Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আশকেনাজি ইহুদি বুদ্ধিমত্তাকে (Ashkenazi Jewish intelligence) অনেক সময় "ইহুদি প্রতিভা" বলা হয়।[1][2][3][4] এটা একটি বিষয় যেখানে জানার চেষ্টা করা হয় যে কেন আশকেনাজি ইহুদিদের বুদ্ধিমত্তা অন্যান্য ইহুদি নৃগোষ্ঠীসমূহের তুলনায় অধিক এবং অনেক শিক্ষায়তনিক অঙ্গনেই এদের দক্ষতা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বেশি। প্রায়ই এই বিষয়টি বৈজ্ঞানিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আশকেনাজি ইহুদিদের গড় বুদ্ধ্যঙ্ক ১১০-১১৫ পরিসরে থাকে, যা পৃথিবীর অন্যান্য যেকোন নৃগোষ্ঠীর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি।[5][6][7]
২০০৫ সালে "ন্যাচারাল হিস্টোরি অফ আশকেনাজি ইন্টেলিজেন্স"[8] নামক একটি বৈজ্ঞানিক পত্রে প্রস্তাব করা হয় অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর তুলনায় আশকেনাজি ইহুদি গোষ্ঠীর বাচনিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা বেশি এবং স্থানিক বুদ্ধিমত্তা কম। বংশগতির মাধ্যমে প্রাপ্ত রোগ এবং মধ্যযুগে আশকেনাজি ইহুদিদের বিচিত্র অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি করা হয়।
আশকেনাজি ইহুদিরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি ও আইন সহ বিভিন্ন শিক্ষায়তনিক অঙ্গনে সাফল্য অর্জনে করেছে যা তাদের ক্ষুদ্র জনসংখ্যার তুলনায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ।[9] যেমন, আশকেনাজি ইহুদিরা ফিল্ডস পদক, টুরিং পুরস্কার এবং রিজেনেরন সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চ এওয়ার্ডের এক চতুর্থাংশেরও বেশি জিতেছে। বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন (৫৪ শতাংশ)[10], ন্যাশনাল মেডেল অফ সায়েন্স প্রাপ্ত (৩৭ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্রে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত (২৯ শতাংশ)[8] এবং চিকিৎসায় নোবেলবিজেতাদের (৪২ শতাংশ)[10] মধ্যেও আশকেনাজি ইহুদিদের উপস্থিতি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বেশি। এছাড়া আইভি লিগ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ[9], এবং যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আইন বিশারদের মধ্যে ৩০ শতাংশই ইহুদি।[11]
অ-শিক্ষায়তনিক অঙ্গন যেমন ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আশকেনাজি ইহুদিদের জনসংখ্যার তুলনায় তাদের সাফল্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা সহজভাষায় মাত্রাতিরিক্ত বেশি। পোল্যান্ডের ১৯৩১ সালের আদমশুমারি বা জনগণনা অনুসারে, পোল্যান্ডে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল ৯.৮ শতাংশ, কিন্তু তারা দেশটির ২২.৪ শতাংশ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত।[11] ক্ষুদ্র জনসংখ্যা সত্ত্বেও ১৯৩৮ সালে পোল্যান্ডে ৫৫ শতাংশ বৃহৎ ও মধ্যম আকারের বাণিজ্যিক ক্ষেত্র ছিল আশকেনাজি ইহুদিদের অধিকারে, আর তারাই বস্ত্র, রাসায়নিক, খাদ্য, পরিবহন, কাগজ এবং নির্মাণসামগ্রী শিল্পে নেতৃত্ব দিত।[11]
১৯৫৪ সালে, একজন মনোবিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন নিউ ইয়র্ক পাবলিক স্কুল সিস্টেমে যে ২৮ জনের বুদ্ধ্যঙ্ক ১৭০ বা তার উপরে ছিল, তাদের মধ্যে ২৪ জনই ছিল ইহুদি।[12]
বুদ্ধিমত্তা বিচারের আরও বেশি দ্ব্যর্থহীন উপায় হচ্ছে সাইকোমেট্রিক পরীক্ষার মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তার পরিমাপ। বিভিন্ন গবেষণায় বিভিন্ন ফলাফল পাওয়া গেলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আশকেনাজি ইহুদিদের বাচনিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা গড়ের তুলনায় বেশি, এবং স্থানিক বুদ্ধিমত্তা গড়ের তুলনায় কম পাওয়া গেছে।[13][14]
যদি ধরে নেয়া হয় যে আশকেনাজি ইহুদি এবং অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর মধ্যে পরিসংখ্যানগত পার্থক্য রয়েছে, তারপরও এখনও প্রশ্ন থেকে যায় যে এই পার্থক্যের মধ্যে কতখানি জিনগত বিষয়ের কারণে ঘটে।
গ্রেগরি কোচরান, জেসন হার্ডি এবং হেনরি হারপেনডিং তাদের ২০০৫ সালের গবেষণাপত্র "ন্যাচারাল হিস্টোরি অফ ইন্টেলিজেন্স"-এ[8] আশকেনাজি ইহুদিদের উচ্চ বাচনিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা এবং নিম্ন স্থানিক বুদ্ধিমত্তার প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্য মধ্যযুগে তাদের অনন্য অবস্থাকে দায়ী করেন। এই গবেষণাপত্রের প্রতিজ্ঞাগুলো নিম্নরূপ:
অন্যান্য গবেষকগণ এই গবেষণার ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। কেউ বলেছেন এই অনুকল্পটি সত্য, আবার কেউ বলেছেন এই অনুকল্পে পোঁছানোর জন্য আরও গবেষণা দরকার।[16] একটি টেলিভিশন সাক্ষাতকারে কোচরান বলেন:[17]
"(আশকেনাজি ইহুদিরা বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে আজকে যে অবস্থায় এসেছে সেই অবস্থায় যাবার জন্য) প্রচণ্ড রকমের জিনগত প্রবাহের প্রয়োজন নেই, কারণ এজন্য প্রতিটি প্রজন্মে অল্প পরিবর্তনই যথেষ্ট, আর এই ১০০০ বছরে সম্ভবত ৪০টি প্রজন্ম অতিবাহিত হয়ে গেছে। সুতরাং প্রতিটি প্রজন্মে যদি আশকেনাজি ইহুদিদের এক এর তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ বুদ্ধ্যঙ্ক করেও বৃদ্ধি পায়, সেটাই বর্তমান অবস্থা তৈরির জন্য যথেষ্ট হবে।"
ইহুদি ধর্মে একটি ধর্মীয় প্রথা হচ্ছে পুত্রকে তার ইহুদি পিতাই শিক্ষিত করতে পারবে, যার কারণে ইহুদি ধর্ম থেকে অন্যান্য ধর্মে ঐচ্ছিক ধর্মান্তরকরণ ঘটে। এর কারণে ইহুদি জনসংখ্যার অনেকটাই কমে যেতে পারে।[18] ইউরোপে ইহুদি গণহত্যার কারণেও নিম্ন বুদ্ধিমত্তার ইহুদিদের সংখ্যা কমে যেতে পারে।[16]
মধ্যযুগীয় আশকেনাজি সমাজে অর্থ, সামাজিক মর্যাদা এবং পেশার অধিকাংশই বংশগতভাবে অর্জিত হত। দরিদ্রদের তুলনায় সম্পদশালীদের সন্তান-সংখ্যা অধিক ছিল, কিন্তু দরিদ্র সামাজিক শ্রেণীতে জন্ম নেয়া ব্যক্তির জন্য নতুন পেশা বা উচ্চ সামাজিক শ্রেণীতে প্রবেশ করা কঠিন ছিল। যেসব পরিবার সম্পদশালী ছিল তারা তাদের স্থান কয়েক শতক যাবৎ ধরে রাখে। এই উচ্চাভিমুখী সামাজিক গতিশীলতাহীন অবস্থায় প্রজননগত সফলতার বেলায় গাণিতিক ও বাচনিক ক্ষেত্রে অধিক বুদ্ধিমত্তার জন্য জিনের ভূমিকা কমই হবার কথা। সুতরাং, এটা পরিষ্কার নয় যে সেই সময় ইহুদিদের জন্য নির্ধারিত সীমিত সংখ্যক পেশায় তাদের অংশগ্রহণের সুবিধা প্রদানে গাণিতিক ও বাচনিক দক্ষতা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সামাজিক যোগাযোগ, তীক্ষ্ণ সামাজিক বিচারবুদ্ধি, ঝুঁকি নেবার প্রবণতা, এবং দক্ষতা এবং স্বজনপ্রীতি উভয়ের কারণে পূঁজির ক্ষেত্রে প্রবেশ এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে।[19]
অন্যদিকে, গ্রেগরি ক্লার্ক এর বিতর্কিত গবেষণাটি নির্দেশ করে, সমগ্র ইতিহাস জুড়েই আশকেনাজি ইহুদিদের মধ্যকার সামাজিক গতিশীলতা কম হলেও তুচ্ছ ছিল না, এবং বর্তমানে এদের মধ্যকার সামাজিক গতিশীলতা ঠিক যেমন, পূর্বে তা এর চেয়ে কোন অংশেই কম ছিল না।[20]
কোন কোন জিনগত গবেষণা প্রস্তাব করে, আশকেনাজি ইহুদিদের বংশগত রোগগুলোর বেশিরভাগেরই উদ্ভব একটি পপুলেশন বটলনেকের পর জিনগত চ্যুতির কারণে, যাকে ফাউন্ডার এফেক্ট বলা হয়। কচরান এট আল এর অনুকল্পে যেমনটা প্রাকৃতিক নির্বাচনগত চাপের কারণে এইসব রোগের উদ্ভব বলে দাবী করা হয়েছে, সেটা না হয়ে বরং এই ফাউন্ডার এফেক্টের কারণেই এই রোগগুলোর উদ্ভব।[19][21] এর একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টে সাকস রোগের উদ্ভব হয় অষ্টম বা নবম শতকে, যখন ইউরোপে আশকেনাজি ইহুদিদের সংখ্যা কম ছিল, আর ঠিক এই সময়ের পরেই আশকেনাজি ইহুদিরা সমস্ত ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এমন হতে পারে যে, আশকেনাজি ইহুদিদের মাঝে এই রোগের উচ্চ হারের কারণ এই রোগের জন্য দায়ী জিনের বৌদ্ধিক সুবিধা প্রদান নয়, বরং গোষ্ঠীর বাইরে আর কারও সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া।[19] যাই হোক, ২১টি আশকেনাজি ইহুদি বংশগত রোগের (যেসব বংশগত রোগের হার আশকেনাজি ইহুদিদের মধ্যেই অধিক দেখা যায়) জন্য দায়ী জিনের ফ্রিকোয়েন্সি ও অবস্থান নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যায় এদের মধ্যে ৬টির উদ্ভব প্রাকৃতিক নির্বাচনগত চাপের কারণে, যাদের মধ্যে একটি হচ্ছে টে-সাকস রোগ।[21] তবে এরকম কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় নি যে, এটার কারণ বাণিজ্যিক দক্ষতার জন্য পাওয়া বর্ধিত বুদ্ধিমত্তা নাকি অন্য কিছু।[22]
বিবর্তনগত মনোবিজ্ঞানী স্টিভেন পিংকার প্রস্তাব করেন, "আশকেনাজি ইহুদিদের বৌদ্ধিক সুবিধার জন্য জিনগত ভূমিকা বিচার করার জন্য ক্রস-এডপশন গবেষণা করতে হবে, যেখানে একজন ব্যক্তির বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয় করতে হবে যার জীববিজ্ঞানগত পিতামাতা আশকেনাজি ইহুদি, সেই জীববিজ্ঞানগত পিতামাতার বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয় করতে হবে, আর সেই ব্যক্তির অ-ইহুদি পালক পিতামাতারও বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয় করতে হবে। এরকম কোন গবেষণা এখন পর্যন্ত ঘটেনি, সুতরাং (কচরানের) সাক্ষ্যপ্রমাণ কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ বহন করে না।"[23]
আশকেনাজি ইহুদিদের অধিক বুদ্ধিমত্তার পেছনে আরেকটি ব্যাখ্যা হচ্ছে অন্যান্য সংস্কৃতির সাথে আশকেনাজি ইহুদি সংস্কৃতির পার্থক্য, যেখানে আশকেনাজি ইহুদি সংস্কৃতিতে বৌদ্ধিক প্রতিভাকে সংবর্ধিত করা হত।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ৭০ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংসের পর ইহুদি সংস্কৃতি এমন সংস্কৃতির সূচনা ঘটায় যেখানে ধর্মীয় অনুশাসনের বদলে অধ্যয়ন এবং পাণ্ডিত্যেই জোড় দেয়া হত।[24] আশেপাশের অন্যান্য সংস্কৃতির লোকদের তুলনায়, ইহুদিদেরকে, এমনকি ইহুদি কৃষকদেরকেও[8] ছোটবেলা থেকেই লিখতে-পড়তে শিখতে হত। সামাজিক মর্যাদার জন্য তালমুদ বিষয়ক পাণ্ডিত্য খুব গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতায় পরিণত হয়। এই তালমুদ বিষয়ক ঐতিহ্য ইহুদিদেরকে বাণিজ্যিক এবং ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত পেশায় অধিক সফল হতে সাহায্য করতে পারে, যেখানে এই পেশাগুলো তাদের জন্য নতুন সুযোগেরও সৃষ্টি করে।[19]
ইহুদিদের কৃষিভিত্তিক পেশা থেকে নগরকেন্দ্রিক পেশায় গমন করতে শুরু করারও আগে ইহুদি সংস্কৃতিতে পাণ্ডিত্যে বিশেষ জোড় দেয়া হয়। এতি নির্দেশ করে যে কচরান এট আল. এর ৩য় প্রতিজ্ঞাটির বিপরীত ঘটনা এখানে ঘটতে পারে।[19] অর্থাৎ, একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বর্তমান পর্যন্ত উপস্থিত আছে, আর সম্ভবত এটাই বর্তমান আশকেনাজি ইহুদিদের উচ্চ বুদ্ধ্যঙ্কের অ-জিনগত বিস্তার ঘটিয়েছে।[19]
অন্যান্য প্রস্তাবিত ব্যাখ্যাসমূহ:
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.