Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তাহিতি রাজ্য ছিল একটি পলিনেশিয়ান রাজতন্ত্র। এটি তাদের সর্বপ্রধান নেতা প্রথম পোমারে কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ব্রিটিশ মিশনারি এবং ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এবং ইউরোপীয় অস্ত্রের সহযোগীতায় তাহিতি, মোওরিয়া, তেতিয়ারোয়া এবং মেহেতি দ্বীপগুলোকে একীভূত করেছিলেন। রাজ্যটি সর্বশেষ টুয়ামোটাস এবং অস্ট্রাল দ্বীপপুঞ্জ (রাপা ইতি, রুরুতু, রিমাতারা, তুবুয়াই, রাইভাভে) তার সাথে সংযুক্ত করতে সমর্থ হয়।
তাহিতি রাজ্য Royaume de Tahiti | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৭৮৮/৯১–১৮৮০ | |||||||||
অবস্থা | স্বাধীন রাজ্য (১৭৮৮/৯১-১৮৪২) ফ্রেঞ্চ প্রোটেক্টোরেট (১৮৪২–১৮৮০) | ||||||||
রাজধানী | পাপীটে (Papeete) (১৮৪৭ হতে) | ||||||||
প্রচলিত ভাষা |
| ||||||||
ধর্ম | তাহিতিয়ান, খ্রীষ্টান | ||||||||
সরকার | পরম রাজতন্ত্র | ||||||||
Monarch | |||||||||
• ১৭৮৮/৯১–১৮০৩ | পোমারে-১ Pōmare I (প্রথম) | ||||||||
• ১৮৭৭–১৮৮০ | পোমারে-৫ Pōmare V (সর্বশেষ) | ||||||||
ইতিহাস | |||||||||
• পোমারে-১ (Pōmare-I) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত | ১৭৮৮/৯১ | ||||||||
• Battle of Te Feipī (টে ফেইপি যুদ্বের) পর কনসোলিটেড পাওয়ার | ১২ই নভেম্বর ১৮১৫ | ||||||||
• ফ্রেঞ্চ প্রোটেক্টোরেট গঠন | ৯ সেপ্টেম্বর ১৮৪২ | ||||||||
• ফ্রেঞ্চ-তাহিতিয়ান যুদ্ব | ১৮৪৩–১৮৪৭ | ||||||||
• ফ্রেঞ্চ পোটেক্টোরেট | ১লা জানুয়ারি ১৯৪৭ | ||||||||
• ফ্রান্স কর্তক যুক্তকরন এবং অবলোপন | ২৯ জুন ১৮৮০ | ||||||||
মুদ্রা | ফরাসি ফ্রা পাউন্ড স্টার্লিং | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ | ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া |
দ্বিতীয় পোমারের ব্যপ্টিজমের পর থেকে এর নেতারা খ্রিস্টান ধর্ম অবলন্বন করেন। ইউরোপীয়দের দ্বারা এর প্রগতিশীল উত্থান এবং স্বীকৃতি তাহিতিকে পরিকল্পিত স্প্যানিশ উপনিবেশের পাশাপাশি দ্বীপগুলির উপর অন্যান্য ইউরোপীয় দাবি থেকে স্বাধীন থাকতে দেয়।
রাজ্যটি উনিশ শতকে ওশেনিয়ার বেশ কয়েকটি স্বাধীন পলিনেশিয়ান রাজ্য রাইয়াটিয়া, হুয়াইন, বোরা বোরা, হাওয়াই, সামোয়া, টোঙ্গা, রারোটোঙ্গা এবং নিউআ এর মতো একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। রাজ্যটি পাঁচটি তাহিতিয়ান রাজার রাজত্বকালে দ্বীপগুলিতে শান্তি, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে আসার জন্য পরিচিত। তাহিতি ও এর অধিভূক্ত প্রদেশ সমুহ ১৮৪২ সালে ফরাসী সুরক্ষা অঞ্চলে (প্রটেক্টোরেটে) রূপান্তরিত হয় এবং ১৮৮০ সালে পঞ্চম পোমারে তাহিতি ও এর অধিভূক্ত প্রদেশ সমুহ ফ্রান্সকে দিতে রাজি হওয়ায় ১৮৮০ সালে ফ্রান্সের একটি উপনিবেশ হিসাবে যুক্ত হয়। অধিভুক্তির পরপরই তাই রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়, যদিও সেখানে এখনও উমেদার রয়েছে যিনি নিজেকে দেশের সঠিক শাসক বলে দাবি করেন।
প্রথম পোমারে ১৭৪৩ সালে পারে'তে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন তেউ তুনুইয়েইতেতুয়ার স্ত্রী তেতুপাইয়া-ই-হাউইরি এর গর্ভে জন্ম নেয়া দ্বিতীয় পুত্র। তিনি প্রথমে তার পিতার অধীনে রাজ্য শাসন করেন। তার পিতার মৃত্যুর পর ২৩ নভেম্বর ১৮০২ তারিখে তিনি পোরিওনুউয়ের আরি-রাহিহিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন।
প্রথম পোমারের সময়কাল অবিলম্বে ইউরোপীয় প্রভাবের অধীভুক্ত হয়।
"১৭৭৪ সালে স্প্যানিয়ার্ডদের দ্বারা উপনিবেশ স্থাপনের প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ১৭৯৭ সালে মিশনারি জাহাজ ডাফ এর মাধ্যমে ত্রিশ জন ব্যক্তি এনে পুনর্বাসন (সেটলমেন্ট) করা হয়। প্রথম পোমারে (যিনি ১৮০৫ সাল পর্যন্ত বেচে ছিলেন) এর সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, ক্রমাগত যুদ্ধের কারণে তাদের অনেক অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয়। অবশেষে তারা দ্বিতীয় পোমারের সাথে এইমিওতে তে এবং শেষ পর্যন্ত নিউ সাউথ ওয়েলসে পালিয়ে যায়। ১৮১২ সালে তারা যখন ফিরে আসে তখন পোমারে'রা পৌত্তলিকতা বা বিধর্মীবাদ ত্যাগ করে।"[1]
ব্রিটিশদের সাথে তাহিতিয়ান গোষ্ঠীপ্রধান পোমারের সুসম্পর্ক ছিলো। তাহিতিতে আগত অতিরিক্ত ব্রিটিশ ক্যাপ্টেনগণ তার আধিপত্যের দাবি মেনে নেয়। তারা ব্যবসায়ের বিনিময়ে তাকে বন্দুক দেয় এবং তার যুদ্ধে তাকে সহায়তা করে। ১৭৭৭ সালের দিকে তাহিতিতে তার শেষ অবস্থানের সময় ক্যাপ্টেন জেমস কুক প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তাকে সুবিধা দিয়েছিলেন।[2] এরপর লন্ডন মিশনারি সোসাইটি নামে একটি অ-সাম্প্রদায়িক প্রোটেস্ট্যান্ট গোষ্ঠী ব্রিটিশ মিশনারিদের এখানে পাঠান। পোমারে মিশনারিদের সাথে বন্ধুত্ব করেন, এবং মিশনারিরা শান্তি এবং পোমারে উভয়ের পক্ষে ছিলেন, কিন্তু মিশনারিরা যুদ্ধ থামাতে অক্ষম ছিল, কেনোনা পোমারে'র দ্বীপগুলির মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়নের প্রচেষ্টা সফল করার জন্য স্থায়ী কোন সহায়াতা পাঠাতে ব্রিটিশরা অনিচ্ছুক ছিলো।
রাজা হিসাবে প্রথম পোমারে তাহিতির বিভিন্ন সরদারদের একত্রিত করে একক রাজ্য গঠনে সফল হয়েছিল। এটি তাহিতি, মোওরিয়া, তেতিয়ারোয়া এবং মেহেতি গোষ্ঠীর দ্বীপপুঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত হয়। একীভূত তাহিতির প্রথম রাজা হিসেবে তার দায়িত্ব পালন শেষ হয় যখন ১৭৯১ সালে তিনি পদত্যাগ করেন, কিন্তু তিনি ১৭৯১ থেকে ১৮০৩ সাল পর্যন্ত তাহিতির শাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চারবার বিয়ে করেছিলেন এবং তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল।
ততদিনে, ইউরোপীয়দের সাথে আগত রোগগুলো (যে রোগগুলোর জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা তখনো তাদের তৈরি হয়নি) দ্বীপবাসীদের একে অপরের কাছে ছড়াচ্ছিল, ফলে অনেক দ্বীপবাসী মারা যাচ্ছিল। ১৮০৩ সালে, পোমারে মারা যান। তার পুত্র, ওটু পরিবারের প্রধান হন এবং দ্বিতীয় পোমারে উপাধি গ্রহন করেন। দ্বিতীয় পোমারে ১৮০৩-১৮২১ সালে রাজত্ব করেন। মিশনারিরা পোমারে পরিবারের সাথে মিত্র অবস্থান বজায় রাখেন। শান্তিকামী হওয়া সত্ত্বেও, তারা দ্বিতীয় পোমারে কে তার শাসনের অধীনে দ্বীপবাসীদের একত্রিত করতে সফল হতে দেখতে চেয়েছিল।
তাহিতির রাজা দ্বিতীয় পোমারে (১৭৭৪ - ৭ ডিসেম্বর ১৮২১) ছিলেন ১৭৮২ থেকে ১৮২১ সালের পর্যন্ত তাহিতির দ্বিতীয় রাজা। তার পিতা প্রথম পোমারে ১৭৯১ সালে ১৩ই ফেব্রুয়ারিতে তারাহোইতে তাকে অভিষিক্ত করেন। তিনি ১৭৮২ থেকে ১৮০৩ সাল পর্যন্ত রাজার অধীনে শাসন করেন।
প্রাথমিকভাবে হুয়াইনের শাসক দ্বারা সর্বোচ্চ সার্বভৌম এবং আরি-মারো-উরা হিসাবে স্বীকৃত হোন, তবে পরবর্তীতে ২২ ডিসেম্বর ১৮০৮ সালে তিনি মোরিয়াতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হোন। কিন্তু তিনি ফিরে আসেন এবং তে ফিপির যুদ্ধে তার শত্রুদের পরাজিত করেন। এরপরে তিনি তাহিতি, মোরিয়া এবং এর অধীনস্থ রাজ্য গুলোর অবিসংবাদিত রাজা হিসাবে স্বীকৃত হন।
তাহিতির অন্যান্য সর্দাররা পোমারের ক্ষমতা লিপ্সায় বিরক্ত হয়ে উঠেছিল এবং ১৮০৮ সালে তারা তাকে তাহিতি থেকে নিকটবর্তী আইমিও ( মুরিয়া ) দ্বীপে বিতারিত করে। এইসব অন্যান্য সর্দাররা মিশনারিদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, যার কারণে মিশনারিরা তাহিতি ছেড়ে অন্য দ্বীপে চলে যায়।
পোমারে রাইতেয়া, বোরা বোরা এবং হুয়াইন দ্বীপে তার আত্মীয়দের সহায়তায় সামরিক বাহিনীসংগঠিত করে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করে। ১২ নভেম্বর ১৮১৫ তে পোমারে ফে'ই পি-এর হঠকারী যুদ্ধে জয়লাভ করে। তার বিজয় খ্রিস্টানদের জন্যও একটি বিজয় ছিল। এই জয়ে পোমারে তাহিতিয়ানদের অবাক করে দেয় অস্ত্র সমর্পনকারীদের ক্ষমা করে দিয়ে। পরাজিত যোদ্ধারা যখন পাহাড় থেকে ফিরে আসে, তখন তারা দেখতে পায় যে তাদের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়নি এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করা হয়নি। দ্বিতীয় পোমারের উপর মিশনারিদের প্রভাবে দ্বীপবাসীদের যুদ্ধের সংস্কৃতি পরিবর্তিত হয়েছিল।
গোত্র প্রধানদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত কর্তৃত্ব তাহিতিতে প্রথাগত ছিল না, কিন্তু মিশনারিরা পোমারের নতুন ক্ষমতাকে স্বাগত জানায়। রোগকষ্ট, গৃহযুদ্ধ এবং মৃত্যু মিশনারিদের শিক্ষার প্রতি দ্বিপবাসিদের মনোযোগ গুরুত্ব পায় এবং তাদের আকৃষ্ট করে। দ্বীপবাসীদের পড়তে শেখানোর জন্য মিশনারিরা চেষ্টা করে, যাতে তারা ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারে। খ্রিস্টধর্মের অতিলৌকিক সুরক্ষার নিশ্চয়তায় আশান্বিত হয়ে ব্যাপক ধর্মান্তর সংঘটিত হয়। মিশনারিরা দ্বীপবাসীদের জানালেন কীভাবে পোশাক পরতে হয়। শীতল খোলা বাতাসে ত্বককে উন্মুক্ত রাখার জন্য আবহাওয়া ছিল বেশ উপযুক্ত, কিন্তু ধর্মপ্রচারকদের জন্য তাপমাত্রা কোন বিবেচ্য বিষয় ছিল না। পোষাকহীনতা বা যৎসামান্য পরিধেয় হতে তাদের জন্য পরিপূর্ণ পোশাক পরিধান করাটা ছিল অধিকতর বাঞ্চনীয়।
মিশনারিদের দ্বারা দ্বীপবাসির জীবনধারা উন্নয়নে আরেকটি অবদান ছিল কলকারখানা স্থাপন। মিশনারিরা একটি চিনি শোধনাগার এবং একটি টেক্সটাইল কারখানা স্থাপন করে। ১৮১৭ সালে, তাহিতি তার প্রথম ছাপাখানা স্থাপন করে এবং ১৮১৯ সালে তুলা, চিনি এবং কফি ফসল চাষ শুরু হয়।
দ্বিতীয় পোমারে, মিশনারিদের কাছে আইনের বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছিলেন, এবং রাজতন্ত্রবাদী হওয়ায় মিশনারিরা পোমারেকে একজন উপযুক্ত রাজা হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন, এবং তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে আইনগুলি তার নিজের মতো করে বানাতে হবে, তাদের মতো নয়। যাইহোক, তারা তাকে পরামর্শ দিয়েছিল এবং ১৮১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, পোমারে তাহিতির প্রথম লিখিত আইন প্রনয়ণ করেন। তাতে ছিল জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা, সাবাথ পরিপালন, বিবাহের পবিত্রতা এবং আইন বজায় রাখার জন্য একটি বিচার ব্যবস্থা।
পোমারের বিয়ে হয়েছিল রানী তেতুয়া-নুই তারো-বাহিনের সাথে।
তিনি ১৬ মে ১৮১৯ সালে রয়্যাল চ্যাপেল, পাপে'ইটি তে ব্যাপটিজম গ্রহণ করেন। লন্ডন মিশনারি সোসাইটির তিনজন মিশনারি, হেনরি বিকনেল, উইলিয়ম হেনরি এবং চার্লস উইলসন রাজা দ্বিতীয় পোমারের ব্যাপটিজম সম্পন্ন করেন।
মটু উটা, পাপে'ইটি তে, ৭ ডিসেম্বর ১৮২১ সালে মদ্যপান সংক্রান্ত কারণে দ্বিতীয় পোমারের মৃত্যু হয়। তিনি ১৮২৪ সালে বিয়াল্লিশ বছর বয়সে মারা যান, একটি আট বছরের মেয়ে এবং একটি পাঁচ বছরের ছেলে রেখে। পুত্র, তেরি-তা-রিয়া এবং তৃতীয় পোমারে, মিশনারীদের নিকঠ শিক্ষা গ্রহনের সময় ১৮২১ থেকে ১৮২৭ সাল পর্যন্ত নামেমাত্র রাজ্য শাসন করেন। ১৮২৭ সালে একটি অজানা রোগে তৃতীয় পোমারে মারা যান এবং দ্বিতীয় পোমারের কন্যা, তখন সে এগারো, রানী চতুর্থ পোমারে হন।
তৃতীয় পোমারে ১৮২১ থেকে ১৮২৭ সাল পর্যন্ত তাহিতির রাজত্ব করেন। তিনি দ্বিতীয় পোমারের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন।
তিনি ২৫ জুন ১৮২০ সালে পাপা'ওয়া, 'আরুয়েতে জন্মগ্রহণ করেন তেরি-তা-রিয়া হিসাবে এবং ১০ই সেপ্টেম্বর ১৮২০ সালে তিনি ব্যাপটিজম গ্রহণ করেন। পিতার মৃত্যুতে তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন। ১৮২৪ সালের ২১ এপ্রিল পাপা'ওয়া, 'আরুয়ে তে তিনি মুকুটপ্রাপ্ত হয়েছিল।
তৃতীয় পোমারে সাউথ সি একাডেমী, Papetoai, Moʻorea-এ এর শিক্ষা নিয়েছেন। ১৮২৭ সালের ৮ জানুয়ারীতে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি রিজেন্সি কাউন্সিলের অধীনে রাজ্য পরিচালনা করেন। তার রাজত্বকালে, রাজ্যের প্রথম পতাকা গৃহীত হয়।
তার স্থলাভিষিক্ত হন তার বোন, আইমাতা চতুর্থ পোমারে ভাহিনে-ও-পুনুয়াতেরাইতুয়া, যিনি ১৮২৭-১৮৭৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
চতুর্থ পোমারে, তাহিতির রানী (২৮ ফেব্রুয়ারি ১৮১৩- ১৭ সেপ্টেম্বর ১৮৭৭), আরও সঠিকভাবে 'আইমাতা চতুর্থ পোমারে ভাহিন-ও-পুনুয়াতেরাইতুয়া (অন্যথায় 'আইমাতা' নামে পরিচিত {অর্থ: চোখ ভক্ষনকারী, শাসকের পুরানো রীতি অনুসারে পরাজিত শত্রুর চোখ ভক্ষন} বা কেবল চতুর্থ পোমারে হিসাবে), ১৮২৭ থেকে ১৮৭৭ সালের মধ্যে তাহিতির রানী ছিলেন[3]
তিনি দ্বিতীয় পোমারের কন্যা ছিলেন। তার ভাই পোমার তৃতীয়ের মৃত্যুর পর তিনি তাহিতির শাসক হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন মাত্র ১৪ বছর বয়সে।
তাহিতি রাজ্যের সাথে রা'ইয়াটিয়া এবং পোরাপোরা (বোরাবোরা) কে পুনরায় একত্রিত করতে তিনি সফল হন। তিনি চার্লস ডারউইন সহ অসংখ্য ব্রিটিশদের আতীথিয়েতা করেছেন।
১৭৯০ সালে যারা এইচএমএস পিটকেয়ার্নে বসতি স্থাপন করেছিল, তাদের মধ্যে মাত্র সাতজন জীবিত ছিল। ১৮২৯ সাল পর্যন্ত, তবে সন্তান সন্ততি সহ তাদের সংখ্যা হয়েছিল ৮৬। পিটকেয়ার্নে কাঠের সরবরাহ কমে গিয়েছিল এবং জলের প্রাপ্যতা ছিল অনিয়মিত।
নেপোলিয়ন যুদ্ধের সমাপ্তির পর, রয়্যাল নেভি এবং ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ, পিটকেয়ার্ন দ্বীপবাসীদের খুজে পায় এবং তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করে। ১৮৩০ সালে, তাহিতির রানী চতুর্থ পোমারে পিটকেয়ার্নবাসীদের তাহিতিতে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানান এবং ১৮৩১ সালের মার্চ মাসে একটি ব্রিটিশ জাহাজে করে তাদেরকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন। তাহিতিয়ানরা পিটকেয়ার্নবাসীদের স্বাগত জানায় এবং তাদেরকে জমি দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অনেক দিন বিচ্ছিন্ন থাকায় এবং তাহিতিতে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়া রোগের বিরুদ্বে কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে না উঠায়, পিটকেয়ার্নবাসীরা উদ্বেগজনক সংখ্যায় রোগাক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে চৌদ্দ জন মারা যায়। বেঁচে থাকা পিটকেয়ার্নবাসীদের জন্য তাহিতিয়ানরা মজুত যোগাড় করে এবং ৫০০ ডলারের বিনিময়ে একটি তিমি শিকারের জাহাজ ভাড়া করে দেয় যার ক্যাপ্টেন তাদেরকে পিটকেয়ার্নে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।[4]
১৮৪২ সালে, ফ্রান্স এবং গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে মরক্কো কে জড়িয়ে চলা ইউরোপীয় সঙ্কট আরো বৃদ্ধি পায় যখন ফরাসি সরকারের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করা অ্যাডমিরাল অ্যাবেল আউবার্ট ডু পেটিট-থোয়ার্স, তাহিতির রানী চতুর্থ পোমারেকে ফরাসি প্রটেক্টেরেট গ্রহণ করতে রাজি করান। জর্জ প্রিচার্ড, বার্মিংহামে জন্মগ্রহণকারী একজন ধর্মপ্রচারক এবং ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ কনসাল, সেই সময় তাহিতি হতে দূরে ছিলেন। তবে তিনি ক্যাথলিক ফরাসিদের প্রভাবের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের প্রভাবিত করার জন্য অবিলন্বে ফিরে আসেন। ১৮৪৩ সালের নভেম্বরে, ডু পেটিট-থোয়ার্স (আবার তার নিজস্ব উদ্যোগে) তার নাবিকদের দ্বীপে অবতরণ করান, এটিকে ফ্রান্সের সাথে সংযুক্ত করেন। এরপর তিনি প্রিচার্ডকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন, এবং পরবর্তীতে তাকে ব্রিটেনে ফেরত পাঠান।[5]
এই সময়ের মধ্যে, থোয়ার্স পমারে চতুর্থকে তার দেশকে ফ্রান্সের সুরক্ষার অধীনে রাখার জন্য সই করতে রাজি করাতে সক্ষম হন, যদিও তিনি এটি করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন না বা এই বিষয়ে কাজ করার জন্য কখনও তাকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ১৮৪৪ সালের প্রথম দিকে তাহিতির খবর ইউরোপে পৌঁছে। ফ্রান্সের রাজা লুই-ফিলিপ সমর্থিত ফরাসি রাজনীতিবিদ ফ্রাঁসোয়া গুইজোট দ্বীপটি অধিগ্রহণের নিন্দা করেন এবং ফ্রান্স কখনই চুক্তিটি সমর্থন করেনি।
যাইহোক, ফরাসিদের এই অঞ্চলে আগ্রহ ছিল, এবং চুক্তিটি বিভিন্ন দল দ্বারা স্বাক্ষরিত হওয়ার পর প্রয়োগ করা হয়। ১৮৪৩ থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত তাহিতিয়ান এবং ফরাসিদের মধ্যে ফ্রাঙ্কো-তাহিতিয়ান যুদ্ধ চলে। চতুর্থ পোমারে ১৮৪৩ থেকে ১৮৪৭ পর্যন্ত ফরাসি প্রশাসনের অধীনে শাসন করেছিলেন।
কিছু সময়ের জন্য রাজবংশ তাদের শিরোনাম ধরে রাখতে পারলেও, রাজ্যের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তারা হারায়।
পোমার চতুর্থ ১৮৭৭ সালে স্বাভাবিক ভাবে মারা যান। তাকে 'আরুউর পাপা'ওয়া তে, রাজকীয় সমাধিতে সমাহিত করা হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হন পঞ্চম পোমারে, যিনি ১৮৭৭-১৮৮০ সাল রাজত্ব করেন।
পঞ্চম পোমারে, তাহিতির রাজা (৩ নভেম্বর ১৮৩৯ - ১২ জুন ১৮৯১)। তিনি ছিলেন তাহিতির শেষ রাজা। ১৮৭৭ সাল হতে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগ করানোর আগ পর্যন্ত। তিনি রানী চতুর্থ পোমারেের পুত্র ছিলেন। তিনি তেরিই তারিয়া তে-রা-তানে হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩ মে ১৯৫৫ সালে তার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী এবং ক্রাউন প্রিন্স (আরিই-আউ) হন। ১৮৭৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তার মায়ের মৃত্যুতে তিনি তাহিতির রাজা হন। ১৮৭৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাপে'ইটেতে তাঁর রাজ্যাভিষেক হয়।
তিনি দুবার বিয়ে করেন, প্রথমে ১১ নভেম্বর ১৮৫৭ সালে তে-মা-রি'ই-মা'ই-হারা তে-উহে-আ-তে-উরু-রা'ই, হুয়াইনের রাজকুমারীকে। ১৮৬১ সালের ৫ই আগস্ট তিনি তাকে তালাক দেন। ২৮ই জানুয়ারি ১৮৭৫ সালে পাপে'ইটেতেজোয়ানা মারা'উ-তা'আরোয়া তে-পা'উ সালমন (এরপরে তাহিতির রাণী মারউ নামে পরিচিত) এর সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। ১৮৮৮সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি তাকে তালাক দেন।
পঞ্চম পোমারে-এর এক ছেলে ও দুই মেয়ে ছিল।
তাহিতি দ্বীপ এবং এর বেশিরভাগ উপদ্বীপ সমূহ উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত ফরাসি আধিপত্যে ছিল, যখন রাজা পঞ্চম পোমারে (১৮৪২-১৮৯১) তাহিতির সার্বভৌমত্ব এবং ডিপেন্ডেন্সি ফ্রান্সের নিকট হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল। ২৯ই জুন ১৮৮০ সালে, তিনি তাহিতি এবং এর অধীনস্থ দ্বীপ সমুহ ফ্রান্সকে দিয়ে দেন। ফরাসি সরকার তাকে পেনশন দেন এবং ৯ই নভেম্বর ১৮৮০ সালে ফ্রান্সের লিজিয়ন অফ অনার এবং এগ্রীকালচারাল মেরিট এর অফিসার অব দ্য অর্ডার নামে পদমর্যাদা প্রদান করে।
তিনি রয়্যাল প্যালেস, পাপে'ইটেতে মদ্যপানের কারণে মারা যান এবং 'আরুয়ে'র উতু'আই'আই এর রাজ সমাধিতে সমাধিস্থ হন।
রাজবংশ তাহিতিয়ান এবং আশেপাশের সংস্কৃতিতে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছে। ক্ষমতার চরম সীমায়, পোমারে গণ তাদের ঘাঁটি তাহিতি এবং মু'ওরিয়ায় রেখে কার্যকরভাবে রাজ্য শাসন করতে সক্ষম হয় যা ছিলো একটি দ্বীপের রাজ্য, যা সমুদ্রের ৩০ লক্ষ বর্গ কিমি জুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং কুক দ্বীপপুঞ্জ থেকে রাপা ন্যুই পর্যন্ত তারা কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। প্রশান্ত মহাসাগরে ইউরোপীয় অনুসন্ধান যুগের অভিজ্ঞতা তাদের হয়েছিলো এবং সেই সাথে প্রকৃতপক্ষে তারা এর অংশ ও ফলাফল ছিল। তারা তাহিতিতে অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক উত্থান ঘটায় এবং তাদের জনগণ দেখতে পায় পরিবর্তিত সময়, বিদেশী প্রভাব এবং যুদ্ধ। তারা তাদের ঐতিহ্য এবং স্বাধীনতা উভয়ই একটি সময় পর্যন্ত রক্ষা করে চলে, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক দমনের একটি বাহক হিসাবেও তারা কাজ করে এবং পরবর্তীতে ফ্রান্স কর্তৃক তাহিতিকে উপনিবেশে পরিণত করার সুবিধার্থে ফরাসি চাপের প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করে।
ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত, তাওয়াতোমো মাইরাউ, নিজেকে তাহিতিয়ান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী বলে দাবি করেন এবং আদালতে রাজতন্ত্রের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। ফ্রান্স তার দাবির স্বীকৃতি দেয়নি।[6][7]
২০১০ সালে, তিনি সিংহাসনের উমেদার (pretender) হন এবং তাহিতির প্রিন্স মারাউ উপাধি দাবি করেন।[8] রাজকীয় ট্রাস্টের জমিগুলি তাকে এবং তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য তিনি কাজ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফরাসি সরকার জমি বন্ধক দিয়েছিল ১৮৮০ সালে পঞ্চম পোমারের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘন করে যাতে তাহিতির রাজপরিবারের জন্য ট্রাস্টের জমিগুলো নিয়ন্ত্রণ সংরক্ষিত ছিল। ব্যাঙ্কগুলি সম্পদগুলি জব্দ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে পারে, এবং মাইরাউ স্থানীয় তাহিতিয়ানদের তার ট্রাস্টের জমি থেকে উচ্ছেদ করা থেকে বিরত রাখার জন্য মামলা করেছিল এবং তার ট্রাস্টের জমির উপর তাদের ব্যবহারের অধিকার বজায় খাকুক তা সে চেয়েছিলো।[9] ২০১৩ সালের মে মাসে তিনি মারা যান।
২৮ই মে ২০০৯ -এ, প্রধান সর্দারদের বংশধরদের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে পোমারে পরিবারের একজন দত্তক সদস্য জয়নভিলে পোমারে নিজেকে রাজা পোমারে এগারোতম ঘোষণা করেন, যদিও তার নিজের পরিবারের সদস্যরা ঐ অনুষ্ঠান এড়িয়ে যান।[10] পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তার চাচা লিওপোল্ড পোমারেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।[11]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.