায় পৌঁছে যায়। তবে ভুলের কারনে চিকিৎসা না নিলে ইনফেকশন হয়ে যায়।
লক্ষণগুলোর মাঝে রয়েছে:
মানুষকে বুঝতে হবে যে, মাড়ি ফোলা ও দাঁতের হাঁড় ক্ষয় হওয়া বেশিরভাগ সময়ই ব্যাথাহীন হয়। যদিও দাঁত পরিষ্কারের পর রক্ত পড়া পায়োরিয়ার লক্ষণ তবুও মানুষ এগুলোকে তেমন গুরুত্বসহ নেয়না।
পায়োরিয়ার সাথে শরীরে প্রদাহ দেখা দিতে পারে, সি-প্রতিক্রিয়াকারী প্রোটিণ এবং ইন্টারলিউকিন-৬ এর মাত্রা বৃদ্ধির কারণে।[7][8][9][10] উচ্চমাত্রার স্ট্রোক ঝুঁকির সাথে এটির সম্পর্ক রয়েছে[11][12][13][14][15][16][17][18][19][20] এবং অধিক চিন্তার সাথে।[21] ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের স্মৃতিশক্তি ও গণনা ক্ষনতা হ্রাসের সাথেও এটির সম্পর্ক রয়েছে।[22][23] যেসকল ব্যক্তির বহুমূত্ররোগ রয়েছে তাদের পায়োরিয়া প্রদাহ বেশি দেখা যায় এবং বেশিরভাগ সময় তাদের শরীরে পায়োরিয়া প্রদাহের কারণে তারা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অক্ষম হন।[24][25][26] যদিও প্রমাণ নেই তবুও হৃদরোগ,[27] এবং প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের সাথে পায়োরিয়ার সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়।[28]
পায়োরিয়া হলো পেরিয়োডোনশিয়ামের প্রদাহ, যেসকল কোষকলা দাঁতকে শক্তি দেয়। পেরিয়োডোনশিয়াম চারটি কোষকলা নির্মিত:
গিঙ্গিভিটিস হওয়ার প্রধান কারণ হলো মুখের যত্ন না নেয়া,[29] যার কারণে মুখে মাইসোসিস[30][31][32][33] এবং ব্যাক্টেরিয়া মাড়ির ফাঁকে জমা হয়, যেটাকে "ডেন্টাল প্লাক" বলা হয়। অন্যান্য কারণের মাঝে হলো পুষ্টির অভাব এবং নানা শারীরিক সমস্যা যেমন বহুমূত্ররোগ।[34][35]
কিছু লোকের ক্ষেত্রে, গিঙ্গিভাল ফাইবার ধ্বংস হয়ে গেলে গিঙ্গিভিটিস থেকে পেরিয়োডোন্টিটিস হয়, এসময় মাড়ির কোষকলা দাঁত থেকে আলাদা হয়ে যায়।
সাধারণত দাঁতের কাছে এবং মাড়ির নিচে দন্ত প্লাক জমা হয় যা হলো কিছু অণুজীব।[36] ২০১৭ সাল অনু্যায়ী কোন প্রজাতি ক্ষতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি, কিন্তু এনারোবিক ব্যাকটেরিয়া, স্পাইরোচেটস এবং ভাইরাসকে এর জন্য দায়ী ধরা হয়; এটা পরিষ্কার যে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে এক বা একাধিক প্রজাতি এই রোগ সৃষ্টি করে।[36]
প্লাক নরম থাকতে পারে ও ক্যালসিয়ামহীন হতে পারে, শক্ত ও ক্যালসিয়ামযুক্তও হতে পারে, আবার উভয়টিই হতে পারে। দাঁতের সাথে যুক্ত প্লাকে ক্যালসুয়াম আসে স্যালাইভা থেকে; মাড়ির নিচের প্লাকে ক্যালসিয়াম আসে রক্ত থেকে।[36]
পায়োরিয়ার জন্য কয়েকবার নানা পদ্ধতিতে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়ে: ১৯৮৯, ১৯৯৩, ১৯৯৯, এবং ২০১৭ সালে।
১৯৯৯সালের শ্রেণিবিন্যাস ব্যবস্থায় পায়োরিয়ার সাতটি প্রধান অবস্থাকে উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর মাঝে ২-৬ হলো ধ্বংসাত্মক পায়োরিয়া রোগ, কারণ এটির ক্ষতিকে পূরণ করা যায় না। এই সাতটি শ্রেণি হলো:
পায়োরিয়া রোগের জন্য ২০১৭ সালের শ্রেণিবিভাগ নিম্নরূপ:[37][38]
পায়োরিয়া স্বাস্থ্য, মাড়ির রোগ ও অবস্থা
খ. ক্ষয়প্রাপ্ত পেরিয়োডনশিয়াম
২০১৭ সালের শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে, পায়োরিয়া রোগের অবস্থাকে তিনটি ক্রমে বিভক্ত করা হয়েছে:[39]
ঝুঁকিমান নির্ণয়ে কোন ব্যক্তিকে নিম্নের কারণ দ্বারা শ্রেণিবিভক্ত করা হয়:[39]
পায়োরিয়া এড়াতে দৈনিক যেসকল নিয়ম বজায় রাখতে হবে:
দন্তচিকিৎসকরা পায়োরিয়া রোগ পরিমাপ করে একটি যন্ত্রের সাহায্যে যেটির নাম 'পেরিয়োডন্টাল প্রোব'। এই পাতলা "পরিমাপক কাঠি"কে হালকাভাবে দাঁত ও মাড়ির মাঝের ফাঁকা স্থানে বসানো হয়, এবং মাড়ি রেখার নিচে রাখা হয়। যদি যন্ত্রটি মাড়ি রেখা থেকে ৩মিমি (০.১২ ই.) নিচে নেমে আসে তাহলে ধরে নেয়া হয় লোকটির গিঙ্গিবাল গহ্বর রয়েছে। এই গহ্বরগুলো সাধারণত নিজেই পরিষ্কার করা যায় (টুথব্রাশ ব্যবহার করে ঘরে) যদি এগুলো ৩ মিমি বা তার কম গভীর হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যদি কোন গহ্বর ৩ মিমি থেকে বেশি গভীর হয় তাহলে শুধু বাড়িতে পরিষ্কার করাই যথেষ্ট হবে না, এবং কোন পেশাদারকে এটি দেখাতে হবে। যখন গহ্বরের গভীরতা ৬ থেকে ৭ মিমি (০.২৪ থেকে ০.২৮ ইঞ্চি) হয় তখন দন্ত চিকিৎসকের হাতের যন্ত্রপাতি গহ্বরের গভীরে পৌঁছাতে পারেনা, যার কারণে গভীরে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়না এবং মাড়ি ফুলে যায়। এই অবস্থায়, দাঁতের পাশের মাড়ি বা হাঁড়কে সার্জারী করে পরিবর্তন করতে হবে না হয় সবসময় এটি ফুলে থাকবে এবং ঐ দাঁতের পাশের হাঁড় আরও ক্ষয় হবে।
যদি কোন ব্যক্তির দাঁতের আশেপাশে ৭ মিমি বা তার বেশি গভীরের গহ্বর থাকে তাহলে তাদের দাঁত হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। যদি এই পায়োরিয়া অবস্থা চিহ্নিত করা না হয় তাহলে কিছু বছর পরে, আক্রান্ত ব্যক্তির কিছু দাঁত ঢিলে হয়ে যাবে এবং সেগুলো তুলে ফেলার প্রয়োজন হবে, অনেক সময় নানা সংক্রমণ ও ব্যাথাও হতে পারে।
সাধারণত যাদের বহুমূত্ররোগ থাকে তাদের পায়োরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বহুমূত্ররোগে শরীরে শক্তি প্রদান করে থাকে ব্লাড সুগার, যার কারণে শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতির কারণে শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা শরীরের রক্ত শিরা ও ধমনীকে নষ্ট করে দেয়। এমনকি এগুলো মাড়ির শিরাকেও বিনষ্ট করে দেয়, তখন মাড়িতে সঠিক পরিমাণে রক্ত পৌঁছায়না ও নানা রকমের মাড়ির রোগ দেখা দেয়। আর মাড়ির রোগগুলোকে চিকিৎসা করা না হলে পায়োরিয়া রোগ দেখা দেয়।
৩০লক্ষ বছর পূর্বে একটি প্রাচীন মানবের মাড়ির রোগ ছিল। চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা যায়, মানব সভ্যতা প্রায় কয়েক হাজার বছর ধরে মাড়ির রোগ সহ্য করে আসছে। ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের পুরোনো মাড়ির ডিএনএ থেকে দেখা যায়, প্রাচীন শিকারীদের জীবনযাত্রায় কম মাড়ির রোগ ছল, কিন্তু অতিরিক্ত শস্যদানা খাওয়ার পর থেকে মাড়ির রোগ বেড়ে যায়। অটজি আইস মানবদের বিভিন্ন মাড়ির রোগ ছিল। আবার, গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের রোমান যুগে আধুনিক সময়ের থেকে কম পায়োরিয়া ছিল। গবেষকরা মনে করেন এটির মূল কারণ ধূমপান।
"পেরিয়োডোন্টিটিস" (গ্রীক: περιοδοντίτις) শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ পেরি, "চারদিক", অডাস, " দাঁত" এবং শেষাংশ ইটিস থেকে, "প্রদাহ"। 'পায়োরিয়া' গ্রীক শব্দ (πυόρροια), " পদার্থের নির্গমন", থেকে এসেছে, প্রথমাংশ পায়োর, "কোন কিছু থেকে নির্গমন", রো, " প্রবাহ", এবং শেষাংশ ইয়া।
গণনা করে দেখা হয়েছে যে পায়োরিয়া রোগের নানা খরচের কারণে প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৫৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
পায়োরিয়া কুকুরদের জন্য একটি সাধারণ রোগ এবং তিন বা তার বেশি বয়সী কুকুরের ৮০% এটি দ্বারা আক্রান্ত হয়। কিন্তু শরীরের ওজন বৃদ্ধির সাথে এটির পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। 'ওয়ালথাম সেন্টার ফর পেট নিউট্রিশন' গবেষণা করে পায় যে কুকুরের মাড়ি রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলো মানুষের ব্যাকটেরিয়ার মতো নয়। সমগ্র দেহে রোগ হতে পারে কারণ মাড়ি খুবই সংবহনতান্ত্রিক (রক্তের ভালো পরিবহন রয়েছে)। রক্তনালী এই ক্ষুদ্র জীবগুলো বহন করে যা কিডনি এবং যকৃত ছেঁকে ফেলে। কিডনি বা যকৃতে তারা স্থান করে নিতে পারে এবং সেখানে ক্ষুদ্র ব্রণের সৃষ্টি করতে পারে। পায়োরিয়ার কারণে যেসকল রোগ হতে পারে তাদের মাঝে রয়েছে ক্রণিক ব্রঙ্কাইটিস এবং পালমোনারি ফাইব্রোসিস।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.