কর্দোবা মসজিদ–ক্যাথেড্রাল
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কর্দোবা মসজিদ–ক্যাথেড্রাল[1][2] (স্পেনীয়: Mezquita-Catedral de Córdoba), যাজকীয় নাম ক্যাথেড্রাল অফ আওয়ার লেডি অফ দ্য অ্যাসাম্পশন (Cathedral of Our Lady of the Assumption; স্পেনীয়: Catedral de Nuestra Señora de la Asunción[3]), কর্দোবার রোমান ক্যাথলিক ধর্মপাল রাজ্যের একটি ক্যাথেড্রাল (গির্জা) যেটি মেরির অনুমানে উৎসর্গীকৃত এবং আন্দালুসিয়ার স্পেনীয় অঞ্চলে অবস্থিত।[4] পূর্বে এটি মুসলিমদের মসজিদ হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে স্পেনীয় ভাষায় মেজকিতা[5][6] (Mezquita) এবং কর্দোবার মহা মসজিদ (Great Mosque of Córdoba; স্পেনীয়: Mezquita de Córdoba)[7][2][8] বা আরবিতে কুরতুবা মসজিদ (আরবি: مسجد القرطبة Masjid al-Qurtubah) নামেও পরিচিত।
কর্দোবা মসজিদ–ক্যাথেড্রাল | |
---|---|
ক্যাথিড্রাল অফ আওয়ার লেডি অফ দ্য অ্যাসাম্পশন | |
Mezquita-Catedral de Córdoba | |
৩৭°৫২′৪৫.১″ উত্তর ০৪°৪৬′৪৭″ পশ্চিম | |
অবস্থান | কর্দোবা, আন্দালুসিয়া |
দেশ | স্পেন |
মণ্ডলী | খ্রিস্টান (রোমান ক্যাথলিক) |
Previous denomination | ইসলাম |
ওয়েবসাইট | mezquita-catedraldecordoba |
ইতিহাস | |
যার জন্য উৎসর্গিত | কুমারী মেরি |
স্থাপত্য | |
মর্যাদা | ক্যাথেড্রাল |
সক্রিয়তা | এখনও ব্যবহৃত |
স্থাপত্যশৈলী | গির্জা, মসজিদ |
শৈলী | মুর, রেনেসাঁ |
ভূমিখননের তারিখ | ৭৮৫ (মসজিদ হিসাবে) |
নির্মাণকাজ সমাপ্তির তারিখ | ১৬ শতাব্দী (গির্জা হিসাবে সর্বশেষ সংস্কার) |
প্রশাসন | |
ধর্মপাল রাজ্য | কর্দোবা ধর্মপাল রাজ্য |
প্রাতিষ্ঠানিক নাম | কর্দোবার ঐতিহাসিক কেন্দ্র |
মানদণ্ড | সাংস্কৃতিক: ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ |
সূত্র | ৩১৩ |
তালিকাভুক্তকরণ | ১৯৮৪ (৮ম সভা) |
প্রথাগত বিবরণ অনুসারে সারাগোসার সেন্ট ভিনসেন্টের ক্যাথলিক খ্রিস্টান ব্যাসিলিকা নামক একটি ভিসিগথীয় গির্জা মূলত বর্তমান মসজিদ–ক্যাথিড্রালটির জায়গায় দাঁড়িয়েছিল, যদিও বর্ণনাটি ইতিহাসবেত্তাদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।[9] ৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আবদুর রহমানের নির্দেশে গ্রেট মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল, যখন কর্দোবা ছিল আল-আন্দালুসের মুসলিম নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের রাজধানী। ১০ম শতকের শেষ পর্যন্ত আবদুর রহমানের উত্তরসূরিদের অধীনে এটি একাধিকবার সম্প্রসারিত হয়েছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংযোজনগুলোর মধ্যে তৃতীয় আবদুর রহমান একটি মিনার (৯৫৮ সালে সমাপ্ত) এবং তাঁর পুত্র দ্বিতীয় আল-হাকাম একটি সমৃদ্ধভাবে সজ্জিত নতুন মিহরাব ও মাকসুরা (৯৭১ সালে সমাপ্ত) সংযোজন করেন। ১২৩৬ সালে রিকনকোয়েস্টা এর সময় ক্যাস্টিলের খ্রিস্টান বাহিনী কর্দোবা দখল করে নিলে মসজিদটি ক্যাথেড্রালে রূপান্তরিত হয়। ১৬ শতকের একটি বড় নির্মাণ প্রকল্পে রেনেসাঁ স্থাপত্যের আদলে একটি নতুন মূল অংশ ও পার্শ্বদেশ সংযোজন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কাঠামোটি কেবল ছোটখাটো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। এই সময়ে বেল টাওয়ারে রূপান্তরিত প্রাক্তন মিনারটিও উল্লেখযোগ্যভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯ শতকে শুরু করে আধুনিক পুনরুদ্ধারের ফলে ইমারতটির কিছু ইসলামি যুগের উপাদান পুনরুদ্ধার ও অধ্যয়ন করা হয়েছে।[10] আজ ইমারতটি শহরের ক্যাথেড্রাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সেখানে প্রতিদিন ব্যাপক জনসামাগম (খ্রিস্টান অনুষ্ঠান) হয়।[11]
মসজিদ কাঠামোটিকে ইসলামি স্থাপত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং অনেক পণ্ডিত একে মুসলিম বিশ্বের পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পরবর্তী "মুরিশ" স্থাপত্যের উপর অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে মনে করেন।[12][13][14]:২৮১–২৮৪ এটি স্পেনের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ এবং পর্যটন আকর্ষণ,[15] পাশাপাশি ১৯৮৪ সাল থেকে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।[16]
স্পেন জুড়ে মুসলিমরা ক্যাথলিক মণ্ডলীর কাছে দাবি জানিয়েছে যাতে তাঁরা মসজিদ কমপ্লেক্সে মুসলিমদের প্রার্থনা করার অনুমতি দেয়, স্পেনের ইসলামিক কাউন্সিল ভ্যাটিকানের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়।[17][18] যাইহোক, স্পেনীয় গির্জা কর্তৃপক্ষ ও ভ্যাটিকান এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে।[19] মুসলিমদের প্রার্থনা করতে সবসময় স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ ছিল না এবং অতীতে প্রতীকী উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ার কিছু ঘটনাও ঘটেছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে মসজিদের মিহরাবে সাদ্দাম হোসেনের নামাজ আদায়।[20][21]
ক্যাথেড্রালের জন্য এই লড়াইসমূহ স্পেনীয় ইতিহাস এবং স্পেনীয় পরিচয় গঠনের একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৃশ্যকে প্রতিফলিত করে।[22]
ভবনটি প্রথমবারের মতো ২০০৬ সালে কর্দোবার ক্যাথেড্রাল কাবিল্দো দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়েছিল, ১৯৪৬ সালের লেই হিপোটেকেরিয়ার ২০৬ নং অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে (যার সাংবিধানিকতা প্রশ্নবিদ্ধ)।[23] খ্রিস্টীয় ধর্মপাল রাজ্য কখনোই ভবনের মালিকানার আনুষ্ঠানিক স্বত্ব উপস্থাপন করেনি বা আদালতও কখনো খ্রিস্টানদের দ্বারা দীর্ঘস্থায়ী অধিকরণের ভিত্তিতে মসজিদের জোরপূর্বক দখলের অনুমোদনের জন্য বিচারিক দণ্ডাদেশ প্রদান করেনি। এর একমাত্র আইনি যুক্তি হলো ১২৩৬ সালের পর খ্রিস্টান পাদ্রিদের দ্বারা গির্জার "পবিত্রকরণ", কারণ সেই সময়ে ভবনের মেঝেতে ছাইয়ের ক্রুশ আকৃতির একটি প্রতীক আঁকা ছিল বলে জানা যায়।[24] মসজিদ–ক্যাথিড্রালের যাজকীয় মালিকানার সমর্থকেরা খ্রিস্টীয় মণ্ডলী দ্বারা ভবনটির বর্তমান শান্তিপূর্ণ খ্রিস্টীয় অধিকরণের ভিত্তিতে যুক্তি প্রদান করে, অপরদিকে ভবনটিতে জনগণের মালিকানার সমর্থকেরা যুক্তি দেয় যে মসজিদ–ক্যাথিড্রালটি কখনোই একটি রাষ্টীয় সম্পত্তির বাইরে যায়নি, কারণ অধিগ্রহণের পর তা প্রাথমিকভাবে ক্যাস্টিলের সিংহাসনের (এবং এরপর থেকে স্পেনীয় রাজ্য) তত্ত্বাবধানে ছিল।[25]
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কর্দোবার মেয়র স্পেনীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক দলের নেত্রী ইসাবেল আমব্রোসিও মসজিদ–ক্যাথেড্রালে পাবলিক ও শেয়ার্ড ম্যানেজমেন্টের একটি মডেলকে সমর্থন করেন।[26][27] ২০১৯ সালের জুলাইয়ে কর্দোবার মেয়র জনতা দলের হোসে মারিয়া বেলিদো মালিকানা অধিকার তদন্তকারী একটি কমিশনের কাজ বন্ধ করে দেন, বলেন যে 'এটি ক্যাথলিক উপাসনার জন্য সংরক্ষিত থাকা উচিত'। তিনি উল্লেখ করেন, "এই কমিশনের কোনো প্রশাসনিক কাজ নেই এবং এটিকে পুনরায় সক্রিয় করার কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই।"[28]
দক্ষিণ এশীয় মুসলিম দার্শনিক ও কবি মুহাম্মদ ইকবাল, যিনি ব্যাপকভাবে পাকিস্তান আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেন বলে বিবেচিত, ১৯৩১-৩২ সালে কর্দোবার গ্রেট ক্যাথেড্রাল পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছিলেন যেন তিনি ক্যাথেড্রালে একবার আযান দিতে পারেন, এমনকি সেখানে ইকবালকে প্রার্থনা করার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। মসজিদটি তাঁর মধ্যে যে গভীর আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া জাগিয়েছিল তা তাঁর "মসজিদে কুরতাবা" কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে। আল্লামা ইকবাল এটিকে ইসলামের একটি সাংস্কৃতিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে নিরুপন করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন:[29]
শিল্প প্রেমীদের জন্য পবিত্র, তুমি বিশ্বাসের মহিমা, তুমি আন্দালুসিয়াকে পরিণত করেছো পবিত্র ভূমিতে!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.