জন্ম নিয়ন্ত্রণ
মানব শিশু জন্ম ও গর্ভধারণ প্রতিরোধ পদ্ধতি / From Wikipedia, the free encyclopedia
জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা গর্ভবিরতিকরণ বা গর্ভনিরোধ বা প্রজনন নিয়ন্ত্রণ হলো গর্ভধারণ প্রতিরোধের এক বা একাধিক কর্মপ্রক্রিয়া, পদ্ধতি, সংযমিত যৌনচর্চা অথবা ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে ঐচ্ছিকভাবে গর্ভধারণ বা সন্তান প্রসব থেকে বিরত থাকার স্বাস্থ্যবিধি।[1] জন্ম নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা, বিধান ও ব্যবহারকে পরিবার পরিকল্পনা বলা হয়।[2][3] নিরাপদ যৌনতা (যেমন: কনডম ব্যবহার) যৌন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।[4][5] জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আদিকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এর কার্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতি শুধুমাত্র বিশ শতকের মধ্যেই সহজলভ্য হয়ে ওঠে।[6] কিছু সংস্কৃতিতে ইচ্ছাকৃতভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। কারণ সেসব সংস্কৃতিতে এটাকে নৈতিকভাবে বা রাজনৈতিকভাবে অবাঞ্ছিত বিবেচনা করা হয়ে থাকে।[6]
জন্ম নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো, পুরুষদের ক্ষেত্রে ভেসেকটমি (৯৯.৮৫% সাফল্যের হার) আর মহিলাদের ক্ষেত্রে টিউবাল বন্ধ্যাকরণ (tubal ligation) (৯৯.৫% সাফল্যের হার) অথবা টিউবেকটমি। এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় মৌখিক ঔষধ, প্যাচ, যোনি আংটি, এবং ইনজেকশনসহ হরমোন ঘটিত গর্ভনিরোধক অনুসারে। স্বল্প কার্যকর পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে কনডম, জন্মনিরোধক বড়ি, গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ এবং প্রজনন সচেতনতা পদ্ধতি। ন্যুনতম কার্যকর পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে শুক্রাণু নষ্ট করা এবং বীর্যস্খলনের পূর্বে শিশ্ন যোনি থেকে বের করে নেওয়া। নির্বীজন একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি এবং যা সাধারণত প্রতি-বর্তনসাধ্য নয়, তবে অন্যান্য পদ্ধতি প্রতি-বর্তনযোগ্য। জরুরী গর্ভনিরোধক অরক্ষিত যৌনমিলনের পর কয়েক দিনের মধ্যে গর্ভাবস্থার প্রতিরোধ করতে পারে। কেউ কেউ জন্ম নিয়ন্ত্রণ হিসাবে যৌন বিরতি বিবেচনা করে থাকলেও এই যৌন বিরতি পদ্ধতি গর্ভনিরোধক শিক্ষা ব্যতীত গ্রহণ করা হলে বাল্যবয়সে গর্ভধারণ বৃদ্ধি পেতে পারে।[7][8]
অপ্রাপ্তবয়স্ক গর্ভধারণের ফলাফলে দরিদ্রতা বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে।[9] সমন্বিত যৌন শিক্ষা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করার সুযোগের কারণে এই বয়সের মধ্যে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের হার কম হয়।[9][10] যদিও সব ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অপ্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারাই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[11] দীর্ঘ মেয়াদী বিপরিতমুখী জন্ম নিয়ন্ত্রণ যেমন ইমপ্লান্ট, IUDs, বা যোনি আংটি অপ্রাপ্তবয়স্ক গর্ভাবস্থার হার কমাতে বিশেষ সুবিধার হয়।[10] শিশু প্রসবের পর, স্বতন্ত্রভাবে স্তন্যপান করানো না হলে চার থেকে ছয় সপ্তাহ পরে পুনরায় গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের কিছু পদ্ধতি অবিলম্বে শুরু করা যেতে পারে, যখন অন্যদের ছয় মাসের একটি বিরতি প্রয়োজন।[11] যারা শুধুমাত্র স্তন্যদান পদ্ধতি ব্যবহার করে সম্মিলিত মৌখিক গর্ভনিরোধক হিসেবে।[11] যারা রজবন্ধে পৌঁছেছেন তাদের ক্ষেত্রে রজচক্রের শেষ সময়ের পরে এক বছরের জন্য এই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অব্যাহত রাখা বাঞ্ছনীয়।[11]
উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ২২২ মিলিয়ন নারী গর্ভাবস্থা এড়াতে কোনো আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে না।[12][13] উন্নয়নশীল দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে ৪০% প্রসবকালীন মৃত্যু হ্রাস পেয়েছে (প্রায় ২৭০.০০০ মৃত্যু ২০০৮ সালে প্রতিরোধকারী) এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করা হলে প্রায় ৭০% মৃত্যু প্রতিরোধ করতে পারে সক্ষম হবে।[14][15] গর্ভধারণের মধ্যে সময় দীর্ঘায়ীত দ্বারা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বয়স্ক মহিলাদের প্রসবের ফলাফলের এবং তাদের শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উন্নত করতে পারে।[14] উন্নয়নশীল বিশ্বে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, নারীদের উপার্জন, সম্পদ, ওজন, এবং তাদের শিশুদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য এসবের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।[16] জন্ম নিয়ন্ত্রণের কারণে নির্ভরশীল সন্তানের হার, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, এবং সম্পদের কম খরচের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।[16][17]
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পরিবার পরিকল্পনার একটি অন্যতম বিভাগ। জন্ম বা গর্ভ ব্যাহত করার উপায়গুলোকে মূলত তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা- শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলন ব্যাহত করা, ভ্রুণ সঞ্চারণ ব্যাহত করা এবং ঔষধ অথবা অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ভ্রুণ অপসারণ করা। ধারণা করা হয় যে, যৌন মিলন ও গর্ভ ধরনের সরাসরি সংযোগ উপলব্ধির পরই জন্ম নিয়ন্ত্রণের আবিষ্কার হয়। প্রাচীনকালে বিঘ্নিত যৌন মিলন ও বিবিধ প্রকার প্রাকৃতিক ঔষধি (যা গর্ভনিরোধক হিসেবে প্রচলিত ছিল) সেবনের মাধ্যমে জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা করা হত। মিশরীয় সভ্যতায় সর্বপ্রথম গর্ভনিরোধক ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়।