Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
১৯১২ থেকে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিব্বতের ইতিহাস তিব্বতের কার্যত স্বাধীনতার পর্যায়কে চিহ্নিত করে। চিং সাম্রাজ্যের পতনের পর তিব্বতের এই স্বাধীনতা ঘোষণা ১৯৫০-এর দশকে গণচীন দ্বারা অধিগৃহীত হওয়া পর্যন্ত কার্যকরী থাকে।[5]
তিব্বত রাজ্য[1] བོད་ বোদ | |||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৯১২–১৯৫১ | |||||||||||
জাতীয় সঙ্গীত: "বোদ র্গ্যাল খাব ক্যি র্গ্যাল গ্লু" (১৯৫০ থেকে) | |||||||||||
সবুজ: ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্য্যন্ত দলাই লামার প্রত্যক্ষ শাসনাধীন অঞ্চল | |||||||||||
অবস্থা | অস্বীকৃত রাষ্ট্র (১৯৫৯ থেকে নির্বাসিত) | ||||||||||
রাজধানী | লাসা, তিব্বত | ||||||||||
প্রচলিত ভাষা | তিব্বতী ভাষা | ||||||||||
ধর্ম | তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম | ||||||||||
সরকার | বৌদ্ধ ধর্মতন্ত্র[2][3] | ||||||||||
দলাই লামা | |||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||
• প্রতিষ্ঠা | জুলাই ১৯১২ | ||||||||||
• তিন দফা চুক্তি[4] | ১৯১২ | ||||||||||
• ত্রয়োদশ দলাই লামার প্রত্যাবর্তন | ১৯১৩ | ||||||||||
১৯৫০ | |||||||||||
• সতেরো দফা চুক্তি | ২৩ মে ১৯৫১ | ||||||||||
• বিলুপ্ত | ২৪ অক্টোবর ১৯৫১ | ||||||||||
মুদ্রা | Tibetan skar, Tibetan srang, Tibetan tangka | ||||||||||
| |||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | People's Republic of China |
১৯১২ সাল পর্যন্ত[6] তিব্বতীয় গ্যান্ডেন ফোদরঙ্গ শাসনকর্তা চিং রাজবংশের আশ্রিত ছিলেন,[7][8][9][10] যখন প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী সরকার চিং রাজবংশকে চীন সরকার হিসাবে প্রতিস্থাপন করে এবং সাম্রাজ্যের সরকারের সমস্ত অঞ্চল উত্তরাধিকার সূত্রে চিং সরকারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। নতুন প্রজাতন্ত্র, তিব্বতকে চিং রাজবংশের সময়ের উচ্চ স্তরের স্বায়ত্তশাসনের সাথে "প্রোটেকটারেট" এর মর্যাদা দেয়।[11][12] এই সময়কালের আগে ব্রিটিশরা প্রতিবেশী ভারত থেকে তিব্বতে লাসা সন্ধির মাধ্যমে তার প্রভাব বাড়িয়েছিল, যদিও তিব্বতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।[13][14][15]
১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে চিং রাজবংশের পতন হলে চীনের নতুন সরকার তিব্বতের দিকে নজর দিতে ব্যর্থ হন।[16] এই সময় তিব্বতীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে পুনরায় তিব্বতের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে ত্রয়োদশ দলাই লামা ভারত থেকে যাত্রা করে লাসা শহরে প্রবেশ করে ১২ই ফেব্রুয়ারি চীনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে তিব্বতকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন।[17] এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তিব্বতে অবস্থিত সমস্ত চীনা সৈন্যদের তিব্বত ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে আগভান দোর্জিয়েভ ও দুইজন তিব্বতী প্রতিনিধি[18] উর্গা শহরে মঙ্গোলিয়া ও তিব্বত সরকারের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে তিব্বত ও মঙ্গোলিয়া উভয় রাষ্ট্র একে অপরকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং চীনের শাসনাধীনে না থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। দোর্জিয়েভকে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষরের ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ত্রয়োদশ দলাই লামা অস্বীকার করলে এই চুক্তির বৈধতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়,[19] যদিও পরবর্তীকালে চতুর্দশ দলাই লামা এই চুক্তি সম্বন্ধে তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেন যে, চুক্তিটি ত্রয়োদশ দলাই লামার স্বীকৃতিতেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল।[20]
মধ্য তিব্বত থেকে চীনা সেনাবাহিনীকে বহিষ্কার করা হলেও খাম্স ও আমদো অঞ্চলের অধিকাংশ স্থান চীনের অধিকারে ছিল। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ত্রয়োদশ দলাই লামা তাঁর প্রধান মন্ত্রী ব্লোন-ছেন-ব্শাদ-স্গ্রা-দ্পাল-'ব্যোর-র্দো-র্জেকে (ওয়াইলি: blon chen bshad sgra dpal 'byor rdo rje) ভারতের সিমলা শহরে চীন ও ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিদের[21] সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে পাঠান। চীন ও তিব্বতের মধ্য সীমান্ত এবং তিব্বতের রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করা ছিল এই বৈঠকের উদ্দেশ্য।[22] ব্রিটিশ প্রতিনিধি স্যার হেনরি ম্যাকমহোন তিব্বতকে বহিঃ তিব্বত এবং অন্তঃ তিব্বতে ভাগ করার পরামর্শ দেন।[21] তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী দ্বুস-গ্ত্সাং এবং পশ্চিম খাম্স অঞ্চল নিয়ে গঠিত বহিঃ তিব্বতের প্রশাসন লাসা শহরে অবস্থিত তিব্বত সরকারের স্বায়ত্ত্বশাসনে এবং আমদো এবং পূর্ব খাম্স অঞ্চল নিয়ে গঠিত অন্তঃ তিব্বত সরাসরি চীনা প্রশাসনের অধীনে থাকে। চুক্তিতে স্থির হয় যে, বহিঃ তিব্বতের প্রশাসনিক কাজকর্মে তিব্বত সরকার সমস্ত আধিকারিক নিযুক্ত করবে এবং তাতে চীন সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।[23]:৭৫ বহিঃ তিব্বতের প্রশাসনে চীন সরকার হস্তক্ষেপ না করলেও এই চুক্তির ফলে স্থির হয় যে সমগ্র তিব্বতই চীনের অংশ বিশেষ। চুক্তিতে এও স্থির হয় যে, তিব্বতীরা দলাই লামা নির্বাচন করার পরে চীন সরকারকে জানাতে বাধ্য থাকবে ও লাসা শহরে স্থিত চীনা প্রশাসনিক আধিকারিক তাঁকে উপাধি প্রদান করবেন।
আলোচনায় চীন ও তিব্বতের মধ্যে সীমান্তরেখা ছাড়াও তিব্বত ও ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়। চীনা প্রতিনিধিদলের উপস্থিতিতে ব্রিটিশ ও তিব্বতী প্রতিনিধিদলের মধ্যে ভারত-তিব্বত সীমান্ত নির্ধারিত হয়। আলোচনার সময় ভারত-তিব্বত সীমান্ত নির্ধারণকারী একটি মানচিত্র চুক্তির খসড়ার সঙ্গে যোগ করা হয়।[n 1][n 2]
কিন্তু তিব্বত ও চীনের সীমান্ত সংক্রান্ত আলোচনা ব্যর্থ হয়।[26]:৫ চীনা প্রতিনিধি ইভান চেন সভা ছেড়ে চলে গেলে ব্রিটিশ ও তিব্বতী প্রতিনিধিরা চুক্তিটিকে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হিসেবে মর্যাদা দিয়ে চীনকে কোন রকম সুবিধা প্রদান না করার সিদ্ধান্ত নেন।[23]
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে আম্বানদের তিব্বত থেকে বিতাড়িত করার পর থেকে তিব্বতীদের সঙ্গে চীনাদের যোগাযোগ শুধুমাত্র ব্রিটিশ মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যমে হত।[26]:৫ কিন্তু ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ত্রয়োদশ দলাই লামার মৃত্যু হলে চীন থেকে একটি প্রতিনিধিদল সমবেদনা জানাতে এলে পুনরায় চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয়।[27] বেশ কিছু সূত্রের মতে, তাঁর মৃত্যুর পর তিব্বতী মন্ত্রিসভা চীন তাঁদের রাজনৈতিক ব্যাপারে কোন রকম হস্তক্ষেপ না করার শর্তে তিব্বতের প্রাক-১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের সেই পুরাতন রাজনৈতিক অবস্থানের কথা ঘোষণা করেন, যখন তিব্বত চীনের অংশ হিসেবে গণ্য হত।[28][29] আবার, অনেকের মতে, এই সময় তিব্বত কখনৈ চীনের অংশ হিসেবে নিজেকে স্বীকার করেনি।[30] ঊ ঝোংজিনের নেতৃত্বে লাসা শহরে চীনকে একটি কার্য্যালয় খুলতে অনুমতি দেওয়া হয়, যার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ব্রিটিশদের তরফেও লাসায় একটি কার্যালয় খোলার অনুমতি জোগাড় করা হয়।[26]:৬ চীনারা এই কার্য্যালয়কে প্রশাসনিক কার্য্যালয় হিসেবে দাবী করলেও[31] তিব্বতীরা তা মানতে অস্বীকার করে দ্রি ছু নদীর পূর্বদিকের এলাকাগুলি প্রত্যর্পণের দাবী জানায়।[26]:৬ ত্রয়োদশ দলাই লামার মৃত্যুর পরে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বত সরকারের বিরুদ্ধে খাম্স-পা বিদ্রোহ শুরু হয়।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয়তাবাদী চীন সরকারের প্রতিনিধিদের তিব্বত থেকে বিতাড়ণ করা হয়।[26]:৫,৭,৮ এই সময় তিব্বতী সেনাবাহিনীকে দ্রুত আধুনিকীকরণের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা করা হয়।[26]:১২,২০,২১[32]:৩৭, ৪১-৪৩ তিব্বত চীনের পরাধীনতা স্বীকারে অপারগ থাকায় মাও সে তুং তিব্বত সরকারকে মধ্যস্থতায় বসতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে ঐ বছর ডিসেম্বর মাসে চীনা বাহিনীকে চামদো আক্রমণ করার প্রস্তুতি নেওয়ার আদেশ দেন।[32]:৪৪[33]:৪৮,৪৯ বেশ কয়েক মাসের ব্যর্থ আলোচনা[26]:২৮-৩২ ও তিব্বতীদের বৈদেশিক সমর্থনলাভের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর[26]:১২,২০,২১ চীনের সামরিক বাহিনী ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসের ৬ ও ৭ তারিখ জিনশা নদী অতিক্রম করে।[26]:৩২ চীনা বাহিনীর দুইটি দল খুব শীঘ্রই তিব্বতী সেনাবাহিনীকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে ১৯শে অক্টোবরের মধ্যে চামদো অধিকার করে নেয়। এরপর ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে মে বেইজিং শহরে তিব্বতী প্রতিনিধিদল তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তির সতেরো দফা চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার ফলস্বরূপ কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত তিব্বত গণচীনের অধীনে একটি স্বয়ংশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.