তুরস্ক
ইউরেশিয়ার দেশ / From Wikipedia, the free encyclopedia
তুরস্ক (তুর্কি: Türkiye ত্যুর্কিয়ে[lower-alpha 1]), সরকারি নাম প্রজাতন্ত্রী তুরস্ক[12] (তুর্কি: Türkiye Cumhuriyeti ত্যুর্কিয়ে জুম্হুরিয়েতি[lower-alpha 2]), পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। তুরস্কের প্রায় পুরোটাই এশীয় অংশে, পর্বতময় আনাতোলিয়া বা এশিয়া মাইনর উপদ্বীপে পড়েছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা আনাতোলিয়াতেই অবস্থিত। তুরস্কের বাকী অংশের নাম পূর্ব বা তুর্কীয় থ্রাস এবং এটি ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় অবস্থিত। এই অঞ্চলটি উর্বর উঁচু নিচু টিলাপাহাড় নিয়ে গঠিত। এখানে তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল অবস্থিত। সামরিক কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জলপথ এশীয় ও ইউরোপীয় তুরস্ককে পৃথক করেছে মার্মারা সাগর, এবং বসফরাস প্রণালী ও দার্দানেলেস প্রণালী। এই তিনটি জলপথ একত্রে কৃষ্ণ সাগর থেকে এজিয়ান সাগরে যাবার একমাত্র পথ তৈরি করেছে।[13][14]
প্রজাতন্ত্রী তুরস্ক | |
---|---|
জাতীয় সঙ্গীত: ইস্তিকলাল মার্সি (তুর্কি) "স্বাধীনতার কুচকাওয়াজ" | |
রাজধানী | আঙ্কারা ৩৯° উত্তর ৩৫° পূর্ব |
বৃহত্তম নগরী | ইস্তাম্বুল ৪১°১′ উত্তর ২৮°৫৭′ পূর্ব |
সরকারি ভাষা | তুর্কি[1][2] |
কথ্য ভাষাসমূহ | ধারা দেখুন[3] |
নৃগোষ্ঠী (২০১৬)[4] | |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ |
|
সরকার | এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রপতি শাসিত সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র |
রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান | |
• উপরাষ্ট্রপতি | ফুয়াত ওকতাই |
• অ্যাসেম্বলির স্পিকার | মুস্তাফা শেনতপ |
আইন-সভা | গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি |
প্রতিষ্ঠা | |
১৯শে মে ১৯১৯ | |
২৩শে এপ্রিল ১৯২০ | |
• লোজানের চুক্তি | ২৪শে জুলাই ১৯২৩ |
২৯শে অক্টোবর ১৯২৩ | |
• বর্তমান সংবিধান | ৯ই নভেম্বর ১৯৮২[5] |
আয়তন | |
• মোট | ৭,৮৩,৩৫৬ কিমি২ (৩,০২,৪৫৫ মা২) (৩৬তম) |
• পানি (%) | ২.০৩ (২০১৫ অনুযায়ী)[6] |
জনসংখ্যা | |
• ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ আনুমানিক | ৮,৩৬,১৪,৩৬২[7] (১৯তম) |
• ২০১৬ আদমশুমারি | ৭,৯৪,৬৩,৬৬৩[8] (১৮তম) |
• ঘনত্ব | ১০৯/কিমি২ (২৮২.৩/বর্গমাইল) (১০৭তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০২১ আনুমানিক |
• মোট | $২.৭৪৯ ট্রিলিয়ন[9] (১১তম) |
• মাথাপিছু | $৩২,২৭৮[9] (৪৫তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০২১ আনুমানিক |
• মোট | $৭৯৪.৫৩০ বিলিয়ন[9] (২০তম) |
• মাথাপিছু | $১০,৮৮০[9] (৬৭তম) |
জিনি (২০১৭) | ৪৩.০[10] মাধ্যম · ৫৬তম |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৯) | 0.৮২০[11] অতি উচ্চ · ৫৪তম |
মুদ্রা | তুর্কি লিরা (₺) (TRY) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৩ (টিআরটি) |
তারিখ বিন্যাস | dd.mm.yyyy (CE) |
গার্হস্থ্য বিদ্যুৎ | 230 V–50 Hz |
গাড়ী চালনার দিক | ডান |
কলিং কোড | +৯০ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | TR |
ইন্টারনেট টিএলডি | .tr |
তুরস্কের পশ্চিমে এজিয়ান সাগর ও গ্রিস ও বুলগেরিয়া; উত্তর-পূর্বে জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও স্বায়ত্বশাসিত আজারবাইজানি নাখচিভান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র; পূর্বে ইরান; দক্ষিণে ইরাক, সিরিয়া ও ভূমধ্যসাগর, সাইপ্রাস দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত। তুরস্কের উপকূল দেশটির সীমান্তের তিন-চতুর্থাংশ গঠন করেছে। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমে আছে উর্বর সমভূমি। পশ্চিমে আছে উঁচু, অনুর্বর মালভূমি। পূর্বে আছে সুউচ্চ পর্বতমালা। দেশের অভ্যন্তরের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন হলেও ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ু মৃদু।
ইউরোপ সঙ্গমস্থলে অবস্থিত বলে তুরস্কের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিবর্তনে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়েছে। গোটা মানবসভ্যতার ইতিহাস জুড়েই তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপের মানুষদের চলাচলের সেতু হিসেবে কাজ করেছে। নানা বিচিত্র প্রভাবের থেকে তুরস্কের একটি নিজস্ব পরিচয়ের সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে এখানকার স্থাপত্য, চারুকলা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে। গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও অনেক অতীত ঐতিহ্য ও রীতিনীতি ধরে রাখা হয়েছে। তবে তুরস্ক বর্তমানে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানকার অধিকাংশ লোকের ধর্ম ইসলাম এবং মুখের ভাষা তুর্কি ভাষা।
বহু শতাব্দী ধরে তুরস্ক ছিল মূলত কৃষিপ্রধান একটি দেশ। বর্তমানে কৃষিখামার তুরস্কের অর্থনীতির একটি বড় অংশ এবং দেশের শ্রমশক্তির ৩৪% এই কাজে নিয়োজিত। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তুরস্কতে শিল্প ও সেবাখাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, বিশেষত অর্থসংস্থান, পরিবহন, এবং পেশাদারী ও সরকারি সেবায়। অন্যদিকে কৃষির ভূমিকা হ্রাস পেয়েছে। টেক্সটাইল ও বস্ত্র শিল্প দেশের রপ্তানির প্রধান উৎস।
অর্থনৈতিক রূপান্তরের সাথে সাথে নগরায়নের হারও অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তুরস্কের ৭৫% জনগণ শহরে বাস করে। ১৯৫০ সালেও মাত্র ২১% শহরে বাস করত। জনসংখ্যার ৯০% তুরস্কের এশীয় অংশে বাস করে। বাকী ১০% ইউরোপীয় অংশে বাস করে।
তুরস্কের ইতিহাস দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল। প্রাচীনকাল থেকে বহু বিচিত্র জাতি ও সংস্কৃতির লোক এলাকাটি দখল করেছে।[15] ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে এখানে হিটাইটদের বাস ছিল। তাদের সময়েই এখানে প্রথম বড় শহর গড়ে ওঠে। এরপর এখানে ফ্রিজীয়, গ্রিক, পারসিক, রোমান এবং আরবদের আগমন ঘটে।[16][17][18] মধ্য এশিয়ার যাযাবর তুর্কি জাতির লোকেরা ১১শ শতকে দেশটি দখল করে এবং এখানে সেলজুক রাজবংশের পত্তন করে।[19] তাদের শাসনের মাধ্যমেই এই অঞ্চলের জনগণ তুর্কি ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে মিশে যায়। ১৩শ শতকে মোঙ্গলদের আক্রমণে সেলজুক রাজবংশের পতন ঘটে। ১৩ শতকের শেষ দিকে এখানে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পত্তন হয়।[20] এরা পরবর্তী ৬০০ বছর তুরস্ক শাসন করে এবং আনাতোলিয়া ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে।[21] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যটির পতন ঘটে।[22]
১৯২৩ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের তুর্কি ভাষী এলাকা আনাতোলিয়া ও পূর্ব থ্রাস নিয়ে মুস্তাফা কেমাল (পরবর্তীতে কেমাল আতাতুর্ক)-এর নেতৃত্বে আধুনিক তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের তথা তুর্কি জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৩৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আতাতুর্ক তুরস্কের রাষ্ট্রপতি ছিলেন।[23] তিনি একটি শক্তিশালী, আধুনিক ইউরোপীয় রাষ্ট্র হিসেবে তুরস্কের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তার সরকারের মূলনীতিগুলি কেমালবাদ নামে পরিচিত এবং এগুলি পরবর্তী সমস্ত তুরস্ক সরকারের জন্য নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করেছে।
আতাতুর্কের একটি বিতর্কিত মূলনীতি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। কেমালের কট্টর অনুসারীরা মনে করেন ব্যক্তিগত জীবনের বাইরে ধর্মের স্থান নেই এবং রাজনৈতিক দলগুলির ধর্মীয় ইস্যু এড়িয়ে চলা উচিত। ১৯৫০-এর দশক থেকে রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকা তুরস্কের একটি বিতর্কিত ইস্যু।[24] তুরস্কের সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে কেমালবাদের রক্ষী বলে মনে করে এবং তারা ১৯৬০, ১৯৭১, ১৯৮০ এবং ১৯৯৭ সালে মোট চারবার তুরস্কের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার স্বার্থে হস্তক্ষেপ করেছে।[4][25][26][27]