জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী
স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী (জন্ম: ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৮ - ১১ নভেম্বর, ২০১৪[1]) প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক।
১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি (১০ ফাল্গুন) জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামে পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তখন অবশ্য বৃহত্তর যশোর জেলায় ছিল এর অবস্থান। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী মায়ের প্রথম সন্তান না হলেও একদিক দিয়ে প্রথম, কারণ তারও আগে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তার মা। সে মেয়েটি আঁতুড়েই মারা যায়। প্রথম ও চতুর্থ অবস্থানে তারা দুই ভাই, বাকি ছয়জন বোন। তার বাবা ফজলুর রহমান সিদ্দিকী থাকতেন কলকাতার একটি ভাড়া বাসায়। তিনি কলকাতার নর্মাল স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তিনি যে পাঠশালায় পড়াশুনা করেছেন সেটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তার দাদা। কলকাতার নর্মাল স্কুলে তার বাবা ১৫ বছর শিক্ষকতা করার পরে কলকাতার বাইরে পোষ্টিং শুরু হয়। ফলে গ্রামের পাঠশালার পাঠ শেষ করে জিল্লুর রহমান বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন । পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণী তিনি পড়েছেন বাঁকুড়া জিলা স্কুলে।
১৯৪০-৪১ সালে তার বাবা আবার বদলি হলেন জলপাইগুড়ি। ১৯৪১ সালে জলপাইগুড়ি জিলা স্কুলে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী । ৮ম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় স্টার মার্কসসহ ১ম বিভাগ পেয়ে ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে, আইএ ক্লাসে। তখন তিনি থাকতেন বউবাজার মোড়ে অবস্থিত টেইলর হোস্টেলে। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা হলে হোস্টেল ছেড়ে কয়েক মাস নিরাশ্রয় জীবনযাপন শেষে মীর্জাপুর স্ট্রিটের মুসলমান ছাত্রদের কলেজ হোস্টেলে তিনি ৩ মাস থাকেন। ১৯৪৭ সালে আইএ পরীক্ষা দিয়ে ১ম বিভাগ লাভ করেন। দেশভাগের পর ঢাকায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ অনার্স ক্লাসে ভর্তি হন। তখন তিনি থাকতেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। ১৯৫০ সালে বিএ অনার্স পরীক্ষায় জিল্লুর রহমান ইংরেজি সাহিত্যে ১ম শ্রেণী লাভ করেন। ১৯৫১ সালের এমএ পরীক্ষায়ও ১ম শ্রেণী অর্জন করেন। জিল্লুর রহমান ১৯৫২ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে অক্সফোর্ডে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।[2]
১৯৫১ সালেই বিয়ে করেন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। তার স্ত্রীর নাম কায়সার। তার স্ত্রী ছিলেন ময়মনসিংহ শহরের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, প্রাক্তন এমএলএ আবদুল মজিদের কন্যা। এই দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে আছে।[3]
১৯৫২ সালে রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা কেন্দ্রে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী প্রোগ্রাম সহকারী হিসেবে কাজ করেন ৩-৪ মাস। অক্সফোর্ড থেকে দেশে ফেরার পর ঢাকা কলেজে প্রফেসর পদে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে লেকচারার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে ইংরেজি বিভাগের রিডার ও বিভাগীয় প্রধান হন। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬১ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সঙ্গে মিলে প্রকাশ করেন ত্রৈমাসিক 'পূর্বমেঘ'। ১৯৬৭ সালে তিনি মিল্টনের বিখ্যাত গদ্যরচনা অ্যারিওপ্যাজিটিকার অনুবাদ করেন। ১৯৭৩ সালে ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে মিল্টনের মৃত্যুর ত্রি-শতবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নেন। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের রিগায় গিয়েছিলেন লেখক/কবি সম্মেলনে অংশ নিতে। সে সময় মস্কো, লেনিনগ্রাদ, তিবিলিসি, কিয়েভসহ অনেক শহরেই সফর করেছেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের খণ্ডকালীন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে ৪ বছরের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে অবসরগ্রহণ করেন। সেখানেই ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে পুণর্বার যোগ দেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং ১৯৯৫ সালের জানুয়ারির সময়টা তিনি অতিবাহিত করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে। ২০০০ সালে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন এবং ২০০৩ সালে সেখান থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন কর্মী।[2] এছাড়াও তিনি ১৯৯০-৯১ সনে দায়িত্ব পালন করেন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে।[1]
প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী দেশে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রেখেছেন৷ তিনি বাংলা একাডেমী, ঢাকার ফেলো; এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ-এর ফেলো; বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি; নাগরিক নাট্য চক্রের সভাপতি ইত্যাদি বিভিন্ন সম্মানজনক দায়িত্ব পালন করেন৷[4]
প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বাংলা সাহিত্যে অনন্য অবদান রাখার জন্য বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেন, যেমন- আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৭); কাজী মাহবুবুল্লাহ বেগম জেবুন্নিসা ট্রাস্ট এওয়ার্ড (১৯৯০); অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৮); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৯); এম.এ. হক স্বর্ণ পদক (২০০৩) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১০)।[4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.