Loading AI tools
ভাইরাসের প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জিকা ভাইরাস ( ইংরেজি Zika virus) হচ্ছে ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবারের ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত। এই পরিবারের অন্যান্য ভাইরাসের মত এটি আবরণযুক্ত ও আইকসাহেড্রাল আকৃতির একসূত্রক RNA ভাইরাস। এটি প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় রেসাস ম্যাকাক বানরের দেহে পাওয়া যায়।পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে উগান্ডা ও তানজানিয়াতে মানবদেহে প্রথমবারের মত শনাক্ত করা হয়।
জিকা ভাইরাস | |
---|---|
বিশেষত্ব | Infectious disease Zoonosis |
এই ভাইরাস মানব শরীরে প্রাথমিকভাবে জিকা জ্বর, জিকা অথবা জিকা রোগ করতে পারে। ১৯৫০ সাল থেকে এই ভাইরাস আফ্রিকা থেকে এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত নিরক্ষরেখা বরাবর অঞ্চলগুলোতে রোগ ছড়ায়। এটি ২০০৭ সালে ইয়াপ দ্বীপপুঞ্জে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। এতে কমপক্ষে ৪৯ জন মানুষ আক্রান্ত হয় কিন্তু কেউ মারা যায়নি। [1] ২০১৪ সালে এটি প্রশান্ত মহাসাগর এর ফরাসি পলিনেশিয়া অঞ্চলে ও পরবর্তীকালে ইস্টার আইল্যান্ডে এবং ২০১৫ সালে মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়ায়। [2] জিকা ভাইরাসটি ডেঙ্গু ভাইরাস, পীতজ্বর ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালাইটিস, এবং ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস এর সাথে সম্পর্কিত। এই ভাইরাস যে রোগ সৃষ্টি করে তার সাথে ডেঙ্গু জ্বর এর কিছুটা মিল রয়েছে। [3] বিশ্রাম নেওয়া হলো প্রধান চিকিৎসা [4] এখনো এর কোন ওষুধ বা টীকা আবিষ্কৃত হয় নি।[4] যে সকল নারীরা জিকা জ্বরে আক্রান্ত তাদের গর্ভের সন্তান মাইক্রোসেফালি বা ছোট আকৃতির মাথা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। [5][6] এছাড়া বড়দের ক্ষেত্রে এটি গিলেন বারে সিনড্রোম করতে পারে।
উগান্ডার জিকা নামের একটি গ্রামের নাম অনুসারে রাখা হয়। স্থানীয় ভাষায় জিকা মানে বাড়ন্ত । সেখানেই বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মূলত ২ ধরনের এডিস মশা দিয়ে এই ভাইরাস ছড়ায়। গ্রীষ্মমণ্ডল ও এর নিকটবর্তী অঞ্চলে Aedes aegypti মশার মাধ্যমে ছড়ায় কারণ শীতপ্রধান অঞ্চলে এরা টিকে থাকতে পারেনা। Aedes albopictus মশাও এই রোগ ছড়াতে পারে। এরা শীতপ্রধান অঞ্চলে টিকে থাকতে পারে। শুধু স্ত্রী মশা দিনের বেলা কামড়ায়। এরা একবারে একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। একবার রক্ত খাওয়া শেষে ডিম পাড়ার পূর্বে তিন দিনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।এদের ডিমগুলো পানিতে এক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।অল্প পরিমাণ জমে থাকা পানিও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট।জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কামড়ালে উক্ত মশাও ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। [7] জিকা ভাইরাস শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আমেরিকাতে এরকম ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।[8]
জিকা ভাইরাস পলিমারেজ চেইন রিয়াকশন(PCR)এর মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় এবং রক্তের নমুনা থেকে ভাইরাস পৃথক করা যায়।[9]
জিকা ভাইরাস যে রোগ সৃষ্টি করে তার নাম জিকা জ্বর।এর সাথে ডেঙ্গু জ্বর,পীত জ্বর প্রভৃতির অনেক মিল আছে। এর উপসর্গগুলো হলো জ্বর, হাল্কা মাথা ব্যথা, অবসাদগ্রস্ততা, কনজাংটিভাইটিস, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা,পেশীতে ব্যথা, শরীরে লালচে দাগ বা ফুস্কুড়ি ইত্যাদি।রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে এই ভাইরাস কয়েকদিন থাকে তবে কোন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর্যন্ত থাকতে পারে।এর সুপ্তিকাল কয়েকদিন হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। উপসর্গগুলো হালকা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্র হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। এবং ২-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুর্লভ। [10]
এই ভাইরাস নিয়ে আগে তেমন গবেষণা না হওয়ায় এর জটিলতা সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। ২০১৩-২০১৪ সালে ফরাসি পলিনেশিয়া অঞ্চলে জিকা ভাইরাস প্রাদূর্ভাবের সময় গিলেন ব্যারে সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে ব্রাজিলেও একই ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। এই বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু হয়েছে। এছাড়া গর্ভবতী মহিলারা এই রোগে আক্রান্ত হলে এটি অমরা ভেদ করে গর্ভের সন্তানকে আক্রান্ত করতে পারে।বাচ্চা মাইক্রোসেফালি নিয়ে জন্মায়। ২০১৫ সালে ব্রাজিলে এই ধরনের বাচ্চা জন্মের হার অনেক বেড়েছে। মাইক্রোসেফালি এমন একটি অবস্থা যেখানে বাচ্চার মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ছোট হয়।বাচ্চার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক গঠন ব্যাহত হবে। [11]
এই রোগের কোন ওষুধ বা টীকা নেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে যেন পানিশূন্যতা না হয়। ব্যথা ও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।তবে অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য NSAID যেমন আইবুপ্রফেন, ন্যাপ্রক্সেন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে।[12] এছাড়া ভাইরাসে আক্রান্ত বাচ্চাদেরকে জ্বর ও ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন খাওয়ালে রাই সিনড্রোম (Reye syndrome) হতে পারে এবং বাচ্চা মারা যেতে পারে। [13]
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম এক সপ্তাহ রোগীর রক্তে ভাইরাস থাকতে পারে তাই এই সময় রোগীকে যেন মশা না কামড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে কারণ ঐ ব্যক্তিকে কামড়ালে ভাইরাস মশার শরীরে প্রবেশ করবে এবং ঐ মশা কোন সুস্থ্য ব্যক্তিকে কামড়ালে সে ব্যক্তিও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এডিস মশা সাধারণত বালতি, ফুলের টব, গাড়ীর টায়ার প্রভৃতিতে জমে থাকা পানিতে জন্মায় তাই সেগুলোতে যেন পানি না জমে থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া পুরা শরীর ঢেকে থাকে এমন কাপড় পরিধান করতে হবে, মশারির নিচে ঘুমাতে হবে। [14] এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌনমিলন করা থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হচ্ছে। [15]
এখনও জিকা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এটি বানানোর চেষ্টা করছেন গবেষকরা। পরীক্ষার জন্য জিকা ভাইরাসের টিকা পেতে দুই বছর লাগতে পারে। তবে এটি হাতে আসতে এক দশক সময় লাগতে পারে।[16][17]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.