Loading AI tools
ঢাকায় অবস্থিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বা জাতীয় শহীদ মিনার ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বহিঃপ্রাঙ্গণে অবস্থিত। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। এটি ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
শহীদ মিনার | |
---|---|
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার | |
সাধারণ তথ্য | |
অবস্থা | সম্পূর্ণ |
ধরন | স্তম্ভ |
স্থাপত্য রীতি | আধুনিক |
অবস্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ |
ঠিকানা | ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মাঝামাঝি, ঢাকা |
উচ্চতা | ১৪ মিটার (৪৬ ফুট) |
নকশা এবং নির্মাণ | |
স্থপতি | হামিদুর রহমান |
প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিল অতিদ্রুত এবং নিতান্ত অপরিকল্পিতভাবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাত্রির মধ্যে তা’ সম্পন্ন করে। শহীদ মিনারের খবর কাগজে পাঠানো হয় ঐ দিনই। শহীদ বীরের স্মৃতিতে - এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর।[1]
মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কোণাকুণিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেঁষে। উদ্দেশ্য বাইরের রাস্তা থেকে যেন সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোনো শেড থেকে বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), নকশা করেছিলেন বদরুল আলম; সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি। ঐ দিনই অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে, ২২ ফেব্রুয়ারির শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দশটার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, এটিও একসময় সরকারের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়।[1] ১৯৫৪ সালে প্রথম শহীদ মিনারের একই স্থানে পুনরায় দ্বিতীয় আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এটির উদ্বোধন করেন নাট্যগুরু নুরুল মোমেন। অবশেষে, বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর নকশা করেছিলেন ভাস্কর হামিদুর রহমান। কিন্তু ১৯৫৮তে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক আইন জারীর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে লেফটিন্যাণ্ট জেনারেল আযম খানের আমলে এর নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি এর নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করে। মূল নকশা ছেঁটে-কেটে দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। মূল নকশার ফোয়ারা ও নভেরা আহমেদ এর ম্যুরাল ইত্যাদি বাদ পড়ে। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ ব্যক্তিত্ব আবুল বরকতের মাতা হাসিনা বেগম কর্তৃক নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়। [[1]
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আবু হোসেন সরকারের মুখ্যমন্ত্রীত্বের আমলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান স্থান নির্বাচন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। তৎকালীন পূর্ত সচিব (মন্ত্রী) জনাব আবদুস সালাম খান মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে 'শহীদ মিনারের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য চূড়ান্তভাবে একটি স্থান নির্বাচন করেন।[1][2]
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি তারিখে জনৈক মন্ত্রীর হাতে 'শহীদ মিনারের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা থাকলেও তাতে উপস্থিত জনতা প্রবল আপত্তি জানায় এবং ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ রিক্সাচালক আওয়ালের ৬ বছরের মেয়ে বসিরণকে দিয়ে এই স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।[3]
শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক এবং আওয়ামী লীগের উদ্যোগে যুক্তফ্রন্ট সরকার কর্তৃক ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়।[4] এর ফলেই শহীদ মিনারের নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা সহজতর হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন।[5] তারই রূপকল্পনায় ছিল স্নেহময়ী আনত মস্তক মাতার প্রতীক হিসেবে মধ্যস্থলে সুউচ্চ কাঠামো, এবং দুই পাশে সন্তানের প্রতীক স্বরূপ হ্রস্বতর দুটি করে কাঠামো। সামনে বাঁধানো চত্বর। পেছনভাবে দেয়ালচিত্র। সম্মুখ চত্বরে ভাস্কর নভেরা আহমেদের দুটি ম্যুরাল স্থাপনের পরিকল্পনাও ছিল। এছাড়া ছিল বেদনাঘন শহীদ দিবসের প্রতীক হিসেবে একটি ফোয়ারা স্থাপনের পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা মফিক ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ নকশায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখভাগের বিস্তৃত এলাকা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে দ্রুত কাজ সমাপ্তির উদ্দেশ্যে মূল নকশার সরলীকরণ করা হয়। [1]
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। যদিও বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ শহীদ মিনারে ২১শে ফেব্রুয়ারির শ্রদ্ধার্ঘ্য অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান প্রদান করে থাকে, সার্বিক দেখ-ভাল ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও এটি এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত শহীদ মিনার অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ সময় শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। মাদক সেবন থেকে শুরু করে ভাসমান মানুষের বর্জ্য ত্যাগের স্থানে পরিণত হয় এই ঐতিহাসিক এলাকা। ফলে শহীদ মিনার এলাকার পবিত্রতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার ২০ কাঠা জায়গা দখলকারীরা দখল করে রেখেছে।[6][7]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.