Loading AI tools
শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত (ইংরেজি: Sleep Apnea; স্লিপ অ্যাপনিয়া) নাক ডাকার ও ঘুম কম হওয়ার সমস্যা। বিভিন্ন কারণে যদি শ্বাস নালী বাধাগ্রস্ত হয়, তবে ঘুমের মধ্যে সশব্দে নাক ডাকার শব্দ হয়। নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত নাক ডাকার অন্যতম কারণ, এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ঘুম মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় শরীরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। পরিমিত ঘুম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। হৃদ্রোগসহ নানা রোগের ঝুঁকিও কমায়। ঘুম কম হলেও এটি হতে পারে।
নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত | |
---|---|
প্রতিশব্দ | স্লিপ অ্যাপনিয়া, স্লিপ অ্যাপনিয়া সিন্ড্রোম |
প্রতিবন্ধকসৃষ্টিকারী নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত (অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া) | |
উচ্চারণ | |
বিশেষত্ব | নাক-কান-গলা বিজ্ঞান, নিদ্রাজনিত চিকিৎসাবিদ্যা |
লক্ষণ | শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা অথবা ঘুমের সময় অগভীর শ্বাস, নাক ডাকা, দিনের বেলা ক্লান্তি অনুভব[1] |
জটিলতা | হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, বহুমূত্ররোগ, হৃৎপিণ্ডের অকৃতকার্যতা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের, অতিস্থূলতা, মোটর গাড়ির সংঘর্ষ,[2] আলৎসহাইমারের রোগ,[3][4] এবং অকাল মৃত্যু[5] |
রোগের সূত্রপাত | পরিবর্তশীল; ৫০% মহিলাদের বয়স ২০-৭০[6] |
প্রকারভেদ | প্রতিবন্ধকসৃষ্টিকারী নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত, মুখ্য নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত, মিশ্র নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত[2] |
ঝুঁকির কারণ | অতিরিক্ত ওজন, পারিবারিক ইতিহাস, অ্যালার্জি, বর্ধিত টনসিল[7] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | দিনরাত ঘুম পর্যবেক্ষণ[8] |
চিকিৎসা | জীবনধারা পরিবর্তন, মুখপত্র, শ্বাসযন্ত্রের যন্ত্র, সার্জারি[2] |
সংঘটনের হার | ~ ১ জন মানুষ প্রতি ১০ জনে, [4][9] পুরুষ ও মহিলাদের অনুপাত ২:১, বার্ধক্য এবং স্থূলদের ঝুঁকি বেশি [6] |
ঘুমের সময় নাক ডাকা, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ঘুম অপূর্ণ থেকে যায়। ফলে দিনের বেলায় কাজের সময় ঘুম ঘুম ভাব আসে। একেই স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত বলা হয়। এই রোগ আবার দুই ধরনের। যেমন— অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) : এতে রোগীর গলবিলে শ্বাস বন্ধ হয়ে নাক ডাকা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। সারা বিশ্বে সাধারণত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দুই থেকে চারজন ওএসএ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগে থাকে। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ ও নারীদের ৪.৪৯ ও ২.১৪ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া (সিএসএ) : এটি সাধারণত ব্রেন বা মস্তিষ্কের কারণে হয়। এর কারণ সাধারণত হার্ট ফেইলিওর, লিভার ফেইলিওর। ফলে রোগীর শ্বাসকেন্দ্রে অর্থাৎ মস্তিষ্কে যে রেসপিরেটরি সেন্টার থাকে, সেখানেই শ্বাসের প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে।
কিছু লক্ষণ রোগীর নিদ্রার সময় দেখা দেয়। ফলে রোগী নিজেও বুঝতে পারে না। কিন্তু শয্যাসঙ্গী এই লক্ষণগুলো বুঝতে পারে। কিছু লক্ষণ আবার দিনের বেলায় দেখা দেয়, যা রোগী নিজেও বুঝতে পারে। যেমন—
স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে হঠাৎ মৃত্যুসহ নানা রকম শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়।
এছাড়া স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা ডায়াবেটিস, দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মতো শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জটিলতায় ভোগে। রক্তনালিতে প্রদাহজনিত কারণ, অক্সিজেনের স্বল্পতা, কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি, রক্ত চলাচলের তারতম্য, রক্তের জমাট বাঁধা প্রক্রিয়ার তারতম্য ও আরো কিছু কোষ এবং রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি রক্তনালির প্রাচীরে ক্ষত সৃষ্টি করে, যা পরবর্তী সময়ে চর্বি জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। রক্তনালির এই সমস্যার কারণে হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ ও মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়ে থাকে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, তীব্র স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা, যাঁরা চিকিৎসা নেন না, তাঁদের মৃত্যুহার প্রতি আট বছরে ৫ শতাংশ বাড়ে।
উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিওর, অনিয়মিত হৃত্স্পন্দন ও করোনারি আর্টারি ডিজিজ—হার্টের এই চারটি রোগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত স্লিপ অ্যাপনিয়া। স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করালে হাইপারটেনশনের নিয়ন্ত্রণ অনেক ভালো হয়, প্রেসারের ওষুধের পরিমাণ কমে যায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শুধু ওষুধের মাধ্যমে যাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
দীর্ঘদিন স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করা না হলে ধীরে ধীরে রোগীর পালমোনারি হাইপারটেনশন হয়ে হার্টফেল করতে পারে, যাকে বলে করোপালমোনেলি।
অনিয়মিত হৃত্স্পন্দনের কারণে হঠাৎ কারো মৃত্যু হতে পারে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা যদি গাড়ি চালান, তবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি হয়। এ কারণে উন্নত বিশ্বে যেমন—আমেরিকায় স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় না। আমাদের দেশের সড়ক দুর্ঘটনা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি; কিন্তু এর কারণ হিসেবে স্লিপ অ্যাপনিয়া কতটা দায়ী তা জানা সম্ভব গবেষণার মাধ্যমেই। এ ছাড়া স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন—কর্মদক্ষতা কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ছোটখাটো কারণে বাসায় ও কর্মক্ষেত্রে ঝগড়াঝাঁটি লেগে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন পুরুষ রোগীর যৌনক্ষমতা হ্রাস পায়।
এই রোগ নির্ণয়ের জন্য গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি হলো—পলিসমনোগ্রাফি। এই পরীক্ষার রিপোর্টের সঙ্গে রোগীর লক্ষণ মিলিয়ে দেখতে হয়। যেমন—
রোগের ইতিহাস জানা : নাক ডাকা, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা, দিনের কাজের সময় অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব—এসব লক্ষণ আছে কি না দেখতে হবে। এ ছাড়া যদি ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হাইপোথায়রায়ডিজম—এসব রোগ থাকে, তবে স্লিপ অ্যাপনিয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
দিনে ঘুমানোর অতিরিক্ত প্রবণতা : একটি স্কেলের সাহায্যে এই অতিরিক্ত ঘুমের প্রবণতা মাপা যায়। এটি ইপওয়ার্থ স্লিপিনেস স্কেল (ইএসএস) নামে পরিচিত।
পলিসমনোগ্রাফি পরীক্ষার সাহায্যে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় একজন রোগীর ঘুমের পর্যায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থা, বুকের ওঠা-নামা, নাক ডাকার অবস্থা, হৃত্স্পন্দন, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা, পায়ের নড়াচড়া ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়। তারপর এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে নিম্নের ধ্রুবক বা প্যারামিটার হিসাব করা হয়—
স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে রোগীদের সতর্কতা অবলম্বন করে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যেমন—
► মাথার দিকটা উঁচু করে ডান বা বাঁ দিকে কাত হয়ে শোয়া।
► ঘুমের ওষুধ, মাংসপেশি শিথিল করার ওষুধ যথাসম্ভব পরিহার করা।
► ধূমপান ত্যাগ করা।
► অতিরিক্ত ওজন কমানো।
► যদি নাক বন্ধ থাকে, তবে ফ্লুটিকাসন নেজাল স্প্রে ব্যবহার করা বা চিকিৎসা করা।
নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাতের কারণ অতিরিক্ত ওজন। কাজেই পরিমিত আহার করে ওজন ঠিক রাখতে হবে। তাতে প্রশান্তির ঘুম হবে। জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে নাক ডাকার ও ঘুম কম হওয়ার সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এ ছাড়া রাতে খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে না যাওয়ার ধূমপান ও মদ্যপান না করলে ঘুম ভালো হয়। অনিদ্রা নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাতের অন্যতম কারণ । ভালো করে ঘুম না হলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ থেকেও নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত হতে পারে। ওষুধ দিয়ে এবং শল্যচিকিৎসায় নাক ডাকার সমস্যা দূর করা যায়।
স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধরন ও তীব্রতার ওপর। এই রোগের তিন রকমের চিকিৎসা রয়েছে। যেমন—
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.