Loading AI tools
উপমহাদেশের একটি শিক্ষা ব্যবস্থা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আলিয়া মাদ্রাসা বা আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে গঠিত এক আধুনিক ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা, যা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শুরুর পরে উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতি বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।[1][2] ১৭৮০ সালে বাংলার ফোর্ট উইলিয়ামের গর্ভনর ওয়ারেন হেস্টিসং কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটান।[3] পরবর্তী সময়ে এই কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার আদলে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মূলত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকেই আলিয়া মাদ্রাসা বলা হয়।[4]
আলিয়া মাদ্রাসায় কুরআন, হাদিস, বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজিসহ সকল সাধারণ বিষয় পড়ানো হয়।[5][6] এইজন্য আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।[7][8][9][10] পাঠ্যক্রম অনুযায়ী আলিয়া মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী বা প্রাথমিক শিক্ষায় ৫ বছর, দাখিল বা মাধ্যমিক শিক্ষায় ৫ বছর, আলিম বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় দুই বছর, ফাজিল বা স্নাতক শিক্ষায় দুই বছর এবং কামিল বা স্নাতকোত্তর শিক্ষায় দুই বছর ব্যয় করতে হয়। সবমিলিয়ে ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত মোট ১৬ বছরের কোর্সে পরিচালিত হয়।[11] বর্তমানে বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার ইবতেদায়ী, দাখিল ও আলিম স্তর বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং ফাজিল ও কামিল স্তর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রয়েছে।
১৭৮০ সালে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা, ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। এছাড়া অনন্য শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে ১৮৫৭ সালে ইংরেজি শিক্ষার ধারায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৮৬৬ সালে কওমি শিক্ষা ধারায় দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্য গোটা ভারতবর্ষে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে সর্বপ্রাচীন বলা হয়।[7]
১৭৮০ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হলে, পরবর্তী সময়ে মাদ্রাসার সিলেবাস ও শিক্ষা সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সময় কমিটি গঠন করা হয়। ১৭৯১ সালে কলকাতা মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ প্রথমবারের মত শিক্ষা কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রবর্তন করে। এ সিলেবাস কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় বাস্তবায়ন করা হয় এবং এই মাদ্রাসার অধিভুক্ত বাংলা, আসাম, বিহার ও উড়িষ্যা প্রভৃতি অঞ্চলের সকল মাদ্রাসায়ও বাস্তবায়ন করা হয়। এরপর ১৮৬৯ সালে নতুন কমিটি গঠন করে আবারো পাঠ্যসূচিতে কিছুটা সংশোধনী আনা হয়। ১৮৭১ সালে বিচারপতি নরম্যান কমিটি বেঙ্গল মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু পরিবর্তন সাধন করে। কলকাতা মাদ্রাসার এই শিক্ষা ব্যবস্থা পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে দিতে ১৮৭৩ সালে মহসিন ট্রাস্টের অর্থে ঢাকা মাদ্রাসা (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা ও ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা), চট্টগ্রাম মাদ্রাসা (বর্তমানে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম) ও রাজশাহী মাদ্রাসা (বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী) নামে তিনটি সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
১৮৮২ সালের হান্টার কমিটির রিপোর্টের ৩৬টি সুপারিশ ১৮৮৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হলে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে গতিশীলতা আসে। ১৯০৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের কলকাতা কনফারেন্সে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসাকে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) সমমানের তিন বছরের টাইটেল ক্লাস খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯১০ সালে অধ্যক্ষ এ এইচ হার্লের নেতৃত্বে গঠিত মোহমেডান এডুকেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো কিছু সংস্কার সাধন করে।
১৯১৪ সালে শামসুল উলামা আবু নসর ওহীদ নেতৃত্বের গঠিত মোহমেডান এডুকেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি কর্তৃক প্রণীত কারিকুলামে ওল্ড স্কিম ও নিউ স্কিম মাদ্রাসা ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয় এবং ১৯১৫ সালে তা বাস্তবায়িত হয়। মূলত মুসলমানদের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলার জন্য জুনিয়র ও সিনিয়র নামে দু’ধরনের নিউ স্কিম মাদ্রাসা চালু করা হয়। তৎকালীন সময়ে জুনিয়র মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আর সিনিয়র মাদ্রাসায় ১০ম মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো। এসকল সিনিয়র মাদ্রাসার পাঠক্রমে ইংরেজি ভাষাকে বাধ্যতামূলক করে সরকারি অনুদানভুক্ত করা হয়। সেই সময়ে সরকারি চাকরি পেতে মুসলিম শিক্ষার্থীরাও ইংরেজি শিখতে আগ্রহী ছিলো, এইজন্য তারা নিউ স্কিম মাদ্রাসায় পড়া পছন্দ করেছিলো। সেই সময়ে নিউ স্কিম শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো।
শামসুল হুদা কমিটি ১৯২৭ সালে বাংলা ও আসামের ওল্ড স্কিম সিনিয়র মাদ্রাসাগুলোর আলিম, ফাজিল ও ফখরুল মুহাদ্দিসীন শ্রেণীর পরীক্ষাসমূহ কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজন করার পরামর্শ দেয় এবং এই কেন্দ্রীয় পরীক্ষা আয়োজন করার জন্য একটি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড গঠন করার প্রস্তাব তোলে। এই কমিটির পরামর্শে কামিলের সিলেবাসে সিহাহ সিত্তাহ (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, আবু দাউদ), উসুলুল হাদিস, তাফসীরুল বায়যাবী, তাফসীরুল কাশশাফ, তাফসীরুল কবীর, তাফসীরুল মাজমুউল বয়ান, ফিকহ, উসুলুল ফিকহ, মানতিক, ইসলামের ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়গুলির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯২৭ সালে মোহমেডান এডুকেশনের এক সদস্য ও খাজা কামালউদ্দীন আহমদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড, বাঙলা নামে সর্বপ্রথম একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন হয়। কলকাতা মাদ্রাসা ১৯২৭ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সরকারি সংস্থা হিসেবে এই শিক্ষাবোর্ডের সাথে সংযুক্ত ছিলো।
১৯৩১ সালের মুসলিম এডুকেশন এডভাইজরি কমিটি বা মোমেন কমিটি ও ১৯৩৮-৪০ সালের মাওলা বখশ কমিটি আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের সুপারিশ করে। এছাড়াও ১৯৪৬ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জমউদ্দিন হোসাইন কমিটি শিক্ষার সংস্কার ও উন্নয়নে যে সুপারিশ করে, এই প্রস্তাব পূর্ণভাবে গ্রহণ করা হয়। এর ফলে সিলেবাসের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[11]
১৯৪৭ সালের বহু পূর্বেই কলকাতা মাদ্রাসার আদলে পূর্ব বাংলাতে বহু আলিয়া মাদ্রাসা গড়ে উঠে। এসব মাদ্রাসার মধ্যে নোয়াখালী কারামতিয়া মাদ্রাসা (১৮৫০), পাইকান মাদরাসা (১৮৬০), সুজাউল মাদ্রাসা (১৯৮০), মিঠাছড়া মাদ্রাসা (১৮৮১), সীতাকুণ্ড মাদ্রাসা (১৮৮৬), রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসা (১৮৮৬), ফরিদগঞ্জ মাদ্রাসা (১৮৯৬), সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা (১৯১৩), ছারছিনা মাদ্রাসা (১৯১৫) প্রভৃতি অন্যতম। এছাড়াও ১৯৪৭ সালের পূর্বে সরকার অনুমোদিত ও শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমতিপ্রাপ্ত বহু মাদ্রাসা বাংলাদেশে উপস্থিত ছিলো। ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের কারণে আলিয়া মাদ্রাসার আইডল কলকাতা মাদ্রাসার একাংশ ঢাকাতে স্থানান্তর করা হয়। তবে সেই সময় ঢাকা আলিয়াসহ বাংলাদেশের সকল আলিয়া মাদ্রাসার বোর্ড পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করতো।
আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা সংস্কারের জন্য ১৯৪৯-৫১ সালে মোহাম্মদ আকরম খাঁর পূর্ববাঙলা শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠন কমিটি, ১৯৫৬ সালে আশরাফউদ্দীন চৌধুরী কমিটি, ১৯৫৭ সালে আতাউর রহমান শিক্ষা সংস্কার কমিশন, ১৯৫৮ সালে এম এম শরীফ জাতীয় শিক্ষা কমিশন, ১৯৬৩ সালে এস এম হোসাইনের ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি, ১৯৬৯ সালে ইমামুদ্দীন চৌধুরীর মাদ্রাসা পর্যালোচনা কমিটি, ১৯৭২-৭৩ সালে কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন প্রভৃতি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে ১৯৭৩ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার সংস্থা নামক সংগঠন মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন সুপারিশ করে। বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে আলিয়া মাদ্রাসা সমূহ ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়, এবং পরবর্তীতে সময়ে ১৯৭৮ সালে মাদ্রাসার জন্য আলাদা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হলে মাদ্রাসাসমূহ এই বোর্ডে স্থানান্তরিত হয়।[7]
কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৭৫ সালে মাদ্রাসা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসাসমূহে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও বহুমুখী পাঠ্যসূচি প্রবর্তিত করা হয়। ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত আলিম ও ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত ফাজিল পরীক্ষার সিলেবাসে পরিবর্তন আনা হয়। এই শিক্ষা কমিশন অনুসারে ফাজিল ও আলিম শ্রেণীতে সাধারণ পাঠ্যসূচী অন্তর্ভুক্ত করে ফাজিল পরীক্ষাকে সাধারণ শিক্ষা এইচ এস সির সমমান ও আলিম পরীক্ষাকে সাধারণ শিক্ষা এস এস সির সমমান প্রদান করা হয়। এই কমিশনই মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞান শাখা চালু করে।[11]
১৯৭৮ সালে অধ্যাপক মুস্তফা বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিনিয়র মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির নির্দেশনায় ১৯৮৪ সালে সাধারণ শিক্ষার স্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা স্তরের সামঞ্জস্য করা হয়। আলিয়া মাদ্রাসার ইবতেদায়ী (প্রাথমিক) ৫ বছর, দাখিল স্তর (মাধ্যমিক) ৫ বছর, আলিম স্তর (উচ্চ মাধ্যমিক) ২ বছর, ফাযিল স্তর (ডিগ্রি) ২ বছর এবং কামিল স্তর (স্নাতকোত্তর) ২ বছর, মোট ১৬ বছর ব্যাপী পূর্ণাঙ্গ আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। পাঠ্যসূচী পরিবর্তন করে দাখিল পরীক্ষাকে এস.এস.সি এবং আলিম পরীক্ষাকে এইচ এস সির সমমান দেওয়া হয়।[8]
২০০৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল আলিয়া মাদ্রাসার সমস্ত পরীক্ষা বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড নিয়ন্ত্রণ করত। ২০০৬ সালের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী আইন, ২০০৬ মোতাবেক আলিয়া মাদ্রাসার ফাযিল (স্নাতক ডিগ্রি) ৩ বছর এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) ২ বছর মোট ৫ বছরের কোর্স চালু হয় এবং বাংলাদেশের ১,০৮৬টি ফাযিল (স্নাতক) ও ১৯৮টি কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হয়।[12] এরফলে ফাজিল ও কামিল পরীক্ষা উভয় মিলিয়ে সাধারণ শিক্ষার পূর্ণ স্নাতক ডিগ্রির সমমান লাভ করে। ২০১০ সালে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ৩১টি মাদ্রাসায় স্নাতক সমমান কোর্স চালু করে হয়, এরফলে শুধু ফাজিল স্নাতক করেই পূর্ণ স্নাতক, ও কামিল পাশ করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে।
এরপরে ২০১৬ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও আধুনিকরন করার জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়, এবং হলে আলিয়া মাদ্রাসাসমূহ সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়।[13] ২০১৬ সালে আরও ২১টি মাদ্রাসায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু করা হয়।[14]
বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার মধ্যে সরকারি মাদ্রাসা ও সাধারণ এমপিও ভুক্ত (সরকারি অনুমোদন, অনুদান ভুক্ত) মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু আলিয়া মাদ্রাসায় আলিয়া কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা পরিচালনা করে থাকে।[15] বাংলাদেশে বর্তমানে মাত্র ৩টি সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এবং ১৯০০ সালের দিকে কিছু কলকাতা মাদ্রাসার আদলে বাংলাদেশেও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, কিন্তু সেগুলো কালের পরিক্রিমায় নাম পরিবর্তিত হয়ে স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত হচ্ছে।
বর্তমান সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা:
পূর্বতন সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা:[11]
কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার জনপ্রিয়তার সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা বহু আলিয়া মাদ্রাসা গড়ে উঠেছিলো। ভারতের হাই মাদ্রাসা, আলিম মাদ্রাসা ও ফাজিল মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর ৫০ হাজার পরিক্ষার্থী বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।[16] পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত তিন ধনের মাদ্রাসা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের মাদ্রাসা রয়েছে ৬১৪টি। যার মধ্যে হাইমাদ্রাসা ৫১২টি এবং সিনিয়র মাদ্রাসা ১০২টি। মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের অধীনে থাকা হাই মাদ্রাসাগুলির পাঠ্যক্রম একেবারেই সাধারণ বিদ্যালয়গুলির অনুরূপ।[17] এসব মাদ্রাসায় বহু অমুসলিম শিক্ষার্থী ও শিক্ষক রয়েছে। সিনিয়র মাদ্রাসার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তরকে আলিম পরীক্ষা বলে অভিহিত এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরকে ফাজিল পরীক্ষা বলে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও সরকারি উদ্যোগে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর অনুমোদিত ৫০০ শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত) এবং মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র (৮ম শ্রেণি পর্যন্ত) চালু রয়েছে। [18]
পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের মাদ্রাসা রয়েছে ২৩৫টি। এগুলি মাদ্রাসা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত এবং মাদ্রাসা পর্ষদের পাঠক্রম অনুযায়ী পরিচালিত, তবে সরকারি অনুদান থেকে তারা বঞ্চিত। বিভিন্ন ধরনের দান এবং পড়ুয়াদের বেতন এই মাদ্রাসাগুলির আয়ের উৎস।
এইসকল মাদ্রাসাকে ভারতে নিজামিয়া বা খারেজি মাদ্রাসা বলা হয়। সরকারি অনুমোদনের ও অনুদানের বাহিরে হওয়ায় খারেজি নামে অভিহিত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৫ হাজার খারেজি মাদ্রাসা রয়েছে।[19] এসকল মাদ্রাসা নিজেরা নিজস্ব ইসলামি পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করে নিজেরাই সরকারি অনুদান ব্যতিত পরিচালনা করে থাকে।[18]
আলিয়া মাদ্রাসায় ইবতেদায়ি থেকে কামিল পর্যন্ত ১৬ বছরের পড়ালেখায় পাঁচটি ধাপ রয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসার সাথে সাধারণ শিক্ষার তুলনা ছকের মাধ্যমে দেখুন।
প্রাথমিক | নিম্ন মাধ্যমিক | মাধ্যমিক | উচ্চ মাধ্যমিক | স্নাতক | স্নাতকোত্তর | |
---|---|---|---|---|---|---|
সাধারণ | পি এস সি | জে এস সি | এস এস সি | এইচ এস সি | বিএসসি, বিএ, বিবিএ, এলএলবি, বিএসএস | এমএসসি, এমএ, এমবিএ, এলএলএম, এমএসএস |
আলিয়া | ইবতেদায়ী | জে ডি সি | দাখিল পরীক্ষা | আলিম পরীক্ষা | ফাজিল পরীক্ষা | কামিল পরীক্ষা |
কওমি | ইবতেদায়ী | মুতাওয়াস ফিতাহ | আল-মারহালা সানুবিয়াহ | মারহালাতুল ফযীলত | মারহালাতুত তাকমীল |
ইতবেদায়ী বা প্রাথমিক পর্যায়ে কুরআন শরিফ পড়া ও মুখস্থ করার উপর জোর দেওয়া হয়। এই পর্যায়ের অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামের মৌলিক বিষয়, আরবি, বাংলা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল ও সাধারণ বিজ্ঞান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা যাত্রা শুরু।[20] বর্তমানে ৪ হাজার ৩১২টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও সাড়ে ২১ হাজার শিক্ষককে এমপিও ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে।[21]
দাখিল বা মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কুরআন পড়া ও মুখস্থ করার সঙ্গে যুক্ত হয় কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা বা তাফসির। এই পর্যায়ে এসে শিক্ষার্থীদের আরবি, ইসলামি দর্শন, ইসলামি আইন ও তত্ত্ব এবং এগুলোর ব্যবহার পড়ানো হয়। দাখিল শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের সাধারণ সিলেবাসের সমস্ত কিছুই পড়তে হয়। এবং অতিরিক্ত হিসাবে কুরআন, হাদিস, আল ফিকহ ও আরবি এই চারটি বিষয় পড়তে হয়। এছাড়া মাদ্রাসার দাখিল পর্যায়ের বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের সাধারণ সিলেবাস মোতাবেক পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত পড়তে হয়। তার মানে সাধারণভাবে বলতে গেলে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা ও সিলেবাস বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাস থেকে অভিন্ন নয়।[22]
আলিম বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বা কলা বিভাগকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে শিক্ষার্থীদের জন্য। উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই কুরআন ও হাদিস ও শরিয়া আইন পড়তে হয়। অন্যদিকে, কলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের আরবি ও ফার্সি ভাষা এবং বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয় পড়তে হয়।
ফাজিল বা স্নাতক পর্যায়ে আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের শুধু কলা বিভাগের বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। যেমনঃ কুরআন, হাদিস, আল ফিকহ, আরবি ব্যকরন, ইসলামের ইতিহাস প্রভৃতি। পূর্বে আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল পর্যায়ে শুধু ৩ বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু ছিলো, তবে বর্তমানে ডিগ্রি কোর্সের সাথে সাথে স্নাতক সমমান কোর্স চালু হয়েছে।
আলিয়া মাদ্রাসায় কামিল বা স্নাতকোত্তর পর্যায় শিক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ পর্যায়। কামিল পর্যায়ের কোর্সে শিক্ষার্থীদের কেবল ধর্ম বিষয়ে পড়ানো হয়। এই পর্যায়ে এসে তাদের হাদিস, তাফসির (কুরআন শরিফের ব্যাখ্যা), ইসলামি আইন ও আরবি সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস বিশেষায়িতভাবে পড়ানো হয়।
প্রথম আলিয়া মাদ্রাসা ১৭৮০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা হলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে আলিয়া মাদ্রাসা জনপ্রিয় হতে থাকে।[23][24] ১৯০০ সালের দিকে বাংলাদেশে দুই হাজার আলিয়া মাদ্রাসা ছিলো। নিচে ছকের সাহায্যে বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার পরিসংখ্যান দেখানো হল:
কামিল মাদ্রাসা | ফাজিল মাদ্রাসা | আলিম মাদ্রাসা | দাখিল মাদ্রাসা | ইবতেদায়ী মাদ্রাসা | সর্বমোট মাদ্রাসা | শিক্ষার্থী সংখ্যা | |
---|---|---|---|---|---|---|---|
১৯০৭ | ২,৪৪৪ টি। | ||||||
১৯৪৭ | ৩৭৮২ টি | ||||||
১৯৭১ | ৫০৭৫ টি | ||||||
২০০২ | ১৭২ টি | ১,০৫০ টি | ১,৩৭৬ টি | ৬,৪০২ টি | আনু. ৮০০০ টি | ||
২০০৭ | ১৯৮ টি | ১,০৮৬ টি | ১৪০০+ টি | ৬৭০০+ টি | ৯,৪৯৩ টি[lower-alpha 1] | ||
২০২০ | ২৬১ টি | ১০৮৩ টি | ১৩৯৬ টি | ৬৭২১ টি | আনু. ৮,৫০০ টি | আনু. ১৮,০০০ টি | ৩৫ লাখ ৬১ হাজার |
** আলিয়া মাদ্রাসার স্তর (কামিল> ফাজিল> আলিম> দাখিল> ইবতেদায়ী) বিবেচনা করে। যেসকল মাদ্রাসা উচ্চস্তরের, সেগুলো অবশ্যই নিম্নস্তরের মাদ্রাসা
মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার তালিকা
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.