Loading AI tools
দুধ স্বাদকারক পণ্যের ব্র্যান্ড উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ওভালটিন (এটি এর আসল নাম ওভোমল্টাইন নামেও পরিচিত) হল একটি দুধের স্বাদযুক্ত পণ্যের ব্র্যান্ড যা মল্টের নির্যাস (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীল রঙের মোড়কজাত পণ্য ব্যতীত), চিনি (সুইজারল্যান্ড ব্যতীত), এবং ঘোল দিয়ে তৈরি। কোন কোন স্বাদের ক্ষেত্রে এতে কোকোও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ওভালটিন, ওয়ান্ডার এজির প্রতিষ্ঠিত অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ ফুডস-এর একটি নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক, যা টুইনিংসের একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান, তারা ২০০২ সালে নোভারটিসের কাছ থেকে ব্র্যান্ডটি অধিগ্রহণ করে, [1] তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেসলে ২০০০ সালের শেষের দিকে নোভারটিস থেকে আলাদাভাবে এটি অধিগ্রহণ করেছিল।
প্রকার | চকোলেট দুগ্ধজাত পানীয় |
---|---|
উৎপাদনকারী | এসোসিয়েটেড ব্রিটিশ ফুডস্ বা লাইসেন্সধারী (যুক্তরাষ্ট্রে নেসলে) |
উৎপত্তির দেশ | সুইজারল্যান্ড |
প্রবর্তন | ১৯০৪; ১১৮ বছর পূর্বে |
প্রকারভেদ | চকোলেট দুধ, মল্ট, রিচ চকোলেট |
সংশ্লিষ্ট পণ্য | হট চকোলেট, মাইলো, নেসকুইক, হরলিক্স, উঃ-হু, ভি-কো |
ওয়েবসাইট | https://www.ovomaltine.ch/ |
ওভালটিন ১৯০৪ সালে সুইজারল্যান্ডের বের্ন শহরে আলবার্ট ওয়ান্ডার [2] প্রথম তৈরি করেন, যার নামকরণ করা হয়েছিলো 'ওভোমল্টাইন' (শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ওভাম যার অর্থ "ডিম" এবং মল্ট থেকে, যা এটি তৈরির অন্যতম প্রধান উপকরণ)। পরবর্তীতে ১৯২৭ সালে, বের্ন শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমে নিউনেগ গ্রামে একটি কারখানা স্থাপন করা হয় যেখানে আজও ওভালটিন উৎপাদিত হচ্ছে।[3]
১৯০৯ সালে 'ওভোমল্টাইন' ব্রিটেনে রপ্তানী করা হয় ওভালটিন নামে। ব্রিটেনের কিংস ল্যাংলে-তে একটি কারখানা স্থাপন করা হয় যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওভালটিনের উৎপাদন শুরু করতেও সাহায্য করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের চাহিদা মেটাতে ১৯১৫ সালের মধ্যে ভিলা পার্ক, ইলিনয়-তেও ওভালটিনের উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে কানাডার বাজারে বিতরণের লক্ষ্যে পিটারবার্গ, অন্টারিও তে এটির উৎপাদন শুরু হয়। ওভালটিন ফুডসের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন জেরাল্ড এথেলবার্ট গোল্ডস্মিথ।[4][5]
শুধুমাত্র "মল্ট, দুধ, ডিম এবং কোকোর স্বাদযুক্ত" বলে শুরুর দিকে প্রচার করা হলেও, কয়েক দশক ধরে এটির উৎপাদন ও গঠন প্রক্রিয়া বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বেশ কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তুত প্রণালী এবং গঠন প্রক্রিয়ায় এটি বিক্রয় করা হচ্ছে। ভারত[6] এবং যুক্তরাজ্যে এটি প্রস্তুত করতে আর ডিম ব্যবহৃত হয়না।[7]
ওভালটিনের জনপ্রিয় চকলেট মল্ট সংস্করণটি হলো একটি পাউডার যার সাথে পানীয় হিসাবে গরম বা ঠান্ডা দুধ মেশানো হয়। মল্ট ওভালটিন (যেটিতে কোকো থাকেনা) এবং চকোলেট সমৃদ্ধ ওভালটিনও (যেটিতে মল্ট থাকেনা) কোনো কোনো বাজারে পাওয়া যায়। ওভালটিন চকলেট বার, চকলেট ইস্টার এগ, পারফেইট, কুকিজ এবং প্রাতঃরাশের সিরিয়াল হিসেবেও পাওয়া যায়।[8]
ওভালটিন পিডিকিউ চকোলেট ফ্লেভার বীডস, পিডিকিউ চকো চিপস এবং এগনগ স্বাদের পিডিকিউও তৈরি করতো যা বর্তমানে আর পাওয়া যায়না। এই পানীয় গুলো ১৯৬০ থেকে ১৯৮০'র দশকে বেশ জনপ্রিয় ছিলো।[9]
১৯১৭ সালে ইলিনয় রাজ্যের ভিলা পার্ক ক্রয় করার পর থেকে এটিই ছিলো ওভালটিনের কারখানার মূল এলাকা; পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে এখান থেকে তারা কারখানা সরিয়ে ফেলে। ভিলা পার্ক হিস্টোরিক্যাল সোসাইটি ওভালটিনের বিজ্ঞাপন এবং স্মৃতিচিহ্নের একটি স্থায়ী প্রদর্শনী পরিচালনা করে থাকে। পুরনো কারখানাটির মূল মেঝে এবং দেয়াল উম্মুক্ত রেখে মাচা এপার্টমেন্টের রুপ দেয়া হয়েছিলো যা এখন ওভালটিন কোর্ট নামে পরিচিত।[10]
১৯৯২ সালে হিম্মেল গ্রুপ, সান্ডোজ নিউট্রিশন কর্পোরেশনের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ওভাল্টিন প্রস্তুতকরণ ও বিক্রয় সত্ত্ব লাভ করে। ২০০২ সালে হিম্মেল গ্রুপ, নোভারটিসের কাছে সেই সত্ত্ব বিক্রয় করে দেয়। ২০০৭ সালে নেসলে নোভারটিসের চিকিৎসা পুষ্টি বিভাগ অধিগ্রহণ করে যার মাধ্যমে তারা ওভালটিনের সকল সত্ত্ব লাভ করে।[11][12]
ওভালটিন ব্রিটেনে খুব জনপ্রিয় ছিল, এবং হার্টফোর্ডশায়ারের কিংস ল্যাংলিতে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় এটি তৈরি করা হতো যার মধ্যে তরল মল্ট নির্যাসকে ঘনীভূত করার জন্য জিইএ উইগ্যান্ড পতনশীল ফিল্ম ইভাপোরেটর অন্তর্ভুক্ত ছিল যা পরে বাষ্পের মাধ্যমে উত্তপ্ত ব্যান্ড ড্রায়ারের ভ্যাকুয়ামের নীচে শুকানো হতো। কিংস ল্যাংলিতে অবস্থিত আর্ট ডেকো শৈলীর ওভালটিন কারখানাটি একটি সুপরিচিত স্থানীয় ল্যান্ডমার্ক। ২০০২ সালে এটিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং কারখানাটি পরবর্তীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট হিসাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়। কারখানার কাছে ওভালটিন ওয়ার্কস পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যসেবা ফার্ম ছিল যা একটি মডেল ফার্ম এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যসেবা রিসোর্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এটির কার্যক্রম ১৯৬০ সাল পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ফার্মের জমি বিক্রি করা হয় যার অধিকাংশ এলাকা বর্তমানে এম২৫ মোটরওয়ের অধীনে রয়েছে। ওভালটিন ডিমের ফার্মটি বর্তমানে রিনিউয়েবল এনার্জি সিস্টেমস লিমিটেড এর একটি সাইট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। [13]
২০০২ সালের অক্টোবর মাসে, অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ ফুডস ওভাল্টিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নোভারটিসের খাদ্য ও পানীয় বিভাগ অধিগ্রহণ করে। [14] এবিএফ বর্তমানে সুইজারল্যান্ড, চীন, থাইল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় ওভালটিন উৎপাদন করে। কানাডায়, গ্রেস ফুডস ওভালটিন বিস্কুট এবং গুঁড়ো পানীয় আকারে উৎপাদন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেসলে ওভালটিন প্রস্তুত করে থাকে।[15]
হংকং-এ, হরলিক্সের মতো ওভাল্টিন একটি ক্যাফে পানীয় হিসাবে পরিচিত। এটি চা চান টেঙ্গের পাশাপাশি ক্যাফে ডি কোরাল এবং ম্যাক্সিমস এক্সপ্রেসের মতো ফাস্ট-ফুডের দোকানে পরিবেশন করা হয়। এটি গরম বা ঠান্ডা পানীয় হিসাবে বরফের উপর পরিবেশন করা হয়ে থাকে। ব্রাজিলে সাধারণত এটিকে ভ্যানিলা আইসক্রিমের সাথে মেশানো হয়ে থাকে। এশিয়ার বাজারে, ওভালটিন পাউডারের স্বাদযুক্ত একটি চকোলেট আইসক্রিম হিসেবে এটি পাওয়া যায়। ওভোমল্টাইন ব্র্যান্ডটি সুইজারল্যান্ডে অত্যন্ত স্বীকৃত এবং এটি স্কিইং এবং স্নোবোর্ডিংয়ের সাথেও যুক্ত। হংকংয়ের ম্যাকক্যাফে "ওভাল্টিন ক্রাঞ্চি ল্যাটে" ছাড়াও অন্যান্য পানীয় এবং ডেজার্ট সরবরাহ করে থাকে।[16]
মালয়েশিয়ায় ওভালটিন মাইলোর কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। ওভালটিন ঠান্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশনের জন্য টেট্রা পাক কার্টনে বিক্রি করা হয় এবং দোকান এবং সুপারমার্কেটে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়, তবুও বাজারে এধরণের পানীয়ের তুলনায় এটি কিছুটা কম নজর কাড়ে। জাপানে, ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে ক্যালপিস ইন্ডাস্ট্রিজ (বর্তমানে ক্যালপিস কোং লিমিটেড) ওভালটিন স্বল্প সময়ের জন্য বিক্রি করেছিলো, কিন্তু এটি বাণিজ্যিকভাবে সফল ছিলোনা। অস্ট্রেলিয়ায়, ওভালটিনকে চাপ দিয়ে সংকুচিত করা গোল ট্যাবলেট বানিয়ে ওভালটিনিজ নামে বিক্রি করা হয়, যা ক্যান্ডি হিসাবে খাওয়া হয়ে থাকে।[17]
ব্রাজিলিয়ান ফাস্ট-ফুড চেইন বব'স, যা ঐ দেশে ম্যাকডোনাল্ড'সের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী, ১৯৫৯ সাল থেকে ওভালটিনের সাথে মিল্কশেক এবং সানডেস তৈরি করে আসছে, সেখানে এটি "ওভোমল্টাইন" নামে পরিচিত, যা পরবর্তীতে ব্রাজিলে ঐ ফাস্ট-ফুড চেইনের অন্যতম প্রধান পণ্য হয়ে ওঠে। ২০১৬ সালে, ম্যাকডোনাল্ডস "ওভোমল্টাইন" ব্র্যান্ডের মিল্কশেক বিক্রি করার একচেটিয়া অধিকার অর্জন করে। সাও পাওলোতে ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওভালটিন কারখানা রয়েছে এবং থাইল্যান্ডের পরে এটি ওভালটিনের সবচেয়ে বৃহত্তম বাজার। ব্রাজিলিয়ান ওভালটিন এটির অন্যান্য ধরন থেকে আলাদা, অ্যাসেম্বলি লাইনের একটি ত্রুটি পাউডারটিকে আরও ক্রিস্পি করে তোলে যা আজও তারা বজায় রেখেছে।[18]
২০১১ সালে, ওভালটিনকে আইনের অধীনে এনে ডেনমার্কে এটির বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল যতক্ষণ না তারা ভিটামিন যুক্ত খাদ্য পণ্য হিসেবে তাদের দাবির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে না পারে।[19]
মার্কিন শিশুদের রেডিও সিরিজ লিটল অরফান অ্যানি (১৯৩১-১৯৪০) এবং ক্যাপ্টেন মিডনাইট (১৯৩৮-১৯৪৯), এবং পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন মিডনাইট টিভি সিরিজ (১৯৫৪-১৯৫৬), ওভালটিন স্পনসর করেছিলো। তাদের প্রচারকার্যের একটি উপায় ছিল যেখানে শ্রোতারা প্রিমিয়াম রেডিও সার্ভিস পাবার জন্য ওভালটিন জার ক্রয়ের প্রমাণ সংরক্ষণ করতো, যেমন "সিক্রেট ডিকোডার রিং" ব্যাজ, বা পিন যা রেডিও প্রোগ্রামের বার্তাগুলি ডিকোড করতে ব্যবহার করা যেতো।[20]
অ্যা ক্রিসমাস স্টোরি মুভিতে, ওভালটিনের উল্লেখ পাওয়া যায় যখন অভিনেতা পিটার বিলিংসলে র্যালফি চরিত্রে অভিনয় করার সময় জনপ্রিয় রেডিও শো লিটল অরফান অ্যানির একটি গোপন বার্তা থেকে একটি ক্রিপ্টোগ্রাম ধাঁধা সমাধান করেন।[21]
পাঁচ থেকে চৌদ্দ বছর বয়সীদের জন্য আয়োজন করা আরেকটি রেডিও অনুষ্ঠান, দ্য লীগ অফ ওভালটাইনিস, গ্রেট ব্রিটেনে প্রতি রবিবার সন্ধ্যা ৫ঃ৩০-এ সম্প্রচার করতো রেডিও লুক্সেমবার্গ। ফেব্রুয়ারী ১৯৩৫ থেকে শুরু করে ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি সম্প্রচার করা হয়েছিল, সেসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাবে স্টেশনটি বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৫২ থেকে আবারও সম্প্রচার করা হতো। মার্কিন প্রোগ্রামের মতো, শ্রোতারা সেখান থেকেও ব্যাজ, পিন এবং গোপন কোড পেতো। জনপ্রিয় ইংরেজি গায়ক ত্রয়ী দ্য বেভারলি সিস্টার্স এর তৈরি দ্য ওভালটাইনিস-এর বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল, সেই যুগের অন্যতম সফল জিঙ্গেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।[22]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.