Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণ বা আর্য প্রবাস সিদ্ধান্ত (Indo-Aryan migration) মডেল[note 1] ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে থেকে এসেছিল এই তত্ত্বকে ঘিরে দৃশ্যকল্পকে ব্যাখ্যা করে, যেখানে ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী হচ্ছে সেই আরোপিত জাতিভাষাভিত্তিক গোষ্ঠী যারা ইন্দো-আর্য ভাষায় কথা বলেন। এই ইন্দো-আর্য ভাষাগুলো উত্তর ভারতে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে ইন্দো-আর্য উৎপত্তি - এই তত্ত্বের প্রবক্তাগণ সাধারণত এটাই বিবেচনা করেন যে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং আনাতোলিয়ায় (প্রাচীন মিতানি) ইন্দো-আর্যগণ মধ্য এশিয়া থেকে এসেছিলেন, হরপ্পা যুগের শেষ সময়ে প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ধীরে ধীরে এই অভিপ্রায়ণ শুরু হয়েছিল, এবং এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাঞ্চলে ভাষা-পরিবর্তন ঘটে। ইরানে ইরানীয়গণ ইরানীয় ভাষাসমূহ নিয়ে আসেন, যেগুলো ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের নিকটাত্মীয়।
ইন্দো-আর্য এবং ইরানীয়দের জন্ম হয়েছিল প্রত্ন-ইন্দো-ইরানীয় সংস্কৃতি থেকে। ২১০০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কাস্পিয়ান সাগরের উত্তরে মধ্য এশীয় স্তেপে সিনতাশ্তা সংস্কৃতি হিসেবে প্রোটো-ইন্দো-ইরানীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে।[2][3][4] সেই অঞ্চলে বর্তমান রাশিয়া এবং কাজাখস্তান অবস্থিত। পরবর্তীতে ১৮০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আরাল সাগরের চারপাশে তা এন্দ্রোনোভো সংস্কৃতি হিসেবে আরও বিকশিত হয়।[5] এই প্রোটো-ইন্দো-ইরানীয়রা দক্ষিণ দিকে অভিপ্রায়ণ করে ব্যাকট্রিয়া-মারজিয়ানা সংস্কৃতি তৈরি করে যেখান থেকে তারা তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ধর্মীয় আচার নিয়ে আসে। ১৮০০ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইন্দো-আর্যরা ইরানীয়দের থেকে আলাদা হয়ে যায়।[6] এরপর ইন্দো-আর্যরা আনাতোলিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া (বর্তমান আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল) এর উত্তরাঞ্চলে অভিপ্রায়ণ করে। অন্যদিকে ইরানীয়রা ইরানে অভিপ্রায়ণ করে। এই উভয় গোষ্ঠীই তাদের নিজেদের সাথে ইন্দো-ইরানীয় ভাষা নিয়ে আসে।
অষ্টাদশ শতকে পাশ্চাত্য এবং ভারতীয় ভাষাসমূহের মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়, এবং এরই উপর ভিত্তি করে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার আবিষ্কৃত হয়। এই আবিষ্কারের পরেই ইন্দো-ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর অভিপ্রায়ণ এর অনুকল্প দাঁড় করানো হয়। এই সাদৃশ্যগুলোর উপর ভিত্তি করে এদের উৎপত্তির একটি একক উৎস্য প্রস্তাব করা হয়, যেখান থেকে এরা তাদের উৎপত্তিগত জন্মভূমি ছেড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যায়।
এই ভাষাবিদ্যাগত যুক্তিকে পুরাতাত্ত্বিক নৃতাত্ত্বিক, বংশগতিবিদ্যাসংক্রান্ত, সাহিত্যিক এবং বাস্তুবিদ্যাগত গবেষণাগুলোও সমর্থন করে। বংশগতিবিদ্যা সংক্রান্ত (জেনেটিক) গবেষণাগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই অভিপ্রায়ণগুলো ভারতীয় জনসংখ্যার বিভিন্ন উপাদানের উৎপত্তি ও বিস্তৃতির জটিল জিনগত রহস্যের একটা অংশের জন্য দায়ী। সাহিত্যিক গবেষণা থেকে বিভিন্ন ভৌগলিকভাবে স্বতন্ত্র ইন্দো-আর্য ঐতিহাসিক সংস্কৃতির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। বাস্তুবিদ্যাগত গবেষণা থেকে পাওয়া যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে ব্যাপক মরুভূমিকরণের ফলে সেই সব অঞ্চলে জলের অভাব দেখা যায়, এবং ইউরেশীয় স্তেপ ও ভারতীয় উপমহাদেশে বাস্তুসংস্থানিক পরিবর্তন আসে।[web 1] এর ফলে দক্ষিণ মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান, ইরান ও ভারতের তদকালীন নগর সংস্কৃতি ধ্বংস হয়, এবং ব্যাপক পরিসরে অভিপ্রায়ণ ঘটে। তারপর অভিপ্রায়িত জনগোষ্ঠী উত্তর-নগর সংস্কৃতির সাথে সম্মিলিত হয়।[web 1]
প্রায় ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইন্দো-আর্য অভিপ্রায়ণ শুরু হয়। ততদিনে যুদ্ধরথের আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এই অভিপ্রায়ণের পর লেভান্ত এবং সম্ভবত অন্তঃস্থিত এশিয়ায় ইন্দো-আর্য ভাষার বিস্তার ঘটে। এটি প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় বাসভূমি থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের ছড়িয়ে যাবার একটি অংশ ছিল। প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় বাসভূমি পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপে অবস্থিত, যা পূর্ব ইউরোপের তৃণভূমির একটি বিশাল অঞ্চল। প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়দের নিজ বাসভূমি থেকে অভিপ্রায়ণ শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫ম থেকে ৪র্থ সহস্রাব্দে। এবং ইউরেশীয় স্তেপ থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় অভিপ্রায়ণ শুরু হয় প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।[7][1]
এই তত্ত্ব অনুসারে, এই ইন্দো-আর্য ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী একটি জিনগত বৈচিত্র্যপূর্ণ গোষ্ঠী যারা একই সাংস্কৃতিক নিয়মাবলি ও ভাষার দ্বারা একতাবদ্ধ, এবং এরা "আর্য" (অভিজাত) হিসেবে পরিচিত। এই সংস্কৃতি ও ভাষার বিস্তৃতি ঘটেছিল পৃষ্ঠপোষক-অনুগ্রহপ্রার্থী ব্যবস্থায় (প্যাট্রন ক্লায়েন্ট সিস্টেমে), যার ফলে অন্যান্য গোষ্ঠীর এই সংস্কৃতিতে অভিনিবেশ ও সংস্কৃতায়ন ঘটে। এটা ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠীতে অন্যান্য সংস্কৃতির শক্তিশালী প্রভাবকে ব্যাখ্যা করে, যেখানে সেই সংস্কৃতিগুলোর সাথে ইন্দো-আর্য সংস্কৃতির মিথোস্ক্রিয়া ঘটেছিল।
উপটীকা
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.