![cover image](https://wikiwandv2-19431.kxcdn.com/_next/image?url=https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/17/Detail_of_Tree_of_Knowledge_after_Diderot_%2526_d%2527Alembert%2527s_Encyclop%25C3%25A9die%252C_by_Chr%25C3%25A9tien_Fr%25C3%25A9d%25C3%25A9ric_Guillaume_Roth.jpg/640px-Detail_of_Tree_of_Knowledge_after_Diderot_%2526_d%2527Alembert%2527s_Encyclop%25C3%25A9die%252C_by_Chr%25C3%25A9tien_Fr%25C3%25A9d%25C3%25A9ric_Guillaume_Roth.jpg&w=640&q=50)
উপাত্ত ও তথ্য প্রত্যক্ষীকরণ
উপাত্তকে চোখে দেখার জন্য উপস্থাপন করার পদ্ধতিসমূহ / From Wikipedia, the free encyclopedia
উপাত্ত ও তথ্য প্রত্যক্ষীকরণ বলতে কোনও বিশেষজ্ঞ ক্ষেত্র থেকে আগত বিপুল সংখ্যক[1] জটিল পরিমাণবাচক ও গুণবাচক উপাত্ত ও তথ্যকে স্থির, চলন্ত বা আন্তঃক্রিয়াশীল দৃশ্য উপকরণের সাহায্যে সহজে জ্ঞাপনযোগ্য ও সহজে বোধগম্য চিত্রলৈখিক বা দৃশ্যমান রূপে উপস্থাপন করার কাজটিকে বোঝায়, যার উদ্দেশ্য একটি অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর পাঠক-দর্শকগোষ্ঠীকে ঐসব তথ্য-উপাত্তের মধ্যে নিহিত ও অন্যথায় দুষ্করভাবে শনাক্তযোগ্য বিভিন্ন কাঠামো, সম্পর্ক, সহসম্বন্ধ, স্থানিক ও সামগ্রিক বিন্যাস, প্রবণতা, প্রভেদ, ধ্রুবতা, গুচ্ছ, দলছুট বা অস্বাভাবিক দলগুলিকে চাক্ষুষভাবে অনুসন্ধান ও আবিষ্কার করতে, দ্রুত বুঝতে, সেগুলির ব্যাখ্যা প্রদান করতে ও সেগুলি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে সাহায্য করা (যাকে "অনুসন্ধানী প্রত্যক্ষীকরণ"-ও বলা হয়)।[2][3][4] যখন এই প্রত্যক্ষীকরণটিকে সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে নিবেদিত করা হয় (গণযোগাযোগ) এবং এভাবে কোনও জ্ঞাত বিশেষ তথ্যকে স্পষ্ট করে, আকর্ষণীয় উপায়ে ও সংক্ষেপে জ্ঞাপন করা হয় ("উপস্থাপনমূলক বা ব্যাখ্যামূলক প্রত্যক্ষীকরণ"),[2] তখন সেটিকে সাধারণত তথ্য লেখচিত্রণ বলে।
উপাত্ত প্রত্যক্ষীকরণ মূলত পরিমাণবাচক অশোধিত উপাত্তগুলিকে একটি কাঠামোবদ্ধ দৃশ্যমান রূপে উপস্থাপনের সাথে সম্পর্কিত। উপাত্ত প্রত্যক্ষীকরণে ব্যবহৃত দৃশ্য বিন্যাসগুলির মধ্যে সারণী, লেখচিত্র (যেমন বৃত্তাকার লেখচিত্র, স্তম্ভচিত্র, রৈখিক লেখচিত্র, ক্ষেত্রচিত্র, শঙ্কু চিত্র, পিরামিড চিত্র, বলয় চিত্র, আয়তলেখ, বর্ণালীলেখ, দল চিত্র, জলপ্রপাত চিত্র, চোঙা চিত্র, বুলেট চিত্র, ইত্যাদি), রেখাচিত্র, বিন্দু লেখচিত্র (যেমন বিক্ষিপ্ত বিন্দুলেখ, বিন্যাস বিন্দুলেখ, বাক্স বিন্দুলেখ, ইত্যাদি), ভূ-স্থানিক মানচিত্র (যেমন সমানুপাতিক প্রতীক মানচিত্র, কোরোপ্লেথ মানচিত্র, আইসোপ্লেথ মানচিত্র ও উত্তাপ মানচিত্র), অঙ্কিত চিত্র, নির্ভরণ মেট্রিক্স, শতকরা হারনির্দেশক মাপযন্ত্র, এবং এগুলির বিভিন্ন সমবায়ে সৃষ্ট পরিসংখ্যান ফলক (ড্যাশবোর্ড) উল্লেখ্য। অন্যদিকে তথ্য প্রত্যক্ষীকরণে বহুসংখ্যক বড় মাপের জটিল উপাত্তসংগ্রহের উপর কাজ করা হয়, যেগুলি পরিমাণবাচক (সংখ্যাবাচক) উপাত্তের পাশাপাশি গুণবাচক (অসাংখ্যিক তথা ভাষিক ও চিত্রগত) ও মূলত বিমূর্ত তথ্যের সমন্বয়ে গঠিত। এটির লক্ষ্য হল অশোধিত উপাত্তের সাথে মূল্য সংযোজন করা, পাঠক-দর্শকে উপলব্ধি উন্নত করা, তাদের সংজ্ঞান পুনর্বলবৎ করা এবং তাদেরকে অন্তর্দৃষ্টি লাভে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করা। তথ্য প্রত্যক্ষীকরণ প্রক্রিয়াতে পাঠক-দর্শকেরা সাধারণত পরিগণকের সহায়তায় চিত্রিত দৃশ্যমান পর্দাতে উপস্থাপিত তথ্যের ভেতরে পরিভ্রমণ করতে পারে এবং সেগুলির সাথে আন্তঃক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে। তথ্য প্রত্যক্ষীকরণে ব্যবহৃত দৃশ্য সরঞ্জামগুলির মধ্যে রয়েছে মানচিত্র (যেমন বৃক্ষচিত্র), সচল চিত্র (অ্যানিমেশন), তথ্য লেখচিত্র, স্যাংকি রেখাচিত্র, প্রবাহচিত্র, জালতন্ত্র রেখাচিত্র, আর্থিক জালতন্ত্র, সত্তা-সম্পর্ক রেখাচিত্র, ভেনচিত্র, কালীন রেখা, মানসচিত্র, ইত্যাদি। এছাড়া অসদ, বিবর্ধিত ও মিশ্র বাস্তবতার মতো উদীয়মান প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য প্রত্যক্ষীকরণকে আরও নিমজ্জনমূলক, স্বজ্ঞামূলক, আন্তঃক্রিয়ামূলক ও সহজে পরিচালনাযোগ্য করার এবং এভাবে ব্যবহারকারী দৃষ্টিগত প্রত্যক্ষণ ও সংজ্ঞান উন্নত করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।[5] উপাত্ত ও তথ্য প্রত্যক্ষীকরণের উদ্দেশ্য হল উপাত্তাধার, তথ্য ব্যবস্থা, নথি ব্যবস্থা, দলিলাদি, ব্যবসায়িক তথ্য, আর্থিক তথ্য, ইত্যাদি থেকে সংগৃহীত বিমূর্ত, অভৌত, অস্থানিক উপাত্ত-তথ্যগুলিকে চিত্রিতরূপে উপস্থাপন ও অনুসন্ধান। এটির সাথে বৈজ্ঞানিক প্রত্যক্ষীকরণ নামক ক্ষেত্রটির পার্থক্য আছে, যার উদ্দেশ্য হল ভৌত ও স্থানিক উপাত্তের উপর ভিত্তি করে কোনও কিছুর বাস্তবধর্মী চিত্র নির্মাণ করা, যাতে কোনও বৈজ্ঞানিক অনুকল্প অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করা যায় (অনুমোদনমূলক প্রত্যক্ষীকরণ)।[6]
কার্যকর উপাত্ত প্রত্যক্ষীকরণে উপাত্তগুলির উৎসনির্দেশ ও প্রেক্ষাপট সঠিক হতে হয় এবং সেগুলিকে সরল ও বিশৃঙ্খলামুক্ত হতে হয়। দৃশ্যমান উপস্থাপনের নিম্নস্থিত উপাত্ত সঠিক ও হালনাগাদকৃত হতে হয়, যাতে এর উপর ভিত্তি করে প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টিগুলি নির্ভরযোগ্য হয়। চিত্রিত উপাদানগুলিকে প্রদত্ত উপাত্তসংগ্রহের জন্য সুনির্বাচিত হতে হয় এবং নান্দনিকভাবে আকর্ষণীয় হতে হয় যাতে আকৃতি, রঙ ও অন্যান্য দৃশ্য উপাদানকে এমন সুচিন্তিত রূপে ব্যবহার করা হয়, যাতে সেগুলি অর্থপূর্ণ হয় ও দর্শকের মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করে না। দৃশ্য উপাদানগুলির সাথে সহায়ক পাঠ্য (তকমা ও শিরোনাম) থাকে। এই ভাষিক ও চিত্রিত উপাদানগুলি একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করে ও এভাবে পাঠক-দর্শকের মনে স্পষ্ট, দ্রুত ও স্মরণীয় উপলব্ধি নিশ্চিত করে। কার্যকর তথ্য প্রত্যক্ষীকরণে উদ্দিষ্ট পাঠক-দর্শকের চাহিদা, উদ্বেগ ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের স্তর সম্পর্কে সচেতনতা রক্ষা করা হয় ও তাদেরকে উদ্দিষ্ট উপসংহারের দিকে সুচিন্তিতভাবে চালিত করা হয়।[7][1] এই ধরনের কার্যকর প্রত্যক্ষীকরণকে শুধুমাত্র বিশেষায়িত, জটিল ও বিপুলসংখ্যক উপাত্ত-কেন্দ্রিক ধারণাগুলিকে আকর্ষণীয় ও সহজে অধিগম্য উপায়ে অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর কারিগরি জ্ঞানহীন দর্শক-পাঠকগোষ্ঠীর কাছে জ্ঞাপনের জন্যই ব্যবহার করা হয় না, বরং কোনও প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কার্যকারিতা পরিবীক্ষণ, নতুন ধারণা সৃজন ও গবেষণায় উদ্দীপনা সৃষ্টির মতো কাজগুলিতে সাহায্য করার জন্য জ্ঞাপন করা হতে পারে।[7][2] অধিকন্তু, উপাত্ত বিজ্ঞানী, উপাত্ত বিশ্লেষক ও উপাত্ত খননবিদেরা উপাত্ত প্রত্যক্ষীকরণ ব্যবহার করে উপাত্তের গুণমান যাচাই করেন, উপাত্তে ত্রুটি, অস্বাভাবিক শূন্যতা ও অনুপস্থিত মানগুলি বের করেন, উপাত্ত পরিস্কার করেন, উপাত্তের ভেতরে কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যগুলি অনুসন্ধান করেন এবং উপাত্ত-চালিত প্রতিমানগুলির উৎপাদ বা বহির্গত মানগুলি মূল্যায়ন করেন।[2] ব্যবসাতে উপাত্ত ও তথ্য প্রত্যক্ষীকরণ উপাত্তভিত্তিক গল্পকথন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাজ করতে পারে, যেখানে সেটিকে একটি কাহিনীসূত্রের সাথে যুগ্মীভূত করে বিশ্লেষিত উপাত্তের প্রেক্ষিত প্রদান করা হয় এবং উপাত্তের বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টিগুলিকে স্পষ্ট ও স্মরণীয়ভাবে জ্ঞাপন করা হয়, যার লক্ষ্য দর্শক-পাঠককে ব্যবসায়িক মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কোনও সিদ্ধান্ত বা কর্মপদক্ষেপ গ্রহণে রাজি করানো।[1][8] এই চর্চাটির সাথে পরিসংখ্যানিক চিত্রণবিদ্যা নামক ক্ষেত্রটির সাথে পার্থক্য করা যায়, যেখানে জটিল পরিসংখ্যানিক উপাত্তগুলিকে বা চিত্রিতরূপে সঠিক ও স্পষ্টভাবে পরিসংখ্যানশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানবিশিষ্ট গবেষক বা বিশ্লেষকদের মধ্যে জ্ঞাপন করা হয়, যাতে তারা সেগুলির উপরে অনুসন্ধানমূলক উপাত্ত বিশ্লেষণ সম্পাদন করতে পারেন কিংবা ঐ জাতীয় বিশ্লেষণের ফলাফলগুলি জ্ঞাপন করতে পারেন। এক্ষেত্রে দৃষ্টিগত আকর্ষণীয়তা, কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি মনোযোগ বন্দীকরণ ও গল্পকথনের মতো ব্যাপারগুলি তেমন মুখ্য নয়।[9]
উপাত্ত ও তথ্য প্রত্যক্ষীকরণ ক্ষেত্রটি আন্তঃশাস্ত্রীয় প্রকৃতির, কেননা এটিতে বর্ণনামূলক পরিসংখ্যানবিদ্যা (কমপক্ষে ১৮শ শতক থেকেই), [10] দৃশ্য যোগাযোগ, চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন, সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞান এবং অধুনা আন্তঃক্রিয়ামূলক পরিগণকীয় লেখচিত্রণ ও মানব-পরিগণক আন্তঃক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত মূলনীতিগুলিকে অঙ্গীভূত করে নেওয়া হয়েছে।[11] যেহেতু কার্যকর প্রত্যক্ষীকরণের জন্য নকশাকরণ দক্ষতা, পরিসংখ্যানিক দক্ষতা ও পরিগাণনিক দক্ষতা প্রয়োজন, তাই গার্শন ও পেজের মতে এটি একই সাথে বিজ্ঞান ও শিল্পকলা[12] এর একটি প্রতিবেশী শাস্ত্র হল দৃশ্য বিশ্লেষণবিদ্যা, যেটিতে পরিসংখ্যানিক উপাত্ত বিশ্লেষণ, উপাত্ত ও তথ্য প্রত্যক্ষীকরণ ও মানব বিশ্লেষণী যুক্তি প্রতিপাদন -এই তিনটি কাজকে আন্তঃক্রিয়ামূলক দৃশ্যমান আন্তঃক্রিয়াতলের মাধ্যমে একত্রিত করা হয়েছে, যাতে মানব ব্যবহারকারীরা কোনও উপসংহারে উপনীত হতে, কর্মপদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক অন্তর্দৃষ্টি লাভে ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা লাভ করে, যে কাজগুলি পরিগণক যন্ত্র বা কম্পিউটারের পক্ষে সম্পাদন করা দুরূহ।
মানুষ কীভাবে বিভিন্ন ধরনের প্রত্যক্ষীকরণ পড়ে বা ভুলভাবে পড়ে, সে ব্যাপারটির উপর গবেষণা চলমান আছে। কোন ধরনের ও কোন বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ প্রত্যক্ষীকরণগুলি সবচেয়ে বোধগম্য ও তথ্য জ্ঞাপনে সবচেয়ে বেশি কার্যকর, তা নির্ণয়ে এই গবেষণাগুলি সহায়ক।[13][14] অন্যদিকে অনিচ্ছাকৃতভাবে নিম্নমানের বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর ও প্রতারণামূলক প্রত্যক্ষীকরণ ভুল তথ্যের বিস্তার, জনগণের উপলব্ধি নিয়ে কারসাজিকরণ ও জনমতকে নির্দিষ্ট কর্মসূচির দিকে ঘুরিয়ে দিতে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে।[15]