Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইউরোকর্ডাটা (গ্রিক শব্দ, oura=লেজ+chordata=রজ্জু) হলো কর্ডাটা পর্বের একটি উপপর্ব। এই উপপর্ব আবার তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রায় ২,০০০টি প্রজাতি নিয়ে এ উপপর্ব গঠিত। পৃথিবীর সব সমুদ্র উপকূলে অগভীর পানিতে এদের পাওয়া যায়। এরা সাইফন দিয়ে পানি উৎসারিত করে বলে এদের "সাগর ফোয়ারা" (sea squirt) নামে ডাকা হয়। এদের অপর নাম টিউনিকাটা। [1]
১. জীবদ্দশায় লার্ভা দশা বিদ্যমান। এরা অঙ্গ ও মস্তিষ্কহীন।
২.পরিণত প্রাণী নিশ্চল এবং স্থায়ীভাবে নিমজ্জিত কোনো বস্তুর সঙ্গে আটকে থাকে, কিন্তু লার্ভা মুক্ত সাঁতারু।
৩.সকলেই সামুদ্রিক এবং সমুদ্রের তলদেশে একক বা কলোনি গঠন করে বাস করে।
৪. এদের অন্ত্র ইংরেজি U আকৃতির ও এরা হারমাফ্রোডিটিক। একটিমাত্র শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় বিদ্যমান।
৫. এই উপপর্বের প্রাণীদের শরীরে বহিঃক্ষরা গ্রন্থি নেই। স্নায়ুতন্ত্র উপস্থিত।
৬. ছিদ্রযুক্ত ফ্যারিংস এর মাধ্যমে এরা জল পাম্প করে যা মিউকাস স্তরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা সংগ্রহ করে। এজন্য এদেরকে ফিল্টার ফিডার বলা হয়।
৭. স্থায়ীভাবে থাকার জন্য ইউরোকর্ডাটার উপপর্বের প্রাণীরা নিজস্ব বাসস্থান তৈরি করে। তবে লার্ভাসিয়ানরা প্রতি ৪ ঘণ্টা পর পর নতুন বাড়ি তৈরি করে। [2]
ইউরোকর্ডাটা উপপর্বের প্রাণীদের মধ্যে সাধারণ ৪ টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমনঃ ভ্রূণ, নমনীয় নটোকর্ড, ফাঁপা স্নায়ু রজ্জু (যার নাম ডর্সাল) ও ফ্যারিংস। এদের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে। নটোকর্ড পেশি সংকোচনে রোধ সৃষ্টি করে এবং প্রাণীর দেহ নাড়াচাড়ায় সাহায্য করে। ডর্সাল কর্তৃক ইউরোকর্ডাটা প্রাণীর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয়। ফ্যারিংস পরিপাকতন্ত্র হিসেবে কাজ করে, ফিল্টার ফিডিং ও গ্যাসীয় সংবহন এ সহায়তা করে। উল্লেখ্য, ফিল্ডার ফিডিং হলো জলজ প্রাণীর খাদ্যগ্রহণের একটি প্রক্রিয়া যেখানে জলজ প্রাণী একইসাথে একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী ভক্ষণ করে। দেহ সেলুলোজ নির্মিত টিউনিক (tunic) বা টেস্ট (test) নামক আচ্ছাদনে আবৃত। এরা একমাত্র প্রাণী যাদের সেলুলোজ স্ফটিক ধরনের। এদের শরীরে সিলোম অনুপস্থিত। এরা দেখতে কর্ডাটার মতো না বরং এরা দেখতে কম্বোজ ও পরিফেরা এর মতো। এদের কলোনির আকার ২-২.৫ মিটার। [3]
ভ্রূণীয় বিকাশের মাধ্যমে টিউনিকেটদের জীবন পরিণত হওয়া শুরু হয়। এ প্রক্রিয়াটি হলো মেটামরফোসিস। টিউনিকেটদের লার্ভা দশা খুবই ক্ষণস্থায়ী। এ সময়ে কুসুমথলি থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে এরা বেঁচে থাকে। এরপরে লার্ভা তাদের প্যাপিলা প্রসারিত করে উপযুক্ত স্থানে যুক্ত হয় এবং এর ফলে কিছু আঠালো পদার্থ নিঃসরিত হয়। এ পর্যায়ে তাদের সেরেব্রাল চক্ষু অবনত হয়। টিউনিকেটদের তখন নটোকর্ড ও লেজ প্রাপ্ত হতে থাকে ও সেরেব্রাল চক্ষুর বিলুপ্তি ঘটে। অন্যদিকে পাকস্থলি এবং অন্ত্র বৃদ্ধি পায়। মেটামোরফোসিস ধাপ যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে, লার্ভা ততই পরিণত হতে শুরু করে। লার্ভা দশায় মেটামরফোসিস এর ফলে নটোকর্ড, ফিন্স, প্যাপিলা ইত্যাদি হারিয়ে যেতে থাকে ও সাইফন, এসোফ্যাগাস ও অন্ত্র পরিণত হওয়া শুরু করে। কিন্তু ত্বক, ভেতরের কিউটিকল স্তর, টিউনিক এগুলো থেকে যায়। এভাবে একটি ইউরোকর্ডেট লার্ভা পরিণত প্রাণীতে পরিণত হয়। [4]
অধিকাংশ টিউনিকেট হার্মাফ্রোডিটিক। এরা যৌন কিংবা অযৌন উভয় পদ্ধতিতেই প্রজনন করে। সলিটারি টিউনিকেটরা যৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে। অন্যদিকে কলোনিয়াল টিউনিকেটরা অযৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে। এদের অযৌন জনন পদ্ধতি হলো বাডিং। [5]
Urochordata নিচে বর্ণিত ৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত। শ্রেণি 1: Ascidiacea (অ্যাসিডিয়াসিয়া): এ শ্রেণিভুক্ত প্রাণীর দেহ স্ফীতকায় বা নলাকার। দেহের আবরণ স্থায়ী,পুরু ও অর্ধস্বচ্ছ। পরিণত প্রাণীতে লেজ থাকে না। যেমন -Ascidia mentula,molgula tubifera প্রভৃতি।
শ্রেণি 2: Thaliacea (থ্যালেসিয়া) : এ শ্রেণিভুক্ত সদস্যরা দেখতে লেবু বা পিপে আকৃতির। দেহের আবরণ পাতলা ও স্বচ্ছ।পরিণত প্রাণী লেজবিহীন। যেমন- Salpa maxima , Doliolum rarum প্রভৃতি।
শ্রেণি 3: Larvacea (লার্ভেসিয়া): এ শ্রেণির প্রজাতিরা বাঁকা ব্যাঙাচি আকৃতির। দেহের আবরণ সাময়িক, জিলেটিনের মতো ও স্বচ্ছ। পরিণত প্রাণীতে লেজ থাকে।যেমন-Okipleura dioica ,Appendicularia প্রজাতি প্রভৃতি। [6]
যদিও টিউনিকেট মানুষরা খায় না তবুও এটি দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়। কারণ খাদ্য শৃঙ্খল-এ এরা ভূমিকা রাখে। টিউনিকেটদের শরীরে কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। [7]