আরব লোকসাহিত্য উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
"আলিবাবা" শিরোনামকে এখানে পুনর্নির্দেশ করা হয়েছে। আরব্য রজনীর চরিত্রের নামে নামকৃত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলিবাবা গ্রুপ দেখুন।
“আলিবাবা ও চল্লিশ চোর” (আরবি: علي بابا والأربعون لصا) হলো আরব্য রজনী-এর একটি লোককাহিনী। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এর ফরাসি অনুবাদক আঁতোয়াঁ গালাঁ সিরীয় লোককথক হান্না দিয়াবের কাছে গল্পটি শুনে একে আরব্য রজনী-এর কাহিনিমালায় যুক্ত করেন। আরব্য রজনী-এর গল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হওয়ার দরুণ বিশ্বব্যাপী এই গল্প বারংবার বলা হয় এবং বিভিন্ন মাধ্যমে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য উপস্থাপন করা হয়। (শিশুদের জন্য পরিবেশনার অধিকাংশ ক্ষেত্রে গল্পের নৃশংস অংশটুকু উহ্য রাখা হয়।)
দ্রুত তথ্য আলিবাবা ও চল্লিশ চোর, লোককাহিনী ...
আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
আলিবাবার বড় ভাই কাশিম ও গুহার চিত্র, ম্যাক্সফিল্ড প্যারিশ (১৯০৯)
মূল সংস্করণে আলিবাবা বা আলী বাবা (আরবি: علي باباʿআলী বা-বা-) একজন দরিদ্র ও সৎ কাঠুরিয়া ছিলেন। ভাগ্যক্রমে তিনি ডাকাতদের এক গুপ্ত আস্তানার সন্ধান পান এবং “চিচিং ফাঁক” জাদুশব্দ আওড়ে সেখানে প্রবেশ করেন। ডাকাতেরা আলিবাবাকে হত্যা করতে চায়। কিন্তু আলিবাবার বিশ্বস্ত গৃহকর্মী তাদের সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়। আলিবাবা সেই গৃহপরিচারিকাকে তার ছেলের সাথে বিবাহ দেন এবং গুপ্তধনের কথা গোপন রাখেন।
আরব্য রজনী-এর ইউরোপীয় অনুবাদকদের অন্যতম আঁতোয়াঁ গালাঁ তার অনূদিত লে মিলে এ উন নুই-এ (১৭০৪–১৭১৭) সর্বপ্রথম আলিবাবার গল্পটি অন্তর্ভুক্ত করেন। গালাঁ অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন ফরাসিপ্রাচ্যতত্ত্ববিদ ছিলেন। বর্তমান সিরিয়ারআলেপ্পো থেকে আসা এক মাওয়ারুনাত গল্পকথক হান্না দিয়াবের কাছে প্যারিসে গল্পটি শুনে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।[1] তাই যেকোনোভাবে গালাঁর ফরাসি ভাষায় লেখা গল্পটি আলিবাবার সবচেয়ে পুরনো লিখিত সংস্করণ। রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টন তার অনুবাদ গ্রন্থ দ্য বুক অব দ্য থাউজ্যান্ড ওয়ান নাইটস অ্যান্ড অ্যা নাইট-এর (কাহিনিমালার মূল অংশের পরিবর্তে) সম্পূরক অংশে এটি অন্তর্ভুক্ত করেন।[2]
মার্কিন প্রাচ্যতত্ত্ববিদ ডানকান ব্ল্যাক ম্যাকডোনাল্ডবডলিয়ান গ্রন্থাগারে গল্পের একটি আরবি পাণ্ডুলিপি খুঁজে পান।[3] তবে পরবর্তীতে জানা যায় এটি মূল পাণ্ডুলিপির কেবল একটি নকল ছিল।[4]
তৎকালীন আরবে এক বণিক পরিবারের দুই ভাই ছিল, আলিবাবা ও কাশিম (আরবি: قاسمক্বা-সিম)। তাদের পিতার মৃত্যুর পর লোভী কাশিম এক ধনী মহিলাকে বিয়ে করে এবং তার বাবার ব্যবসায়ের আয় থেকে বেশ ভালোভাবে দিন কাটাতে থাকে। অন্যদিকে আলিবাবা এক দরিদ্র মহিলাকে বিয়ে করে এবং কাঠ কেটে তা বিক্রি করে দিনাতিপাত করে।
একদিন কাঠ কাটার সময় আলিবাবা চল্লিশজন ডাকাতের একটি দলকে তাদের গুহায় ঢুকতে দেখে। তাদের গুহার মুখ বিশাল পাথর দিয়ে বন্ধ ছিল। গুহার মুখে জোরে “চিচিং ফাঁক” বললে গুহার মুখ খুলে যায় এবং ভেতরে ঢুকে জোরে “চিচিং বন্ধ্” বললে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যেত। ডাকাতের দল সেখান থেকে চলে গেলে আলিবাবা ভেতরে ঢোকে এক ব্যাগ সোনার মোহর নিয়ে বাড়ি চলে আসে।
আলিবাবা ও তার স্ত্রী কাশিমের কাছ থেকে একটি দাঁড়িপাল্লা এনে তাদের সোনার মোহর মাপতে বসে। কিন্তু তাদের অজান্তে কাশিমের স্ত্রী দাঁড়িপাল্লায় একটু আঠা লাগিয়ে দেয়। সে জানতে চাইছিল দরিদ্র আলিবাবা কোন শস্য এত বেশি পেয়েছে যে তা মাপতে দাঁড়িপাল্লার প্রয়োজন হচ্ছে। আলিবাবা দাঁড়িপাল্লাটি ফেরত দিয়ে গেলে তাতে সোনার মোহর আটকে থাকতে দেখে সে হতবাক হয়ে যায় এবং তার স্বামী কাশিমকে সব খুলে বলে। ভাই কাশিম আলিবাবাকে চেপে ধরলে আলিবাবা গুহার গুপ্তধনের কথা খুলে বলতে বাধ্য হয়। কাশিম একটা খচ্চর নিয়ে সেই গুহায় যায়, যাতে যত খুশি গুপ্তধন নিজের সাথে নিয়ে আসতে পারে। সে জাদুর শব্দ বলে গুহায় প্রবেশ করে। কিন্তু লোভ ও উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে গুহা থেকে বের হওয়ার জাদুশব্দ ভুলে যায় এবং সেখানেই আটকা পড়ে। চোরের দল সেই সময় গুহায় পৌঁছে গেলে তারা কাশিমকে খুঁজে পায় এবং তাকে হত্যা করে তার শরীরকে টুকরো টুকরো করে কেটে দেয়। এদিকে কাশিম ফিরে না আসায় আলিবাবা আবার সেই গুহায় যায় এবং গুহার মুখেই কাশিমের খণ্ডিত দেহাবশেষ খুঁজে পায়।
আলিবাবা কাশিমের দেহকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং কাশিমের চতুর গৃহকর্মী মর্জিনাকে (আরবি: مرجانةমুরজা-না) বলে যাতে কাশিমের মৃত্যুকে স্বাভাবিক দেখানো যায় সেই ব্যবস্থা করতে। মর্জিনা একটি দাওয়াইখানা থেকে কাশিমের অসুস্থতার কথা বলে ওষুধ নিয়ে আসে। এরপর মুস্তফা নামের এক বৃদ্ধ দর্জিকে টাকা দিয়ে ও চোখ বেঁধে কাশিমের বাড়িতে নিয়ে আসে। মুস্তফা রাতারাতি কাশিমের দেহকে জোড়া লাগিয়ে সেলাই করে দেয়। আলিবাবা কোনোরকমে সন্দেহ ছাড়াই কাশিমের দেহকে কবর দিয়ে দেয়।
এদিকে গুহার মুখে কাশিমের দেহ না পেয়ে চোরের দল বুঝতে পারে তাদের গুহার রহস্য অন্য আরেকজন জানে। পাগলপ্রায় হয়ে তারা সেই লোককে খুঁজতে বের হয়। চোরদের একজন আলিবাবার গ্রামে যায়, সেখানে মুস্তফা বলে সে কেবলই একজনের টুকরো টুকরো দেহ জোড়া লাগিয়ে এসেছে। এই শুনে চোর বুঝতে পারে এই সেই লোকের দেহ যে গুহার ভেতরে ঢুকেছিল। চোর মুস্তফাকে জিজ্ঞাসা করে সে তাদের বাড়ি চিনিয়ে দিতে পারবে কি-না। চোর আবার দর্জির চোখ বেঁধে দেয় এবং এইভাবে আবার কাশিমদের বাড়ির সামনে এসে পড়ে। চোর সেই বাড়ির দরজায় একটি কাঁটা দাগ দিয়ে রেখে যায়, যাতে রাতের বেলায় সেই বাড়িতে এসে আলিবাবাকে মেরে ফেলতে পারে। তবে সৌভাগ্যবশত বিশ্বস্ত মর্জিনা চোরকে দেখে ফেলে এবং আশেপাশের প্রত্যেকটি বাড়িতে সেইরকম কাঁটা চিহ্ন এঁকে দেয়। সেই রাতে ৪০ চোর আলিবাবার গ্রামে চলে আসে এবং কোনোভাবেই প্রকৃত বাড়ি চিনতে না পেরে রাগের বশে দিনের বেলার সেই চোরকে হত্যা করে। পরেরদিন আরেক চোর বাবা মুস্তফার কাছে আসে এবং আলিবাবার ঘরের দরজা থেকে একটি পাথর খুলে নিয়ে আসে। মর্জিনা আবার সেটি দেখে ফেলে এবং প্রত্যেকটি বাড়ির দরজা থেকে সেইরকম পাথর খুলে নেয়। সেই রাতে এই চোরও সরদারের হাতে মারা পড়ে। শেষপর্যন্ত চোরদের সরদার নিজেই মুস্তফার কাছে যায় এবং আলিবাবার ঘরের বাইরের দিকটা খুব ভালোভাবে চিনে যায়।
চোরদের সর্দার এক তেলের ব্যবসায়ী সেজে আলিবাবার ঘরে আশ্রয় প্রার্থনা করে। সর্দার সাথে করে ৩৮টি তেলের পিপা নিয়ে আসে, যার একটিতে মাত্র তেল ছিল আর বাকি ৩৭টিতে ছিল দলের অন্যান্য চোর। পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিবাবা ঘুমিয়ে পড়লে তারা তাকে হত্যা করতো। কিন্তু এবারও মর্জিনা তাদের দেখে ফেলে এবং ৩৭টি পিপায় গরম তেল ঢেলে ৩৭জন চোরকে হত্যা করে। সর্দার বাইরে এসে তার দলকে জাগাতে যায় এবং দেখতে পায় তাদের প্রত্যেকে মারা গেছে। এতে সর্দার সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরেরদিন সকালে মর্জিনা আলিবাবাকে সব খুলে বলে এবং চোরেদের পিপাগুলো দেখায়। আলিবাবা সেই দেহগুলোকে কবর দেয় এবং কৃতজ্ঞতায় মর্জিনাকে মুক্ত করে দেয়। (মর্জিনা আলিবাবাদের কৃতদাসী ছিল।)
এরপর সবকিছুর প্রতিশোধ নিতে সর্দার নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত করে এবং আলিবাবার ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করে। আলিবাবার ছেলে ততদিনে কাশিমের ব্যবসায় পরিচালনা করছিল। আলিবাবাত ছেলে সর্দারকে তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু মর্জিনা সেই সর্দারকে চিনে ফেলে এবং তরবারি দিয়ে নাচ দেখানোর ছুতায় সর্দারের বুকে ছুড়ি মেরে তাকে হত্যা করে। আলিবাবা প্রথমে মর্জিনার ওপরে রাগান্বিত হয়। কিন্তু পরে বুঝতে পারে সর্দার তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে সেখানে এসেছিল। মর্জিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা হিসেবে সে তার পুত্রের সাথে মর্জিনার বিয়ে দেয়। এরপর শুধু আলিবাবাই সেই গুহার রহস্য জানতো।
শ্রেণিবিন্যাস
গল্পটি আর্ন–থম্পসন–উথার শ্রেণিবিন্যাসে এটিইউ ৯৫৪, “চল্লিশ চোর” হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ।[5] এই শ্রেণির গল্প “প্রায় বিশ্বব্যাপী” উপভোগ্য।[6]
অন্যান্য সংস্করণ
পশ্চিম আফ্রিকায় দ্য পাসওয়ার্ড: আউটউইটিং থিভস নামে একটি গল্প খুঁজে পাওয়া যায়।[7] পার্সি আমুরি ট্যালবট নাইজেরিয়ার এমফামোসিংয়ের ওজং আকপান থেকে দ্য ট্রেজার হাউজ ইন দ্য বুশ নামে একটি গল্প আবিষ্কার করেন।[8] এলসি ক্লজ পার্সনস কেপ ভার্দে থেকে গল্পের একটি আমেরিকান সংস্করণ পুনরুদ্ধার করেন।[9]
সঙ্গীত ও অডিও রেকর্ডিং
অডিও ধারণ/নাটকীয়করণের মধ্যে রয়েছে:
ডিক বেন্টলিরিভারসাইড রেকর্ডস (আরএলপি ১৪৫১)/গোল্ডেন ওয়ান্ডারল্যান্ডে (জিডব্লিউ ২৩১) আলিবাবার একটি গীতিনাটক ধারণ করেন।
ইউনাইটেড আর্টিস্টস রেকর্ডসে (ইউএসি ১১০১৮) শিশুদের জন্য টেল স্পিনার্স ফর চিল্ড্রেন-এ গল্পটির একটি নাটকীয় উপস্থাপনা ধারণ করা হয়।
অ্যান্থনি কোয়েলসিডমন রেকর্ডস (টিসি ১২৫১)/ফন্টানা রেকর্ডসে (এসএফএল ১৪১০৮) গল্পটির বর্ণনা প্রকাশ করেন।
মার্টিন গ্রিন রিভারসাইড রেকর্ডসে (আরএলপি ১৪০৫) অ্যারাবিয়ান নাইটস’ এন্টারটাইনমেন্ট-এ গল্পটি বর্ণনা করেন।
বিং ক্রাজবিসিমন অ্যান্ড সুস্টার রেকর্ডিংস (এ২৯৮:২০)/গালা রেকর্ডসের (জিএলপি ৩৫১) জন্য গল্পটি বর্ণনা করেন এবং গান গেয়ে ধারণ করেন।
বিং ক্রাজবি ১৯৫৭ সালের ২৫ এপ্রিল গানের সাথে গল্পের বিবরণ যুক্ত করে অডিও ধারণ করেন।[10] পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে আলিবাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস নামক অ্যালবামে সেটি প্রকাশ করেন।
১৯৫৩ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র চার চান্দ-এ তালাত মাহমুদ ও প্রেমলতা “ম্যাঁয় হুঁ আলিবাবা” নামে একটি গান গান। এতে আলিবাবার অভিযান সম্পর্কে বলা হয়।[11]
১৯৬৬ সালে আলিবাবা ঔর ৪০ চোর চলচ্চিত্রের জন্য আশা ভোঁসলে “আলিবাবা আলিবাবা” নামে একটি গান গান।
১৯৭৭ সালে লোককাহিনি অবলম্বনে আলিবাবা মর্জিনা চলচ্চিত্রে কে জে যেসুদাস “ম্যাঁয় আলিবাবা” নামে একটি গান গেয়েছিলেন।
১৯৮২ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র জিও ঔর জিনে দো-তে আলিবাবা ও মর্জিনার সাথে তার প্রেমের কথা নিয়ে সুরেশ ওয়াড়কর ও কবিতা কৃষ্ণমূর্তি “আলিবাবা আলিবাবা” গানটি গেয়েছিলেন।
ডার্ক লোটাসেরটেলস ফ্রম দ্য লোটাস পড (২০০১) অ্যালবামের দ্বিতীয় গানের শিরোনাম ছিল “আলি বাবা”।
জন হল্ট তার স্বপ্নে দেখা আলিবাবাকে নিয়ে “আলি বাবা” শিরোনামে একটি গান গেয়েছিলেন।
লাইসেন্সড টু ইল অ্যালবামের প্রথম গান “রাইমিন’ অ্যান্ড স্টাইলিন’”-এ বিস্টি বয়েজ “আলিবাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস” বলে চিৎকার করতে থাকে।
কমিকস ও বই
টম হল্টেরওপেন সিসেমি নামক মিথোপীয় উপন্যাসটি আলিবাবা ও চল্লিশ চোর-এর আলিবাবা চরিত্রটির ওপর ভিত্তি করে আবর্তিত হয়।
অ্যালভিনের একটি কমিকবইয়ে (ডেল কমিকস নং ১০, জানুয়ারি–মার্চ ১৯৬৫) চিপমাঙ্কস খামখেয়ালি বিজ্ঞানী ড. ডিলবাইয়ের টাইম মেশিনে করে প্রাচীন পারস্যে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে তারা আলিবাবাকে চল্লিশ চোরের মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও, জাপানি মাঙ্গা ধারাবাহিক মাগি-তে আলিবাবা, কাশিম ও মর্জিনা চরিত্রের পাশপাশি চল্লিশ চোরের ধারণাকে তুলে আনা হয়। ২০১২ সালে মাঙ্গাটির অবলম্বনে অ্যানিমে নির্মাণ করা হয়।
থিয়েটার - মঞ্চ
গল্পের কাহিনি বহুবছর ধরে জনপ্রিয় প্যান্টোমাইমের গল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আলিবাবার এরকম প্যান্টোমাইমের একটি উদাহরণ হলো মিউজিক্যালচু চিন চৌ (১৯১৬)।
১৮৮৬ সালে এডিনবরার রয়েল লাইসিয়াম থিয়েটারে৪০ থিভস নামক প্যান্টোমাইম পরিবেশিত হয়।
আলি-বাবা হলো ১৮৮৭ সালের একটি অপেরা কমিক, যার সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন চার্লস লেকক।
বাঁদী-বান্দার রূপকথা হলো আলিবাবা ও চল্লিশ চোর-এর কাহিনির উপর ভিত্তি করে নির্মিত ২০১৪ সালের বাংলাদেশি মঞ্চাভিনীত নৃত্যনাট্য। সৃষ্টি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও নৃত্যাঞ্চলের আয়োজনে শামীম আরা নিপা, শিবলি সাদিক প্রমুখ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নৃত্যশিল্পী এতে পরিবেশনা করেন।[13]
বাংলা ভাষার লাইভ অ্যাকশন চলচ্চিত্র
আলিবাবা হলো ১৯৩৭ সালের বাংলা ভাষার ভারতীয় ফ্যান্টাসি-কমেডি চলচ্চিত্র। আলিবাবার গল্পের ওপর ভিত্তি করে ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ কর্তৃক রচিত একটি নাটককে মধু বসু চলচ্চিত্রে অভিযোজিত করেন। বিভূতি গাঙ্গুলি এতে নামচরিত্র আলিবাবা, সাধনা বসু মর্জিনা ও মধু বসু স্বয়ং খলনায়ক আবদুল্লাহ চরিত্রে অভিনয় করেন।[14]
মর্জিনা আব্দুল্লা হলো ১৯৭৩ সালের দীনেন গুপ্তের বাংলা ভাষার ভারতীয় সাঙ্গীতিক চলচ্চিত্র অভিযোজনা।
অন্যান্য ভাষার লাইভ অ্যাকশন চলচ্চিত্র
আলি বাবা এ লে কাওন্ত ভুলো হলো ফার্দিনান্দ জেক্কা পরিচালিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্র। ১৯০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি সম্ভবত গল্পের প্রথম চলচ্চিত্র অভিযোজনা।
আলিবাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস হলো ১৯২৭ সালে ভগবতী প্রসাদ মিশ্র কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় নির্বাক চলচ্চিত্র অভিযোজনা।[14]
আলিবাবা ঔর চালিস চোর হলো ১৯৩২ সালে জে.জে. মদন কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ভাষার ভারতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।[14]
আলি বাবা হলো মেহবুব খান কর্তৃক পরিচালিত ১৯৪০ সালের হিন্দি ভাষার ভারতীয় ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র।[15] চলচ্চিত্রটি একই সময়ে আলিবাবা নামেই পাঞ্জাবি ভাষায় নির্মাণ করা হয়।[16] চলচ্চিত্রে সুরেন্দ্র আলিবাবা ও তার ছেলের দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া সর্দার আখতার, গুলাম মুহাম্মদ ও ওয়াহিদান বারি প্রমুখও এতে অভিনয় করেন।[17]
আলিবাবাভুম ৪০ থিরুদার্গালুম হলো ১৯৪১ সালের কেএস মানির তামিল ভাষার ভারতীয় হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র অভিযোজনা।
আলিবাবা ওয়া আল আরবিন হারামি হলো ১৯৪২ সালের একটি মিশরীয় চলচ্চিত্র অভিযোজনা। এতে আলিবাবার চরিত্রে অভিনয় করেন আল কাসসার এবং আলিবাবার সহকারী চরিত্রে অভিনয় করেন কমেডি অভিনেতা ইসমাইল ইয়াসিন।
আলি বাবা হলো ১৯৪৫ সালে নানুভাই ওয়াকিলের একটি হিন্দি ভাষার ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিযোজনা।[14]
আলি বাবা এ লে কাওন্ত ভুলো হলো ১৯৫৪ সালের একটি ফরাসি চলচ্চিত্র। ফেহনঁদেল ও সামিয়া জামাল এতে অভিনয় করেন।[18]
আলিবাবা ঔর ৪০ চোর হলো ১৯৫৪ সালের হোমি ওয়াদিয়া পরিচালিত ভারতীয় হিন্দি ভাষার একটি চলচ্চিত্র। এতে মহীপাল নামচরিত্রে এবং শাকিলা তার প্রেমিকা মর্জিনা চরিত্রে অভিনয় করেন।
সন অব আলি বাবা হলো ১৯৫৫ সালে মজনুর ভারতীয় হিন্দি ভাষার একটি ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র। এতে আলিবাবার পুত্রের অভিযানগুলোকে দেখানো হয়েছে।[14]
আলিবাবাভুম ৪০ থিরুদার্গালুম হলো ১৯৫৬ সালে টি আর সুন্দরমের ভারতীয় তামিল ভাষার একটি রোমাঞ্চকর ফ্যান্টাসি নাটকীয় চলচ্চিত্র। এম জি রামচন্দ্রন এতে নামচরিত্রে অভিনয় করেন।[19]
খুল যা সিম সিম হলো ১৯৫৬ সালে নানুভাই ওয়াকিলের একটি ভারতীয় হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র। মহীপাল ও শাকিলা এতে নামচরিত্রে অভিনয় করেন। এখানে চোরদের হারিয়ে গুপ্তধন পাওয়ার পর আলিবাবার গল্প দেখানো হয়েছে। কিন্তু এখানে আলিবাবা অনেক উদ্ধত হয়ে যায় এবং এই গুপ্তধনকে নিজের আরাম-আয়েশীর জন্য কাজে লাগাতে থাকে।[14]
সিম সিম মর্জিনা হলো নরেন দাভের ১৯৫৮ সালের ভারতীয় হিন্দি ভাষার ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র। হেলেন ও মহীপাল এতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে আলিবাবার অভিযান ও তার সাথে মর্জিনার প্রেমের কাহিনি বলা হয়েছে। এটি ১৯৫৬ সালের খুল যা সিম সিম চলচ্চিত্রের সিক্যুয়েল।[14][20]
ঐক থা আলিবাবা (“এক ছিল আলিবাবা”) হলো ১৯৬৩ সালের হরবনস সিংয়ের ভারতীয় হিন্দি ভাষার একটি অ্যাকশন চলচ্চিত্র।[14]
সিন্দবাদ আলিবাবা অ্যান্ড আলাদিন হলো ১৯৬৫ সালের প্রেমনারায়ণ অরোরার ভারতীয় হিন্দি ভাষার সাঙ্গীতিক ফ্যান্টাসি-অভিযানধর্মী চলচ্চিত্র। এতে আরব্য রজনী-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনটি চরিত্রকে তুলে আনা হয়।
আলি বাবা বুজাং লাপোক হলো ১৯৬০ সালের মালয়েশীয় একটি চলচ্চিত্র। এতে আলিবাবা ও চল্লিশ চোর-এর মূল গল্পই দেখানো হয়। তবে হাস্যরসের উদ্দীপনার জন্য আধুনিকায়নের সুযোগ নেওয়া হয়। যেমন, ডাকাতদের লুণ্ঠিত অর্থ লুণ্ঠনের জন্য কাশিম বাবা গাধার বদলে একটি ট্রাক নিয়ে যায়।
আলিবাবা ঔর ৪০ চোর হলো ১৯৬৬ সালের হোমি ওয়াদিয়ার ভারতীয় হিন্দি ভাষার একটি অভিযানধর্মী ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন সঞ্জীব কুমার।
আলি বাবা ৪০ দোঙ্গলু হলো ১৯৭০ সালের বি বিট্টলাচার্যের ভারতীয় তেলুগু ভাষার একটি চলচ্চিত্র। লোককাহিনি-নির্ভর এই চলচ্চিত্রে নামচরিত্রে এন টি রমা রাও ও মর্জিনা চরিত্রে জয়ললিতা অভিনয় করেন।[21][22]
আলি বাবা ভে কির্ক হারামিলের হলো ১৯৭১ সালের একটি তুর্কি চলচ্চিত্র। সাদরি আলিসিক এতে আলিবাবা চরিত্রে অভিনয় করেন।
আলিবাবায়ুম ৪১ কল্লনমারুম (“আলিবাবা ও ৪১ চোর”) হলো জে শশীকুমারের ১৯৭৫ সালের মালয়ালম ভাষার সাঙ্গীতিক চলচ্চিত্র। এতে প্রেম নাজির আলিবাবা চরিত্রে অভিনয় করেন।[23]
আলি বাবা হলো লোককাহিনির ওপর নির্ভর করে ১৯৭৬ সালে মুহাম্মদ হুসেইন কর্তৃক নির্মিত হিন্দি ভাষার ভারতীয় অ্যাকশন অভিযানধর্মী ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র।
আলিবাবা মর্জিনা হলো ১৯৭৭ সালে কেদার কাপুরের একটি ভারতীয় হিন্দি ভাষার অ্যাকশন-অভিযানধর্মী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রে প্রেম কৃষেণ আলিবাবা ও তামান্না মর্জিনা চরিত্রে অভিনয় করেন।
অ্যাডভেঞ্চার্স অব আলি-বাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস হলো ১৯৮০ সালে লোককাহিনির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি ভারতীয়-সোভিয়েত চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেন লতিফ ফৈজিয়েভ এবং উমেশ মেহরা। এতে অন্যান্য রুশ, ককেশীয় ও মধ্য এশীয় অভিনেতাদের পাশাপাশি ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী, জিনাত আমান প্রমুখ ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীও অভিনয় করেন। দীর্ঘ চলচ্চিত্র হিসেবে অভিযোজনার জন্য গল্পের কাহিনিতে ঈষৎ পরিবর্তন আনা হয়েছিল। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার ছিলেন শান্তিপ্রকাশ বক্সী ও বরিস সাকভ, সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন রাহুল দেব বর্মণ এবং নৃত্য পরিচালক হিসেবে ছিলেন পি এল রাজ।[24][25][26] চলচ্চিত্রটি ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয় দেশেই সাফল্য লাভ করে এবং এর মাধ্যমে এটি সবচেয়ে ব্যবসা-সফল ভারতীয়-সোভিয়েত চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য হয়।
চিন আ লি বা বা হলো ১৯৮৮ সালে চুন-লিয়াং চিন ও ইউলিসিস চুন অউইয়াং পরিচালিত তাইওয়ানীয় মান্দারিন ভাষার ফ্যান্টাসি-কমেডি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রে চি চিং আলিবাবা এবং এরিক সাং “আলি মামা” চরিত্রে অভিনয় করেন।[27]
আলিবাবা ঔর ৪০ চোর হলো ২০০৪ সালে সুনীল অগ্নিহোত্রীর ভারতীয় হিন্দি ভাষার অভিযানধর্মী নাটকীয় চলচ্চিত্র। লোককাহিনির আধুনিক ধাঁচের পুনর্নির্মাণ হিসেবে চলচ্চিত্রে আলিবাবা (আরবাজ খান) গ্রামে ত্রাসের সঞ্চার করা এক ডাকাতের মুখোমুখি হয়।[14]
আলি বাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস (১৯৪৪) চলচ্চিত্রে গল্পের কাহিনিকে পুনর্বিন্যস্ত করা হয়। এখানে দেখানো হয় আলিবাবার নেতৃত্বে চল্লিশ চোরের দল মঙ্গোল নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। ১৯৬৫ সালে দ্য সোর্ড অব আলি বাবা নামে চলচ্চিত্রটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। ফ্রাঙ্ক পুগলিয়া উভয় চলচ্চিত্রেই কাশিম চরিত্রে অভিনয় করেন।
সন অব আলি বাবা হলো কার্ট নিউম্যান পরিচালিত ১৯৫২ সালের একটি চলচ্চিত্র। মরিস আনক্রুম চলচ্চিত্রে আলিবাবার চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও চলচ্চিত্রের অন্যান্য কুশীলবদের মধ্যে রয়েছেন টনি কার্টিস ও পাইপার লরি প্রমুখ।
২০০৮ সালের ইঙ্কহার্ট চলচ্চিত্রে আলিবাবার গল্পকে উপস্থাপন করা হয়। মর্টিমার “মো” ফোলচার্টের গল্পে চল্লিশ চোরের দল থেকে ফরিদ নামের একজনের (অভিনয়ে রাফি গ্যাভরন) আবির্ভাব হয়, যার সাথে পরবর্তীতে গল্পকথকের সখ্য গড়ে ওঠে।
মার্কিন অ্যানিমেশন
কমিকালার কার্টুন আলিবাবা (১৯৩৬)
পপাই-এর কার্টুন চলচ্চিত্র পপাই দ্য সেইলর মিটস আলিবাবা’স ফর্টি থিভস-এ (১৯৩৭) পপাই আলিবাবার চল্লিশ চোর ও তাদের সর্দার আবু হাসানের মুখোমুখি হয়। পপাইয়ের খলচরিত্র ব্লুটোর কণ্ঠদাতা চলচ্চিত্রে আবু হাসানের কণ্ঠাভিনয় করেন।
মেরি মেলডিজবাগস বানি/ড্যাফি ডাক কার্টুন আলি বাবা বানি-তে (১৯৫৭) মূল গল্পের গুপ্তধনের গুহার ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিজনিটুনস স্টুডিওজেরডাকটেইলস দ্য মুভি: ট্রেজার অব দ্য লস্ট ল্যাম্প-এ গল্পের ধারণা ব্যবহার করা হয়। এতে আলিবাবার নাম পাল্টে কুলিবাবা ব্যবহার করা হয়। ডাকটেলসের এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয় চোর ভালো উদ্দেশ্যেই দুষ্ট জাদুকর মারলকের কাছ থেকে জাদুর প্রদীও চুরি করে আনে।
আলাদিন অ্যান্ড দ্য কিং অব দ্য থিংস (১৯৯৬) চলচ্চিত্রে ৪০ চোর মূল গল্পের প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে এখানের গল্পটি মূলগল্পের চেয়ে ভিন্নতর। বিশেষত কাশিমকে আলাদিনের বাবা এবং চল্লিশ চোরদের রাজা হিসেবে দেখানো হয়েছে।
অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র আলি বাবা অ্যান্ড দ্য ৪০ থিভস-দ্য লস্ট স্কিমিটার অব অ্যারাবিয়া-তে (২০০৫) আরবের সুলতানের ছেলে আলি বাবা তার চাচা কাশিমের দুষ্টবুদ্ধি সম্পর্কে জানতে পেরে তার বাবার জন্য চিন্তিত হয়। কাশিম আরবের সিংহাসন দখল করে এবং তার ভাইকে মারতে পরিকল্পনা করে। কাশিমের ভৃত্যদের চোখ এড়িয়ে আলি বাবা তার বন্ধুদের সাথে আরবে পৌঁছতে সফল হয়। আরবের মরুভূমিতে আলি ৪০ জন লোকের সাহচর্যে আসে, যারা আলির নেতৃত্ব মেনে কাশিমের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ইউরোপীয় ও এশীয় অ্যানিমেশন
হায়াও মিয়াজাকি ১৯৭১ সালে গল্পটি আলি বাবা ও চল্লিশ চোর(アリババと40匹の盗賊,আরিবাবা তো ইয়োনজুপ্পিকি নো তোজোকু) নামে অ্যানিমে হিসেবে রূপান্তর করেন।
১৯৭৫ সালের অ্যানিমে ধারাবাহিক অ্যারাবিয়ান নাইটস: সিনবাদ’স অ্যাডভেঞ্চার্স-এ আলিবাবা অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। এখানে আলিবাবাকে মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো এক কিশোর হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আলিবাবা পরবর্তীতে সিন্দাবাদের বন্ধু হয় এবং তার সাথে দঃসাহসী অভিযানে বের হয়।
মাঙ্গা ধারাবাহিক মাগি: দ্য ল্যাবিরিন্থ অব ম্যাজিক-এ (জুন ২০০৯ থেকে ধারাবাহিকীকৃত) আলিবাবা অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।[28] মাঙ্গার এক পর্যায়ে তাকে “ফগ ট্রুপ” নামের একদল চোরের নেতা হিসেবে দেখানো হয়। মর্জিনা আলিবাবার বিশ্বস্ত বন্ধু, যাকে আলিবাবা দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়। অন্যদিকে কাশিম আলিবাবার বস্তির এক বন্ধু, যে যখনই পারে তখনই আলিবাবার বিরুদ্ধে কাজ করতে চেষ্টা করে।
আলিবাবা হলো ২০০২ সালে ঊষা গণেশরাজ কর্তৃক পরিচালিত ও পেন্টামিডিয়া গ্রাফিকস কর্তৃক প্রযোজিত একটি ভারতীয় থ্রিডি অ্যানিমেটেড অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্র।[29]
আলিবাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস হলো ২০১৮ সালে ভি মুরুগানের ভারতীয় ৩ডি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র অভিযোজনা।[30]
টেলিভিশন
লাইভ অ্যাকশন
আরব্য রজনী-ভিত্তিক ভারতীয় টেলিভিশন ধারাবাহিক আলিফ লায়লা-এ ১৪ পর্বজুড়ে আলিবাবা ও চল্লিশ চোরের গল্প দেখানো হয়।[31]
প্রিন্সেস ডলি ঔর উসকা ম্যাজিক ব্যাগ (২০০৪–২০০৬) হলো স্টার প্লাসে প্রচারিত একটি ভারতীয় কিশোর ফ্যান্টাসি অ্যাডভেঞ্চার টেলিভিশন ধারাবাহিক। এতে সিন্দাবাদ ও হাতিমের সাথে আলিবাবাকেও অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা যায়। বিনোদ সিং এতে আলিবাবার চরিত্রে অভিনয় করেন।
আলি বাবা হলো ২০০৭ সালের ফরাসি টেলিফিল্ম, যাতে জেরার জুনো অভিনয় করেছিলেন।
২০০০ সালের মার্কিন/ব্রিটিশ টেলিভিশন মিনি সিরিজ অ্যারাবিয়ান নাইটস-এ দুইটি প্রধান পরিবর্তন সাধন করে আলিবাবার গল্পকে পুনরায় বলা হয়। প্রথমত: মর্জিনা যখন তেলের পিপায় চোরদের লক্ষ্য করে, সাথে সাথেই আলিবাবাকে জানিয়ে দেয় এবং এক বন্ধুর সাথে মিলে পিপাগুলোকে খাড়া সড়ক ধরে গড়িয়ে দেয়, যাতে সেগুলো গড়াতে গড়াতে ভেঙে চোরেরা বেরিয়ে আসে। দ্বিতীয়ত, নগরের প্রহরীরা আগে থেকেই সতর্ক ছিল, যার ফলে অপ্রস্তুত চোরেরা পিপা ভেঙে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মর্জিনা চোরদের সর্দারকে পরাজিত করলে অবিবাহিত ও নিঃসন্তান আলিবাবা স্বয়ং তাকে বিয়ে করে।
২০১৯ সালের বিবিসি/এফএক্সের অভিযোজিত অ্যা ক্রিসমাস ক্যারল-এ কায়ভান নোভাক আলিবাবা চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি মূলত মূল উপন্যাসে চরিত্রটির উল্লেখের সম্প্রসারিত উপস্থাপনা।[32]
২০২২ সালে সনি সাবে প্রচারিত ভারতীয় ফ্যান্টাসি টেলিভিশন ধারাবাহিক আলি বাবা: দাস্তান-এ-কাবুল-এ মূল গল্প আংশিক ব্যবহৃত হয়েছে। শিজান মোহাম্মদ খান ধারাবাহিকে আলিবাবার চরিত্রে অভিনয় করেন।[33]
অ্যানিমেশন
১৯৯৯ সালে হ্যাপিলি এয়ার আফটার: ফেইরি টেইলস ফর এভরি চিলড্রেন-এ আলিবাবা-এর একটি “জেন্ডার বেন্ডার” সংস্করণ সম্প্রচারিত হয়। জুর্নি স্মলেট এতে আলিবাবা, টমি ডেভিডসন কাশিম, মার্লা গিবস দাদি, উইল ফেরেল মামেত দ্য মুচার, জর্জ ওয়ালেস বাবা মুস্তফা এবং ব্রুনো কারবি মহান ব্যক্তির চরিত্রে কণ্ঠদান করেন।
দ্য সিম্পসনস-এর “মো গোজ ফ্রম র্যাগস টু রিচেসে” (২৯ জানুয়ারি ২০১২) পর্বে লিসা সিম্পসনশেহেরজাদ হিসেবে বাদশাহ শাহরিয়ার নেলসন মুন্টজকে গল্পটি শোনায়।
ডাইনোসর কিং ধারাবাহিকের দ্বিতীয় মৌসুমের ১৮শ থেকে ২১শ পর্ব পর্যন্ত আলিবাবার গল্পের বিভিন্ন বিষয়াদি উপস্থাপিত হয়। বিশেষ করে ৩৯ চোর (অন্য এক চোর অসুস্থ ছিল) এবং “ওপেন সিসেমি” শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে।
অ্যাডভেঞ্চার্স অব আলি বাবা (২০১৮–২০১৯) হলো শিল্পা শেঠী প্রযোজিত একটি ভারতীয় অ্যানিমেটেড টেলিভিশন ধারাবাহিক। কালার্স রিশতে চ্যানেলে অ্যানিমেশনটি সম্প্রচারিত হয়। লোককাহিনির আধুনিক রূপান্তর হিসেবে চিত্রিত অ্যানিমেশনে দুই ভাই আলি ও বাবা তাদের অলৌকিক শক্তি দিয়ে দুষ্টদের প্রতিরোধ করে এবং গ্রামকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করে।[34]
ভিডিও গেম
আলি বাবা (১৯৮১) হলো কোয়ালিটি সফটওয়্যারের একটি ভিডিও গেম।[35]
আলি বাবা অ্যান্ড ৪০ থিভস (১৯৮২) হলো সেগা কর্তৃক নির্মিত একটি ভিডিও গেম।
ব্লেড অব আলিবাবা হলো ডিয়াব্লো ২ (২০০০) ভিডিও গেমের একটি অনন্য আইটেম।
সনিক অ্যান্ড দ্য সিক্রেট রিংস (২০০৭) ভিডিও গেমে টেইলস চরিত্রটিকে আলিবাবা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
স্লাই কুপার: থিভস ইন টাইম (২০১৩) ভিডিও গেমে “ফর্টি থিভস” নামে একদল চোরের আবির্ভাব ঘটে।
পার্সোনা ৫-এ ফুতাবা সাকুরাহ্যাকার হিসেবে “আলিবাবা” ছদ্মনাম ব্যবহার করে।
পপট্রপিকা-এ আলিবাবা ও চল্লিশ চোরের কাহিনি একটি দ্বীপ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
গ্রিমস নোটস মোবাইল গেমসে আলিবাবা এবং মর্জিনা গেমের চরিত্র হিসেবে এবং চল্লিশ চোর এবং তাদের সর্দার গেমের বিরুদ্ধচরিত্র হিসেবে থাকে।
টিম ফর্ট্রেস ২ (২০০৭) ভিডিও গেমে “আলিবাবা উই বুটিস” হলো ডেমোমান-এর জন্য সম্প্রদায় কর্তৃক নির্মিত একটি অস্ত্র।
সামরিক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনী একাডেমিতে ক্যাডেট স্কোয়াড্রন ৪০-কে শুরুতে “আলিবাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস” নামে ডাকা হতো। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে একে “পি-৪০ ওয়ারহক” নামে অভিহিত করা হয়।[36]
ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন ও ইরাকি সেনাবাহিনী লুণ্ঠন ও চুরির অভিযোগে সন্দেহভাজনদের “আলিবাবা” নামে গালি দিত।[37] অন্যদিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ইরাকি বেসামরিক লোকদের বোঝাতে নিয়মিত শব্দটি ব্যবহার করত।[38]ইরাকের দখলের পর বিদ্রোহীদের বোঝাতে প্রায়ই শব্দটি ব্যবহৃত হতো।[39]
ইরাকিরা শব্দটি আয়ত্ত করে এবং লুণ্ঠনের জন্য সন্দেহভাজন বিদেশি সেনাদের বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করতে থাকে।[40]
অন্যান্য
চীনের আলিবাবা গ্রুপ বিশ্বব্যাপী এর পরিচিতির জন্য নামটি ব্যবহার করে।[41]
কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের শূন্য-জ্ঞানের প্রমাণে প্রায়শই “আলিবাবার গুহা” নামে একটি শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত আনা হয়।[42]
চল্লিশ চোরের একটি চিত্রায়ণ
কাশিমকে আক্রমণরত চল্লিশ চোর
একজন চোর আলিবাবার ঘরটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে
একজন চোর আলিবাবার ঘরের দরজায় কাটা চিহ্ন দিয়ে রাখে
মর্জিনা মুচি বাবা মুস্তফাকে টাকা দেয়
চল্লিশ চোরের লুকিয়ে থাকা পিপায় মর্জিনা গরম তেল ঢেলে দেয়
আলিবাবা জাদুর গুহা থেকে আনা ধনসম্পদ মর্জিনাকে দেখাচ্ছে
বার্টন, আর এফ। সাপ্লিমেন্টাল নাইটস টু দ্য বুক অব দ্য থাউজ্যান্ড নাইটস অ্যান্ড অ্যা নাইট উইথ নোটস অ্যান্থ্রোপলজিক্যাল অ্যান্ড এক্সপ্লেনেটরি (ইংরেজি ভাষায়)। III, fasc. 2। পৃষ্ঠা৩৬৯। (n.)
মাহদি, মুহসিন (১৯৯৪)। "Galland's Successors"। দ্য থাউজ্যান্ড অ্যান্ড ওয়ান নাইটস: ফ্রম দ্য আর্লিয়েস্ট নৌন সোর্সেস; পার্ট ৩, “ইন্ট্রোডাকশন অ্যান্ড ইন্ডেক্সেস”।
উথার, হান্স-ইয়োর্গ (২০০৪)। The Types of International Folktales: Animal tales, tales of magic, religious tales, and realistic tales, with an introduction। এফএফ কমিউনিকেশনস। পৃষ্ঠা৫৯২–৫৯৪।
পলমি, ডেনিস (১৯৭২)। [www.persee.fr/doc/cea_00 "Morphologie du conte africain"]|ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। ক্যাইয়ে দেচুদে আফ্রিকেন (ফরাসি ভাষায়)। ১২ (৪৫): ১৫৩।
ম্যাকার্থি, উইলিয়াম (২০০৭)। সিন্ডেরেলা ইন আমেরিকা: অ্যা বুক অব ফোক অ্যান্ড ফেইরি টেইলস (ইংরেজি ভাষায়)। ইউনিভার্সিটি প্রেস অব মিসিসিপি। পৃষ্ঠা১৩৭–১৪১। আইএসবিএন978-1-57806-959-0।
বার্টন, ম্যাট (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। "Part 2: The Golden Age (1985-1993)"। দ্য হিস্ট্রি অব কম্পিউটার রোল-প্লেয়িং গেম (ইংরেজি ভাষায়)। গেমাসুত্রা। ৩০ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০০৯।