ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
পর্তুগীজ ফুটবলার / From Wikipedia, the free encyclopedia
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো দোস সান্তোস আভেইরো জিওআইএইচ কমএম (পর্তুগিজ: Cristiano Ronaldo, পর্তুগিজ উচ্চারণ: [kɾiʃˈtjɐnu ʁɔˈnaldu]; জন্ম: ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫; ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো নামে সুপরিচিত) হলেন একজন পর্তুগিজ পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি বর্তমানে সৌদি আরবের পেশাদার ফুটবল লিগের শীর্ষ স্তর সৌদি পেশাদার লিগের ক্লাব আল নাসর এবং পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন।[6][7] তিনি মূলত কেন্দ্রীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেললেও মাঝেমধ্যে ডান পার্শ্বীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় অথবা বাম পার্শ্বীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গণ্য রোনালদো পাঁচটি ব্যালন ডি’অর এবং চারটি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট অর্জন করেছেন, যা কোন ইউরোপীয় খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড সংখ্যক জয়। কর্মজীবনে তিনি ৩৪টি প্রধান সারির শিরোপা জয় করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে সাতটি লিগ শিরোপা, পাঁচটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, একটি উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, এবং একটি উয়েফা নেশনস লিগ শিরোপা। রোনালদোর চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বাধিক ১৪০টি গোল এবং ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বাধিক ১২টি গোলের রেকর্ড রয়েছে। তিনি অল্পসংখ্যক খেলোয়াড়দের একজন যিনি ১,১৮১ টি পেশাদার খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার ক্লাব ও দেশের হয়ে ৮৫১ টি গোল করেছেন। তিনি ১০০টি আন্তর্জাতিক গোল করা দ্বিতীয় পুরুষ ফুটবলার এবং প্রথম ইউরোপীয়।
ব্যক্তিগত তথ্য | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো দোস সান্তোস আভেইরো[1][2] | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | (1985-02-05) ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ (বয়স ৩৯)[1][3][4] | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম স্থান | ফুঞ্চাল, মাদেইরা, পর্তুগাল[1] | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ১.৮৭ মিটার (৬ ফুট ১+১⁄২ ইঞ্চি)[5] | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
মাঠে অবস্থান | আক্রমণভাগের খেলোয়াড় | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
ক্লাবের তথ্য | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
বর্তমান দল | আল নাসর | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
জার্সি নম্বর | ৭ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
যুব পর্যায় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯২–১৯৯৫ | আন্দোরিনিয়া | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৫–১৯৯৭ | নাসিওনাল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৭–২০০২ | স্পোর্টিং সিপি | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০২–২০০৩ | স্পোর্টিং সিপি বি | ২ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০২–২০০৩ | স্পোর্টিং সিপি | ৩১ | (৫) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৩–২০০৯ | ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড | ২৯২ | (১১৮) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৯–২০১৮ | রিয়াল মাদ্রিদ | ৪৩৮ | (৪৫০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৮–২০২১ | জুভেন্টাস | ১৩৪ | (১০১) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০২১–২০২২ | ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড | ৫৪ | (২৭) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০২৩– | আল নাসর | ৩৯ | (৪০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল‡ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০১ | পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৫ | ৯ | (৭) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০১ –২০০২ | পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৭ | ৭ | (৫) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৩ | পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-২০ | ৫ | (১) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০২–২০০৩ | পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-২১ | ১০ | (৩) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৪ | পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-২৩ | ৩ | (২) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৩– | পর্তুগাল | ২০৬ | (১২৮) | ||||||||||||||||||||||||||||||||
অর্জন ও সম্মাননা
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে এবং ১২:১২, ৩০ মার্চ ২০২৪ (ইউটিসি) তারিখ অনুযায়ী সকল তথ্য সঠিক। ‡ জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা ১২:১২, ৩০ মার্চ ২০২৪ (ইউটিসি) তারিখ অনুযায়ী সঠিক। |
মাদেইরায় জন্মগ্রহণ করা ও বেড়ে ওঠা রোনালদো এডরিনহার হয়ে তার যুব ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং ন্যাশিওনালে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি ২ বছর খেলেন। ১৯৯৭ সালে রোনালদো পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং সিপিতে আসেন এবং সেখানে ২০০২ সালে তার প্রাপ্তবয়স্ক ক্লাব কর্মজীবন শুরু করেন। স্পোর্টিং সিপির হয়ে খেলার সময় রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন, যিনি তাকে ২০০৩ সালে £১২.২৪ মিলিয়নের (€১৫ মিলিয়ন) বিনিময়ে ইউনাইটেডে নিয়ে আসে। ২০০৪ সালে রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে প্রথম শিরোপা এফএ কাপ জেতেন এবং দলটিকে টানা তিনটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতাতে সাহায্য করেন। ২৩ বছর বয়সে তিনি তার প্রথম ব্যালন ডি অর অর্জন করেন। রোনালদো ইংল্যান্ডে খেলা প্রথম খেলোয়াড় যিনি প্রধান ৪টি পিএফএ এবং এফডব্লিউএ পুরস্কার জিতেছেন, যা তিনি ২০০৭ সালে করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি ৪টি প্রধান পিএফএ এবং এফডব্লিউএ ট্রফির মধ্যে ৩টি জেতেন এবং ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার, ফিফপ্রো প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার, ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার এবং ওনজে দ’অর অ্যাওয়ার্ড জেতেন।[8][9][10] ২০০৭ ও ২০০৮ সালে রোনালদোকে এফডব্লিউএ প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ তাকে £৮০ মিলিয়নের (€৯৪ মিলিয়ন/$১৩১.৬ মিলিয়ন) বিনিময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে তাদের দলে নিয়ে আসে, যার ফলে রোনালদো সেইসময় ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ের সম্মান পান। রোনালদো ২০০৯ সালে সেরা গোলের জন্য প্রথম পুস্কাস অ্যাওয়ার্ড জেতেন। তিনি ২০০৮ ও ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পুরস্কার লাভ করেন। মাদ্রিদে তিনি মোট ১৫টি শিরোপা জেতেন, তন্মধ্যে রয়েছে দুটি লা লিগা শিরোপা, দুটি কোপা দেল রে, ও চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, এবং তিনি এই ক্লাবের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। মাদ্রিদে যোগদানের পর তিনি বালোঁ দরের দৌড়ে তিনবার তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির কাছে পরাজিত হয়ে রানার-আপ হন এবং ২০১৩-২০১৪ সালে টানা দুবার ও ২০১৬-২০১৭ সালে আবারও টানা দুবার ব্যালোন ডি'ওর অর্জন করেন। তিনিই একমাত্র পর্তুগিজ যিনি ৫ বার এই পুরস্কার জিতেছেন।[11][12] ২০১৮ সালের টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয় করেন। ২০১৮ সালে তিনি প্রারম্ভিক €১১৭ মিলিয়নের (£৮৮ মিলিয়ন) ট্রান্সফার ফিতে ইয়ুভেন্তুসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন, যা কোন ইতালীয় ক্লাবের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক এবং ত্রিশোর্ধ্ব কোন খেলোয়াড়ের জন্য সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক। ইয়ুভেন্তুসে তিনি প্রথম তিনি মৌসুমেই দুটি সেরিয়ে আ শিরোপা, দুটি সুপারকোপা ইতালিয়ানা, ও একটি কোপা ইতালিয়া জয় করেন।২০২১ সালে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এ তিনি যোগ দেন।
রোনালদো শীর্ষ ইউরোপিয়ান লিগগুলোর মধ্যে প্রথম খেলোয়াড় যিনি পর পর দুই মৌসুমে ৪০ গোল করেছেন, রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ লিগ গোল করেছেন এবং তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি লা লিগায় প্রত্যেক দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন।[13] এছাড়াও তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল ও লা লিগায় মিনিট প্রতি সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডের অধিকারী। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তার ৩০০তম ক্লাব গোল পূর্ণ করেন।[14][15] ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তার ক্যারিয়ারের ৪০০তম গোল করেন। এছাড়া তিনি ২০১৭ সালে ক্যারিয়ারের ৬০০ তম গোল করেন। রোনালদো বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০০ গোল করার রেকর্ড গড়েন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা ১১ ম্যাচে গোল করেন। এছাড়া তিনি এই আসরে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ড গড়েন এবং ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন যা আরেকটি রেকর্ড।
রোনালদো পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে খেলেন, যাদের হয়ে ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে কাজাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার অভিষেক ঘটে। তিনি জাতীয় দলের হয়ে ১০০ এর অধিক ম্যাচ খেলেছেন এবং তিনি পর্তুগালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের অধিকারী। তিনি পর্তুগালের হয়ে প্রধান ৫টি টুর্নামেন্ট; ২০০৪ উয়েফা ইউরো, ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০০৮ উয়েফা ইউরো, ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০১২ উয়েফা ইউরোতে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০০৪ সালের উয়েফা ইউরোর প্রথম খেলায়, গ্রিসের বিরুদ্ধে তিনি তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পর্তুগালের অধিনায়ক হন এবং ২০১২ সালের উয়েফা ইউরোতে অধিনায়ক হিসেবে দলকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যান এবং প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোল করেন।
রোনালদোর এক ম্যাচে ৪ বা এর বেশি গোল আছে ১১টি। এর মধ্যে ম্যাচে চার গোল ৯ বার, ৫ গোল দুবার। ৪ গোলের ম্যাচগুলো হচ্ছে যথাক্রমে সৌদি প্রো লিগে আল ওয়েহদা (২০২৩), ইউরো বাছাইয়ে লিথুয়ানিয়া (২০১৯), লা লিগায় জিরোনা (২০১৮), বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অ্যান্ডোরা (২০১৬), লা লিগায় সেল্তা ভিগো (২০১৬), চ্যাম্পিয়নস লিগে মালমো (২০১৫), লা লিগায় এলচে (২০১৪), সেভিয়া (২০১১) ও রেসিংয়ের (২০১০) বিপক্ষে। ম্যাচে ৫ গোল করেছেন দুবার। দুটিই লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। প্রথমটি ২০১৫ সালের মে মাসে গ্রানাদা, পরেরটি একই বছরের সেপ্টেম্বরে এসপানিওলের বিপক্ষে।
তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ঐতিহ্যবাহী ৭নং জার্সি পড়ে খেলতেন, যা পূর্বে জর্জ বেস্ট, এরিক কাঁতোয়াঁ এবং ডেভিড বেকহ্যামের মত তারকারা পড়তেন। রিয়াল মাদ্রিদে প্রথম বছর তিনি ৯ নং জার্সি নিয়ে খেলেন। রিয়াল মাদ্রিদ লিজেন্ড রাউলের ক্লাব ছাড়ার পর রোনালদো ৭ নং জার্সি লাভ করেন।
২০২৩ সালে তিনি সৌদি ক্লাব আল নাসরে যোগ দেন।