নেপচুন-পরবর্তী গ্রহসমূহ
From Wikipedia, the free encyclopedia
১৮৪৬ সালে নেপচুন গ্রহ আবিষ্কারের পর এই গ্রহের কক্ষপথের অপর পারে আরেকটি গ্রহ রয়েছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। এই কল্পিত গ্রহটির অনুসন্ধান শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর সূচনাকালেও পার্সিভাল লোয়েলের এক্স গ্রহের (ইংরেজি: Planet X) অনুসন্ধানের মাধ্যমে তা অব্যাহত থাকে। দানব গ্রহগুলির (নির্দিষ্টভাবে ইউরেনাস ও নেপচুনের) কক্ষপথে যে আপাত বৈষম্য দেখা যায় তা ব্যাখ্যা করতে লোয়েল এক্স গ্রহ অনুকল্পটি প্রস্তাব করেন।[1] তিনি অনুমান করেছিলেন, একটি বৃহৎ অদৃষ্টপূর্ব নবম গ্রহের অভিকর্ষীয় বল ইউরেনাসকে যথেষ্ট পরিমাণে উত্তেজিত করে এই ধরনের বৈষম্য ঘটাচ্ছে।[2]
১৯৩০ সালে ক্লাইড টমবাও কর্তৃক প্লুটো আবিষ্কৃত হলে লোয়েলের অনুকল্পটি আপাতদৃষ্টিতে বৈধ প্রমাণিত হয়। প্লুটোকেও আনুষ্ঠানিকভাবে নবম গ্রহ নাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্লুটোর অভিকর্ষীয় বল যে কোনও দানব গ্রহকে প্রভাবিত করার পক্ষে অত্যন্ত কম তা ১৯৭৮ সালে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়। যার ফলে দশম গ্রহের এক স্বল্পকালীন অনুসন্ধান শুরু হয়। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে ভয়েজার ২ মহাকাশযান কর্তৃক সংগৃহীত পরিমাপগুলি পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, পরিগণনা কালে নেপচুনের ভর সামান্য বেশি ধরার কারণেই ইউরেনাসের কক্ষপথে সেই অসমতা পর্যবেক্ষিত হয়েছিল। এর পর দশম গ্রহের অনুসন্ধান অনেকাংশে পরিত্যক্ত হয়।[3] ১৯৯২ সালের পরে প্লুটোর সমরূপ অথবা তদপেক্ষাও বৃহত্তর কক্ষপথে অসংখ্য ছোটো ছোটো তুষারাবৃত বস্তু আবিষ্কৃত হওয়ার পর প্লুটোকে আর গ্রহের মর্যাদা দেওয়া উচিত কিনা অথবা প্লুটো ও তার প্রতিবেশীগুলিকে গ্রহাণুর মতো স্বতন্ত্র কোনও শ্রেণিভুক্ত করা উচিত কিনা তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। এই গোষ্ঠীর একাধিক বৃহত্তর সদস্য ইতিপূর্বে গ্রহ হিসেবে বর্ণিত হলেও ২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (আইএইউ) প্লুটো ও তার বৃহত্তম প্রতিবেশীগুলিকে বামন গ্রহ হিসেবে নতুনভাবে শ্রেণিভুক্ত করে। এর ফলে নেপচুন সৌরজগতের দূরতম জ্ঞাত গ্রহে পরিণত হয়।[4]
জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সমাজের বৃহত্তর অংশ এই বিষয়ে একমত যে, প্রাথমিকভাবে যে এক্স গ্রহের কল্পনা করা হয়েছিল তার বাস্তব অস্তিত্ব নেই। অবশ্য কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী বাহ্য সৌরজগতে পর্যবেক্ষিত অন্যান্য ব্যতিক্রমগুলিকে ব্যাখ্যা করতে অদ্যাবধি অপর্যবেক্ষিত এক গ্রহের ধারণাটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন।[5] ২০১৪ সালের মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী, ওয়াইজ দূরবীনের মাধ্যমে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ ১০,০০০ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক এককে শনির আকারবিশিষ্ট (৯৫ পার্থিব ভর) কোনও বস্তু এবং ২৬,০০০ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক এককে বৃহস্পতির আকারবিশিষ্ট (≈৩১৮ পার্থিব ভর) বা তার চেয়েও বড়ো কোনও বস্তুর সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছে।[6]
২০১৪ সালে সম্প্রতি-আবিষ্কৃত চরম নেপচুনোত্তর বস্তুগুলির একটি গোষ্ঠীর কক্ষপথের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি অতি-পৃথিবী গ্রহের অস্তিত্বের অনুকল্পনা করেছেন। এই গ্রহটির ভর পৃথিবীর ভরের তুলনায় ২ থেকে ১৫ গুণ বেশি এবং অবস্থায় ২০০ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক এককের ওপারে, সম্ভবত ১,৫০০ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক এককে একটি অতিমাত্রায় আনত কক্ষপথে।[7] ২০১৬ সালে আরও গবেষণার ফলে জানা যায় যে, এই অজ্ঞাত দূরবর্তী গ্রহটি এমন এক আনত ও উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথে অবস্থিত যেটি সূর্য থেকে ২০০ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক এককের চেয়ে কাছে এবং ১,২০০ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক এককের চেয়ে দূরে অবস্থিত নয়। বৈজ্ঞানিকদের অগ্রকথন অনুযায়ী, এই কক্ষপথ গুচ্ছবদ্ধ চরম নেপচুনোত্তর বস্তুগুলির সঙ্গে একই সরলরেখায় বিন্যস্ত নয়।[8] আইএইউ যেহেতু প্লুটোকে আর গ্রহের মর্যাদা দেয় না, সেই হেতু এই নতুন অনুকল্পিত বস্তুটি পরিচিতি লাভ করে নবম গ্রহ হিসেবে।[9]