উৎপাদনশীলতা
From Wikipedia, the free encyclopedia
উৎপাদনশীলতা হল উৎপাদনের দক্ষতার গড় পরিমাপ। সাধারণভাবে কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে পণ্য বা সেবা উৎপাদনে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির দক্ষতার পরিমাপ হিসাবে ‘উৎপাদনশীলতা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অর্থনীতি ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা উভয় শাস্ত্রে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা পরিমাপ করা হয় এবং এর হ্রাসবৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। উৎপাদনশীলতা একটি কারখানা বা খামার এবং, বৃহত্তর ক্ষেত্রে, একটি অর্থনীতির পারফরমেন্স বা ফলপ্রসু কর্মদক্ষতার নির্দেশক সূচক। শব্দটি দ্বারা সচরাচর শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বোঝানো হয়, যা কায়িক শ্রম বা বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম, উভয়ই হতে পারে। তবে বর্তমানে শব্দটি মানবজীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে।
উৎপাদনশীলতার পরিমাপকে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে সামগ্রিক উৎপাদের/প্রাপ্তির/ফলাফলের (আউটপুট) সঙ্গে একক কাচামাল/প্রদত্ত/প্রদেয় (ইনপুট) বা সামগ্রিক কাচামালের অনুপাত হিসেবে বোঝানো হয়, যেমন একক প্রতি কাচামালের তুলনায় উৎপাদ।[1] অর্থাৎ প্রোডাকটিভিটি হল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আউটপুট এবং ইনপুটের মধ্যে অনুপাত।
উৎপাদনশীলতার ধারণাটি ১৭৬৬ সালে প্রকৃতিবাদের প্রতিষ্ঠাতা কুয়েসনের লেখায় প্রথম উল্লেখিত হয়েছিল। এর অর্থ দীর্ঘকাল অস্পষ্ট ছিল। সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বলতে পণ্য এবং পরিষেবার আকারে পণ্য এবং সম্পত্তির উৎপাদন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াতে ব্যবহৃত সংস্থানগুলির ব্যয়ের মধ্যে অনুপাতকে বোঝায়।
উৎপাদনের মধ্যে সেই সমস্ত পণ্য ও পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে কেবল শিল্পায়ন এবং কৃষি পণ্য নয়, ডাক্তার, শিক্ষক, দোকান, অফিস, পরিবহন প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য পরিষেবা শিল্পও অন্তর্ভুক্ত। খরচ দ্বারা পণ্যের সাথে জড়িত সমস্ত ধরনের প্রচেষ্টাকে বোঝায় যেমন পরিচালক, কারিগর এবং শ্রমিকদের কাজ।
সুতরাং, নিখুঁত উৎপাদনশীলতার ধারণা ব্যাখ্যা করতে নিম্নলিখিত সূত্রটি ব্যবহার করা যেতে পারে:
উৎপাদনশীলতা = সব ধরনের উৎপাদন / সব ধরনের খরচ'
সামষ্টিক অর্থনীতিতে শ্রমিক প্রতি স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি’র পরিমাণ হচ্ছে জাতীয় উৎপাদনশীলতা। জিডিপি’র সঠিক প্রাক্কলন এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত লোক সংখ্যা জানা থাকলে এটি একটি সহজ হিসাব। সাধারণতঃ এটি সাংবাৎসরিক পরিমাপ। তবে স্বল্পতর মেয়াদেও এই অনুপাত নিরূপণ করা এবং ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একটি সুনির্দ্দিষ্ট উৎপাদন ক্ষেত্রে, যেমন একটি কারখানায় বা খামারে, নিযুক্ত শ্রমিকদের বাৎসরিক উৎপাদনের পরিমাণকে শ্রমিকের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে গড় উৎপাদনশীলতা নিরূপণ করা হয়ে থাকে। সেবা বা কৃত্যের ক্ষেত্রে বিক্রয়মূল্য বা মোট রাজস্বে শ্রমিকদের গড় অবদান নিরূপণ করা হয়ে থাকে।
উৎপাদনশীলতার বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে (সেগুলো সহ যেগুলোকে কাচামালের তুলনায় উৎপাদের অনুপাত হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় না) আর এদের মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনমত সংজ্ঞাকে নির্বাচন করা হয় উৎপাদনশীলতা পরিমাপের কারণ বা উদ্দেশ্য অথবা তথ্য উপাত্যের সহজলভ্যতার উপর ভিত্তি করে।