ওয়েলার হল

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ওয়েলার হল

ওয়েলার হল (ইংরেজি: Waller Hall) হল যুক্তরাষ্ট্রের অরেগনের সালেমে অবস্থিত উইল্যামেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পুরাতন ক্যাম্পাস। ১৮৬৭ সালে লাল রঙের পাঁচ তলাবিশিষ্ট এই ভবন তৈরী হয় এবং ১৯৭৫ সালে জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থানের নিবন্ধনে ভবনটি যুক্ত হয়।[2] ভবনের আভ্যন্তরীন অংশ ২ বার অগ্নিদগ্ধ হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এটি পুনঃনির্মাণ হয় এবং ২০০৫ সালে এটি আবার পুনঃসংস্কার হয়।

দ্রুত তথ্য অবস্থান, নির্মিত ...
ওয়েলার হল, উইল্যামেট বিশ্ববিদ্যালয়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক স্থানসমূহের জাতীয় নিবন্ধন
Thumb
বসন্তকালে ওয়েলার হল
অবস্থানসালেম, অরেগন
নির্মিত১৮৬৪-১৮৬৭
স্থাপত্য শৈলীরেনেসাঁ, অন্যান্য
এনআরএইচপি সূত্র #৭৫০০১৫৯৩[1]
এনআরএইচপি-তে যোগ২০শে নভেম্বর, ১৯৭৫
বন্ধ

রেঁনেসা স্থাপত্যশৈলীতে তৈরী এই ভবনটি বর্তমানে আমেরিকার পশ্চিম মিসিসিপি (অঙ্গরাজ্য)-এর সবচেয়ে পুরনো ভবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়র পরিচালকদের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অরিগন রাষ্ট্রীয় সড়কের পাশে অবস্থিত অরিগন আইনসসভা ভবনে ওয়েলার ভবনটি অবস্থিত। গ্রিসের ক্রুশের মতো করে ভবনের নকশা করা হয়েছে। ভবনের প্রতিটি পাশই অন্য পাশগুলোর সমান, ভবনের চূড়ায় রয়েছে একটি গম্বুজ।

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

পটভূমি

Thumb
ভবনের পশ্চিম পাশ

ক্যাম্পাসের মূল ভবন পতন সহ অন্যান্য কারণে ১৮৪৪ সাল থেকে উইলিয়ামেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন এবং স্থান দরকার পড়েছিল। ১৮৫০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশেষভাবে একটি ভবন নকশা করার জন্য বিবেচনা করা হয়।[3] ১৮৬০ সালের ৩রা অক্টোবর, একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য একটি নতুন হল তৈরী করার সিদ্ধারন্ত গ্রহণ করে।[3] জনাব আলভিন এফ. ওয়েলারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন তৈরীর জন্য অর্থ উত্তোলোনকারী ফান্ডের ভার দেওয়া হয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করার প্রচেষ্টারও দায়িত্ব দেওয়া হয়। যাই হোক, ওয়েলারের পদক্ষেপটি অসফল হলো।[3] ১৮৬২ সালের ১৯শে নভেম্বর ওয়েলারের বোর্ড পুনরায় গুসতাভ হাইন্স, জোসিয়া ল্যাম্বারসন প্যারিশ, জে. লেমসন এবং জন এইচ. মুরকে নিয়ে নতুন ভবন তৈরী এবং নকশা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন।[3]

২রা ডিসেম্বারে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়করা ২০,০০০ ডলারের আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে চাঁদা তোলা শুরু করে এবং তা ওয়েলারের কাছে এবং প্রাপ্ত অর্থ ওয়েলারের কাছে দেন।[3] ১৯৬৩ সালের ২০শে মে তত্ত্বাবধায়করা তাদের অঙ্গীকার অনুসারে ১২,৮০০ ডলার চাঁদা তুলতে পেরেছিল এবং ওয়েলারের কমিটি একটি ভবন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভবনটি প্রধানত রিভারন্‌ড ওয়েলার-এর প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ভবন প্রতিষ্ঠার আগে নানা রকমের নকশার প্রস্তাবনা করা হয়।[4] ১৮৬৪ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি, ভোটের মাধ্যমে ওয়েলারের বোর্ড ১৬টি প্রস্তাবিত নকশা থেকে ১টি নকশা নির্বাচিত করলো। পাথুরে ফাউন্ডেশনের উপর ইটের বিল্ডিং তৈরী করার সিদ্ধান্ত হয়। ফাউন্ডেশনটি মাটির ৩ ফুট (০.৯১মিটার) পর্যন্ত দেওয়া হয় যেনো ইটের মধ্যে আর্দ্রতা চুঁইয়ে না যেতে পারে।[3]

নির্মাণকার্য

নতুন ভবনের নির্মাণকার্য ১৮৬৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভূগর্বস্থ গর্ত খননের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ভবনটি উইলমেট ক্যাম্পাসে উত্তর অংশের কেন্দ্রস্থলে (স্যালেম) অবস্থিত।[3] ২৪শে জুলাইতে ভবনের ভিত্তি নির্মাণ কাজ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। 'ট্রাস্টিস' বোর্ডের সভাপতি ডেভিড লেসলি ভবনটির ভিত্তি অধিশায়িত করেন।[5] অনুষ্ঠানে গভর্নর এ.সি গিব্‌স বক্তব্য রাখেন।[3]

প্রতিষ্ঠাতার আদেশে ভবন তৈরীর জন্য ইট তৈরীর জন্য ক্যাম্পাসের কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে থেকে মাটি খনন করা হতো এবং সেখানেই পোড়ানো হতো।[4] পুরো ভবন নির্মাণ পরিকল্পনায় ৫০০,০০০ ইট তৈরীর জন্য আদেশ দেওয়া হয়।[6] ১৮৬৭ সালে ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর নাম দেওয়া হয় ইউনিভার্সিটি হল[7] বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পুরনো ভবন থেকে নতুন ভবনে নিয়ে আসা হয় এবং ১৮৬৭ সালের ২১শে ডিসেম্বর থেকে ভবনটি ব্যবহার করা শুরু হয়।[3]

পুরো ভবন নির্মাণের জন্য ৪০,০০০ ডলার লেগেছিল এবং সাজাতে আরও প্রায় ১৭,০০০ ডলার লেগেছিল।[3] ভবনটি প্রথমে ক্লাসরুম, পাঠাগার, বৈঠকখানা, আবৃতির জন্য ব্যবহার করা হতো এবং চিলেকোঠাটি শরীরিক শিক্ষার জন্য হতো।[6] এছাড়াও পূর্ববর্তী বছরগুলোতে ভবনটি প্রার্থনগৃহ[7] এবং ছাত্রদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো।[8]

পরবর্তী বছরসমূহ

Thumb
ম্যনসার্ড স্টাইল ছাদবিশিষ্ট ওয়েলার হল
Thumb
অরিগন অঙ্গরাজ্যের আইনসভা ভবন থেকে ওয়েলার হল

শিক্ষালয়টির পুরনো ভবন, অরিগন ইন্সটিটিউট, ১৮৭২ সালের ডিসেম্বরে পুড়ে যায় এবং ক্যাম্পাসটিতে শুধু ইউনিভার্সিটি হলই ছিল একমাত্র ভবন।[9] এর ফলে সকল কলেজ অব ল সহ অন্যান্য ভবন এসে ওয়েলার হলেই ১৮৮৪ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে 'কলেজ অব ল' ঈটন হলে স্থানান্তরিত হয় এবং ১৮৬৭ সাল থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত ঈটন হলে থাকে।[9][10] পরবর্তীতে পোর্টল্যান্ডে স্থানান্তরিত হবার পর ভবনটি মেডিক্যাল স্কুলে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। ১৮৭২ থেকে ১৯০৬ সালে মেডিক্যাল ভবন প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি হল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র স্থায়ী ক্যম্পাস। প্রবর্তীতে লাউজেন হল সহ অন্যান্য হল ক্যম্পাসটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইটের ভবন-ইউনিভার্সিটি হল ১৮৯১ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বরে অগ্নিদগ্ধ হয়।[11] এই অগ্নিকান্ডের কারণে ভবনের উপরের দুই তলা ধ্বংস হয়ে যায়।[7] ১৮৯১ সালে অগ্নিদগ্ধ হবার পর একই বছরেই ভবনটি পুনঃনির্মাণ করা হয় তবে এর ছাদ মূল নকশা থেকে পরিবর্তিত করে ম্যানসার্ড স্টাইলে নির্মাণ করা হয়। উপরের গুম্বজের পরিবর্তে একটি বর্গাকার টাওয়ার তৈরী করা হয়ে যেখানে শিক্ষালয়ের ঘণ্টা যুক্ত ছিল।[11][12] ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ওয়েলার হলটি শ্রেণী, প্রার্থনাগার এবং অফিসসহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা হতো।[8]

১৯১২ সালে উইলমেট বিশ্ববিদ্যাল, বিশ্যবিদ্যালয় ভবনটির নাম পরিবর্তন করে, রিভারেন্‌ড আলভিন এফ. ওয়েলারের সম্মানে পরিবর্তন করা হয়।[4] ১৯১৯ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ক্রিস্টমাসের বন্ধের সময় পুনরায় ওয়েলার হলটি অগ্নিদগ্ধ হয়।[11][13] এই অগ্নিকান্ডে ভবনের অভ্যন্তরীন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায় তবে বাইরের দেয়াল অক্ষত থাকে। ২য় অগ্নিকান্ডে ম্যানসার্ড স্টাইলের ছাদ এবং ছাদের উপর বর্গাকার টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যায়।[7] পরবর্তী বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনটিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে এবং বর্গাকার টাওয়ারের ডিজাইন বাদ দিয়ে পুনরায় আগের গুম্বজবিশিষ্ট ছাদ প্রতিষ্ঠিত করা হয়।[4] স্থপতি 'ফ্রেড এ. লেগ' পুরো ভবনের তত্ত্বাবধায়ন করেন এবং পুনরায় নকশা করেন।[14] ১৯২০ সালে ভবনটি পুনঃনির্মাণ, লাউজান হল সম্পন্ন করা এবং হিটিং প্লান্ট যোগ করার জন্য ১০০,০০০ ডলারের উদ্দ্যেশ্যে আবার অভিযান চালানো হয়।[15]

১৯৮০ সালে পূর্বের নকশাটি বাতিল হওয়ার ব্যাপারে কিছু আলোচনা করা হয়েছিল।[8] একটি প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ওয়েলার হলের পাশে ভবনটির প্রতিরূপ তৈরী করার জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ওয়েলার হলকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।[8] ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত ২৫,০০০ বর্গফুটের ভবনটি পুনঃনির্মাণ করার জন্য ২.২৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়।[16] ভবনের পুনঃনির্মাণ অভ্যন্তরীণ অংশ এবং ভূমিকম্পের ব্যপার বিবেচনা করে সম্পন্ন করা হয়।[17] পুনঃনির্মাণের পরে ভবনের চিলেকোঠা ঘরটি বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।[8] ১৯৮৮ সালের পুনঃনির্মাণের পর থেকে ভবনটি পরিচালকদের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৫ সালের পুনঃসংস্কারের সময় ১০০ বছরের পুরনো জানালা ঠিক করতে, ইটগুলো মেরামত করতে, দেয়ালের ফুটো বন্ধ করতে, পুনরায় রঙ করতে এবং বাইরের লাল ইটের রঙ উজ্জ্বল করতে সব মিলিয়ে ১.৩ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল।[17]

স্থাপত্যশৈলী

Thumb
দাঁতের মতো আয়তাকার ইটের ব্লক

ওয়েলার হল রেনেসাঁস স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হয়েছিল।[1] লাল ভবনটি গ্রিক ক্রুশাকৃতির মতো তৈরী হয়েছিল।[7] ভবনটির গ্রিক ক্রুশাকৃতি আকারের জন্য বিশপ জেন্‌স-কে দাইয়ী করা যায়।[3] প্রতি ২ পার্শ্বভাগ ৮৪ ফুট লম্বা এবং ৪৪ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট এবং উত্তর, পশিম ও পূর্ব দিকের শেষ প্রান্তে এডিকাল বারান্দা রয়েছে।[6] মূলত ভবনটির ভূমি থেকে গম্বুজ পর্যন্ত ১০০ ফুট লম্বা।[3] ঘরের প্রলম্বিত অংশ থেকে ভূমি পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট।[3] ভবনের ভিত্তি ১২ ফুট উঁচু এবং প্রথম ছাদ মাটি থেকে ১৬ ফুট উঁচু।[3] ভবনটির ভিত্তি পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়েছে, এর ছাদ কোঁচদাদ বিশিষ্ট।[8] ২য় এবং ৩য় তলার উচ্চতা ১২ ফুট।[3] হলটির উপরে একটি গম্বুজ রয়েছে। এছাড়াও ভবনের বাইরে আয়তাকার স্তম্ভ, দাঁতের মতো আয়তাকার ইটের ব্লক, এবং ইটের করবেলিং রয়েছে।[6] ভবনটির অভ্যন্তরে বৃত্তাকার সিঁড়ি রয়েছে।

বর্তমান

Thumb
১৮৬৮ সালে ওয়েলার হলের অঙ্কন।

বর্তমানে ওয়েলার হল প্রাক্তন ছাত্রদের সম্পর্ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ, যোগাযোগ অফিস, সভাপতির অফিস এবং অন্যান্য পরিচালনা কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।[7] এছাড়াও ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৩০০ সিটবিশিষ্ট কোণ চ্যাপেল বা শঙ্কুয়াকৃতির প্রার্থনা ঘর রয়েছে।[7] কোণ চ্যাপেলটি এক ডজন দাগী গ্লাসের জানালাবিশিষ্ট[18] এবং এখানে একটি ক্লাসিক পাইপ অরগান আছে।[19] মাঝে মাঝে চ্যাপেলটি প্রবর্তন অনুষ্ঠান, লেকচার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসার্টের জন্য ব্যবহার করা হয়।[20] অরিগন অঙ্গরাজ্যের আইনসভা ভবনের সরাসরি বিপরীত পাশে উত্তর ক্যাম্পাসের মধ্যভাগে ওয়েলার হল অবস্থিত। পশ্চিম মিশিশিপি নদীর কাছাকাছি ভবনগুলোর মধ্যে এটিই হলো এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রাচীন ভবন।[16]

১৯৯২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তি'র সময়, যুক্তরাজ্যের পোস্টাল সার্ভিস ওয়েলার হলকে একটি পোস্টাল কার্ড প্রদান করে যাতে ওয়েলার হলের ছবি রয়েছে।[4] ওয়েলার হলের ছবিটি জলরঙ দিয়ে এঁকেছেন অরিগনে অবস্থিত ইগুইনের জর্জ সি. ওয়ার্নার। পোস্টকার্ডের ১৯ শতাংশ ছিল পোস্টাল সার্ভিসেস হিস্ট্রিক প্রিজারবেশন সিরিজ এর অংশ।[21]

টাইমলাইন

Thumb

আরও দেখুন

  • মেথডিস্ট মিশন
  • ওরেগন ইন্সটিটিউট

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.