আল-আদুদি হাসপাতাল
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আল-আদুদি হাসপাতাল ছিল মধ্যযুগীয়[1] ইরাকের বাগদাদে গড়ে ওঠা একটি চিকিৎসালয়, যা মধ্যযুগীয় ইসলামী সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা সংগঠিত হাসপাতালের যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রাথমিক ইসলামি যুগের হাসপাতালগুলির মধ্যে অধিকাংশই বাগদাদে অবস্থিত ছিল; তাদের মধ্যে একটি আল-আদুদি হাসপাতাল। [2] হাসপাতালটি বুওয়াইহ রাজবংশের শাসক আদুদ আল দৌলার শাসনামলে নির্মিত হয় হয় এবং মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর আগে তিনি এটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।[2][3] আল-আদুদিকে মধ্যযুগীয় ইসলামি সময়ের সবচে' উদ্ভাবনী ও আধুনিক হাসপাতালগুলির একটি হিসেবে বিবেচনা করা হত। [4] সেই সময়ের সুপরিচিত চিকিৎসকদের মাঝে এই হাসপাতালটি চিকিৎসাশাস্ত্র শেখার ও অনুশীলনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত ছিল।
রাজা 'আদুদ আল দৌলা' তার মালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে হাসপাতালের জন্য তহবিল সরবরাহ করেন। [3] ভবন এবং এর কোয়ার্টার নির্মাণের আগে, সুপরিচিত চিকিত্সক ইমাম আল রাজি এর জন্য একটি আদর্শ অবস্থান নির্ধারণ করেন। উপযুক্ত বাছাই করার নিয়ম এমন ছিল যে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাংস ঝুলিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এমন জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে যাতে মাংসের ক্ষয় কম হয়। [1][2] দজলা নদীর পশ্চিম তীরে ৯৮১ সালে আল–আদুদির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। [4][5]
ইবনে কাইয়িম জাওযিয়াহ নিজের বই আল-মুনতাহায় ৩৭২ হিজরিতে আদুদি বিমারিস্তানটি চালু করার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, "সফর মাসের তৃতীয় তারিখে বৃহস্পতিবার অথবা বলা হয় যে, রবিউস সানি মাসের বৃহস্পতিবার রাতে সালাম শহরের পশ্চিম দিকে আদুদ আল দৌলা যে মারস্তানটি স্থাপন করেছিলেন তা খুলে দেওয়া হয়েছে এবং এতে চিকিৎসক, ওষুধ ও নার্সসহ চিকিৎসাবিষয়ক যাবতীয় বস্তুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। [6]
আল-আদুদি হাসপাতালটি প্রাথমিক নির্মাণ করার পর পরবর্তীকালে দুবার পুনর্গঠন করা হয়েছিল। দজলা নদীর বন্যার কারণে ১০৬৮ সালে প্রথমবার এটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং তখন একবার পুনর্নির্মাণ করা হয়। [4] এটির পুনর্নির্মাণের পরে বলা হয়েছিল যে, হাসপাতালটি তার সুবিধা এবং রোগীদের সেবা যত্নের উন্নতি করেছে। [4] তবে হাসপাতালে ভ্রমণকারীরা বলেন যে, এটি আসলে একই মানের যত্নসহ সর্বদা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারেনি। [4] কেউ কেউ বলেন যে, চিকিত্সকরা সপ্তাহে মাত্র কয়েকবার রোগীদের দেখতে আসতেন। ১২৫৮ সালে বাগদাদ অবরোধের সময় আল-আদুদি হাসপাতালটি দ্বিতীয়বার ধ্বংস করা হয়েছিল এবং [4] তৃতীয়বারের মত হাসপাতালটি পুনর্নির্মাণ করা হয়নি।
আল-আদুদি এমন একটি স্থান হিসেবে কাজ করেছিল, যেখানে সব সংক্রমণের নিরাময় হতো। হাসপাতালটি ছিল একটি চিকিৎসালয় এবং চিকিৎসা শেখার একটি প্রতিষ্ঠান।[2] যেহেতু এটি একটি বিমারিস্তান ছিল; তাই এটি লিঙ্গ এবং বর্ণ পরিচয় নির্বিশেষে সকল ব্যক্তিকে চিকিৎসা প্রদান করত। [2] হাসপাতালেটিতে পুরুষ ও মহিলাদের চিকিৎসার জন্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক দ্বারা চিকিত্সা করা হতো, যারা রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে সেবাপ্রদান করতেন । [1][4] আল-আদুদিতে রোগীদের যত্ন নেওয়ার জন্যে ২৪ জন চিকিত্সক নিয়োগ করা হয়েছিল। [5] আল-আদুদির দ্বিতীয় নির্মাণের পর চিকিৎসকের সংখ্যা ২৮ জনে উন্নীত হয়। [4] চিকিত্সকদের মধ্যে সার্জন, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, অস্থি বিশেষজ্ঞ ও ভাবী চিকিত্সকদের মত অনেক বিশেষজ্ঞ ছিলেন।[1][7] কয়েকজন চিকিৎসক রোগীদের দেখাশোনা করতেন এবং ছাত্রদের চিকিৎসা শেখাতেন। [5] ইবনে জুবায়ের নামে একজন স্পেনীয় ভ্রমণকারী বর্ণনা করেন যে হাসপাতালে অনেকগুলো কোয়ার্টার তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে বিভিন্ন কাজের জন্য বড় বড় কক্ষ ছিল। [1] আল-আদুদিকে প্রাসাদের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি বড় ভবন বলে মনে করা হয়। [1] যদিও আল-আদুদি চিকিত্সকদের জন্য তাদের কাজের প্রধান ক্ষেত্র ছিল; তবে ইবনে সিনা (যিনি এই শাস্ত্রের একজন মহান ব্যক্তিত্ব ও সুপরিচিত চিকিত্সক ছিলেন) বলেছিলেন যে, কারাগারগুলিও যেন বন্দীদের জন্যে নিয়মিত মেডিকেল চেকআপের ব্যবস্থা করে। [5][8] তাই তিনি চিকিৎসক সিনান বিন সাবিতকে চিকিৎসা কর্মকর্তাদের কারাগারে ঘন ঘন পরিদর্শনের দায়িত্ব দেন। [5][8]
প্রাথমিক ইসলামি হাসপাতালে চিকিৎসাশাস্ত্র শেখা ও শেখানোর পদ্ধতির সাথে তুলনা করলে আল আদুদির শিক্ষার্থীদের শেখার পদ্ধতিও একই রকম ছিল। আল-আদুদি প্রথম হাসপাতাল ছিল, যা মেডিকেল ছাত্রদের রোগীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিল। [7] আল-আদুদি এমন একটি হাসপাতাল হিসাবে শুরু হয়, যা এমন একটি জায়গা হিসাবে কাজ করে যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের বিশেষত্ব শিখতে ও অনুশীলন করতে পারে। [5] এর শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষের বাইরে যাওয়ার পর পরই ওষুধের শিক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।[5] আল-আদুদিকে গোন্ডি শাপুর হাসপাতালের আদলে তৈরি করা হয়েছিল। [2] আল-আদুদির মেডিকেল ছাত্ররা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন এবং সেখানে বক্তৃতা দিতেন এবং সেই সাথে অন্য চিকিৎসা–পেশাদারদের সাথে আলোচনা করতে সক্ষম হতেন।[2] যেহেতু এতে অনেক বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তাই ছাত্ররা সব রকমের রোগের চিকিৎসা দেখতে ও শিখতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ, চিকিত্সার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মধ্যে তারা অপটোমেট্রি ও অস্থিচিকিৎসা অনুশীলনকারী সার্জনদের দক্ষতা দেখতে সক্ষম হয়। [1] এতে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা জ্ঞানের মূল্যায়ন করার একটি উপায় ছিল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসার অবস্থা সম্পর্কিত প্রশ্ন সরাসরি জিজ্ঞাসা করা। [5] যে সকল চিকিৎসক ছাত্রদের পড়াতেন এবং মূল্যায়ন করতেন তাদের মধ্যে ছিলেন হিবাত উল্লাহ ইবনে তিলমিদ উল্লেখযোগ্য ছিলেন। [4]
আল-আদুদির অস্তিত্ব জুড়ে চিকিৎসা শাস্ত্রের অসংখ্য বিশেষজ্ঞ ছিলেন, যারা হাসপাতালটিকে প্রতিষ্ঠার পর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাহায্য এবং দেখাশোনা করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আল-রাজি, যিনি রাজা 'আদুদ আল-দৌলাকে হাসপাতালের একটি উপযোগী অবস্থান বেছে নিতে সাহায্য করেন।[1][2] রাজা আদুদ আল-দৌলার মৃত্যুর আগে ইবনে মানদেবিয়াহ রাজার শাসনামলে এতে একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন।[3] সে সময় ইবনে মান্দেবিয়ার নিজের এতে চিকিৎসা জ্ঞান প্রমাণ করতে সক্ষম হন, যা তাকে হাসপাতালের বাইরে আরো অনুশীলন করার অনুমতি দেয়। [3] বিখ্যাত চিকিত্সকদের মধ্যে আল-আদুদীতে যারা চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষা লাভ করেন, তাদের মাঝে একজন ছিলেন ইবনে জাযলা । [9] তিনি ইবনে হিবাত উল্লাহর অধীনে অধ্যয়ন করেন এবং তাকউইম আল-আব্দান ফি তাদবিরিল ইনসান ( মানুষের চিকিত্সার জন্য শারীরিক অঙ্গগুলির পঁজিকা) এর মত কাজের ক্ষেত্রে অবদান রেখে নিজের চিকিৎসা জীবন চালিয়ে যান। [9] ইবনে তিলমিদ ১২ শতকের প্রথম দিকে আল-আদুদিতে বহু অবদান রাখেন এবং সেখানে তিনি এর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। [7] আল-আদুদি হাসপাতালে কাজ করা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন আল-দাখওয়ার ( চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ), ইবনে তুফাইল (সার্জন) ও ইবনে বুতলান, যিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকেই শিক্ষালাভ করেছিলেন। [1][7]
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চিকিৎসক
আল রাজি ছাড়াও সুলতান আদুদ আলদৌলাহ নির্দিষ্ট বেতনে তৎকালীন বিখ্যাত চিকিৎসকদের হাসপাতালে নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:[10]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.