Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ওড়ার পালক (Pennae volatus)[1] হল পাখিদের দুই পাখনার প্রান্তে এবং পুচ্ছে বিদ্যমান এক প্রকার বিশেষ পালক। এই পালকসমূহ লম্বা, অনমনীয় এবং আকারে অপ্রতিসম হয়, কিন্তু পাখির দুই পাখনাতে এবং লেজে এগুলো প্রতিসমভাবে সজ্জিত থাকে। পাখনায় অবস্থিত ওড়ার পালকগুলিকে বলা হয় রেমিজিস (একবচন: রিমেক্স) এবং পুচ্ছে অবস্থিত ওড়ার পালকগুলি বলা হয় রেকট্রাইসিস (একবচন: রেকট্রিক্স)। এই পালকসমূহের কাজ হল পাখিকে বায়ুতে ধাক্কা দিতে ও বাতাসে ভর করে উপরে উঠতে সহায়তা করা। কোন কোন পাখির ক্ষেত্রে এই পালকসমূহ বিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত হয়ে থাকে এবং উড্ডয়ন ছাড়াও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন: শত্রুদের ভয় দেখানো, বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ, ছানাদেরকে খাওয়ানো প্রভৃতি। কোন কোন প্রজাতির পাখিদের এই পালকসমূহ লম্বা ও চমকদার হয়ে থাকে, যা প্রদর্শন করে এরা বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে। আবার কোন কোন পাখি এই পালকগুলো দ্বারা ওড়ার সময় বিভিন্ন শব্দ করে বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে থাকে। পেঁচাদের পাখায় এ পালকগুলোতে ছোট ছোট খাঁজকাটা থাকে ফলে এরা কোন প্রকার শব্দ না করেই উড়তে পারে, এবং শিকারের ওপর নীরবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আবার কাঠঠোকরার ক্ষেত্রে এ পালকগুলো দৃঢ় ও মজবুত হওয়াতে তারা গাছের কাণ্ডকে শক্ত হয়ে আঁকড়ে ধরে ঠোকরাতে পারে। উড়তে পারে না এমন পাখিদের পাখনাতেও এরূপ পালক দেখা যায়, যদিও এর আকার ও আকৃতি অনেকটাই উড়ন্ত পাখিদের থেকে ভিন্ন প্রকৃতির হয়।
এসব পালক সময়ে সময়ে ঝরে পড়ে নতুন করে গজিয়ে থাকে, এসময়ে পাখিরা উড়তে পারে না বা উড়তে পারলেও উড্ডয়নে বিঘ্ন ঘটে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিভিন্নভাবে এ সমস্যার মোকাবিলা করে থাকে। কোন কোন পাখি একবারে সব পালক ঝেড়ে ফেলে দেয়, (এতে নতুন পালক ওঠা শুরু হয়, ফলে অপেক্ষাকৃত কম সময় তাদের উড্ডয়নহীন অবস্থায় থাকতে হয়)। আবার কোন কোন পাখি ধীরে ধীরে কয়েক বছর ধরে পালকগুলো ঝেড়ে ফেলে এবং নতুন পালক গজে উঠতে দেয়।
রেমিজিস (ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ "বৈঠাবাহক") পালকসমূহ পাখির পাখনার পশ্চাৎ ভাগে (posterior) অবস্থিত। পালকের ডাঁটাসমূহ (ক্যালামি) লিগামেন্টের সাহায্যে পাখনার অস্থির সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে। এবং একগুচ্ছ পুরু, শক্তিশালী ও টেন্ডনযুক্ত টিস্যু পালকগুলিকে যথাস্থানে আটকে রাখে; এই টিস্যু বা কলাসমূহের নাম পোস্টপ্যাটিজিয়াম (postpatagium)।[2] পাখিদের পাখনার দু'পাশের রেমিজিসগুলো প্রতিসমভাবে সাজানো থাকে, তথা একটি পাখনার প্রতিটি পালক তার অপর পাখনার অনুরূপ পালকের সাথে আকার ও আকৃতিতে অভিন্ন হয়। তবে এ পালকগুলির সজ্জা সবসময় যে একইরকম থাকে, তা নয়।[3][4] প্রতিটি রেমিজিস পালকের পাখনাতে এর অবস্থান অনুসারে পৃথক নামকরণ করা হয়। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার রেমিজিস পালকের বর্ণনা দেয়া হল।
প্রাইমারি বা প্রাথমিক পর্যায়ের পালকসমূহ পাখির ম্যানাস (পাখির "হাত", তথা অগ্রপদের শেষাংশ, যা কার্পোমেটাকার্পাস ও ফ্যালাঞ্জেস অস্থির সমন্বয়ে গঠিত)-এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এগুলি রেমিজিস পালকসমূহের মধ্যে সবচেয়ে সরু ও লম্বা হয়ে থাকে। পাখির উড্ডয়নের সময় পাখনা ঝাপটানোর জন্যে এগুলো অপরিহার্য, কারণ এর সাহায্যে পাখি বায়ুতে ধাক্কা দিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হয়। পাখির উড্ডয়নের জন্যে এই প্রাইমারী পালকগুলোর গঠনপ্রণালী গুরুত্বপূর্ণ।[5] পাখির ডানা ঝাপটানোতে নিম্নগামী যে ধাক্কা সৃষ্টি হয় এর প্রতিক্রিয়ায় পাখির উড্ডয়নের গতি বৃদ্ধি পায়। আবার ডানার উর্ধগামী ঝাপটার সময় (যখন পাখি পাখনা দু'টি শরীরের কাছে টেনে আনে), পাখি এই প্রাইমারী পালকগুলিকে ছড়িয়ে দেয় এবং এমনভাবে ঘুরিয়ে রাখে যাতে বায়ুর বাধা হ্রাস পায় কিন্তু সামনে এগিয়ে যাওয়ার মত কিছু বল প্রয়োগ করা যায়।[6] বিশালাকার পাখনা মেলে ওড়া পাখিদের প্রাইমারী পালকগুলো নমনীয় হওয়াতে পাখনার ডগায় বায়ুর ঘূর্ণী (vortex) হ্রাস পায়, এবং বায়ুর পশ্চাৎমুখী টানও (drag) কমে আসে।[7] এসমস্ত পালকের আঁশগুলোতে অতি ক্ষুদ্র কাঁটা থাকে যা এক স্তরের পালকের সাথে ওপরের স্তরের পালকসমূহকে আটকে থাকতে সহায়তা করে। অধিকাংশ উড্ডয়নশীল পাখিদের ডানায় এরূপ পালক দেখা যায়।[8]
বিভিন্ন প্রজাতির পাখির প্রাইমারী রেমিজিস পালকের সংখ্যা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। চড়ুই জাতীয় নয় এরূপ পাখিদের (ননপ্যাসেরিন, Non Passerine) ৯ থেকে ১১টি প্রাইমারি পালক থাকে[9], আবার সারস, ফ্লেমিংগো ও গ্রীব জাতীয় পাখিদের ১২টি করে[10] এবং উটপাখির ১৬টি প্রাইমারী পালক থাকে।[10] চড়ুই জাতীয় পাখিদের (প্যাসেরিন, Passerine) ১০টি প্রাইমারী পালক থাকে,[9] কোন কোনটির ৯টিও থাকতে পারে; এদের সবচেয়ে বাইরের দিকে থাকা প্রাইমারি পালকটি (রেমিক্ল) থাকে না, যা অন্যান্য পাখিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।[10]
পাখনার বহির্ভাগে থাকা প্রাইমারি পালকগুলি পিনিয়ন নামে পরিচিত, যা ফ্যালাঞ্জেস অস্থির সাথে যুক্ত থাকে।
সেকেন্ডারি রেমিজিস পালকসমূহ আলনা (ulna) অস্থির সাথে যুক্ত থাকে। কোন কোন প্রজাতির পাখির আলনা অস্থিতে ছোট ছোট গোলাকৃতি প্রবৃদ্ধি থাকে, সেকেন্ডারি পালকসমূহ লিগামেন্টের সাহায্যে এই প্রবৃদ্ধিগুলোর সাথে যুক্ত থাকে; অন্যান্য প্রজাতিতে উক্ত প্রবৃদ্ধিসমূহ থাকে না। সেকেন্ডারি পালকগুলো প্রাইমারি পালকের মত ছড়ানো যায় না, উড্ডয়নের সময় এরা একত্রিত হয়ে থাকে। এরা পাখির পাখনাকে প্রস্থ বরাবর বাঁকা আকৃতি (Air foil shape) ধারণ করে উড্ডয়নে সহায়তা করে। সেকেন্ডারি পালকগুলো প্রাইমারি অপেক্ষা খাট ও চওড়া হয়ে থাকে, এবং এর অগ্রভাগ গোলাকৃতির হয় (ডানের চিত্রে লক্ষ্য করুন)। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিতে এদের সংখ্যা ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন হামিংবার্ডে মাত্র ৬টি থেকে শুরু করে আলবাট্রোস পাখিতে ৪০টি পর্যন্ত সেকেন্ডারি রেমিজিস পালক থাকে।[11] সাধারণভাবে, বড় ও দীর্ঘ পাখনাবিশিষ্ট পাখি প্রজাতিসমূহে সেকেন্ডারী পালকের সংখ্যা অধিক হয়ে থাকে।[11] চড়াই জাতীয় নয় এরূপ (নন প্যাসেরিন, Non-Passerine) চল্লিশটি প্রজাতির পাখিতে ৫ম সেকেন্ডারি পালকটি অনুপস্থিত থাকে, এ অবস্থাকে বলা হয় ডায়াস্ট্যাক্সিস (যাদের এরূপ হয় না তাদের বলা হয় ইউট্যাক্সিক)। এরূপ পাখিদের ৫ম সেকেন্ডারি পালকের সেটে ঢাকনিস্বরূপ যে পালক থাকে, তার নিচে কোনো রেমিজিস পালকই দেখা যায় না, সম্ভবত ভ্রূণ অবস্থাতেই এই পালক বিলুপ্ত হয়। মাছরাঙা, গ্রীব, পেলিক্যান, বাজ, ঈগল, সারস, স্যান্ডপাইপার, গাঙচিল, টিয়া এবং পেঁচাজাতীয় সকল পাখিতে এই পালকটি অনুপস্থিত থাকে।[12]
এগুলো পাখির কাঁধের নিকটে অবস্থিত। এরা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি পালকের ন্যায় অস্থির সঙ্গে যুক্ত নয় বলে এদের সত্যিকার অর্থে রেমিজিস বলে গণ্য করা হয় না।[13] এদের কাজ হল প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি পালকসমূহকে আচ্ছাদন দেয়া, ওড়ার পালক হিসেবে এদেরকে গণ্য করা হয় না। আবার, অনেক বিশেষজ্ঞ টার্শিয়াল বলতে চড়াই জাতীয় পাখির ভেতরের দিকের ক্ষুদ্রাকৃতি সেকেন্ডারি পালকসমূহকে নির্দেশ করে থাকেন, যাতে করে অন্যান্য সেকেন্ডারিদের থেকে এগুলোকে আলাদা করা যায়। দীর্ঘ হিউমেরাস অস্থিবিশিষ্ট আলবাট্রোস ও পেলিক্যান জাতীয় পাখিদের এ পালকগুলোকে হিউমেরাল বলা হয়।[14][15]
ওড়ার পালকসমূহের ডাঁটার অগ্রভাগ একসারি টেকট্রিক্স (বহুবচন: টেকট্রিসেস) পালক দ্বারা আবৃত থাকে। ওড়ার পালকের উপরে ও নিচে দুটি স্তরে এই পালকসমূহ বিন্যস্ত থাকে।[16] পাখনা এবং পুচ্ছ উভয় স্থানেই এই পালকগুলি পাওয়া যায়। এ পালকগুলো বিভিন্ন প্রজাতির পাখিতে বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষ ময়ূরের পুচ্ছে যে টেকট্রিক্স পালকসমূহ থাকে তা বিন্যস্ত হয়ে বর্ণিল ও সুদৃশ্য পেখম তৈরি করে।[17]
বিশালাকার শিকারি পাখিদের প্রাইমারি রেমিজিস পালকের অগ্রভাগ অনেকক্ষেত্রে সরু আকার ধারণ করে (পাখনার শেষপ্রান্তের পালকগুলিতে)। এই সরু হয়ে যাওয়াকে ইমার্জিনেশন অথবা নচ বলে।[12] পর্যায়ক্রমে সরু হলে তাকে ইমার্জিনেশন এবং হঠাৎ সরু হলে তাকে নচ বলা হয়। (উপরে ডানদিকে প্রদত্ত পালকের চিত্রটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রাইমারি পালকটির ডান পাশে ইমার্জিনেশন ও বাম পাশে নচ বিদ্যমান)। এই ইমার্জিনেশন এবং নচসমূহের কারণে পাখির পাখনার অগ্রভাগে কিছু খাঁজের সৃষ্টি হয়, এই খাঁজগুলো দিয়ে বায়ু চলাচল করে পাখিকে বায়ুতে উড্ডয়নে সহায়তা করে।[18]
অ্যালুলা বা উপডানা হল কোন কোন প্রজাতির পাখির ডানার সম্মুখভাগে অবস্থিত প্রবৃদ্ধি বিশেষ। অ্যালুলার পালকসমূহকে সত্যিকার অর্থে ওড়ার পালক হিসেবে গণ্য করা হয় না কারণ এগুলো ওড়ার পালকের ন্যায় দৃঢ় ও দীর্ঘ হয় না। অবশ্য এই অ্যালুলা ধীরগতিতে উড্ডয়নে সহায়তা করে। এর পালকসমূহ পাখির "বৃদ্ধাঙ্গুল"-এর সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং পাখির পাখনার সম্মুখভাগে এবং এর সমান্তরালে সজ্জিত থাকে। অ্যালুলাটি উপরে বা নিচে বাঁকিয়ে পাখি বায়ুপ্রবাহের দিকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বায়ুতে ভর করে উপরে উঠতে পারে। পাখি তার অ্যালুলা ও পাখনার মধ্যবর্তী ফাঁক বৃদ্ধি করে এর নিম্নগামী পতন রোধ করে, এতে করে তা ধীরগতিতে উড়তে পারে এবং সহজে মাটিতে নামতে পারে।[12]
হোয়াটজিন পাখির ছানাদের পালক ওঠার পূর্বে তাদের প্রথম দুটি আঙুলের সাথে আংটার ন্যায় নখর থাকে যার সাহায্যে এরা গাছের শাখা-প্রশাখার সাথে ঝুলে থাকতে পারে। এ ছানাদের ওড়ার পালক ও অ্যালুলা উঠতে বিলম্ব হয়ে থাকে, কারণ তাদের নখরে পালক গজালে তা তাদের গাছের শাখা-প্রশাখায় চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। পরবর্তীতে ৭০-১০০ দিন বয়স থেকে ধীরে ধীরে এই নখর খসে পড়তে থাকে ও পালক গজাতে থাকে, এবং পূর্ণবয়স্ক পাখিতে এই নখরবিশেষ আর দেখা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই নখর আজীবন রয়ে যায়, যদিও এটি অব্যবহৃত হিসেবেই থাকে।[19][20]
রেকট্রাইসিস (ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ "চালক" বা "কাণ্ডারী") পালকসমূহ উড়ন্ত অবস্থাতে পাখিদের গতি হ্রাস ও গতিপথ পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। এই পালকসমূহ পাখির পুচ্ছের শেষ প্রান্তে ভূমির সমান্তরালে এক সারিতে সজ্জিত থাকে। এর মধ্যে কেবলমাত্র মাঝের একজোড়া পালক লিগামেন্টের সাহায্যে পুচ্ছের অস্থির সাথে যুক্ত থাকে। এছাড়া বাকি পালকসমূহ পাখির রেকট্রিসিয়াল বাল্ব (মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তের স্ফীত অংশ, যা মাংস ও চর্বি দ্বারা গঠিত)-এর মধ্যে বিদ্ধ থাকে। রেকট্রাইসিস সর্বদা জোড়সংখ্যক হয়, অধিকাংশ প্রজাতির পাখিতে ৬ জোড়া রেকট্রাইসিস পাওয়া যায়। গ্রীব ও কিউই জাতীয় উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন পাখিদের এ পালকগুলো থাকে না, এবং পেঙ্গুইনের ক্ষেত্রে তা আকারে অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয়ে থাকে।[10][21][22][23] গ্রাউস নামক বনমোরগ জাতীয় পাখিসমূহে এই পালকের সংখ্যা থাকে ১২ জোড়া। পোষা কবুতরে এই পালকের সংখ্যা ব্যপকভাবে পরিবর্তনশীল হয়ে থাকে।[24] Domestic pigeons have a highly variable number, due to centuries of selective breeding.[25]
পাখির পালক ঝরে পড়া ও নতুন করে গজানো, তাদের শরীরের কাঠামো প্রভৃতি বিষয় আলোচনার সুবিধার্থে পক্ষী বিশেষজ্ঞগণ প্রতিটি ওড়ার পালককে সংখ্যার সাহায্যে চিহ্নিত করে থাকেন। প্রচলিত নিয়মানুসারে, প্রাইমারি পালকসমূহকে ইংরেজি অক্ষর P (P1, P2, P3... প্রভৃতি) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, তদ্রূপ সেকেন্ডারি পালকসমূহকে S দ্বারা, টার্শিয়াল পালকসমূহকে T দ্বারা এবং রেকট্রাইসিস পালকসমূহকে R দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞগণ প্রাইমারি পালকসমূহকে অধঃক্রমে গণনা করে থাকেন, অর্থ্যাৎ সবচেয়ে ভেতরের পালকটি থেকে (যা সেকেন্ডারি পালকসমূহের সবচেয়ে নিকটবর্তী) গণনা শুরু হয় এবং ক্রমানুসারে পাখনার বাইরের দিকের পালকগুলি গণনা করা হয়।[9] আবার অনেকে উর্ধ্বক্রমে গণনা করে থাকেন, তথা পাখনার বাইরের প্রান্ত থেকে গণনা শুরু করেন। উভয় পদ্ধতিরই কিছু সুবিধা রয়েছে। অধঃক্রমে গণনা করলে তা পাখির পালক ঝরে পড়ার ক্রমের সাথে মিলে যায় (পাখির পালক তার পাখনার ভেতরের প্রান্ত থেকে ঝরা শুরু করে)। আবার, কিছু প্রজাতির পাখির ১০ম প্রাইমারি পালকটি অনুপস্থিত থাকে, (যেমন চড়ুই জাতীয় পাখিদের ক্ষেত্রে), অধঃক্রমে গণনা করলে এতে করে পরবর্তী পালকগুলোর সংখ্যা চিহ্নিতকরণে কোন প্রভাব পড়ে না। অপরপক্ষে, উর্ধ্বক্রমে গণনা করলে চড়ুই জাতীয় নয় এমন পাখিদের সংখ্যায়নে সুবিধা হয়, কেননা এদের যতগুলি প্রাইমারি পালক থাকুক না কেন, এর বহিঃপ্রান্তের প্রথম চারটি পালক এর অগ্রপদের অস্থির সাথে যুক্ত থাকে,[9] পাখনা সংকেত (Wing formula) তৈরিতে তাই এই পদ্ধতির ব্যবহার সুবিধাজনক।
সেকেন্ডারি পালকসমূহ সবসময় উর্ধ্বক্রমে গণনা করা হয়ে থাকে, অর্থ্যাৎ (প্রাইমারির নিকটস্থ) বহিরাংশের পালকগুলি থেকে গণনা শুরু হয় এবং ক্রমানুসারে ভেতরের দিকে গণনা করে আসা হয়।[9] টার্শিয়াল পালকসমূহও উর্ধ্বক্রমে গণনা করা হয়, তবে এর সংখ্যা ১ থেকে শুরু না করে সর্বশেষ সেকেন্ডারি পালকের নম্বরের পর থেকে গণনা আরম্ভ করা হয়। যেমন ... S5, S6, T7, T8,... ইত্যাদি।[9]
রেকট্রাইসিস পালকসমূহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কেন্দ্রে অবস্থিত পালকজোড়া থেকে গণনা শুরু করে ক্রমান্বয়ে উভয় দিকে বাইরের দিকের পালকগুলো গণনা করা হয়।.[26]
কোন কোন প্রজাতির পাখিতে বিবর্তনের ফলে এর ওড়ার পালকে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট দেখা দেয় যার দ্বারা তারা ওড়ার বাইরেও অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে।
কতিপয় প্রজাতির পাখির রেমিজিস ও রেকট্রাইসিস পালক ওড়ার সময় শব্দ সৃষ্টি করে, এ শব্দের উদ্দেশ্য সাধারণতঃ বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ কিংবা নিজ এলাকায় অনুপ্রবেশকারীদের ভীতি প্রদর্শন। পুরুষ হামিংবার্ডে বহিঃপ্রান্তের প্রাইমারি পালকগুলি ওড়ার সময় ও নিম্নগামী ঝাঁপ দেয়ার সময় বিশেষ ভাবে কম্পিত হয়। ঐ পালকগুলি ক্লান্ত হয়ে গেলে বা ঝরে গেলে এই কম্পন বন্ধ হয়ে যায়।[27] ল্যাপউইং পাখি প্রাইমারি পালকের সাহায্যে আঁকাবাকাভাবে উড়ে ও গুনগুন শব্দ সৃষ্টি করে বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে।[28] আমেরিকান বনকুক্কুট (woodcock) পাখির বহিঃপ্রান্তের প্রাইমারি পালক দ্বারা এরা শীষের ন্যায় শব্দ করে বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে থাকে। [29] চড়ুই জাতীয় পাখি ম্যানাকিন (Club winged manakin) এর পুরুষেরা এদের সেকেন্ডারি পালকের তীক্ষ্ন কম্পনের দ্বারা শব্দ সৃষ্টি করে বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করতে পারে। এদের একটি বাঁকানো সেকেন্ডারি পালকের সাথে এর পার্শ্ববর্তী ধারবিশিষ্ট সেকেন্ডারী পালকের ঘর্ষণের দ্বারা তারা এই শব্দ সৃষ্টি করে।[30] দুই প্রকার কাঁদাখোচা পাখির (Wilson's snipe এবং common snipe) লেজের পালকগুলো প্রদর্শনী উড্ডয়নের সময় ছড়িয়ে পড়ে এবং এদের ফাঁক দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হয়ে এক প্রকার বিশেষ শব্দ করে থাকে, যাকে বলে উইনোইং ("winnowing");[31] উল্লিখিত দুই প্রকার পাখি প্রজাতির লেজ দ্বারা সৃষ্ট শব্দের ভিত্তিতে এবং উইলসন'স স্নাইপ (Wilson's snipe) পাখির লেজের শেষ জোড়া রেকট্রাইসিস পালকের ভিন্নতার ভিত্তিতে এদেরকে দুটি ভিন্ন প্রজাতিতে বিভক্ত করা হয়।
ওড়ার পালকসমূহ কোন কোন ক্ষেত্রে দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যেও পরিবর্তিত হয়ে থাকে। দুই প্রজাতির পুরুষ নাইটজার পাখির (standard-winged এবং pennant-winged nightjar) P2 প্রাইমারি পালক (ওপরের নামকরণের নিয়মাবলী দেখুন) পরিবর্তিত হয়ে বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।[32] স্ট্যানডার্ড উইং নাইটজার পাখির রুপান্তরিত প্রাইমারি পালক দৈর্ঘ্যে অত্যন্ত লম্বা হয় এবং এর ডগায় জালের ন্যায় আঁশ দ্বারা তৈরি একটি "পতাকা" থাকে। পেন্যান্ট উইং নাইটজার পাখির P2 পালক অত্যন্ত দীর্ঘ তবে স্বাভাবিক আকৃতির হয়ে থাকে এবং P3, P4 ও P5 পালক ক্রমানুসারে ছোট হতে থাকে, ফলে এর মধ্যভাগটি দ্বিধাবিভক্ত হয় এবং এর মাঝ বরাবর একটি দীর্ঘায়িত পালক থাকে।
অনেক প্রজাতির পাখির পুরুষের একজোড়া রেকট্রাইসিস পালক দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে যার দ্বারা এরা বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে, যেমন: রিং নেক্ড ফিজ্ন্ট পাখি কিংবা আফ্রিকার বাবুই জাতীয় পাখি ওয়াইদা । পুরুষ লায়ারবার্ড-এর রেকট্রাইসিস পালকসমূহ দীর্ঘ হয় এবং এর শেষ প্রান্ত বেঁকে তার মাথার ওপর ঝুঁকে পড়ে এবং দেখতে অত্যন্ত সুদৃশ্য হয়। বার্ড অব প্যারাডাইস জাতীয় পাখিদের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এদের পুরুষ পাখির বিচিত্র ও চমৎকার পেখমবিশিষ্ট পুচ্ছ। এই পেখমসমূহ মূলতঃ রেকট্রাইসিস পালকসমূহের বিবর্তনের ফল। এর মধ্যে রয়েছে রিবন টেইল্ড অ্যাস্ট্রাপিয়া পাখির সুদীর্ঘ লেজ, যা তার দেহের দৈর্ঘ্যেরও তিনগুণ হয়ে থাকে, এবং চমৎকার বা ম্যাগনিফিসেন্ট বার্ড অব প্যারাডাইস পাখির পেঁচানো সুদৃশ্য জোড়া পালক।
পেঁচাদের রেমিজিস পালকের সম্মুখ ধার খাঁজকাটা হয়ে থাকে। ফলে তার পাখনার উপরিভাগে বায়ু প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এবং মসৃণ পৃষ্ঠে বায়ু চলাচল করলে যে শনশন শব্দ সৃষ্টি হয়, তা হওয়া থেকে বিরত রাখে; ফলে পেঁচারা নিঃশব্দে উড়তে ও শিকার করতে পারে।[33]
কাঠঠোকরাদের রেকট্রাইসিস পালক আনুপাতিকভাবে ছোট এবং অত্যন্ত দৃঢ় হয়ে থাকে, ফলে এরা গাছের কাণ্ডকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারে, এবং ঠোকর দিয়ে পোকামাকড় ইত্যাদি খেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এখনো সকল প্রকার রুপান্তরিত ওড়ার পালকের উদ্দেশ্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি। পুরুষ সোয়ালো পাখির দু'টি গণ (genera) Psalidoprocne এবং Stelgidopteryx এর অন্তর্ভুক্ত পুরুষ পাখিদের প্রাইমারি পালকের অগ্রভাগ বাঁকানো আঁকড়া বা হুকের আকৃতি ধারণ করে। এর কার্যকারিতা কী তা নির্ণয় করা যায় নি, কোন কোন বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন সম্ভবত এগুলো বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করার জন্যে শব্দ সৃষ্টি করতে পারে।[34]
বিবর্তনের ধারায় কিছু প্রজাতির পাখি তাদের উড্ডয়নের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। স্টীমার হাঁস নামক একপ্রকার হাঁস প্রজাতিতে ওড়ার পালক দেখা গেলেও এরা উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন হয়ে থাকে। টিটিকাকা গ্রীব পাখিসহ আরো কিছু "রেল" পাখিদের প্রাইমারি পালকের সংখ্যা হ্রাস পায়।[35]
উটপাখি জাতীয় পাখিদের রেমিজিস পালকগুলো নরম ও কোমল হয়ে থাকে; এসব পালকে ওড়ার পালকের মত পরস্পরের সাথে আটকানো হুক ও আঁশসমূহ থাকে না, এবং এরা ওড়ার পালকের ন্যায় দৃঢ় ও মজবুত হয় না। ইমু পাখির রেমিজিস পালকগুলো আকারে ছোট হয়ে থাকে। আবার ক্যাসোয়ারির ক্ষেত্রে এই পালকগুলো সংখ্যায় ও আকারে হ্রাস পায়, মাত্র ৫-৬টি পালক এতে থাকে। রেটাইট জাতীয় অধিকাংশ পাখিতে রেকট্রাইসিস একেবারেই থাকে না; এদের মধ্যে শুধুমাত্র উটপাখিতে এ পালক দেখা যায়।
পেঙ্গুইনেরা সম্পূর্ণরূপেই ওড়ার পালকহীন হয়ে থাকে। পূর্ণবয়স্ক পেঙ্গুইনের পাখনা ও লেজ একই প্রকার পালকে আবৃত থাকে যা দ্বারা তাদের দেহের অন্যান্য অংশও আবৃত থাকে।
ভূমিতে বাসকারী কাকাপো, যা পৃথিবীর একমাত্র ওড়ার ক্ষমতাহীন টিয়া প্রজাতি, এদের পাখনায় রেমিজিস পালক পাওয়া যায়, যা ক্ষুদ্র, গোলাকৃতি এবং প্রতিসমভাবে সাজানো যা উড়ুক্কু টিয়াদের থেকে ভিন্ন। এদের পাখনার প্রান্তের পালকসমূহতে পরস্পরে আবদ্ধ আঁশসমূহের সংখ্যাও কম থাকে।[36]
পালকসমূহ পরিপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার পর মৃত বস্তুতে পরিণত হয়। কালক্রমে এরা জীর্ণ শীর্ণ হয়ে পড়ে এবং এদের প্রতিস্থাপিত করার সময় এসে পড়ে। এই প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াকে বলা হয় মোল্ট (moult); এসময়ে অনেক পালক ঝরে পড়ার কারণে পাখিদের উড্ডয়নে বিঘ্ন ঘটে এবং কিছু কিছু প্রজাতিতে ছানাদের খাওয়ানো, বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ প্রভৃতি কাজও বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই বিভিন্ন গোত্রের পাখিতে পালক ঝরে পড়ার সময়কাল বিভিন্ন হয়ে থাকে।
অধিকাংশ পাখির পালক পাখনার বা পুচ্ছের একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে ঝরে পড়া শুরু করে, এই নির্দিষ্ট বিন্দু বা স্থানটিকে বলে ফোকাস (বহুবচন: ফোকাই), এই ফোকাস -এর পালক থেকে শুরু করে ক্রমানুসারে একদিকে বা উভয় দিকের অন্যান্য পালকগুলিও ঝরতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, চড়ুই জাতীয় পাখিদের (প্যাসেরিন) ফোকাস থাকে এর পাখনার সবচেয়ে ভেতরের দিকের প্রাইমারি (P1) এবং সবচেয়ে বাইরের দিকের সেকেন্ডারি (S1) পালকদ্বয়ের মাঝে, এবং লেজের ফোকাস থাকে কেন্দ্রে অবস্থিত রেকট্রাইসিস পালকদ্বয়ের মধ্যস্থানে।[37] যখন এই প্যাসেরিন পাখিদের পালক ঝরা শুরু হয় তখন ফোকাসের নিকটস্থ পালকদ্বয় সবার আগে ঝরে পড়ে, এরপর এদের স্থানে নতুন পালক গজায়; এই নতুন পালকের দৈর্ঘ্য যখন এর চূড়ান্ত দৈর্ঘ্যের অর্ধেকে পৌঁছে তখন ক্রমানুসারে এর পরবর্তী পালক ঝরে পড়ে (পাখনার ক্ষেত্রে P2 এবং S2, লেজের ক্ষেত্রে R2 পালকদ্বয়, নামকরণের নিয়মাবলি লক্ষ্য করুন)। এই পালক ঝরে পড়া ও নতুন করে গজানো ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা পাখনা ও লেজের শেষপ্রান্তে না পৌঁছায়। পালক ঝরে পড়ার স্থিতিকাল এক প্রজাতির মধ্যেও ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর মেরু অঞ্চলের কতিপয়প্যাসেরিন জাতীয় পাখি একবারে অনেকগুলো পালক ঝেড়ে ফেলে (এমনকি কিছুদিনের জন্য তারা ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে), এতে করে দক্ষিণে যাতায়াতের (migration) সময় আগমনের পূর্বেই তাদের নতুন পালক গজিয়ে যায়। আবার একই প্রজাতির যেসব সদস্য মেরু অঞ্চল থেকে দূরে থাকে, তাদের মোল্ট প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত ধীর গতিতে সম্পন্ন হয়।[38]
অনেক প্রজাতিতে একাধিক ফোকাস লক্ষ্য করা যায়; এক্ষেত্রে সবগুলো ফোকাসে একসাথে পালক ঝরা শুরু হয়, তবে তা একমুখীভাবে এগুতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রাউস পাখির পাখনায় দুটি ফোকাস থাকে: পাখনার শেষপ্রান্তে একটি এবং P1 ও S1 পালকের মাঝে আরেকটি ফোকাস থাকে। উভয় ফোকাস থেকেই একত্রে পালক ঝরা শুরু হয়। দীর্ঘ পাখনাবিশিষ্ট অনেক পাখির পাখনাতেও একাধিক ফোকাস থাকে।
যেসকল পাখির পাখনার ওপর বেশি ভার পড়ে ("wing-loaded") অর্থ্যাৎ দেহের ওজনের সাপেক্ষে পাখনার দৈর্ঘ্য তুলনামূলক কম, তাদের পালক ঝরে পড়ার কালে ওড়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে; এদের ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত প্রক্রিয়ায় পালক ঝরলে তারা বছরের একটি বড় সময় ধরেই ওড়ার সমস্যায় ভুগবে এবং শিকারি পশুপাখিদের থেকে পালাতে অক্ষম হবে, তাই এরা একবারে এদের সবগুলো পালক ঝেড়ে ফেলে নতুন পালক গজায়। এতে করে কেবল ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ সময়ের জন্য এদের উড্ডয়নহীন থাকতে হয়। ১১টি প্রজাতির পাখি এই প্রক্রিয়ায় পালক খসিয়ে থাকে, যেমন: মাছরাঙা, গ্রীবসহ অধিকাংশ সাঁতার-কাটা পাখি।
কোকিল পাখি একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাখনার পালক খসিয়ে থাকে। সাধারণভাবে প্রথমে তারা বিজোড় নম্বরযুক্ত প্রাইমারি পালকগুলো ঝরিয়ে থাকে অতঃপর তারা জোড় নম্বরের পালকগুলো ঝরায়। তবে তাদের জীবন ইতিহাসের উপর নির্ভর করে এই প্রক্রিয়া ভিন্নতর হতে পারে।[39]
বৃক্ষে বসবাসকারী কাঠঠোকরারা তাদের লেজের ওপর বিশেষ করে লেজের মাঝের একজোড়া রেকট্রাইসিস-এর ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল; যেহেতু তারা গাছের কাণ্ড থেকে পোকামাকড় খাওয়ার সময় কাণ্ডে লেজ দ্বারা ঠেস দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে। এদের লেজের মোল্ট একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। কেন্দ্রের রেকট্রাইসিস জোড়ার পালকদ্বয় প্রথমে না খসে এদের পরবর্তী অর্থ্যাৎ ২য় জোড়া রেকট্রাইসিস আগে খসে পড়ে (R2 পালকজোড়া)। (Celeus এবং Dendropicos গণের প্রজাতিগুলোতে ৩য় রেকট্রাইসিস পালকদ্বয় থেকে মোল্ট আরম্ভ হয়)। এরূপে উপরোল্লিখিত প্রক্রিয়ায় লেজের অন্যান্য রেকট্রাইসিস পালক ঝরে আবার নতুন পালক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, কেবল তখনই মাঝের রেকট্রাইসিস জোড়ার মোল্ট শুরু হয়; এতে করে নতুন বর্ধনশীল পালকদুটি সুরক্ষিত থাকে, যেহেতু তারা অন্য পালক দ্বারা আবৃত থাকে; এবং এসময় নতুন করে গড়ে ওঠা লেজটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় পালকদ্বয়ের অভাব অন্যান্য পালকসমূহ পূরণ করে থাকে। মাটি থেকে আহার করা কাঠঠোকরাদের পুচ্ছে এই বিশেষ পরিবর্তিত মোল্টের প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না, বরং এরা অন্যান্য পাখির ন্যায় কেন্দ্রের পালকদ্বয় থেকেই মোল্ট শুরু করে।
অনেক ক্ষেত্রে একই প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের রেমিজিস ও রেকট্রাইসিস পালকসমূহতে উল্লেকযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের দেহের সমস্ত পালক একই সাথে বেড়ে ওঠে, এতে এদের দেহে শক্তির চাহিদার ওপর চাপ পড়ে। ফলে এদের পালকসমূহ নরম হয়ে থাকে এবং এর গুণগত মান প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পালকের চেয়ে খারাপ হয় (কারণ প্রাপ্তবয়স্ক পাখিতে এ পালকগুলো বেড়ে ওঠার জন্যে প্রচুর সময় পায়)।[40] ফলে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের পালক সহজেই জীর্ণ হয়ে পড়ে।
পাখির পালকের বৃদ্ধির হার সবসময় এক থাকে না, এই বৃদ্ধির তারতম্য পাখির পরিণত পালক পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়- পরিণত পালকে হালকা এবং গাঢ় রঙের রেখা দেখা যায়, প্রতিটি রেখা কমবেশি ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে বৃদ্ধি পায়, তাই একেকটি হালকা ও গাঢ় রেখার প্রস্থ দেখে ঐ দিনে পাখির পুষ্টিগত অবস্থা কী ছিল তা নির্ণয় করা যায়। এই পদ্ধতিটির নাম ptilochronology ।[41][42]
সাধারণতঃ তরুণ পাখিদের পালকসমূহ সরু ও এর ডগা তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে।[43][44] পাখির উড্ডয়নের সময় তা আরো স্পষ্ট বোঝা যায়, বিশেষ করে শিকারি পাখিদের ক্ষেত্রে। পালকগুলোর সরু ডগার কারণে তরুণ পাখিদের পাখনার পশ্চাৎ ধার খাঁজকাটা হয়ে থাকে। অপরপক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের পাখনার ধার মসৃণ হয়।[43] আবার তরুণ পাখিদের সবগুলো পালক একই সময়ে বেড়ে ওঠার দরুন এরা সমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হয়। অপরদিকে প্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের পালকের দৈর্ঘ্যে বৈচিত্র দেখা যায়, যেহেতু এদের একেকটি একেক সময়ে ঝরে নতুন করে বেড়ে ওঠে (মোল্ট হয়)।[40]
পাখিদের, বিশেষ করে শিকারি পাখিদের প্রাপ্তবয়স্ক ও তরুণ পাখিদের ওড়ার পালকসমূহের দৈর্ঘ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়। কতিপয় প্রজাতির তরুণ পাখিদের রেকট্রাইসিস পালক, প্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ্য এবং পাখনা অপেক্ষাকৃত খাট ও চওড়া হয়ে থাকে (পাখনার বাইরের প্রান্তের প্রাইমারি পালকসমূহ ক্ষুদ্রতর এবং ভেতরের দিকের প্রাইমারিসমূহ এবং সেকেন্ডারি পালকসমূহ দীর্ঘতর হয়ে থাকে)[45]। যদিও এর প্রচুর ব্যতিক্রমও রয়েছে। লম্বা লেজবিশিষ্ট বিভিন্ন পাখি, যেমন সোয়ালো টেইল্ড চিল পাখির (swallow-tailed kite), সেক্রেটারি পাখি এবং ইউরোপীয় হানি বাজার্ড (বাজ) পাখিদের তরুণদের রেকট্রাইসিস প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে ছোট হয়। ধারণা করা হয় এই দীর্ঘ রেকট্রাইসিস পালক তরুণ পাখিদের উড়তে বিশেষ সহায়তা করে, কেননা তরুণ পাখিদের ওড়ার অভিজ্ঞতা না থাকায় এবং তাদের ওড়ার পেশীসমূহ অপেক্ষাকৃত দূর্বল হওয়াতে এদের প্রথম প্রথম উড্ডয়নে বেগ পেতে হয়।[45]
পাখির পাখনার গঠন গাণিতিকভাবে প্রকাশ করতে যে সংকেত ব্যবহৃত হয় তাকে পাখনা সংকেত (wing formula) বলে। সদৃশ পালকের গঠনবিশিষ্ট দুই বা ততোধিক প্রজাতির পাখির মধ্যকার পার্থক্য নির্দেশ করার সুবিধার্থে এই সংকেত ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে যারা পাখির পাখনায় ট্যাগ লাগিয়ে থাকেন তাদের জন্য এ সংকেত অত্যন্ত সুবিধাজনক।[12]
একটি পাখির পাখনা সংকেত নির্ণয় করার জন্য, এর সর্বাপেক্ষা বাইরের প্রাইমারি পালক থেকে এর সর্ববৃহৎ ঢাকনি পালক (যে পালকগুলো প্রাইমারি পালকগুলোর ডাঁটাকে আবৃত করে রাখে) এর মধ্যবর্তী দূরত্ব কত মিলিমিটার তা পরিমাপ করতে হবে। প্রাইমারি পালক এর বৃহত্তম ঢাকনি পালককে ছাড়িয়ে গেলে এই সংখ্যাটি ধনাত্মক হবে, নতুবা যদি ঢাকনি পালক তার প্রাইমারি পালককে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলে তবে এই সংখ্যাটি ঋণাত্মক হবে। অতঃপর পাখির দীর্ঘতম প্রাইমারি পালক কোনটি তা চিহ্নিত করতে হবে এবং এর সাথে অন্যান্য প্রাইমারি পালক এবং দীর্ঘতম সেকেন্ডারি পালকের দৈর্ঘ্যের ব্যবধান কত তা পরিমাপ করতে হবে (মিলিমিটারে)। কোনো প্রাইমারিতে নচ কিংবা ইমার্জিনেশন থাকলে তা উল্লেখ করতে হবে এবং পাখনার প্রান্ত থেকে নচের দূরত্ব ও এর গভীরতা কত তা পরিমাপ করতে হবে। সকল পরিমাপ করতে হবে পাখির পাখনা ভাজ করা অবস্থায় যাতে করে পালকসমূহের আপেক্ষিক অবস্থান ঠিক থাকে।
একই প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন পাখির পাখনা সংকেত ভিন্ন হতে পারে। আবার পালক ঝরে পড়ার জন্যে এবং তা আবার নতুন করে গজানোর কারণেও এই সংকেতের তারতম্য হতে পারে। এমনকি নিকটবর্তী প্রজাতির পাখিদের পাখনা সংকেতেও ব্যপক তারতম্য দেখা যেতে পারে।[12]
পাখির দীর্ঘতম প্রাইমারি এর দীর্ঘতম সেকেন্ডারি থেকে (বা টার্শিয়াল থেকে) ডানা ভাঁজ করা অবস্থায় যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে তার পরিমাপকে প্রাইমারি বিস্তার (Primary extension অথবা primary projection)[46] বলে। পাখনা সংকেতের ন্যায় প্রাইমারি বিস্তারও একই পালক-গঠনের ভিন্ন ভিন্ন পাখির মধ্যে তারতম্য নির্দেশ করার জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু এর পরিমাপ করতে পাখনা সংকেত পরিমাপের ন্যায় পাখিটিকে হাতে না নিলেও চলে। বরং এই পরিমাপটি বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যকার আপেক্ষিক একটি পরিমাপ। কোন কোন প্রজাতির প্রাইমারি বিস্তার দীর্ঘ আবার কোন কোন প্রজাতিতে তা খাটো হয়ে থাকে। Empidonax গণের ফ্লাইক্যাচার পাখিদের মধ্যে ডাস্কি ফ্লাইক্যাচার প্রাইমারি বিস্তার এর নিকটবর্তী প্রজাতি হ্যামন্ড্স ফ্লাইক্যাচার পাখির প্রাইমারি বিস্তার অপেক্ষা অনেকটা কম হয়। একইভাবে ইউরোপীয় চাতক পাখির প্রাইমারি বিস্তার দীর্ঘ কিন্তু এর নিকটবর্তী প্রজাতি প্রাচ্যের চাতকের প্রাইমারি বিস্তার ছোট হয়ে থাকে।[47]
সাধারণভাবে, যেসব প্রজাতির পাখি দূরদূরান্তে ভ্রমণ (migration) করে তাদের প্রাইমারি বিস্তার অন্যান্য পাখি যারা দূরে ভ্রমণ করে না কিংবা স্বল্প দূরত্বে ভ্রমণ করে, তাদের প্রাইমারি বিস্তার অপেক্ষা দীর্ঘতর হয়ে থাকে।[48]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.