পশ্চিমা খ্রিস্টধর্ম
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পশ্চিমা খ্রিস্টধর্ম খ্রিস্টধর্মের দুইটি বৃহৎ শাখার একটি (অপরটি হল পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্ম)। পশ্চিমা খ্রিস্টধর্ম মূলত লাতিন মণ্ডলী ও প্রতিবাদী মণ্ডলী এবং তাদের কিছু প্রশাখা যেমন স্বাধীন ক্যাথলিক মণ্ডলী ও পুনর্গঠনমূলক মণ্ডলী দ্বারা গঠিত।
বিশ্বের ২৩০ কোটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সিংহভাগই পশ্চিমা খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। এদের মধ্যে প্রায় ১২০ কোটি হলেন লাতিন ক্যাথলিক খ্রিস্টান এবং প্রায় ৮০ কোটি প্রতিবাদী খ্রিস্টান। পশ্চিমা খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডলীটি হল লাতিন মণ্ডলী, যা প্রাচীন পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের শাসনামলে রোমের ধর্মগুরুর অধীনে বিকাশ লাভ করে।[3] লাতিন মণ্ডলী থেকে বহু বিচিত্র স্বাধীন প্রতিবাদী ধর্মসম্প্রদায় উদ্ভব লাভ করে, যাদের মধ্যে ১৬শ শতকের প্রতিবাদী সংস্কার পরবর্তী লুথারীয় মণ্ডলী ও ইঙ্গ মণ্ডলীর নাম উল্লেখ্য। এছাড়া ১৯শ শতকে স্বাধীন ক্যাথলিক মণ্ডলীয় উদ্ভূত হয়। তাই "পশ্চিমা খ্রিস্টধর্ম" পরিভাষাটি দিয়ে একটিমাত্র ধর্মগোষ্ঠী, ধর্মসম্প্রদায় না মৈত্রীকে বর্ণনা করা হয় না, বরং উপর্যুক্ত সমস্ত ধর্মসম্প্রদায়গুলিকে একত্রিতভাবে এবং পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্ম থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্দেশ করতে প্রয়োগ করা হয়।
ক্যাথলিক বা বিশ্বজনীন মণ্ডলীর আইনগতভাবে স্বতন্ত্র (সুই ইউরিস) একটি বিশিষ্ট মণ্ডলী হিসেবে লাতিন মণ্ডলীর প্রতিষ্ঠা হয় এবং একই সাথে রোমে পোপরাজ্যের সংহতি সাধিত হয়, যেটি প্রাচীনকাল থেকে পুণ্যপিতা বা পোপের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে এসেছে। লাতিন মণ্ডলীটি পূর্বদেশীয় ক্যাথলিক বা বিশ্বজনীন মণ্ডলীগুলি (যেগুলি রোমের পুণ্যপিতার সাথে সম্পূর্ণ মৈত্রীবদ্ধ) অপেক্ষা এবং পূর্বদেশীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলীসমূহ ও প্রাচ্যদেশীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলীসমূহ (যেগুলি রোমের পুণ্যপিতার সাথে মৈত্রীবদ্ধ নয়) অপেক্ষা স্বতন্ত্র। শেষোক্ত মণ্ডলীগুলিকে পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্মের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানে "পশ্চিমা" ও "পূর্বদেশীয়" পরিভাষাগুলি খ্রিস্টধর্মের ভৌগোলিক বিভাজন থেকে উদ্ভূত হয়, যা মূলত গ্রিক বা হেল্লেনীয় পূর্বদেশ এবং লাতিন পাশ্চাত্যের মধ্যবর্তী সাংস্কৃতিক বিভাজন এবং ৩৯৫ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমা রোমান সাম্রাজ্য ও পূর্বদেশীয় বাইজেন্টীয় রোমান সাম্রাজ্য - এই দুইয়ের মধ্যকার রাজনৈতিক বিভাজনের এক প্রতিচ্ছবি। ইউরোপের ইতিহাসের মধ্যযুগে লাতিন মণ্ডলীর অনুসারীরা নৃগোষ্ঠীগত পরিচয় নির্বিশেষে নিজেদেরকে অভিন্ন "লাতিন" নামে ডাকতেন এবং এভাবে নিজেদেরকে পূর্বদেশীয় খ্রিস্টানদের থেকে আলাদা করতেন।[4]
পশ্চিমা খ্রিস্টধর্ম পশ্চিমা সভ্যতার বিকাশ ও রূপায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। [5][6][7][8] প্রারম্ভিক আধুনিক যুগে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের সম্প্রসারণের সাথে সাথে লাতিন মণ্ডলী এবং সময়ের সাথে সেটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রতিবাদী মণ্ডলীগুলি দুই আমেরিকা মহাদেশ, ফিলিপাইনের সিংহভাগ, দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকার বিচ্ছিন্ন কিছু অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাই ১৬শ শতকে পরের ঐতিহাসিক পর্বগুলিতে "পশ্চিমা খ্রিস্টধর্ম" বলতে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চল না বুঝিয়ে উপর্যুক্ত সবগুলি অঞ্চলকে নির্দেশকারী একটি সামগ্রিক পরিভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারাভিযান, মানুষের অভিবাসন ও বিশ্বায়নের কারণে পশ্চিমা ও পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্মের মধ্যকার ভৌগোলিক বিভেদ প্রাচীন বা মধ্যযুগের মতো তেমন চরম নয়। এ কারণে পশ্চিমা খ্রিস্টধর্ম ও পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্ম কথা দুইটি দিয়ে সাধারণত খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ব ও উপাসনাপদ্ধতির ঐতিহাসিক উৎস ও বৈচিত্র্য নির্দেশ করা হয়, কোনও ভৌগোলিক অঞ্চল নয়।
পশ্চিমা খ্রিস্টধর্মের অন্তর্গত লাতিন মণ্ডলীটি লাতিন উপাসনা পদ্ধতির আচার-অনুষ্ঠান পালন করা বজায় রাখলেও প্রতিবাদী ধর্মসম্প্রদায়গুলি ও স্বাধীন ক্যাথলিক মণ্ডলীটি বহু বিচিত্র ধরনের উপাসনা পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.