পরিক্রিয়াদি গবেষণাবিদ্যা
উন্নত বিশ্লেষণী পদ্ধতির প্রয়োগে উন্নত সিদ্ধান্তগ্রহণের বিদ্যা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উন্নত বিশ্লেষণী পদ্ধতির প্রয়োগে উন্নত সিদ্ধান্তগ্রহণের বিদ্যা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পরিক্রিয়াদি গবেষণাবিদ্যা বলতে কোনও বাণিজ্যিক, শিল্প, সামরিক বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মানুষ, যন্ত্রপাতি, উপাদান, সময় ও অর্থের সাথে সংশ্লিষ্ট জটিল ব্যবস্থাগুলির কার্যক্রম বা পরিক্রিয়াদি (operations) পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় উদ্ভূত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক সমস্যাগুলিকে শনাক্ত করে নৈর্ব্যক্তিকভাবে সেগুলির কাম্যতম বা প্রায়-কাম্যতম সমাধান নির্ণয় ও সুপারিশ করার উদ্দেশ্যে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত পরিমাণবাচক উপাত্তের উপরে ফলিত গণিত, পরিসংখ্যান ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিশ্লেষণী পদ্ধতি প্রণালীবদ্ধভাবে প্রয়োগ করার বিদ্যাকে বোঝায়।[1] এটিতে কোনও জটিল সমস্যা সমাধানের সাথে সংশ্লিষ্ট বহুসংখ্যক চলরাশি ও এগুলির উপর প্রযুক্ত বহুসংখ্যক বাধাকে বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণী পদ্ধতিগুলির মধ্যে পরিগণক যন্ত্র তথা কম্পিউটারের সাহায্যে দৈব প্রতিমান নির্মাণ, পরিগণকীয় ছদ্মায়ন, নিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব, রৈখিক কাম্যতমকরণ, সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ, সংকটজনক পথ বিশ্লেষণ, অপেক্ষমান সারি তত্ত্ব, ক্রীড়া তত্ত্ব, জটিল ব্যবস্থাদি বিশ্লেষণ, জটিল ব্যবস্থাদি তত্ত্ব, তথ্য তত্ত্ব, ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও অর্থমিতির বিভিন্ন পদ্ধতি, ইত্যাদি উল্লেখ্য। প্রায়শই এটিতে কোনও বাস্তব বিশ্বের লক্ষ্যের চরমসীমাস্থ মানগুলি (সর্বোচ্চ মুনাফা, সাফল্য বা উৎপাদনে কিংবা সর্বনিম্ন ক্ষতি, ঝুঁকি বা ব্যয়) নির্ণয় করা হয়। পরিক্রিয়াদি গবেষণাবিদ্যার লক্ষ্য হল কোনও প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদেরকে প্রদত্ত দৈব ও পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যথাসর্বোচ্চ কার্যকর করার লক্ষ্যে বিকল্পগুলির মধ্য থেকে যথাসর্বোচ্চ সঠিক বা কাম্যতম সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈজ্ঞানিক, যুক্তিসঙ্গত ও বস্তুনিষ্ঠ ভিত্তি প্রদান করা। পরিক্রিয়াদি গবেষণাবিদ্যা বহু বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হতে পারে, যেমন কাঁচামাল সংগ্রহ, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, পরিবহন, পণ্য বিপণন, পণ্য বিতরণ, পণ্যদ্রব্য স্থানান্তর (লজিস্টিকস), কৃষি (কাম্যতম ভূমি ও পানি সম্পদ বিতরণ), অর্থসংস্থান, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, গবেষণা ও বিকাশ, শিল্প, হিসাবরক্ষণ, ইত্যাদি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে সামরিক কার্যক্রম বা অভিযানের বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে নির্দেশ করতে পরিক্রিয়াদি গবেষণাবিদ্যার ইংরেজি পরিভাষা "অপারেশনাল রিসার্চ" (মার্কিন ইংরেজিতে "অপারেশনস রিসার্চ") কথাটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। উচ্চশিক্ষায়তনিক ক্ষেত্র থেকে আগত গণিতবিদ, পরিসংখ্যানবিদ, ভৌত বিজ্ঞানী ও সামাজিক বিজ্ঞানীর একটি দল এই গবেষণাগুলি সম্পাদন করেছিলেন। মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও অস্ত্র কীভাবে কাম্যতমভাবে বা সর্বোচ্চ সন্তোষজনকভাবে ব্যবহার করা যায়, সে ব্যাপারটির বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা করতে গিয়ে এই আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্রটির জন্ম হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সামরিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগের ব্যাপক প্রসার ঘটলে এই ক্ষেত্রটির বিকাশ ঘটে।[2] ১৯৫০-এর দশকে পরিক্রিয়াদি গবেষণাবিদ্যার জ্ঞান ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা ও বেসামরিক সরকারী নীতি প্রণয়নের মতো ক্ষেত্রগুলিতে প্রয়োগ করা শুরু হয়। এভাবে পরিক্রিয়াদি গবেষণাবিদ্যার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায়তনিক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের তত্ত্বগুলির সাথে বিভিন্ন সামাজিক ঘটনাবলির মেলবন্ধন ঘটানো হয়।[3] পরিক্রিয়াদি গবেষণাবিদ্যাকে তাই যেমন একদিকে গাণিতিক বিজ্ঞানসমূহের একটি শাখা হিসেবে গণ্য করা হয়,[4] তেমনি এটিকে কদাচিৎ "ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান" নামক সমার্থক পরিভাষা দিয়ে নির্দেশ করা হয়।[5]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.