কাসপার ডাভিড ফ্রিডরিখ
জার্মান চিত্রশিল্পী / From Wikipedia, the free encyclopedia
কাসপার ডাভিড ফ্রিডরিখ (৫ সেপ্টেম্বর ১৭৭৪ - ৭ মে ১৮৪০) ঊনবিংশ শতকের জার্মানির একজন রোমান্টিক ল্যান্ডস্কেপ চিত্রকর, সাধারণভাবে যিনি তার প্রজন্মের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জার্মান শিল্পী হিসেবে স্বীকৃত।[2] তিনি তার মধ্যযুগীয় রূপকধর্মী (allegorical) ভূপ্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর চিত্রকর্মের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তার এসব শিল্পকর্মে রাতের আকাশ, সকাল বেলার কুয়াশা, নিষ্ফলা বৃক্ষ কিংবা গথিক জাতির ধ্বংসাবশেষের আড়ালে সচরাচর গভীর ধ্যানে নিমজ্জমান ছায়ামূর্তিকে সিলুয়েশনের মাধ্যমে চিত্রায়িত করা হয়েছে। [3] ফ্রিডরিখ মূলত প্রকৃতির গহীন ধ্যানমগ্নতা নিয়ে কাজ করেছেন। ফ্রিডরিখের প্রায়-প্রতীকী ও প্রথা বিরোধী (anti-classical) চিত্রকর্ম প্রাকৃতিক জগতে একটি বিষয়ভিত্তিক ও আবেগময় প্রতিক্রিয়া পৌঁছে দিতে চেয়েছে। গুণগতভাবে ফ্রিডরিখের চিত্রকর্মগুলো সুবিস্তৃত ভূপ্রাকৃতিক দৃশ্যের মাঝে একটি মানবিক সত্ত্বার উপস্থিতিকে ক্ষুদ্রায়িত পার্সপেক্টিভে[4] উপস্থাপন করে থাকে। এ উপস্থাপনা এমনই যে এখানে ছায়ামূর্তিগুলোকে একটি মাত্রায় হ্রাস করা হয় যেগুলোকে কলা ইতিহাসবিদ ক্রিস্টোফার জন মারে “আধ্যাত্মিকতার প্রতি দর্শকের নিমগ্নদৃষ্টি” বলে মূল্যায়ন করেছেন।[5]
কাসপার ডাভিড ফ্রিডরিখ | |
---|---|
জন্ম | (১৭৭৪-০৯-০৫)৫ সেপ্টেম্বর ১৭৭৪ |
মৃত্যু | ৭ মে ১৮৪০(1840-05-07) (বয়স ৬৫) |
জাতীয়তা | জার্মান |
পরিচিতির কারণ | চিত্রাঙ্কন |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | দ্য মঙ্ক বাই দ্য সি (১৮০৮–১৮১০), চক ক্লিফস অন রগ্যান (১৮১৮), ওয়ান্ডারার অ্যাভব দ্য সি ফগ (১৮১৮), মুনরাইজ ওভার দ্য সী (১৮২২) |
আন্দোলন | রোমান্টিকতা |
ফ্রিডরিখের জন্ম বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী গ্রাইফসওয়াইল্ড (Greifswald) শহরে যা ছিল তৎকালীন সুইডিশ পমরনিয়ার (Pomerania) অন্তর্ভুক্ত। ড্রেসডেনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে তিনি ১৭৯৮ সাল পর্যন্ত কোপেনহেগেনে অধ্যয়ন করেন। তিনি এমনই এক সময়ে বয়ঃপ্রাপ্ত হন যখন ইউরোপ জুড়ে মোহমুক্তির বর্ধিঞ্চু একটি ভাবধারাকে বস্তুবাদী সমাজ সমেত আধ্যাত্মিকতার নতুন এক উপলব্ধিতে উত্তরণের ইন্ধন যোগানো হচ্ছিল। আদর্শের এই পরিবর্তনকে সচরাচর প্রাকৃতিক জগতের পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ফ্রিডরিখ, জে.এম.ডব্লিউ টার্নার এবং জন কনস্টাবলের মতো শিল্পীরা প্রকৃতিকে "মানব সভ্যতার কৃত্রিমতার বিরুদ্ধে একটি স্বর্গীয় সৃষ্টি" রূপে প্রকাশে উদগ্রীব ছিলেন।[6]
ফ্রিডরিখের সৃষ্টিকর্ম ক্যারিয়ারের শুরুতে তাকে খ্যাতি এনে দেয় এবং সমকালীন ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ভাস্কর ডাভিড ডি'অ্যাঙ্গাজ তাকে এমনই এক ব্যক্তি হিসেবে অবিহিত করেছেন যিনি আবিষ্কার করেছেন "ল্যান্ডস্কেপের করুন পরিণতি” (the tragedy of landscape)।[7] সে যাই হোক, শেষ বয়সে তার সৃষ্টিকর্ম জনপ্রিয়তা হারায়, আর তিনি সকলের অগোচরে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।[8] বিগত ঊনবিংশ শতকে যখন জার্মানি আধুনিকায়নের দিকে ধাবিত হচ্ছিল, তখন জরুরী প্রয়োজনীয়তার এক নব চেতনা তার নিজস্ব ললিতকলার বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে আর ফ্রিডরিখের নিস্তব্ধতার ধ্যানমগ্ন চিত্রায়ন প্রতিভাত হয়ে পড়ে অতীত যুগের সৃষ্টিরূপে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন সকলে অগোচরে। বার্লিনে ১৯০৬ সালে ফ্রিডরিখের বত্রিশটি চিত্রের একটি প্রদর্শনী বিংশ শতকের গোড়ায় তার চিত্রকর্মের পুননবায়নকৃত উপলব্ধি ও পুনর্মূল্যায়নকেই বহন করে নিয়ে আসে। ১৯২০ এর দশকের মধ্যেই অভিব্যক্তিবাদীদের দ্বারা শিল্পীর চিত্রকর্মসমূহ আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৩০ এর দশকে ও ১৯৪০ এর দশকের শুরুতে অধিবাস্তববাদীরা ও অস্তিত্ববাদীরা তার সৃষ্টি হতে ধারণা নিতেন। আবার ১৯৩০ এর দশকের গোড়ায় নাৎসিবাদের উত্থানও ফ্রিডরিখের জনপ্রিয়তার পুনর্জাগরণ ঘটায়, কিন্তু তার কাজে একটি জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান নাৎসি আন্দোলনের মাধ্যমে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হলে ঐ জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে যায়।[9] এমতবস্থা গত ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত বজায় ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি একজন জার্মান রোমান্টিক আইকন ও আন্তর্জাতিকভাবে একজন গুরুত্বপূর্ণ চিত্রশিল্পী হিসেবে পুনরায় খ্যাতি অর্জন করলেন।