খৎনা
From Wikipedia, the free encyclopedia
পুরুষ খৎনা বা পুরুষ লিঙ্গাগ্রচর্মচ্ছেদন বা পুংলিঙ্গাগ্রভাগছেদন বা পুংলিঙ্গ অগ্রত্বকচ্ছেদ (লাতিন circumcidere, অর্থ হল "চারদিক থেকে কেটে ফেলা")[1] হল একটি অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে মানব শিশ্নের অগ্রচর্ম (প্রিপিউস) অপসারণ।[2][3][4] এ প্রক্রিয়ায় সাধারণত, অগ্রচর্মটিকে ভাজ খুলে প্রসারিত করা হয় এবং পেনিস গ্ল্যান্স বা শিশ্নের গোলাকার অগ্রভাগ হতে অপসারণ করা হয়। ব্যথা ও মানসিক চাপ কমাতে অনেক সময় আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় বা প্রচলিত এনেস্থেশিয়া দিয়ে অবশ করে নেয়া হয়।[5] প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, সাধারণ এনেস্থেশিয়া হল একটি উপায়, এবং কোন বিশেষ চর্মচ্ছেদন অস্ত্র ছাড়াই অস্ত্রপাচার সম্পন্ন করা যেতে পারে। প্রায়শই এটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে নবজাতক ও শিশুদের উপর ঐচ্ছিক শল্যচিকিৎসা হিসেবে সম্পাদন করা হয়,[1] কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে একে সমস্যা নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধজনিত কারণে ডাক্তারি পরামর্শ হিসেবে নির্দেশ করা হয়। অসুস্থতাজনিত ফিমোসিস বা লিঙ্গের অগ্রচর্ম স্থায়ীভাবে সরু হওয়ার দরুন তা প্রসারিত না হওয়ার সমস্যা, স্থায়ী বালানোপস্থিটিস এবং দীর্ঘস্থায়ী মূত্রনালিজনিত প্রদাহের (ইউটিআই'স) জন্য এটি একটি চিকিৎসা;[2][6] কিছু নির্দিষ্ট জননাঙ্গের আকারজনিত অস্বাভাবিকতা এবং দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারীদের ক্ষেত্রে এটি করতে নিষেধ করা হয়ে থাকে।[3][6]
পুংলিঙ্গাগ্রচর্মচ্ছেদন | |
---|---|
আইসিডি-১০-পিসিএস | 0VBT |
আইসিডি-৯-সিএম | V৫০.২ |
মেশ | D002944 |
মেডিসিনপ্লাস | 002998 |
ইমেডিসিন | 1015820 |
খৎনার কারণে লিঙ্গের সংবেদনশীলতা কমে যায়। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য সংগঠনসমূহ নবজাতক খৎনাকে উপকারিতাবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ থেকে শুরু করে প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য নির্ভরযোগ্য উপকারী ও ঝুঁকি হ্রাসকারী পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বিবেচনা করে থাকেন। কোন প্রধান স্বাস্থ্য সংগঠনই বিশ্বের সকল নবজাতকের জন্য খৎনার পরামর্শও দেয় না (আফ্রিকার কিছু এলাকার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া পরামর্শ ব্যতীত), আবার এই চিকিৎসাকে নিষিদ্ধও করে না।[7] অসুস্থতাবিহীন শিশু অথবা নবজাতকদের খৎনার বিষয়ে রোগীর অবগত সম্মতি ও মানবাধিকারকে কেন্দ্র করে এযাবৎ বহু নীতিশাস্ত্রগত ও আইনি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।[8][9]
এটি প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত যে, পুরুষ খৎনা সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে বিপরীতকামী পুরুষদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়েছিল।[10][11] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উচ্চমাত্রার এইচআইভি সংক্রমিত অঞ্চলগুলোতে সম্প্রসারিত এইচআইভি কর্মশালার অংশ হিসেবে বিবেচনাপ্রসূত খৎনার পরামর্শ দিয়ে থাকে।[12] পুরুষদের সঙ্গে যৌনসংগমকারী পুরুষদের ক্ষেত্রে খৎনার ফলে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসের প্রমাণ ততটা পরিষ্কার নয়।[13][14] উন্নত বিশ্বেও এইচআইভি প্রতিরোধে এর ব্যবহারের কার্যকারিতা একইভাবে অস্পষ্ট।[15] হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি'র দ্বারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার হার কমাতে[16][17] এবং মূত্রনালিপথের প্রদাহ ও পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার উভয়ের ঝুঁকি কমাতে[5] খৎনা সহায়ক ভূমিকা রাখে। তবে, আনুষ্ঠানিক খৎনা এই সকল অবস্থা প্রতিরোধের জন্য কার্যকর হিসেবে স্বীকৃত নয়।[2][18] গবেষণায় অন্যান্য যৌনবাহিত সংক্রমণ প্রতিরোধে খৎনার ভবিষ্যৎ কার্যকারিতার প্রমাণও অস্পষ্টই রয়ে গেছে। ২০১০ সালের বিশ্বব্যাপী ডাক্তারদের দ্বারা সম্পাদিত খৎনার একটি সমীক্ষা পর্যালোচনায় ১.৫% নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে ও ৬% বয়স্ক শিশুর ক্ষেত্রে অস্ত্রপাচার পরবর্তী বিলম্বিত জটিলতা এবং অল্প কিছু শিশুর ক্ষেত্রে বড়মাপের জটিলতা খুঁজে পাওয়া গেছে।[19] রক্তক্ষরণ, প্রদাহ এবং প্রয়োজনের অধিক বা কম পরিমাণ চর্ম অপসারণ হল পরিলক্ষিত সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা।[19] অনভিজ্ঞ শল্যচিকিৎসকদের করা অপরিচ্ছন্ন বা অপরিশোধিত অস্ত্রের দ্বারা অস্ত্রপাচারের ক্ষেত্রে জটিলতার হার সবচেয়ে বেশি থাকে, অথবা শিশুর বয়স যদি বেশি হয় তখন।[19] যৌন কর্মপ্রক্রিয়ায় খৎনার কোন নেতিবাচক প্রভাব পাওয়া যায় নি।[20][21]
বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পুরুষ হল খৎনাকৃত অর্থাৎ তাদের খৎনাকর্ম সম্পাদিত হয়েছে।[1][19][22] মুসলিম বিশ্বে এবং ইসরাইলে (যেখানে এটি প্রায়-সার্বজনীন একটি ধর্মীয় বাধ্যতামূলক কর্ম), যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু অংশে এটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত; সেই তুলনায় ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু অংশ এবং এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলেই এটি বিরল।[1] খৎনার মূল উৎপত্তি কখন ও কোথায় ঘটেছিল তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না; সবচেয়ে প্রাচীন তথ্যভিত্তিক প্রমাণ অনুযায়ী প্রাচীন মিশরেই এর উৎপত্তি ঘটে।[1] এর উৎপত্তি সম্পর্কে বহু তত্ত্বের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার অন্যতম হল এটি একটি ধর্মীয় উৎসর্গবিশেষ এবং একটি বালকের বয়ঃপ্রাপ্তিতে প্রবেশকে কেন্দ্র করে বয়স বৃদ্ধির সাংস্কৃতিক প্রথা।[23] ইহুদিধর্মে এটি ধর্মীয় প্রথার একটি অংশ[24] এবং ইসলাম ধর্ম, কপ্টিক খ্রিষ্টধর্ম ও ইথিওপীয় অর্থোডক্স গির্জায় এটি একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় আচার।[1][25][26]