Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ট্র্যাকট্যাটাস লজিকো ফিলোসফিকাস (Tractatus logico philosophicus) একটি লাতিন শব্দবন্ধ। ইংরেজিতে একে বলা যায়, "Logical-Philosophical Treatise"। একটি দার্শনিক গ্রন্থের নাম। দার্শনিক জি. ই. ম্যুরের পরামর্শে ব্রাউচ স্পিনোজা (Baruch Spinoza)-এর "Tractatus Theologico-Politicus" গ্রন্থের সম্মানে বইটির লাতিন নাম রাখা হয়েছে। বইটি বিংশ শতাব্দির অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্লেষণী চিন্তাবিদ লুদভিগ ভিতগেনস্তাইনের অমর দার্শনিক কীর্তি। ২০,০০০ শব্দ সংবলিত এই গ্রন্থটি সমকালিন বিশ্লেষণী বা ভাষাদর্শনের মূল স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। বারট্রান্ড রাসেল-হোয়াইটহেডকৃত Principia Mathematica গ্রন্থের সমালোচনা হিসেবে গ্রন্থটি রচিত।[1] ভাষা ও বাস্তবতার মধ্যকার সম্পর্ক এবং বিজ্ঞানের সীমা নির্দেশ করতেই ভিতগেনস্তাইনের এই প্রচেষ্টা।
লেখক | লুডভিগ ভিতগেনস্তাইন |
---|---|
মূল শিরোনাম | Logisch-Philosophische Abhandlung |
অনুবাদক | মূল ইংরেজি অনুবাদ ফ্রাঙ্ক পি. রামেসি এবং সি.কে. ওগডেন |
দেশ | জার্মানি |
ভাষা | জার্মান |
বিষয় | ভাষাদর্শন, যুক্তি |
প্রকাশক | প্রথম প্রকাশ: ডব্লিও. ওস্টওয়াল্ড'র Annalen der Naturphilosophie |
প্রকাশনার তারিখ | ১৯২১ |
বাংলায় প্রকাশিত | কিগান পল, ১৯২২ |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৭২ |
ভিতগেনস্তাইন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সেনানী থাকা অবস্থায় ট্র্যাকট্যাটাস গ্রন্থটি লেখার টোকা লিখেছেন এবং কোমো ও ক্যাসিনোতে কয়েদি থাকা অবস্থায় ১৯১৮ সালের আগস্ট মাসে এটি শেষ করেছেন। ১৯২১ সালে "Logisch-Philosophische Abhandlung" শিরোনামে জার্মান ভাষায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি প্রধানত ভিয়েনা চক্রের যৌক্তিক ইতিবাদী দার্শনিক, বিশেষ করে রুডলফ কারণাপ ও ফ্রেদরিক ভাইজম্যানকে প্রভাবিত করেছে। শুধু তাই নয়, ভিতগেনস্তাইনের ট্র্যাকট্যাটাসীয় ধারণারই রূপায়ণ রাসেলের প্রবন্ধ "The Philosophy of Logical Atomism"।
যুক্তিবিদ্যা ও জ্ঞানবিদ্যার অনেক মূল্যবান, মৌলিক এবং সুক্ষ বিষয় এ-গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে। এ-গ্রন্থে ভিতগেনস্তাইন সাতটি সূত্র প্রদান করেছেন। যৌগিক ভাষা হতে হলে যেসব শর্ত পূরণ করতে হয়, এ-গ্রন্থে তাও উল্লেখিত হয়েছে। এ-গ্রন্থের মূল বক্তব্য হলো: ভাষা ঘটনার প্রতিচ্ছবি। জগৎ ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘটনা দ্বারা গঠিত। আমরা ঘটনার চিত্র বা ছবি আঁকি। ঘটনার সাথে অবশ্যই ছবির মিল থাকতে হবে। চিত্র বা ছবির অর্থ হচ্ছে চিত্র বা ছবির মধ্যে যা প্রতিফলিত হয়। বচন হচ্ছে বাস্তব সত্তার চিত্র বা ছবি। একটি শব্দ একটি বস্তুর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। বচনের সাথে বাস্তব সত্তার মিল বা সাদৃশ্য থাকতে হবে। বচন তখনই সত্য হবে যখন এটি বাস্তব সত্তার ছবি হবে। তা না হলে বচন মিথ্যে হবে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এরূপ সত্য বচনে ভরপুর। দর্শন প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নয় বলে দর্শনের প্রায় সব উক্তিই অর্থহীন। ভিতগেনস্তাইনের মতে, দর্শনের প্রধান কাজ হচ্ছে সম্প্রসারণমূলক এবং ভাষা ও চিন্তার যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা। তিনি এ-গ্রন্থে বলেন, “যা বলা যায়, তা পরিষ্কারভাবে বলা যায়, আর যে বিষয়ে কেউ বলতে পারেন না, সে-বিষয়ে চুপ থাকাই বাঞ্ছনীয়” (where of one cannot speak, there of one must be silent)। তিনি দেখান যে, দর্শন কোনো মতবাদ নয়, বরং একটা ক্রিয়া এবং দর্শন ভাষা বিশ্লেষণ নিয়ে কারবার করে। ভাষার মধ্যে দ্ব্যর্থবোধকতা ও অস্পষ্টতাকে যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দূরীভূত করে ভাষার মধ্যে সঠিকতা ও স্পষ্টতা আনয়ন করাই দর্শনের কাজ। বিশ্লেষণী দার্শনিকদের এ-সংজ্ঞানুসারে দার্শনিক সমস্যা ভাষাগত সমস্যার নামান্তর বৈ আর কিছু নয়।
ট্র্যাকট্যাটাস গ্রন্থে ভিতগেনস্তাইন ভাষাকে একটা প্রতীক হিসেবে কল্পনা করেছেন। বাস্তবতা প্রকাশ করতে না পারলে সেই ভাষার কোনো অর্থই হয় না। এমন ভাষা প্রয়োগ করা উচিত নয় যার কোনো জাগতিক বাস্তবতা নেই। তার মতে অর্থপূর্ণ বচন দু’ধরনের: . মৌলিক বচন, ও . যৌগিক বচন। মৌলিক বচন বলতে তিনি বুঝেছেন সেইসব বচন, সেগুলোর অর্থ ও সত্যতা নিহিত থাকে অন্যান্য বচনের সাথে তাদের সম্বন্ধের মধ্যে নয়, বরং জগতের সঙ্গে তাদের সম্বন্ধের মধ্যে। তার দৃঢ় বিশ্বাস, বচনের যদি আদৌ কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই এ-ধরনের সরল অবিশ্লেষণযোগ্য বচন থাকবে। জগতের সাথে সম্পর্কিত এবং জগতের সঠিক চিত্র হিসেবে কাজ করে এমন সব বচনকেই তিনি মৌলিক বচন বলেছেন। জগত বলতে অবশ্য ভিতগেনস্তাইন শুধু বস্তুজগতকে বোঝাননি, তথ্য ও ঘটনাও এর অংশ। মৌলিক বচনের সমন্বয়ে যৌগিক বচন গঠিত। যে-সব বাক্য যৌগিক বচনের প্রকাশক, সেগুলো মৌলিক বচনের সত্যাপেক্ষক (truth function)। এদের অর্থ ও সত্যতা মৌলিক উপকরণাদির অর্থ ও সত্যতার উপর নির্ভরশীল। কোনো যৌগিক বচন প্রকাশ করা মানে মৌলিক বচনের সংগৃহীত সমষ্টিকে একই সাথে স্বীকার বা অস্বীকার করার চেয়ে বেশি কিছু নয়। একটি যৌগিক উক্তিতে তার অন্তর্ভুক্ত উপাদানসমূহের অন্তর্নিহিত অর্থের অতিরিক্ত কিছু থাকে না।
ভিতগেনস্তাইন ট্র্যাকট্যাটাস গ্রন্থে তিন ধরনের অর্থহীনতার কথা বলেন। প্রথমত, গতানুগতিক অধিবিদ্যা একধরনের অর্থহীনতার সমবায়ে গঠিত। এগুলো সবচেয়ে আপত্তিকর। দর্শনে যেসব রচনা পাওয়া যায় সেগুলোর অধিকাংশই মিথ্যে না হলেও সুনিশ্চিতভাবে অর্থহীন। ভাষার অন্তর্নিহিত যুক্তিকে বোঝার ব্যর্থতা তেকেই এদের উৎপত্তি।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.