কাম্পালা
উগান্ডার রাজধানী / From Wikipedia, the free encyclopedia
কাম্পালা (ইউকে: /kæmˈpɑːlə/, ইউএস: /kɑːmˈ-/) উগান্ডার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। নগরীটি উগান্ডার দক্ষিণ-মধ্যভাগে ভিক্টোরিয়া হ্রদের উত্তর তীরের কাছেই গড়ে প্রায় ৪০০০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ি এলাকার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। এটিকে তাই অনেক সময় "সাত পাহাড়ের নগরী" নামেও ডাকা হয়। কিংবদন্তি অনুসায়ী ঐ পাহাড়গুলিতে একসময় হরিণের মতো এক ধরনের প্রাণী বিচরণ করত, যাদের নাম ইম্পালা; তাদের নামেই শহরটির এরূপ নামকরণ করা হয় কেননা কাম্পালা অর্থ "ইম্পালাদের পাহাড়"। কাম্পালাতে প্রায় ২৫ লক্ষ অধিবাসীর বাস; এটি দেশটির বৃহত্তম ও সর্বপ্রধান নগরী (পূর্বে জিঞ্জা ও দক্ষিণে এনতেব্বে আরও দুইটি প্রধান নগরী)। ব্যস্ত ও প্রাণচঞ্চল কাম্পালা উগান্ডার প্রশাসন, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবহন ও শিক্ষার কেন্দ্র। মার্কিন পরামর্শক সংস্থা মার্সারের মতে কাম্পালা পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে বাসযোগ্য নগরী।[4]
কাম্পালা | |
---|---|
রাজধানী | |
কাম্পালার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ০০°১৮′৪৯″ উত্তর ৩২°৩৪′৫২″ পূর্ব | |
দেশ | উগান্ডা |
শহর | কাম্পালা |
সরকার | |
• লর্ড মেয়র | এরিয়াস লুকোয়াগো |
• নির্বাহী পরিচালক | দরোথি কিসাকা[1] |
আয়তন | |
• রাজধানী | ১৮৯ বর্গকিমি (৭৩ বর্গমাইল) |
• স্থলভাগ | ১৭৬ বর্গকিমি (৬৮ বর্গমাইল) |
• জলভাগ | ১৩ বর্গকিমি (৫ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৮,৪৫১.৯ বর্গকিমি (৩,২৬৩.৩ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১,২০০ মিটার (৩,৯০০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১৯)[2] | |
• রাজধানী | ১৬,৫০,৬০০ |
• পৌর এলাকা[3] | ৩১,৩৮,০০০ |
• মহানগর | ৬৭,০৯,৯০০[2] |
সময় অঞ্চল | ইএটি (ইউটিসি+৩) |
ওয়েবসাইট | www |
ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত কাম্পালাতে কোনও শুষ্ক মৌসুম নেই, বরং দুইটি বর্ষা মৌসুম আছে; একটি আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ও অপরটি ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত বিস্তৃত। সারা বছরই বৃষ্টি পড়ে, তবে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়। তাপমাত্রা সারা বছর গড়ে ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে।
কাম্পালা শহরটি বেশ পরিকল্পিত। আইনসভা, বাণিজ্যিকভবন, শিল্প এলাকা ও আবাসিক এলাকাগুলি স্বতন্ত্র সেক্টর বা নগরখণ্ডে পড়েছে। জেলার মর্যাদাবিশীষ্ট নগরটিকে পাঁচটি বরোতে বিভক্ত করা হয়েছে: কেন্দ্রীয় কাম্পালা, কাভেম, মাকিন্ডে, নাকাওয়া ও লুবাগা। কাম্পালাতে ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উগান্ডা জাদুঘরটি অবস্থিত। এখানে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক ইতিহাসের বিবরণ ছাড়াও বাদ্যযন্ত্রের একটি বৃহৎ সংগ্রহ আছে। অন্যান্য সাংস্কৃতিক গন্তব্যস্থলের মধ্যে আছে জাতীয় নাট্যশালা, নোম্মো জাতীয় চিত্রপ্রদর্শনীগৃহ, শহরের কাছে একটি পাহাড়ের উপরে বুগান্ডার ৪ প্রাচীন রাজার (কাবাকা) সমাধিগুলি অবস্থিত, যাদের নাম দেওয়া হয়েছে কাসুবি সমাধিসমূহ; এটিকে ইউনেস্কো একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করেছে।
কাম্পালার ধর্মীয় ভবনগুলি নগরীটির জনগণের বৈচিত্র্যের একটি দর্পণ। এখানে অনেক মসজিদ (যেমন কিবুলি পাহাড়ের উপরে সাদা রঙের উগান্ডার জাতীয় মসজিদ, যা সাহারা-নিম্ন আফ্রিকার ২য় বৃহত্তম), হিন্দু মন্দির ( যেমন শহরকেন্দ্রের শ্রী সনাতন ধর্ম মণ্ডল শিবমন্দির) ও খ্রিস্টান গির্জা (যেমন নামিরেবে ইঙ্গ মহাগির্জা ও সন্তু পিতরের রুবাগা রোমান ক্যাথলিক মহাগির্জা) আছে। শহরের ঠিক বাইরে আফ্রিকা মহাদেশে বাহাই ধর্মের একমাত্র মন্দিরটি অবস্থিত। উগান্ডার আইনসভা ভবন ও স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধটিও প্রতীকী কারণে গুরুত্বপূর্ণ। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীরে অবস্থিত স্পেকে মুনিওনিও অবকাশযাপন কেন্দ্রটিতে অনেক বিত্তবান পরিবার বেড়াতে যায়। কাম্পালার জনগণ মূলত স্থানীয় লুগান্ডা ভাষায় কথা বলে; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা ও সোয়াহিলি ভাষার শিক্ষা দান করা হয়। মাটুকে নামের সিদ্ধ কাঁচাকলার ভর্তা এখানকার বিশেষ একটি পদ; অদ্ভূত পদের মধ্যে আছে এনসেনেনে নামের ঘাসফড়িং ভাজি।
কাম্পালাতে উগান্ডার সরকারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলি ছাড়াও উগান্ডার বেশির ভাগ বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়গুলি অবস্থিত। শহরের বহু অধিবাসী সরকারি বা ব্যবসায়িক কার্যালয়ে চাকরি করে। এখানে অনেক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত ও ১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদায় উন্নীত মাকারেরে বিশ্ববিদ্যালয়টিও এখানে অবস্থিত; এটি বহুদিন ধরে পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। আরও আছে উগান্ডা শহীদদের বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৩), ও এনদেজ্জে বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯২)। উগান্ডাতে বিপুল পরিমাণ পশ্চিমা সাহায্য আসে এবং কাম্পালায় বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর বহু সংখ্যক বেসরকারী সংস্থার সদর দপ্তর অবস্থিত; ফলে কাম্পালাতে পশ্চিমা বৈদেশিক নাগরিকদের একটি প্রতিষ্ঠিত অবস্থান রয়েছে।
শহরটি উগান্ডার সবচেয়ে কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চলে অবস্থিত। এটি ৬৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত জিঞ্জা নগরীর পরে উগান্ডার দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পনগরী। কাম্পালার কারখানাগুলিতে উগান্ডার খামারে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যগুলিকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এই কারখানাগুলিতে চা, কফি, তামাক, চিনি ও তুলা উৎপাদন করে পরে রপ্তানি করা হয়। এছাড়া এখানে ময়দা, তুলার জিনকরণ, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, বস্ত্র, কোমল পানীয়, বিয়ার, সিগারেট, সিমেন্ট, ধাতব দ্রব্য, আসবাবপত্র ও ট্রাক্টর সংযোজন কারখানা আছে। নগরীটি ভিক্টোরিয়া হ্রদ অঞ্চলের প্রধান বাজার। কাম্পালা দেশের সড়ক ও রেলব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এটি পশ্চিমে কাসেসে শহর থেকে আগত রেলপথের মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূলস্থিত কেনিয়ার মোম্বাসা নগরীর সাথে সংযুক্ত। কাম্পালা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এন্তেব্বে নগরীতে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত। শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীরে অবস্থিত এবং সড়ক ও রেলপথে সংযুক্ত পোর্ট বেল নামক হ্রদবন্দর শহরটি কাম্পালার সেবায় নিয়োজিত। শহরে অভ্যন্তরে বোডা-বোডা (ইংরেজি বর্ডার-টু-বর্ডার শব্দগুচ্ছের বিকৃত রূপ) নামের এক ধরনের মোটরসাইকেল যাত্রী পরিবহন সেবা আছে, যা দ্রুত কিন্তু বিপজ্জনক। আরও আছে মাটাটু নামের মিনিবাস (স্থানীয় নাম ট্যাক্সি) ও হলুদ ট্যাক্সি সেবা। প্রায় ৪০০০ মিনিবাস ও অন্যান্য যানবাহনগুলি কাম্পালার হৃৎকেন্দ্রে অবস্থিত অত্যন্ত ব্যস্ত কাম্পালা ট্যাক্সি উদ্যানে জমায়েত হয়, যেখান থেকে বাসের হেল্পার ও চালকদের চিৎকারের আবহে এবং পানি আর আইসক্রিমের ফেরিওয়ালাদের মাঝে যাত্রীরা ভোর ৫টা থেকে গভীর রাত ২টা পর্যন্ত ওঠা-নামা করে।
অতীতে কাম্পালা এলাকাটি আফ্রিকার বুগান্ডা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। কাম্পালা শহরটি এখন যেখানে অবস্থিত, তার ঠিক দক্ষিণে ১৯শ শতকে বুগান্ডা রাজ্যের রাজধানী মেংগো অবস্থিত ছিল, ১৯৬৭ সালে শহরটিকে পরিত্যক্ত করে দেওয়া হয়। ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ সাম্রজ্যের পূর্ব আফ্রিকা কোম্পানি বর্তমানে যেখানে উগান্ডা অবস্থিত, সেই অঞ্চলটি দখলে নিয়ে নেয়। সেসময় ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে লর্ড) ফ্রেডেরিক লুগার্ড কাম্পালাকে ব্রিটিশশাসিত ঔপনিবেশিক অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করেন ও এসময় পুরাতন কাম্পালা পাহাড়ে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। দুর্গটির প্রতিষ্ঠাস্থলে বর্তমানে একটি প্রস্তরফলক রয়েছে। ২০শ শতকের শুরুর দিকে ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা তাদের রাজধানী এন্তেব্বে শহরে স্থানান্তর করে নেয়। ১৯৪৯ সালে কাম্পালাকে একটি পৌরসভার মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৬২ সালে উগান্ডা স্বাধীনতা লাভ করলে কাম্পালাকে আবার রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়।