Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গ্রিক পুরাণে, থিয়েস্টিস (Thyestes) (উচ্চারণ ইংরেজি - /θaɪˈɛstiːz/, গ্রিক: Θυέστης, [tʰyéstɛːs]) অলিম্পিয়ার রাজা ছিলেন। থিয়েস্টিস ও তার ভাই অ্যাট্রিয়াসকে তাদের পিতা অলিম্পিয়ার রাজা পেলোপ্স তাদের সৎ ভাই ক্রিসিপাসকে হত্যা করার জন্য নির্বাসন দণ্ড দেন। অলিম্পিয়ার রাজ সিংহাসন গ্রহণের জন্য তারা ক্রিসিপাসকে হত্যা করে। এরপর তারা মাইসিনিতে উদ্বাস্তু হিসেবে গমন করে। মাইসিনিতে রাজা ইউরিস্থিয়াসের অনুপস্থিতিতে তারা মাইসিনির সিংহাসন লাভ করে। ইউরিস্থিয়াস হেরাক্লিডির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যান এবং অস্থায়ীকালের জন্য অ্যাট্রিয়াস ও থিয়েস্টিসের হাতে রাজ্যভার দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে ইউরিস্থিয়াসের মৃত্যু হলে রাজ্যভার স্থায়ীভাবে অ্যাট্রিয়াস ও থিয়েস্টিসের কাঁধে এসে পড়ে।
থিয়েস্টিসকে যেসব সাহিত্যিক কাজে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ৬২ খ্রিস্টাব্দে রচিত সেনেকার নাটক থিয়েস্টিস । এই নাটকটি থেকে রিভেঞ্জ ট্র্যাজেডি বা প্রতিশোধমূলক বিয়োগান্তক জঁরার উদ্ভব হয়।
থিয়েস্টাস হলেন পেলোপ্স ও হিপ্পোডামিয়ার পুত্র। তার দুই মেয়ে ছিল - পেলোপিয়া ও ঈজিস্থাস। একজন জলপরী বা নায়াডের সাথে মিলনের ফলে তিনি আগলাউস, অরকোমেনাস ও ক্যালিয়াস নামে তিনজন পুত্র লাভ করেছিলেন, যাদেরকে অ্যাট্রিয়াস হত্যা করে।[1]
থায়েস্টিসের পিতামাতা পেলোপ্স ও হিপ্পোডামিয়া ছিলেন হিপ্পোডামিয়ার পিতা এলিসের রাজা ইনোমাউসের ভৃত্য মারটিলাসের দ্বারা অভিশপ্ত। ইনোমাউস দৈববাণী শুনতে পেয়েছিলেন যে তার জামাতা তাকে হত্যা করবে। এরফলে তিনি নিয়ম করেছিলেন, তার কন্যাকে বিবাহ করতে হলে তাকে রথচালনার প্রতিযোগিতায় পরাজিত করতে হবে, আর যদি কেউ হেরে যায় তাহলে তাকে ইনোমাউস হত্যা করবেন। ইনেমাউস ছিলেন রথচালনায় দক্ষ। সেই সাথে যুদ্ধদেবতা অ্যারেসের কাছ থেকে তিনি এক জোড়া ঘোড়া পেয়েছিলেন যেগুলো ছিল মরণশীল যেকোন ঘোড়ার চেয়ে শ্রেয়। রথচালনার প্রতিযোগিতায় তাই কেউ ইনোমাউসের সাথে পেরে উঠত না, যার ফলে তাদেরকে ইনোমাউসের হাতে মরতে হত। এভাবে ইনোমাউস অনেককেই হত্যা করেন। পার্শ্ববর্তী রাজ্য পিসার রাজা পেলোপ্স ইনোমাউসের ভৃত্য মার্টিলাসের সাথে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। পেলোপ্স মার্টিলাসকে ইনোমাউসের রথের চাকার বল্টু ঢিল করে দিতে বলেন, যার ফলে তিনি পাবেন রাজ্য এলিস ও ইনেমাউস কন্যা সুন্দরী হিপ্পোডামিয়াকে। বিনিময়ে মার্টিলাসকে দেয়া হবে অর্ধেক রাজত্ব ও হিপ্পোডামিয়ার সাথে প্রথম রাত কাঠানো অর্থাৎ তার সতীত্ব হরণের সুযোগ। মারটিলাস তার প্রাপ্য উপহার পাওয়ার জন্য পেলোপ্সের কাছে গেলে পেলোপ্স প্রমোদভ্রমণের নাম করে মারটিলাসকে সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেন। সমুদ্রজলে নিমজ্জমান মারটিলাস পেলোপ্সকে ও তার অনাগত বংশধরদেরকে প্রচণ্ড অভিশাপ দেন। মারটিলাস ছিলেন দেবতা হার্মিসের পুত্র। অতঃপর হার্মিসও মারটিলাসের হয়ে সকল দেবতাদের কাছে তার অভিযোগ জানান। আর এভাবেই পেলোপ্স এবং তার উত্তরসুরীরা দেবতাদের দ্বারা অভিশপ্ত হয়।
থিয়েস্টিসের ভাই ও মাইসিনির রাজা অ্যাট্রিয়াস দেবী আর্তেমিসের কাছে তার সর্বোত্তম মেষটিকে বলি দেবার প্রতিজ্ঞা করেন। অ্যাট্রিয়াস তার মেষের পাল খোঁজার সময় তিনি একটি সোনার মেষ আবিষ্কার করেন এবং সেটা তার স্ত্রী ঈরোপীকে দেন, যাতে তার স্ত্রী সেটিকে দেবীর চোখের আড়াল করে লুকিয়ে রাখে। ঈরোপী সেই মেষটিকে তার প্রেমিক থিয়েস্টিসকে দিয়ে দেয়। থিয়েস্টিস তার ভাইকে তারপর রাজি করান যে, যার কাছে মেষটি আছে তাকেই রাজা হওয়া উচিত। থিয়েস্টিস এরপর সেই মেষটি দেখায় আর রাজ সিংহাসন দাবি করেন।
অ্যাট্রিয়াস হার্মিসের উপদেশ অনুস্মরণ করে তার সিংহাসন পুনর্দখল করেন। থিয়েস্টিস তাকে বলেছিলেন, যদি সূর্য উল্টোদিকে গমন করে তাহলে তিনি তার রাজত্ব অ্যাট্রিয়াসকে ফিরিয়ে দেবেন। জিউস সেটাই করেন, আর তার ফলে অ্যাট্রিয়াস তার রাজত্ব গ্রহণ করে থিয়েস্টিসকে নির্বাসন দণ্ড প্রদান করেন।
এরপর অ্যাট্রিয়াস থিয়েস্টিস ও ঈরোপির পরকিয়ার কথা জানতে পারেন এবং প্রতিশোধ নেবার পরিকল্পনা করেন। তিনি থিয়েস্টিসের পুত্রদেরকে হত্যা করেন এবং হাত ও মাথা বাদ দিয়ে তাদের বাকি শরীর রান্না করে থিয়েস্টিসকে পরিবেশন করেন। খাওয়া শেষ করলে তিনি তার পুত্রদের হাত ও মাথা দেখিয়ে বলেন তারা তার নিজেরই পুত্র ছিল, এটি জানতে পেরে থিয়েস্টিস মুষরে পড়েন। থিয়েস্টিস তৃপ্তি সহকারেই ভক্ষণ করেছিলেন, এবং খাওয়া শেষে সশব্দ ঢেঁকুরও তুলেছিলেন। এই ঘটনা থেকেই "থিয়েস্টিয়ান ফিস্ট" নামক শব্দবন্ধটি এসেছে।
থিয়েস্টিসকে এক ভবিষ্যৎ কথক উপদেশ দেন, তার নিজের কন্যা পেলোপিয়ার সাথে সঙ্গমে যদি কোন পুত্র জন্ম নেয় তবে সেই পুত্রের হাতে অ্যাট্রিয়াসের মৃত্যু হবে। থিয়েস্টিস তাই নিজের পরিচয় গোপন রেখে পেলোপিয়াকে ধর্ষণ করেন। এভাবে তার পুত্র ঈজিস্থাসের জন্ম হয় যে অ্যাট্রিয়াসকে হত্যা করে। কিন্তু ঈজিস্থাসের জন্মের সময় তাকে তার মা পেলোপিয়া ত্যাগ করেছিলেন, কেননা তিনি সেই পুত্রের জন্ম নিয়ে লজ্জিত ছিলেন। শিশু ঈজিস্থাসকে একজন মেষপালক উদ্ধার করেন, এরপর সেই মেষপালক ঈজিস্থাসকে অ্যাট্রিয়াসের কাছে দেন। অ্যাট্রিয়াস ঈজিস্থাসের পরিচয় না জেনে তাকে গ্রহণ করেন এবং নিজের পুত্র হিসেবে ঈজিস্থাসকে বড় করে তোলেন। প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর ঈজিস্থাসকে থিয়েস্টিস তার জন্মপরিচয় তুলে ধরেন, তাকে বলেন যে তিনি একই সাথে তার পিতা ও পিতামহ, আর অ্যাট্রিয়াস তার পিতৃব্য। এরপর অ্যাজিস্থাস অ্যাট্রিয়াসকে হত্যা করেন।
এরপর মাইসিনিতে শুরু হয় থিয়েস্টিসের শাসন। অ্যাট্রিয়াসের মৃত্যুর পর থিয়েস্টিস অ্যাট্রিয়াসের পুত্রদ্বয় আগামেমনন ও মেনেলাউসকে স্পার্টায় নির্বাসন দেন। সেখানে রাজা টিন্ডারিয়াস তাদেরকে রাজসম্মান সহ গ্রহণ করেন। কিছুদিন পর সেই রাজা টিন্ডারিয়াস এই ভ্রাতৃদ্বয়কে থিয়েস্টিসকে সিংহাসনচ্যুত করতে সাহায্য করেন। সিংহাসনচ্যুত করার পর থিয়েস্টিসকে গ্রিসের দক্ষিণ দিকের কিথেরা দ্বীপে যেতে বাধ্য করা হয়। কিথেরাতেই থিয়েস্টিস তার অবশিষ্ট জীবন অতিবাহিত করেন এবং তার মৃত্যু হয়।
রাজ্যহারা রাজপুত্র আগামেমনন ও মেনেলাউসের সুনাম, সুন্দর ব্যবহার ও আনুগত্য দেখে প্রীত হয়ে স্পার্টারাজ টিন্ডারিয়াস তাদেরকে স্বীয় কন্যাদান করবেন বলে মনস্থির করেন। তিনি ঠিক করেন, আগামেমননের সাথে তার কন্যা ক্লাইটেমনেস্ট্রা ও মেনেলাউসের সাথে কন্যা হেলেনের বিবাহ দেবেন।
ট্রয়ের যুদ্ধের কারণে যখন আগামেমনন মাইসিনি ত্যাগ করেন, ঈজিস্থাস আগামেমননের স্ত্রী ক্লাইটেমনেস্ট্রাকে প্রলুব্ধ করেন, আর এই পরকীয়া যুগল আগামেমননের ফিরবার পর তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেন। তারা সফলও হন। আগামেমনন ও তার নতুন রক্ষিতা কাসান্দ্রাকে হত্যা করার পর ক্লাইটেমনেস্ট্রা ও ঈজিস্থাসের নবগঠিত সংসারে তিন সন্তানের জন্ম হয়: এলেটিস, এরিগোনি ও হেলেন। হেলেন শৈশবেই মারা যায়।
আগামেমননের মৃত্যুর সাত-আট বছর পর, তার পুত্র ওরেস্টেস মাইসিনিতে ফিরে আসেন। জ্ঞাতিভাই পাইলেডিস ও ভগ্নি ইলেক্ট্রার সাহায্যে তিনি মাতা ক্লাইটেমনেস্ট্রা ও ঈজিস্থাসকে হত্যা করেন
ঈস্কাইলাসের নাটক দি ইউমেনিডেস অনুসারে, এহেন রক্তপাতে ক্লান্ত হয়ে দেবতাগণ ওরিস্টিসকে পুনর্বাসিত করেন, এবং অ্যাট্রিয়াসের বংশের শাপমোচন ঘোষণা করেন।
কিন্তু অন্য কাহিনীসমূহ অনুসারে, যখন এলেটিস ও এরিগোনে বয়ঃপ্রাপ্ত হন এবং মাইসিনির শাসকে পরিণত হন, তখন ওরেস্টেস সেনাদল নিয়ে মাইসিনিতে ফিরে আসেন। এরপর তিনি তার সৎভাইকে হত্যা করেন এবং সৎবোনকে ধর্ষণ করেন। সৎবোন এরিগোনিকে ধর্ষণের ফলে পেনথিলাস নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।
খ্রিস্টীয় ১ম শতকে সেনেকা দ্য ইয়ংগার থিয়েস্টিস নামে একটি বিয়োগান্তক নাটক রচন করেন। ১৫৬০ সালে জ্যাস্পার হেউড নামে অল সউলদ কলেজ, অক্সফোর্ড এর একজন ফেলো এই নাটকের একটি কাব্যানুবাদ প্রকাশ করেন। শেক্সপিয়ারের বিয়োগান্তক নাটক টাইটাস এন্ড্রোনিকাস এর কাহিনীর কিছু বিষয় থিয়েস্টিসের গল্প থেকে নেয়া। ১৬৮১ সালে জন ক্রাউন অনেকটা সেনেকার থিয়েস্টিসের উপর ভিত্তি করে থিয়েস্টিস, এ ট্র্যাজেডি নামক একটি নাটক লেখেন, কিন্তু সেখানে তিনি মূল কাহিনীর অতিরিক্ত প্রেম সেখানে প্রবেশ করান, যা মূল কাহিনীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। প্রসপার জলিয়ট ক্রেবিলন (১৬৭৪-১৭৬২) এট্রি এট থিয়েস্টে (১৭০৭) নামে একটি বিয়োগান্তক নাটক রচনা করেন, যার প্রভাব এডগার অ্যালান পো এর দুটো গল্পে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। ১৭৯৬ সালে উগো ফসকোলো (১৭৭৮-১৮২৭) টিয়েস্টে নামে একটি বিয়োগান্তক নাটক রচনা করেন যা এক বছর পর ভেনিসে মঞ্চস্থ করা হয়। ইংরেজ নাট্যকার ক্যারিল চার্চিল থিয়েস্টিস এর একটি অনুবাদ লেখেন। চার্চিলের বিশেষ অনুবাদটি ১৯৯৪ সালের ৭ জুনে রয়াল কোর্ট থিয়েটার আপস্টেয়ারস এ মঞ্চস্থ করা হয়।[2] ২০০৪ সালে জ্যান ভ্যান ভ্লিজমেন (১৯৩৫-২০০৪) তার থিয়েস্টে নামে একটি গীতিনাট্য রচনা করেন। একই নামে বিংশ শতকের একটি নাটকের উপর ভিত্তি করে (ডাচ ভাষায় থিয়েস্টিস) হুগো ক্লস ফরসী ভাষায় দ্য লিব্রেটো নামে একটি রচনা লেখেন যা পরে গীতিনাট্যে পরিণত করা হয়। ফোর্ড আইনসওর্থ এর এককাভিনয় নাটক পারসিফোন -এ থিয়েস্টিসকে দেখা যায়।
সকল কাজেই সেনেকার সাহিত্যিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। শেক্সপিয়ার নিয়ে আরনোল্ড এর চতুর্দশপদীতে সেনেকার প্রভাব লক্ষ্যণীয়। "সেনেকার থিয়েস্টিস এর অ্যাট্রিয়াসের সংলাপের স্মৃতিচারণকে অ্যান্টনিকে দেয়া ক্লিওপেট্রার প্রগাঢ় আলঙ্কারিক সংলাপগুলোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে"। (এজকোম্ব, ২৫৭)।[3]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.