Loading AI tools
জার্মান শারীরবিজ্ঞানী ও অনাক্রম্যবিজ্ঞানী, যিনি ডিপথেরিয়া রোগের বিষক্রিয়ারোধক আবিষ্কারের উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
এমিল আডলফ ফন বেরিং (জার্মান: Emil Adolph von Behring) (১৫ই মার্চ, ১৮৫৪ – ৩১শে মার্চ, ১৯১৭) একজন জার্মান চিকিৎসক ও ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞানী, যিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী হবার গৌরবের অধিকারী। [1] তাঁকে অনাক্রম্যবিজ্ঞানের একজন জনক হিসেবে গণ্য করা হয়।
এমিল ফন বেরিং | |
---|---|
জন্ম | অ্যাডলফ এমিল বেহরিং ১৫ মার্চ ১৮৫৪ হান্সডর্ফ |
মৃত্যু | ৩১ মার্চ ১৯১৭ ৬৩) মারবুর্গ, হেসে-নাসাউ | (বয়স
জাতীয়তা | জার্মানি |
পরিচিতির কারণ | ডিপথেরিয়ার বিষক্রিয়ারোধক রক্তরস (সিরাম) |
পুরস্কার | চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯০১) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | শারীরবিজ্ঞান, অনাক্রম্যবিজ্ঞান |
উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী | হান্স শ্লসবের্গার |
বেরিং ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন পশ্চিম প্রুশিয়া রাজ্যের ডয়েচ-আইলাউ এলাকার হান্সডর্ফ (বর্তমান পোল্যান্ডে অবস্থিত) নামের গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ১৩ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তার পরিবারের পক্ষে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর সামর্থ্য ছিল না, তাই তিনি বার্লিনের ফ্রিডরিখ-ভিলহেল্মস-ইন্সটিটুট নামক প্রুশীয় সেনাবাহিনীর সামরিক চিকিৎসাশাস্ত্রীয় উচ্চবিদ্যালয়ে ১৮৭৪ সালে প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে ১৮৭৮ সালে তার চিকিৎসক সনদ লাভ করেন। ১৮৮০ সালে তিনি সরকারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একজন সামরিক শল্যচিকিৎসকে পরিণত হন এবং এরপর প্রায় এক দশক সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। তাঁকে পোল্যান্ডের ভোলাউ ও পোজেন শহরে পাঠানো হয়। পোজেনে থাকার সময় তিনি বিভিন্ন জীবাণু-সংক্রামিত রোগের ক্ষেত্রে পচন নিবারক যেমন আয়োডোফর্মের কার্যকারিতার উপর গবেষণা করেন। তিনি বলেন যে আয়োডোফর্ম জীবাণুদের ধ্বংস না করলেও জীবাণুদের দ্বারা সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থগুলিকে প্রশমিত করতে পারে, অর্থাৎ বিষক্রিয়া-রোধক হিসেবে কাজ করতে পারে; তিনি তার গবেষণার ফলাফল একটি গবেষণাপত্রে ১৮৮২ সালে প্রকাশ করেন। এসময় মহামারী প্রতিরোধের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী জার্মান সামরিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বেরিংয়ের গবেষণার কথা জানতে পারে এবং তাঁকে বন শহরে ঔষধবিজ্ঞানী বিন্ৎসের কাছে পরীক্ষামূলক পদ্ধতিসমূহে প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে। ১৮৮৮ সালে বেরিং সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বার্লিনে ফেরত আসেন এবং বার্লিনের স্বাস্থ্যবিধি উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রে সহকারী হিসেবে পদলাভ করেন। সেসময় কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন জার্মান চিকিৎসাবিজ্ঞানী রোবের্ট কখ। ১৮৯০ সালে কখের গবেষণাগারে কাজ করার সময় বেরিং ও তার সহযোগী জাপানি ব্যাকটেরিয়া-বিজ্ঞানী কিতাসাতো শিবাসাবুরো একত্রে আবিষ্কার করেন যে ধনুষ্টংকার রোগে আক্রান্ত প্রাণীর (ইঁদুরের) জীবাণুমুক্ত রক্তরস যদি অন্য একটি সুস্থ প্রাণীর দেহে সূচিপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রবিষ্ট করানো হয়, তাহলে সেই দ্বিতীয় প্রাণীটির দেহে ধনুষ্টংকারের বিরুদ্ধে পরোক্ষ অনাক্রম্যতা (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) সৃষ্টি হয়। এরপর যেকোনও অনাক্রম্যতাপ্রাপ্ত প্রাণীর রক্তরস নিয়ে তৃতীয় কোনও প্রাণীর দেহে প্রবেশ করালে সেটিও অনাক্রম্যতা অর্জন করবে। কিতাসাতো ও বেরিং এই ধরনের রক্তরসের নাম দেন বিষক্রিয়ারোধক (Antitoxin)। পরের বছর ১৮৯১ সালে বেরিংয়ের পরামর্শে জার্মান ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞানী পাউল এরলিখ রক্তরসীয় বিষক্রিয়ারোধক তথা অনাক্রম্যতা প্রদায়কের এই মূলনীতিটি শিশুদের মধ্যে বিদ্যমান প্রাণঘাতী ডিপথেরিয়া রোগের প্রতিকারে প্রয়োগ করে নাটকীয় সাফল্য লাভ করেন। ১৮৯২ সাল থেকে ডিপথেরিয়া রোগের চিকিৎসা হিসেবে এই বিষক্রিয়ারোধক রক্তরস চিকিৎসা বাজারাজাত হওয়া শুরু করে। বেরিং নিজে মূলত ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া ও যক্ষ্মা রোগের উপরে গবেষণাকর্মের জন্য পরিচিত হলেও তার সময়ে পাস্তুর, কখ, এরলিখ, ল্যোফলার, রু, ইয়েরসাঁ, কিতাসাতো, ইত্যাদি আরও বহু বিজ্ঞানীর যুগান্তরী কাজের সাথে তার কাজগুলি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই কাজগুলি ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগের অনাক্রম্যবিজ্ঞানের আধুনিক ভিত্তি গড়ে দেয়।
বেরিং ১৮৯৪ সালে হালে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধির অধ্যাপক পদে নিযুক্তি লাভ করেন। এর পরের বছরে ১৮৯৫ সালে তিনি মারবুর্গ শহরে অবস্থিত ফিলিপস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থবিধি উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক পদটি লাভ করেন এবং এই পদেই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বহাল ছিলেন। এসময় তিনি যক্ষারোগের একটি রক্তরসীয় চিকিৎসা আবিষ্কারের চেষ্টা চালান।
১৮৯৫ সালে বেরিং ফরাসি সরকারের লেজিওঁ দনর-এর কর্মকর্তা উপাধি লাভ করেন। ১৯০১ সালে বেরিংকে সংক্রামক রোগ (বিশেষ করে ডিপথেরিয়া) প্রতিরোধে রক্তরস-ভিত্তিক চিকিৎসার (সিরাম থেরাপি) উপরে মৌলিক অবদান রাখার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের সর্বপ্রথম নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তার উদ্ভাবিত ধনুষ্টংকার টিকা অসংখ্যা জার্মান সৈন্যের প্রাণ বাঁচায় বলে তাঁকে জার্মানির "লৌহ ক্রুশ" উপাধি প্রদান করা হয়, যা খুবই স্বল্পসংখ্যক বেসামরিক ব্যক্তিকে প্রদান করা হত।
বেরিংয়ের রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে ডি প্রাকটিশেন সিলে ডের ব্লুট্সেরুম্টেরাপিয়ে (১৮৯২; রক্তরসভিত্তিক চিকিৎসার ব্যবহারিক লক্ষ্যসমূহ) উল্লেখযোগ্য। বেরিংয়ের সিংহভাগ রচনাবলি ১৮৯৩ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে প্রকাশি গেজামেল্টে আবহান্ডলুঙেন (সঙ্কলিত গবেষণাপত্রসমূহ) নামে একাধিক সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.