Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উর্দু আন্দোলন ছিল একটি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন যার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের সময়কালে উর্দুকে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী ভাষা হিসাবে ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মুঘল সাম্রাজ্য পতনের পর স্যার সৈয়দ আহমদ খানের নেতৃত্বে আলিগড় আন্দোলনের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। উর্দু আন্দোলন নিখিল ভারত মুসলিম লীগ এবং পাকিস্তান আন্দোলনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলায় বাংলা ভাষা আন্দোলনের সংঘটিত হয়।
এই অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। (মার্চ ২০১৫) |
হিন্দি-উর্দু বিতর্কের সৃষ্টি হয় ১৮৬৭ সালে যখন ব্রিটিশ সরকার ইউনাইটেড প্রভিন্সেস (বর্তমানে উত্তর প্রদেশ) এবং বিহারের হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি অনুযায়ী সরকারি ভাষা পার্সো-আরবি স্ক্রিপ্ট থেকে দেবনাগরিতে পরিবর্তন করার প্রস্তুতি নেয় এবং হিন্দু কর্মীদের অনুরোধে হিন্দিকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। মুসলিম রাজনীতিবিদ স্যার সৈয়দ আহমদ খান হয়ে ওঠে এই পরিবর্তনের সবচেয়ে বলিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী। [1] তিনি মুসলিমদের জন্য উর্দুকে আন্তর্জাতিক মিশ্রিত ভাষা হিসাবে উল্লেখ করেন। ভারতের মুসলিম শাসকদের দ্বারা বিকশিত উর্দু ভাষাটি ফার্সির পর দ্বিতীয় সরকারি ভাষা এবং মুঘল আদালতের সরকারি ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হতো।[1] মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে, স্যার সৈয়দ তার নিজের লেখার মাধ্যমে উর্দু ব্যবহার জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেন স্যার সৈয়দ অধীনে, আলিগড় বৈজ্ঞানিক সোসাইটি পশ্চিমের কাজগুলো শুধুমাত্র উর্দুতে অনুবাদ করেন। [1] স্যার সৈয়দ মনে করতেন "উর্দু হিন্দু ও মুসলমানদের একটি সাধারণ লিগ্যাসি" হিসাবে গণ্য হবে। [2] স্যার সৈয়দের প্রতিষ্ঠিত স্কুলেগুলোতে উর্দু-মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া হতো। স্যার সৈয়দ হিন্দির জন্য হিন্দুদের এই দাবি, ভারতের শতবর্ষের মুসলিম সংস্কৃতির ক্ষয় হিসাবে মনে করতেন।[3][4] ব্রিটিশদের নির্ধারিত শিক্ষা কমিশন প্রতিষ্ঠার আগে, থেকেই স্যার সৈয়দ এর বিপক্ষে থেকে উল্লেখ করেন যে "উর্দু ছিল সমাজের ভদ্রজন এবং উচ্চ সামাজিক অবস্থান সম্পন্ন মানুষের ভাষা, অপরদিকে হিন্দির ব্যবহার ছিল অমার্জিত।" [1] তাঁর এই মন্তব্যে হিন্দু নেতা এবং হিন্দির সমর্থনকারীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। [5] হিন্দি ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে সমগ্র অঞ্চলজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায় একত্রিত হতে থাকে। হিন্দি আন্দোলনের সাফল্যের ফলে স্যার সৈয়দ উর্দুকে মুসলিম ঐতিহ্য প্রতীক এবং মুসলমান বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক বর্গের ভাষা হিসাবে প্রচার শুরু করেন। [1] তার শিক্ষা এবং রাজনৈতিকক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান কাজগুলো মুসলিম স্বার্থ কেন্দ্রিক এবং একচেটিয়া। এছাড়া তিনি এটিকে সরকারি কাজে ব্যবহার এবং পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ব্যাপারে ব্রিটিশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন।
উর্দুকে ভারতীয় মুসলিমদের ভাষা হিসেবে গ্রহণের জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ আহ্বান জানান। তার এই আহ্বান আলিগড় আন্দোলন এবং দেওবন্দি ও ওয়াহাবি আন্দোলন কর্মীদের মধ্যে সমর্থন লাভ করে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা মুহসিন উল মুলক ও মৌলভী আবদুল হক উর্দু ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য উর্দু ডিফেন্স এসোসিয়েশন ও আঞ্জুমান তারাক্কিয়ে উর্দু গঠন করেন। স্যার সৈয়দের স্নেহভাজন শিবলি নোমানির প্রচেষ্টার ফলে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের সরকারি ভাষা এবং উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উর্দু গৃহীত হয়। উর্দুর ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনকে অনেকে বিরোধিতা করে। তাদের দৃষ্টিতে এটি ছিল স্যার সৈয়দ আহমদ কর্তৃক মুসলিম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।[1][6] উত্তর ও পশ্চিম ভারতের মুসলিমদের কাছে উর্দু ভাষা রাজনৈতিক পরিচয় ও সম্প্রদায়গত বৈশিষ্ট্যের চিহ্ন হয়ে উঠে। হিন্দি ও উর্দু নিয়ে বিতর্ক ভারতের হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধি পায়।[1] নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামি ভারতের মুসলিম সমাজের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে টিকে থাকার জন্য আবশ্যক হিসেবে গণ্য করত। মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, লিয়াকত আলি খানের মত মুসলিম নেতারা উপমহাদেশের মুসলিমদের ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক পরিচিতির চিহ্ন হিসেবে গুরুত্ব দিতেন। দ্বিজাতি তত্ত্বের ক্ষেত্রেও উর্দুর প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতারা উর্দুকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের সাথে পার্থক্যের চিহ্ন হিসেবে দেখতেন। মাওলানা মুহাম্মদ আলি, মাওলানা শওকত আলি, মাওলানা মওদুদিসহ অনেক মুসলিম ধর্মীয় নেতা সাধারণ ও ধার্মিক মুসলিমদের জন্য উর্দুর জ্ঞান আবশ্যক হিসেবে গুরুত্ব আরোপ করেন।
পাকিস্তানে উর্দুকে জাতীয় ভাষা ও লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। অন্যদিকে ইংরেজিকে সরকারি হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে উর্দুকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেয়া নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ দেখা দেয়। অনেক বাঙালি একে বাঙালিদের উপর উর্দু চাপিয়ে দেয়া হিসেবে দেখে। এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ বাংলাকেও সরকারি স্বীকৃতিদানের দাবি জানায়। অন্যদিকে খাজা নাজিমুদ্দিনদের মত নেতারা উর্দুর পক্ষে ছিলেন। বাংলা ভাষা আন্দোলনের এক পর্যায়ের ১৯৫২ সালে একটি মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ১৯৫৬ সালে প্রণীত সংবিধানে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
ভারতে ২৩টি তফসিলি ভাষার মধ্যে উর্দু অন্যতম। হিন্দি ভারতের সরকারি ভাষা। জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তর প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, বিহার ও দিল্লিতে উর্দু সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। ভারতের মুসলিমদের মধ্যে উর্দু ভাষা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত এবং মাদ্রাসা ছাড়াও উর্দু মাধ্যমে পড়াশোনা করা হয় এমন অনেক বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, প্রকাশনীর কাজে উর্দুর ব্যবহার হয়। উর্দু ভাষায় কিছু চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। তবে তফসিলি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হলেও ভারতে উর্দুর অবস্থান পূর্বের মত নেই। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, হিন্দির উপর বেশি গুরুত্বারোপ, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার না হওয়া ইত্যাদি এর কারণ। [7]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.