ইথিওপীয় সাম্রাজ্য
From Wikipedia, the free encyclopedia
ইথিওপীয় সাম্রাজ্য[lower-alpha 1] (পূর্বে আবিসিনিয়া নামে পরিচিত ছিল এবং আধুনিক যুগে কেবল ইথিওপিয়া নামে পরিচিত)[lower-alpha 2] ছিল একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র।[2] এট ঐতিহাসিক ভাবে বর্তমান ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়ার ভৌগলিক এলাকাকে ঘিরে রেখেছে। প্রায় ১২৭০ সালে ইয়েকুনো আমলাক দ্বারা সলোমনিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ১৯৭৪ সালের ডারগের অভ্যুত্থান পর্যন্ত প্রায় ৭০০ বছর এই সাম্রাজ্য টিকে ছিল। সম্রাট হাইলে সেলাসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে এই সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে। ১৮৯৬ সাল নাগাদ এই সাম্রাজ্য পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অঞ্চল যেমন হারারঘে, গুরেজ এবং ওলায়িতা[3] অন্তর্ভুক্ত করে এবং ১৯৫২ সালে ইরিত্রিয়া ফেডারেশনের একীভূত করণের মাধ্যমে ইতিহাসের বৃহত্তম সম্প্রসারণের সাক্ষী হয়। অস্তিত্বের বেশিরভাগ সময় জুড়ে এটি আফ্রিকার শৃঙ্গ বা হর্ন অফ আফ্রিকায় বিভিন্ন প্রতিকূল শক্তি দ্বারা বেষ্টিত ছিল। তারপরেও এটি খ্রিস্টধর্মের প্রাচীন রূপের উপর ভিত্তি করে একটি রাজ্য বিকাশ ও সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়।[4]
১২৭০ সালে ইয়েকুনো আমলাক এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজেকে শেষ আকসুমাইট রাজা এবং শেষ পর্যন্ত রাজা সলোমন এবং শেবার রাণী বিলকিসের বংশধর বলে দাবি করেন। এই সাম্রাজ্য জাগওয়ের আগাও রাজ্যকে প্রতিস্থাপিত করে। প্রাথমিকভাবে এই সাম্রাজ্য একটি ছোট ও রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল সত্তা ছিল। তবে ১ম আমদা সিয়ন (১৩১৪-১৩৪৪) এবং ১ম দাউইত (১৩৮২-১৪১৩) এর ক্রুসেডের অধীনে এই সাম্রাজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে এটি সাময়িকভাবে হর্ন অফ আফ্রিকাতে প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠে।[5] সম্রাট জারা ইয়াকব (১৪৩৪-১৪৬৮) এর দীর্ঘ শাসনামলে ইথিওপিয়ান সাম্রাজ্য তার শীর্ষে পৌঁছায়। তিনি তার পূর্বসূরিদের বিজয়কে সুসংহত করেন, অসংখ্য গির্জা এবং মঠ নির্মাণ করেন, সাহিত্য ও শিল্পকে উত্সাহিত করেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে আঞ্চলিক যুদ্ধবাজদের প্রতিস্থাপিত করে সাম্রাজ্যিক কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভূত করেন এবং পার্শ্ববর্তী ইসলামী অঞ্চলগুলোতে তার আধিপত্য উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেন।[6][7][8]
প্রতিবেশী মুসলিম আদল সালতানাত বারবার আক্রমণের চেষ্টা করে এই সাম্রাজ্যকে হুমকি দিতে শুরু করে। অবশেষে ইমাম মাহফুজের অধীনে তা সফল হয়।[9] সম্রাট লেবনা ডেঙ্গেলের হাতে মাহফুজের অতর্কিত হামলা এবং পরাজয় ১৬ শতকের শুরুর দিকে অ্যাডালাইট ইমাম আহমেদ গ্রানের জিহাদ নিয়ে আসে। তিনি পর্তুগিজদের সহায়তায় শুধুমাত্র ১৫৪৩ সালে পরাজিত হন।[10] ওরোমো মাইগ্রেশনের কারণে সাম্রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চল এবং অধীনস্ত রাজ্য গুলো ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। উত্তরে বর্তমানে ইরিত্রিয়াতে ইথিওপিয়া উসমানীয়দের আক্রমণের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। যদিও এই সাম্রাজ্য তাদের কাছে লোহিত সাগরে প্রবেশাধিকার হারায়।[11] এই চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ১৬৩০-এর দশকে সম্রাট ফাসিলিডস গন্ডারের নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। এটি গন্ডারিন সময়কাল নামে পরিচিত একটি নতুন স্বর্ণযুগের সূচনা করে। এসময়ে সাম্রাজ্যটি অপেক্ষাকৃত শান্তি সহ ওরোমোর সফল একীকরণ এবং সংস্কৃতির বিকাশ দেখেছিল। সম্রাট দ্বিতীয় আইয়াসু (১৭৫৫) এবং ১ম আইয়োস (১৭৬৯) এর মৃত্যুর সাথে রাজ্যটি শেষ পর্যন্ত বিকেন্দ্রীকরণের যুগে প্রবেশ করে। এটি জেমেন মেসাফিন্ট নামে পরিচিত। তখন আঞ্চলিক যুদ্ধবাজ শাসক ও নেতারা ক্ষমতার জন্য লড়াই করে। সম্রাট ছিল নিছক তাদের নিয়ন্ত্রিত পুতুল।[12]
সম্রাট দ্বিতীয় টেওড্রোস (শাসন আমল. ১৮৫৫-১৮৬৮) জেমেন মেসাফিন্টের অবসান ঘটান। তিনি সাম্রাজ্যকে পুনরায় একত্রিত করেন এবং আবিসিনিয়ায় ব্রিটিশ অভিযানের সময় তার মৃত্যুর আগে এটিকে আধুনিক যুগে নিয়ে যান। তার উত্তরসূরি চতুর্থ ইয়োহানেস প্রাথমিকভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং ১৮৮৯ সালে মারা যাওয়ার আগে মিশরীয় ও মাহদিস্টদের সাথে সফলভাবে যুদ্ধ করেন। সম্রাট দ্বিতীয় মেনেলিক বর্তমানে আদ্দিস আবাবায় থেকে কাফা, ওয়েলেটা, হারার এবং অন্যান্য রাজ্যের মতো বর্তমান পশ্চিম, দক্ষিণ এবং পূর্ব ইথিওপিয়ার অনেক মানুষ ও রাজ্যকে পরাধীন করেন। এইভাবে ১৮৯৮ সালের মধ্যে ইথিওপিয়া তার আধুনিক আঞ্চলিক সীমানায় বিস্তৃত হয়। উত্তরাঞ্চলে তিনি ইতালির সম্প্রসারণের মুখোমুখি হন। ১৮৯৬ সালে আডওয়া যুদ্ধে ইতালীয়দের বিরুদ্ধে একটি দুর্দান্ত বিজয়ের মাধ্যমে আধুনিক আমদানি করা অস্ত্র ব্যবহার করে মেনেলিক ইথিওপিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এবং ইতালিকে ইরিত্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন।
পরবর্তীতে দ্বিতীয় ইতালো-ইথিওপিয়ান যুদ্ধের পর, বেনিটো মুসোলিনির ইতালীয় সাম্রাজ্য ইথিওপিয়া দখল করে এবং ইতালীয় পূর্ব আফ্রিকা প্রতিষ্ঠা করে সাম্রাজ্যটিকে প্রতিবেশী ইরিত্রিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্বে ইতালীয় সোমালিল্যান্ড উপনিবেশগুলোর সাথে একীভূত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালীয়দের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ইথিওপিয়া থেকে বিতাড়িত করা হয়। সম্রাট তখন নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন এবং দেশটি জাতিসংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়ে ওঠে। তবে, ১৯৭৩ সালের ওলোর দুর্ভিক্ষ এবং ঘরোয়া অসন্তোষ ১৯৭৪ সালে সাম্রাজ্যের পতন এবং ডর্গের উত্থানের দিকে পরিচালিত করে।[13]