Loading AI tools
সরীসৃপের প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা (বৈজ্ঞানিক নাম: Dendroaspis viridis) এলাপিড পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির বিষধর সাপ। এরা পশ্চিম আফ্রিকার সবুজ মাম্বা বা হ্যালোওয়েলস সবুজ মাম্বা নামেও পরিচিত। মাম্বা গোত্রীয় এই পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা প্রজাতির সাপ দীর্ঘ, সরু এবং অতিমাত্রায় বিষধর। ১৮৪৪ সালে আমেরিকান সরীসৃপ-উভচর বিদ এডওয়ার্ড হ্যালোওয়েল প্রথম এই প্রজাতি (ডেন্ড্রোয়াস্পিস) সাপের বর্ণনা করেন। তার নামানুসারেই হ্যালোওয়েলস গ্রিন মাম্বা নামটি। পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা অতি দীর্ঘকায় ও মুখ্যতঃ বৃক্ষবাসী। এরা গাছের বিভিন্ন অংশে দ্রুত এবং সাবলীলভাবে চলাফেরা করতে পারে। তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণী তথা ইঁদুর, গারবিলাস ও অন্যান্য ক্ষুদ্রাকার স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শিকার করার উদ্দেশ্যে এই প্রজাতির সাপেরা মাটিতে নেমে আসে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা | |
---|---|
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা (Western green mamba) | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | Vertebrata |
শ্রেণী: | Reptilia |
বর্গ: | Squamata |
উপবর্গ: | Serpentes |
পরিবার: | Elapidae |
উপপরিবার: | Elapinae |
গণ: | Dendroaspis |
প্রজাতি: | D. viridis |
দ্বিপদী নাম | |
Dendroaspis viridis (হ্যালোওয়েল, ১৮৪৪)[2] | |
Dendroaspis viridis range | |
প্রতিশব্দ[3][4] | |
|
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা অত্যন্ত সতর্ক, ভীরু এবং অতিমাত্রায় ক্ষিপ্র ও দ্রুতগামী সাপ। এদের বসবাস প্রধানত পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় অঞ্চলের বনের ঘন ঝোপঝাড়ে এবং জঙ্গলে। সকল প্রকার মাম্বা বর্গীয় সাপের মত পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা হল এলাপিড পরিবারভুক্ত অন্যতম ভয়ানক বিষধর সাপ। এদের বিষের গঠনগত বিশ্লেষণে অতিদ্রুত ক্রিয়াশীল প্রি-সাইন্যাপ্টিক এবং পোস্ট-সাইন্যাপ্টিক নিউরোটক্সিনস (ডেনড্রোটক্সিন), কার্ডও টক্সিনস, ক্যাকিক্লুডিন, এবং ফাস্কিক্লুডিন ইত্যাদি যৌগের উপস্থিতি দেখা যায়। অনেকে এই প্রজাতির সাপকে আক্রমণাত্মক মনে করেন না, যদিও কারো কারো মতে এরা ভীষণ ভীরু প্রকৃতির সাপ ও কোণঠাসা হয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত ও আক্রমণাত্মক লক্ষণ দেখায়। এই অঞ্চলে প্রাপ্ত অন্যান্য কিছু সর্প প্রজাতির তুলনায় পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার মানুষের সাথে সংঘাতের নিদর্শন কম। এই প্রজাতির ছোবলে আক্রান্তের হার খুবই কম কিন্তু এদের কামড়ে মৃত্যুর হার বেশি কারণ এদের কামড় অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী। দংশিত ব্যক্তির শরীরে অতি দ্রুত, একের পর এক প্রাণঘাতী লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাম্বা জাতীয় সর্প দংশনের বিশেষত্ব। তীব্র বিষক্রিয়া এতটাই প্রাণঘাতী যে ৩০ মিনিটের কম সময়ে দংশিত ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা নিবন্ধ হয়েছে।
১৮৪৪ সালে মার্কিন সরীসৃপ ও উভয়চরবিদ এবং চিকিৎসক এডওয়ার্ড হ্যালোওয়েল পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা (Dendroaspis viridis)-এর কথা প্রথম বর্ণনা করেন।[2][5][6] এদের বর্গের নাম ডেন্ড্রোয়াস্পিস। এর ব্যুৎপত্তি প্রাচীন গ্রিক শব্দ ডেন্ড্র (Dendro) অর্থাৎ বৃক্ষ বা গাছ[7] এবং আসপিস (ασπίς) অথবা আস্প যার অর্থ ঢাল থেকে। আসপিস-এর অপর একটি অর্থ হল কোবরা বা সাপ। প্রাচীন গ্রন্থাদিতে আসপিস অথবা আস্প কথার অর্থ হল নাজা হাজে[8] অর্থাৎ সাপের ফণা; যা ঢালের মত। সুতরাং ডেন্ড্রোয়াস্পিস এর আক্ষরিক অর্থ বৃক্ষবাসী সাপ, যারা এই বর্গভুক্ত অধিকাংশ সর্প প্রজাতি বৃক্ষবাসী স্বভাবের পরিচায়ক। জার্মান সরীসৃপ ও উভচর বিদ স্লেজেল (Schlegel) ডেন্ড্রোয়াস্পিস Dendroaspis নামটি ব্যবহার করেছেন বৃক্ষবাসী কোবরা(tree snake) অর্থে। viridis কথাটি ল্যাটিন জাত যার আক্ষরিক অর্থ সবুজ।[9] পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা নামটির পাশাপাশি এই সর্প প্রজাতি ওয়েস্ট আফ্রিকান গ্রিন মাম্বা বা হ্যালোওয়েলস গ্রিন মাম্বা নামেও পরিচিত।[10]
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা এলাপিড পরিবার এবং ডেন্ড্রোয়াস্পিস Dendroaspis বর্গের অন্তর্ভুক্ত। মাম্বা বর্গীয় সাপের প্রথম বর্ণনা দেন আমেরিকান সরীসৃপ ও উভচর বিদ হারমান স্লেজেল (Hermann Schlegel)[11] স্লোউইন্সি এবং অন্যান্যরা মিলে (Slowinski et al) ১৯৯৭ সালে দেখিয়ে ছিলেন যে আফ্রিকান বর্গ ডেন্ড্রোয়াস্পিস Dendroaspis এর মধ্যেকার সম্পর্কগুলি সমস্যাপূর্ণ।[12] যদিও প্রামাণ্য তথ্যানুসারে ডেন্ড্রোয়াস্পিস, ওফিওফাগাস, বুনগারাস, হেমিবুনগারাস মিলে একটি নন-কোরাল স্নেক আফ্রা এশিয়াটিক ক্যাল্ড গড়ে তুলেছে।[13]
এরা বৃহৎ ও সরু দেহবিশিষ্ট এবং লম্বা ও ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া লেজযুক্ত সাপ। পূর্ণবয়স্ক পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার গড় দৈর্ঘ্য ১.৪ মিটার (৪.৬ ফু) ও ২.১ মিটার (৬.৯ ফু) -এর মধ্যে। এই সাপের সর্বাপেক্ষা অধিক দৈর্ঘ্য হতে পারে ২.৪ মিটার (৭.৯ ফু)।[14] এদের মাথাটি সরু, লম্বাটে, সুস্পষ্ট ক্যানথাস যুক্ত এবং ঘাড় থেকে আলাদা ভাবে পরিস্ফুট। কদাচিৎ অতি বিশেষ ক্ষেত্রে, এই সাপ যখন উত্থলিত হয়, এর ঘাড়ের অংশ চ্যাপ্টা হয়ে বিস্তৃত হয় তবে ফণা মেলে ধরা বলতে যা বোঝায় সেই আকৃতির গঠন দেখা যায় না। এদের চোখ মাঝারি আকারের, চোখের মনি গোল এবং তারারন্ধ্র এর বর্ণ হলদে বাদামী।[10]
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার পৃষ্ঠদেশের বর্ণ ঘন হলদেটে সবুজ বা সবুজ; আঁশের অগ্রবর্তী রেখাগুলি হলুদ। অনেক গ্রিন মাম্বার ক্ষেত্রে উদরদেশ ও লেজের বর্ণ হলুদ হয়। এই প্রজাতির কিছু সাপের ক্ষেত্রে, পৃষ্ঠদেশীয় আঁশগুলি (V) আকৃতির সুস্পষ্ট কালো দাগ দিয়ে ঘেরা। ঘনসন্নিবিষ্ট হলদে সবুজ আঁশের মাঝের ফাঁকে কালো দেহ এবং ত্বক পরিষ্কার দেখা যায়, বিশেষত মাথার ও লেজের আঁশগুলির ফাঁকে। মস্তকের উপরি ভাগের বর্ণবিন্যাস পৃষ্ঠদেশেরই অনুরূপ অথবা সামান্য কালচে সবুজ। মাথার আঁশগুলি পার্শ্বদেশে থাকে এবং সুস্পষ্ট কালো ধার যুক্ত। মাথার এই পার্শ্ববর্তী আঁশগুলির রঙ মাথার উপরিভাগের আঁশের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ বা অনুজ্জ্বল এবং সামান্য হলদেটে ভাবযুক্ত। মাথার নিম্নভাগ, গলা, উদরদেশ এবং লেজের নিচেরদিকের বর্ণ হালকা হলুদ বা হলদেটে সবুজ হয়।[10]
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার মাথা, দেহ এবং লেজের আঁশ-বিন্যাস নিম্ন্রূপঃ-[10]
|
|
পশ্চিম আফ্রিকা জাত পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা বেনিন, আইভরি কোষ্ট, গামবিয়া, ঘানা, গিনি, গিনি-বিসসান,লাইবেরিয়া, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন এবং টোগো ইত্যাদি স্থানেও দেখা যায়।[10] এরা আর্দ্র উষ্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলে আবদ্ধ থাকে যেমন-গিনি-বিসসান,সিয়েরা লিওন[15] এবং টোগো তে এদের উপস্থিতি নথিভুক্ত হয়েছে। এদের গামবিয়া এবং দক্ষিণ সেনেগাল থেকে বেনিন পর্যন্ত দেখা যায় । টোগোর উত্তরদিকে এক বিশেষ সীমা পর্যন্ত এরা ছড়িয়ে আছে অ্যালেডজো পর্যন্ত, যদিও আরো উত্তরবর্তী কারা[16] অঞ্চলের জঙ্গলে এদের উৎস এবং অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়েছে। পুরনো তথ্য অনুসারে নাইজেরিয়াতে এদের অস্তিত্ব ভরসা করার যোগ্য নয়। মালির অতি দক্ষিণপ্রান্তদেশে আইভরি কোষ্ট, পশ্চিম ক্যামেরুন এবং গাবন এর সীমারেখা বরাবর অঞ্চলেও এদের দেখা মিলতে পারে।[17]
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার বসবাস মূলতঃ পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী ক্রান্তীয় রেন ফরেস্ট, ঘন ঝোপঝাড় ও বনাঞ্চলে, বনাঞ্চল যেখানে নিরবচ্ছিন্ন বা একটানা সেই সব জায়গাতেই এই প্রজাতির সাপের উপস্থিতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নথিভুক্ত করা গেছে।[14] কিন্তু গামবিয়া ও গিনি-বিসসানতে যেখানে এদের উপস্থিতি নথিভুক্ত হয়েছে সেখানে জঙ্গল বিচ্ছিন্ন। যেখানে গাছের আচ্ছাদন সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং যেখানে ক্ষুদ্র বৃক্ষের ঘন সারি বা ঘন ঝোপঝাড় রয়েছে এমন স্থানেই এই প্রজাতির সাপেরা থাকতে পছন্দ করে এবং প্রচুর দেখা যায়। গাছপালা ও ঝোপঝাড় যুক্ত গ্রামাঞ্চলে, শহরতলি এবং শহরাঞ্চলের উদ্যানগুলিতেও এদের দর্শন মেলে।[14] পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বারা আর্দ্র বনভূমির সাপ এবং বৃষ্টিপাত যেখানে ১৫০০মিলিমিটারের[15] অধিক এমন বনাঞ্চলেই এদের বসবাস ভীষণভাবে সীমাবদ্ধ। অবশ্য যদিও টোগোর উত্তরবর্তী শুষ্ক উন্মুক্ত জঙ্গল, গিনির পশ্চিমে সাভানা অঞ্চলে ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে এদের বিস্তার লক্ষ্য করা গেছে।[16]
আইসিইউএন এর বিপন্ন প্রজাতির আওতায় পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বাকে Least Concern (LC) হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রজাতির সংরক্ষণ পর্যায়কে শেষবার বিচার করা হয় ২০১২ সালের জুলাই মাসে এবং তা ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়। বলা হয়েছে যে বিরাট অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা, অতি স্বাভাবিক অভ্যাস, অস্তিত্ব ও সংখ্যার সুস্থিরতা ও নিশ্চিহ্ন হওয়ার কোনো গুরুতর ভয় না থাকার দরুন এই প্রজাতির সংরক্ষণ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই।[1]
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা মুখ্যতঃ দিনের বেলায় বিচরণ করে[14] বা সক্রিয় থাকে যদিও রাত্রিবেলাও এরা সক্রিয় থাকতে পারে।[18] এই প্রজাতি, বাস্তবিকই গাছে এবং মাটিতে শিকার ধরতে ও খাদ্যগ্রহণ করতে পারদর্শী। ঘুমানোর সময় এরা ঘন পাতার আচ্ছাদনে ঘেরা গাছের ডাল খুঁজে নেয়।পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা অতি দ্রুতগামী, অত্যন্ত ক্ষিপ্র, সজাগ-সতর্ক ও ভীরু প্রকৃতির সাপ, মানুষ বা অন্যান্য বড় প্রাণীর সম্মুখীন হলে, এরা তৎক্ষণাৎ পলায়নপর হয়ে ওঠে; সম্ভব হলে স্বাভাবিক ভাবে এরা গাছে আশ্রয় নেয় এবং যে কোনো প্রকার বিপদের সম্ভাবনাকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু কোণঠাসা হয়ে গেলে, এই আপাত ভীরু ও পলায়নপর সাপটি ভয়ানক হয়ে ওঠে এবং এদের মধ্যে ক্ষিপ্ত আক্রমণাত্মক ভাব, জোরে হিস শব্দ করা এবং বারবার ছোবল দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।[14]
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার স্বাভাবিক শিকারের তালিকায় পাখী,ইঁদুর, ধাড়ী ইঁদুর, কাঠবেড়ালী জাতীয় তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণী ও ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরা থাকে।[14][19] এছাড়া অন্যান্য কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী যথা বাদুড়,ট্রি প্যাঙ্গোলিন (tree pangolins),শ্রিউ(shrew)[10] এরা শিকার করে। এই প্রজাতির খাদ্য তালিকায় পাখীর ডিম, ব্যাঙ এবং টিকটিকির উপস্থিতিও দেখা যায়। পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা শিকারের পিছনে ধাওয়া করে, বারবার ছোবল মারে যতক্ষণ না পর্যন্ত শিকার বিষে জর্জরিত হয়ে নেতিয়ে না পড়ে।[14][19]
বিশালাকার ও ভয়ানক বিষধর সাপ হওয়ায় এই প্রজাতির সাপের স্বাভাবিক খাদকের সংখ্যা খুবই কম। মানুষ এবং শিকারি পাখিরা এদের প্রধান শত্রু ও বিপদ।[6][19]
পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার বিষ মাম্বা বর্গীয় (ডেন্ড্রোয়াস্পিস) অন্যান্য সাপদের মত একইরকম- তবে বিষক্রিয়া ও বিষের গঠনগত দিক দিয়ে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এদের বিষ প্রধানত প্রি-সাইন্যাপ্টিক এবং পোস্ট-সাইন্যাপ্টিক নিউরোটক্সিনস, কার্ডও টক্সিনস,[18][20] এবং ফাস্কিক্লুডিন ইত্যাদি যৌগ দ্বারা গঠিত। বিষক্রিয়ার মাত্রা ভীষণরকম ভাবে পৃথক হয় বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন- খাদ্য, ভৌগোলিক অবস্থান, বয়স ভিত্তিক পরিবর্তন এবং অন্যান্য বিষয়। এই সাপের প্রজাতির সাবকিউটেনিয়াস এবং ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন এর এলডি50যথাক্রমে ০.৭৯মিগ্রা/কেজি এবং ০.৭১মিগ্রা/কেজি (ক্রিশ্তেন্স এবং অ্যান্ডারসন ১৯৬৭ সালে)[10] একটি পরীক্ষায় ইঁদুরের উপর পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার বিষ ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল রুটের মাধ্যমে প্রয়োগ করে প্রাপ্ত এলডি50ছিল ০.৩৩মিগ্রা/কেজি।[21] অপর একটি পরীক্ষায় ইঁদুরের উপর একই ভাবে এই বিষ প্রয়োগ করে এলডি50পাওয়া গিয়েছিল ০.০৪৫মিগ্রা/কেজি।[22] অন্য আরেকটি পরীক্ষায় , ১০০মিগ্রা আর্দ্র বিষ ইন্ট্রাভেনাস এলডি50টক্সিসিটির পরিমাণ ০.৫মিগ্রা/কেজি। অন্যান্য মাম্বা গোত্রীয় সাপের ন্যায় পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার বিষও অন্যতম সর্বাপেক্ষা দ্রুত ক্রিয়াশীল বিষ।[14][23]
এরা সাধারণত মানুষের থেকে যথাসম্ভব দূরেই থাকে এবং মানুষের চলার পথে সচরাচর আসে না, তাই এর দংশনে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার বা মারা যাওয়ার ঘটনা কদাচিৎ ঘটে।[14] কিন্তু তথ্যপ্রমাণে দেখা গেছে যে, দংশন যে কটি ক্ষেত্রে ঘটে, তাতে ফলাফল মারাত্মক হয় ও মৃত্যু হারো খুব বেশি। গ্রিন মাম্বার তিনটি প্রজাতিরই বিষের তীব্রতা ও ক্রিয়াশীলতা একইরকম মারাত্মক ও দ্রুত এবং অনেক কোবরার জাতীয় প্রজাতির বিষের ক্রিয়াশীলতার সাথে তুলনীয়। তবে গ্রিন মাম্বা প্রজাতির দংশন অনেক কম সময়সীমার মধ্যে বেশি মারাত্মক ও প্রাণঘাতী। এই কারণে কোবরা প্রজাতির দংশনের চেয়ে গ্রিন মাম্বা প্রজাতির দংশনে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। যদিও পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার দংশনের তথ্য প্রমাণ খুবই দুর্লভ এবং এর দংশনের হার, বিষক্রিয়ার মাত্রা ও ভয়াবহতার বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যাদি সুলভ নয়। তবুও মনে করা হয় যে এই প্রজাতির দংশনে ইস্টার্ন গ্রিন মাম্বার (Dendroaspis angusticeps) দংশন অপেক্ষা বেশি মারাত্মক, কিন্তু ব্ল্যাক মাম্বা (Dendroaspis polylepis) এর দংশনের চেয়ে অনেক কম প্রাণঘাতী।[10] অন্যান্য মাম্বার অনুরূপ পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার দংশনের পর বিভিন্ন প্রাণঘাতী লক্ষণ অতি দ্রুত একের পর এক প্রকাশ পেতে থাতে ১৫ মিনিট বা তার কম সময়ের মধ্যে। অসামান্য ও অভাবনীয় দ্রুততায় বিষ কষের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং অতি দ্রুত ও ক্রমিক প্রাণঘাতী লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার দংশনের পর যে সাধারণ লক্ষণগুলি দেখা যায় সেগুলি হল- দংশন স্থানে যন্ত্রণা ও ফুলে ওঠা, আটাক্সিয়া, মাথা যন্ত্রণা, প্রবল ঝিমুনি, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, ভার্টিগো, নিম্ন রক্ত চাপ, ডাইরিয়ার লক্ষণ, মাথা ঘোরা ও পক্ষাঘাত। যদিও ব্যতিক্রমী ঘটনা, এদের কামড়ে স্বল্পমাত্রায় স্থানীয় কোষে পচন (local necrosis)ও দেখা দিতে পারে। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করতে পারলে নতুন অনেক ভয়ানক লক্ষনো দ্রুত দেখা দিতে পারে। সমস্ত রকম লক্ষণগুলি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে সহায়ক পেশীগুলি পক্ষাঘাত গ্রস্ত হয়ে বিবশ হয়ে যাওয়ায় দংশিত ব্যক্তি শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়। পশ্চিমাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার কামড়ে দ্রুত মারাত্মক বিষক্রিয়া হয়ে ৩০ মিনিটের কম সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।[10][19][20]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.