পটুয়াখালী জেলা
বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পটুয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল ও বাংলাদেশের অতিপ্রাচীন একটি জেলা বা শহর। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পটুয়াখালী বরিশাল বিভাগের একটি সম্ভাবনাময় জেলা। পর্যটন নগরী কুয়াকাটা এ জেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। এখানে রয়েছে একসাথে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার অপরূপ দৃশ্য যা বিশ্বে বিরল। তাই পর্যটকদের কাছে পটুয়াখালী "সাগরকন্যা" নামে পরিচিত। উপজেলা সংখ্যানুসারে পটুয়াখালী বাংলাদেশের একটি“এ”শ্রেণীভুক্ত জেলা।[1] মেঘনা নদীর অববাহিকায় পললভূমি এবং কিছু চরাঞ্চল নিয়ে এই জেলা গঠিত। পটুয়াখালী জেলা শহর একটি পূর্নাঙ্গ প্রশাসনিক অঞ্চল। এই জেলায় বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ আছে প্রচুর সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৯ সালে পটুয়াখালী মহুকুমাকে একটি জেলায় উন্নীত করা হয়। দেশের সর্ববৃহৎ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, তৃতীয় বৃহৎ সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দর, সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, দক্ষিণাঞ্চলের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা সেনানিবাস সহ এশিয়ার প্রথম পানি জাদুঘর পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত।
পটুয়াখালী | |
---|---|
জেলা | |
ডাকনাম: সাগরকন্যা | |
বাংলাদেশে পটুয়াখালী জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°২১′১৫″ উত্তর ৯০°১৯′৫″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | বরিশাল বিভাগ |
জেলা প্রতিষ্ঠা | ১ জানুয়ারি ১৯৬৯ |
জাতীয় সংসদের আসন | ৪টি |
সরকার | |
• জেলা প্রশাসক | মোঃ নূর কুতুবুল আলম |
আয়তন | |
• মোট | ৩,২২১.৩১ বর্গকিমি (১,২৪৩.৭৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০২২) | |
• মোট | ১৭,২৭,২৫৪ |
• জনঘনত্ব | ৫৪০/বর্গকিমি (১,৪০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৫% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৮৬০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ১০ ৭৮ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
প্রবন্ধকার ও বরিশালের ইতিহাস-গ্রন্থের লেখক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ মতে,[2] স্থানীয়দের দ্বারা 'নটুয়া' নামে পরিচিত পর্তুগিজ জলদস্যুরা পটুয়াখালী শহরের উত্তরে অবস্থিত ভরণী খাল দিয়ে এসে আশেপাশের অঞ্চলে লুণ্ঠন চালাতো। 'নটুয়া' জলদস্যুরা এই খাল দিয়ে আসতো বলে খালটি 'নটুয়ার খাল' নামে পরিচিতি লাভ করে। কালক্রমে 'নটুয়ার খাল' নামটি 'পটুয়ার খাল' নামে বিবর্তিত হয়। এখান থেকেই 'পটুয়াখালী' নামটির উৎপত্তি বলে মনে করা হয়।[3] ১৯৮০ সালে শেরেবাংলা টাউন হলে অনুষ্ঠিত "পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য" শীর্ষক সেমিনারে অধিকাংশ বক্তা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ এই মতকে সমর্থন করেন।[2]
অপর সূত্রমতে, দেবেন্দ্রনাথ দত্তের পতুয়ার খাল কবিতাটির নাম থেকে 'পটুয়াখালী' নামটি এসেছে।[3]
পটুয়াখালী নামকরণের অপর দুটি মত হচ্ছে– এই অঞ্চলে বসবাসকারী পটুয়াদের (যারা হাতে মৃৎপাত্র তৈরি করে তাতে নানা ধরনের পট বা ছবির সন্নিবেশ ঘটায়) থেকে 'পটুয়াখালী' নামের উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে অথবা পেট-আকৃতির খাল বেষ্টিত এলাকাই হয়তো 'পেটুয়াখালী' এবং পরবর্তীতে 'পটুয়াখালী' নামে অভিহিত হয়। তবে এই দুটি অভিমতের কোনো জোরালো সমর্থন মেলেনি।[2]
১৬ শতকের প্রারম্ভে আজকের পটুয়াখালী অঞ্চল পর্তুগিজ জলদস্যুদের ডাকাতির অন্যতম এলাকা ছিল।[3]
আধুনিক পটুয়াখালী শহরের বয়স প্রায় দেড়শ বছর। ১৮০৭ সালে বরিশালের জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন মি. বেটি। দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন কেটে বসত বৃদ্ধি পাওয়ায় বেটির শাসন আমলেই ১৮১২ সালে পটুয়াখালীকে নিয়ে গঠন করা হয় মির্জাগঞ্জ থানা। পরবর্তীতে দেওয়ানী শাসন প্রসারের জন্য ১৮১৭ সালে বরিশালে স্থাপন করা হয় পৃথক ৪টি মুন্সেফী চৌকি। এগুলো হলো বাউফল, কাউখালী, মেহেন্দিগঞ্জ ও কোটের হাট চৌকি। বাউফল চৌকির প্রথম মুন্সেফ হয়ে আসেন ব্রজমোহন দত্ত। ১৮৬০ সালের ১ জুন বাউফল থেকে চৌকি স্থানান্তর করা হয় লাউকাঠীতে।[2]
ব্রজ মোহন দত্ত লাউকাঠী চৌকিরও মুন্সেফ ছিলেন। ব্রজ মোহন দত্ত প্রস্তাব করেন পটুয়াখালী নতুন মহকুমা প্রতিষ্ঠার।[2] ২৭ মার্চ ১৮৬৭ তারিখে কলিকাতা গেজেটের মাধ্যমে বাকেরগঞ্জ জেলার মহকুমা হিসেবে পটুয়াখালী মহকুমা সৃষ্টির ঘোষণা প্রকাশিত হয়। ১৮৭১ সালে পটুয়াখালী মহকুমায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৬৯ সালে পটুয়াখালী মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। ১ জানুয়ারি ১৯৬৯ সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের ১৮তম জেলা হিসেবে পটুয়াখালী জেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়।[3] ১৯৬৯ সালের ৯ মার্চ পটুয়াখালী জেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস. এম. আহসান। পটুয়াখালীর প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন হাবিবুল ইসলাম।[2] ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ বরগুনা মহকুমাকে পটুয়াখালী জেলা থেকে পৃথক করে জেলায় উন্নীত করা হয়।[3]
পাকিস্তান আমল থেকেই বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালী ছিল খুলনা বিভাগের অন্তর্গত; পরবর্তীকালে সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কার্যক্রমের সূত্রে ১৯৯৩ সালে ১ জানুয়ারি বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালীর ছয়টি জেলা বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা নিয়ে বাংলাদেশের পঞ্চম বিভাগ বরিশাল গঠিত হয়।[2]
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পটুয়াখালী ৯নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২৯ নভেম্বর বাউফল উপজেলা, ৫ ডিসেম্বর গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলা, ৬ ডিসেম্বর কলাপাড়া উপজেলা এবং ৮ ডিসেম্বর দশমিনা, দুমকি, পটুয়াখালী সদর ও মির্জাগঞ্জ উপজেলা পাকিস্তানি বাহিনী মুক্ত হয়।[3]
পটুয়াখালী জেলার উত্তরে বরিশাল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ভোলা জেলা, পশ্চিমে বরগুনা জেলা। জেলার আয়তন প্রায় ৩,২২১.৩১ বর্গ কিলোমিটার।
পটুয়াখালী জেলা ৮টি উপজেলা, ৯টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ৭৬টি ইউনিয়ন ও ৪টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
পটুয়াখালী জেলায় মোট ৮টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[4] | সংসদ সদস্য[5][6][7][8][9] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
১১১ পটুয়াখালী-১ | মির্জাগঞ্জ উপজেলা, দুমকি উপজেলা এবং পটুয়াখালী সদর উপজেলা | শূণ্য | |
১১২ পটুয়াখালী-২ | বাউফল উপজেলা ও পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ও কমলাপুর ইউনিয়ন | শূণ্য | |
১১৩ পটুয়াখালী-৩ | দশমিনা উপজেলা এবং গলাচিপা উপজেলা | শূণ্য | |
১১৪ পটুয়াখালী-৪ | কলাপাড়া উপজেলা এবং রাঙ্গাবালী উপজেলা | শূণ্য |
বছর | জন. | ব.প্র. ±% |
---|---|---|
১৯৭৪ | ৯,৩৭,০০৬ | — |
১৯৮১ | ১১,৬৫,০৭৬ | +৩.১৬% |
১৯৯১ | ১২,৭৩,৮৭২ | +০.৯% |
২০০১ | ১৪,৬০,৭৮১ | +১.৩৮% |
২০১১ | ১৫,৩৫,৮৫৪ | +০.৫% |
উৎস:[10] |
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পটুয়াখালী জেলার মোট জনসংখ্যা ১৫,৩৫,৮৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭,৫৩,৪৪১ জন এবং মহিলা ৭,৮২,৪১৩ জন। মোট পরিবার ৩,৪৬,৪৬২টি।[11]
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পটুয়াখালী জেলার সাক্ষরতার হার ৬৫%। জেলায় উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও একটি মেডিকেল কলেজ পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এছাড়াও পটুয়াখালী শতবর্ষী চারটি স্কুল রয়েছে। এগুলো হলো
দেশের সর্বদক্ষিণের এই জেলায় তরমুজ,নারিকেল, গাব,কাঠাল,আম,লিচু,আনারস সহ নানান জাতের ফসল ফলে। সাম্প্রতিক সময়ে তরমুজের জন্য এই জেলা হয়ে উঠেছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ফল উৎপাদন স্থান।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। নদী বিধৌত পটুয়াখালী জেলার খাল-বিল, পুকুর, নালা, নিম্নভূমি গুলো মৎস্য সম্পদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই জেলার নদী মোহনাগুলো ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত।
পটুয়াখালী জেলার বনাঞ্চলের পরিমাণ খুবই কম। বনাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য গাছের নাম কেওড়া, গেওয়া, কাকড়া, বাবুল, শিরিষ, করাই, হিজল, গাব, গোলপাতা ইত্যাদি।
পটুয়াখালীতে ব্যবসা-বাণিজ্য দিন দিন বিকশিত হচ্ছে। এখানে রয়েছে অটো রাইস মিল, রাইস মিল, ইট ভাটা, বিস্কুট ফ্যাক্টরী, সিনেমা হল, ফিলিং স্টেশন, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.