Loading AI tools
দম্পতি ভিন্ন অন্য ব্যক্তি ( সাধারণত অভিভাবক) দ্বারা আয়োজিত বিবাহ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
এই নিবন্ধটি অভিভাবক দ্বারা বিয়ে সম্পর্কিত, প্রেম করে বিয়ে করা সম্পর্কিত নিবন্ধের জন্য দেখুন ভালোবেসে বিয়ে
আনুষ্ঠানিক বিবাহ একটি সামাজিক বন্ধন যেখানে বিবাহ উপযোগী বর ও বধূ নির্ধারিত/বাছাই হয়ে থাকে তাদের নিজ পরিবার-পরিজন কর্তৃক।
১৮শ শতক পর্যন্ত সারা বিশ্বে আনুষ্ঠানিক বিবাহ খুব সাধারণ বিষয় ছিল। [1] সাধারণত বিবাহ বাবা-মা, দাদা-দাদী বা অন্যান্য আত্মীয় স্বজন দ্বারা আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে কিছু ব্যতিক্রমও উঠে আসে, ইতালির রেনেসাঁ এর যুগে পূর্বরাগ (বিবাহ পূর্ববর্তী সাক্ষাত) ও ধর্মানুসারে বাগদান (বিবাহ নিশ্চয়তার মিলিত সম্মতিসূচক অনুষ্ঠান )[2] এবং ভারতের বৈদিক যুগের গন্ধর্ব বিবাহ।[3]
চীনে, ব্যবস্থা বিবাহকে (বাওবান হানইন, 包办婚姻) - মাঝেমাঝে অন্ধ বিবাহ (মাংহান, 盲婚) বলা হয়ে থাকে। যেখানে বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত নিয়ম ছিল, বিবাহ মাতা-পিতা এবং দুই পরিবারের মধ্যের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের ফলাফল, ছেলে ও মেয়েকে শুধু নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বিবাহ করতে বলা হতো কোনপ্রকার মতামত দেবার অধিকার না দিয়ে। এম্নকি তারা বিবাহের আগপর্যন্ত দেখার অনুমতি ছিলনা।[4][5][6]
বিংশ শতাব্দীর পূর্বে রাশিয়ায় আনুষ্ঠানিক বিবাহ ছিল সাধারণ নিয়ম, এর প্রায় সবই ছিল সমজাতিগত বিবাহ (ইংরেজিতে endogamous)। [7]
বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ পর্যন্ত আমেরিকার অভিবাসীদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিবাহ ছিল নৈমিত্তিক বিষয়।[8] আমেরিকায় জাপানি অভিবাসীদের মধ্যে ছবিতে কনে পছন্দ ও বিবাহ (পিকচার-ব্রাইড ম্যারেজ) নামে এক ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। নামকরণের কারণ বিবাহের পূর্বে বর-বধূ শুধুমাত্র ছবির মাধ্যমে একে অপরকে জানতে পারে। অভিবাসীদের মধ্যে এই ধরনের বিবাহ সাধারণত আয়োজন করা হয়ে থাকে বাবা-মা অথবা আত্মীয় স্বজনদ্বারা নিজ দেশের মধ্যথেকে। যেহেতু অভিবাসীরা নতুন বসতি স্থাপন করেছে এবং নতুন সংস্কৃতিতে মিশে গেছে, আনুষ্ঠানিক বিবাহ ব্যবস্থা প্রথমে আপাত-আনুষ্ঠানিক বিবাহ ব্যবস্থার সাথে প্রতিস্থাপিত হয়েছে যেখানে বাবা-মা অথবা বন্ধুরা যুগলকে বিবাহের আগেই পরিচিত করিয়ে দেয়। সময়ের সাথে অভিবাসীদের পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে স্বকীয়তা, ডেটিং, পূর্বরাগের প্রতি পছন্দ ব্যক্তি পছন্দের বিবাহের দিকে এগিয়ে দিয়েছে। [8][9] পৃথিবীর অন্যান্য অংশেও অনুরূপ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দাবি করা হয়। [10][11]
ক্রমবর্ধমান ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে সামাজিক গতিশীলতায় আনুষ্ঠানিক বিবাহ ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে; তথাপি, এখনও আনুষ্ঠানিক বিবাহ ব্যবস্থা দেখা যায় ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায়, রাজপরিবার, অভিজাত বংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৌলবাদী মর্মন গ্রুপের স্থির বিবাহ (en: placement marriage) এর অন্যতম উদাহরণ। বিশ্বের অধিকাংশ স্থানে, আনুষ্ঠানিক বিবাহ ব্যবস্থা বিভিন্ন ধাপে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান ভাবে আপাত-আনুষ্ঠানিক বিবাহ ব্যবস্থা ব্যক্তি পছন্দের বিবাহ ব্যবস্থার সাথে একইসাথে চলছে। [1]
বিবাহকে পুঁথিগত শ্রেনীবিচার অনুসারে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ[1][12]
গ্যারি লি এবং লরেন স্টোন দেখিয়েছেন যে, বিবাহ সামাজিক কাঠামোর একটি অংশ হবার কারণে বর্তমানের অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহসমূহ ক্রমধাপ অনুসারে আদর্শ আনুষ্ঠানিক অথবা ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিবাহের চূড়ান্ত উধাহারন।[13] অনুরুপভাবে, ব্রড ও গ্রিন বিশ্বব্যাপী ১৪২টি সংস্কৃতির উপর গবেষণা করে প্রতিবেদন তৈরি করে ১৩০টি সংস্কৃতিই আনুষ্ঠানিক বিবাহকে প্রত্যাখ্যান করেছে।[14]
বিশেষভাবে ১২ বছরের নিচের মেয়েদের বাল্যবিবাহ বলপূর্বক আনুষ্ঠানিক বিবাহের চূড়ান্ত নমুনা হিসাবে পরিলক্ষিত হয়। উদাহারন হিসাবে ভানি যেটা বর্তমানে পাকিস্তানের কিছু উপজাতি/কিছু গ্রামীণ পরিবেশে দেখা যায়, এবং ১৯৭০ সালের পূর্বের তাইওয়ানের সিম-পুয়া বিবাহ (চীনের টঞ্জিয়ানক্সি)।
এখানে বেশ কয়েকধরনের আনুষ্ঠানিক বিবাহ দেখা যায়। তাদের কিছু[15][16][17][18]
সাধারণত সবধরনের আনুষ্ঠানিক বিবাহেই বড় এবং কনের সম্মতি দেবার অধিকার থাকে; যদি বড় অথবা কনে বা উভয় কারও মতপ্রকাশের অধিকার না থাকে তাকে বলপূর্বক বিবাহ বলে।
অ-স্বগোত্রিয় আনুষ্ঠানিক বিবাহে বড় ও কনে তাদের পিতামহ বা মাতামহ অথবা নিকট পূর্বপুরুষ অংশ হিসাবে গ্রহণ করে না। এই ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবাহ সচরাচর দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়ার হিন্দু এবং বৌদ্ধদের মাঝে দেখা যায় এবং ল্যাতিন অ্যামেরিকা ও সাব সাহারান আফ্রিকায়।[22]
সগোত্র বিবাহ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক অংশে আইনের পরিপন্থী[23] যুক্তরাজ্যে, চাচা-ভাইজি বিবাহকে অজাচার হিসাবে ধরা হয় এবং আইন পরিপন্থী, কিন্তু কাজিন বিবাহ আইনগতভাবে অজাচার হিসাবে দেখা হয় না এবং আইনসিদ্ধ, যদিও সেখানে স্বাস্থ্যগত কারণে ১ম কাজিন বিবাহ নিষিদ্ধ করার দাবী রয়েছে। সমগোত্রীয় আনুষ্ঠানিক বিবাহ ইসলামিক দেশ সমূহে স্বাভাবিক ও গ্রহণীয় সংস্কৃতি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, সামাজিক কৃষ্টি অনুসারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং বৌদ্ধ সমাজের সাথে নিষিদ্ধ ও পরিত্যাজ্য হিসাবে গৃহীত। [24] বিংশ শতাব্দীর পূর্বে জিউস সম্প্রদায়ের মাঝে সগোত্রীয় আনুষ্ঠানিক বিবাহ স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি শতকরা ১০ ভাগের নিচে নামিয়ে এনেছে।[25][26]
আধুনিক সময় পর্যন্ত সমগ্র মানব ইতিহাসে, আনুষ্ঠানিক বিবাহের চর্চা উৎসাহিত/বৃদ্ধি পায় কয়েকটি বিষয় ভিত্তিক অণুঘটকের কারণে, যেমন বাল্যবিবাহের চর্চা,[27] প্রয়াত বিয়ে, আচারানুষ্ঠান,[28][29] সংস্কৃতি, ধর্ম, দারিদ্র্য ও সীমিত বিকল্প, প্রতিবন্ধী,[30] সম্পদ ও উত্তরাধিকার বিষয়, রাজনীতি, সামাজিক ও জাতিগত সংঘাত.[31][32][33]
বাল্যবিবাহ, মূলত ১২ বছরের নিচের বয়সের বিবাহ যাদের বিবাহ সম্বদ্ধে মতামত দেবার মতো পরিণত বা সুযোগ তৈরি হয়না। বাল্যবিবাহ পরোক্ষভাবে আনুষ্ঠানিক বিবাহের মধ্যেই পড়ে।[34] সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং ল্যাতিন অ্যামেরিকায়ের গ্রামাঞ্চলে দরিদ্রতা এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবার কারণে শিশুদের সামনে বাল্যবিবাহ বা শীঘ্র আনুষ্ঠানিক বিবাহ গ্রহণ করা ব্যতীত অপর সুযোগ থাকেনা,[27] বাল্যবিবাহ প্রাথমিকভাবে দরিদ্র এলাকা সমূহে দেখা যায়। অভিভাবকেরা শিশুদের বিবাহ আয়োজন করে সন্তানের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী, নিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং মেয়ে সন্তানের অর্থনৈতিক বোঝা থেকে মুক্তি কারণ তারা জানে খাবার, কাপড় এবং (ক্ষেত্রবিশেষে) মেয়ের শিক্ষা কতটা ব্যয়বহুল। অবস্থা সম্পন্ন যেকোন পরিবারের সাথে মেয়ে সন্তানের বিবাহ আয়োজন করতে পারলে সামজিক একটা বন্ধনের সাথে সাথে সামাজিক মর্যাদার উন্নতি ঘটে।[35]
ওয়ার্নার দেখিয়েছেন, যে জাতির মাঝে উচ্চ বাল্য বিবাহ প্রচলিত রয়েছে সেখানে প্রায় সব ক্ষেত্রেই কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা অথবা অভিভাবকেরাই আয়োজন করে থাকে।[36] উচ্চ বাল্যবিবাহের দেশসমুহঃ ভারত, নাইজার, চাদ, মালি, বাংলাদেশ, গিনি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, আফগানিস্তান, ইয়েমেন এবং পাকিস্তান। আমেরিকার কিছু অংশেও আনুষ্ঠানিক বাল্যবিবাহ দেখা যায়।[37][38]
দরিদ্র জনপদে, প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের খাবারের চাহিদা তৈরি করে বাড়তি বোঝা। প্রতিটি কন্যা সন্তানের বিবাহ আয়োজন, জ্ঞানের কথা,[39] একটি বোঝা মুক্ত হওয়া। দারিদ্রতা এভাবেই আনুষ্ঠানিক বিবাহের চালকের আসনে থাকে।
এই তত্ত্বের,[40][41] সমর্থনে এশিয়ার দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির মাঝেও আনুষ্ঠানিক বিবাহের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সুবিধাভোগী অভিভাবকদের মাঝে একমাত্র উপার্জনক্ষম কন্যা দ্বারা উপার্জিত অর্থে অংশীদার হওয়া বিশেষভাবে উল্লেক্ষ্য।[42] ফলাফল সরূপ তাদের কন্যা সন্তানের অতিদ্রুত বিবাহে অসম্মতি জাগেনা।
বিলম্ভ বিবাহ বলতে মূলত বয়স ৩০ বছর অতিক্রান্ত যখন স্বেচ্ছায় বিবাহের উপযোগী অবিবাহিত পুরুষ অথবা নারী সঙ্গির সামান্য ঘাটতি পড়ে। আনুষ্ঠানিক বিবাহ প্রচলন এক্ষেত্রে একটি ফলপ্রসূ সমাধান।[43]
উধাহারন সরূপ দেখা যায়, অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যে জাপানের শতকরা ৪০ ভাগ নারী ২৯ বছর বয়সের আগে বিবাহ করেনা। বিলম্ভিত বিবাহ সহযোগিতার জন্যে, আনুষ্ঠনিক বিবাহের ঐতিহ্যগত প্রথাকে বলে মিয়াই (見合い) অর্থ নতুনভাবে জেগেউঠা। এখানে অংশীদার থাকে সুযোগ্য বড় এবং কনে, তাদের পরিবার এবং ঘটক (নাকুডো, 仲人); যুগল মনোনীত হয় নিজেদের বা পরিবারের অংশগ্রহণের প্রক্রিয়ার দ্বারা (ইয়েগারা, 家柄); এবং যুগলেরা একত্রীত হবার সিদ্ধান্ত নেবার আগে সাধারণত জনসম্মুখে বা একান্তে তিনবার মিলিত হয়।[44][45][46]
সংখ্যালঘু অভিবাসী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গী বাছাইয়ের সুযোগ খুব সীমিত, বিশেষভাবে যখন সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাদের থেকে থেকে পৃথকীকৃত বা এড়িয়ে চলে। এটা হোমগামী (homogamy) এবং আদিবাসী গোত্রের মাঝে আনুষ্ঠানিক বিবাহে উৎসাহ দেয়। এই প্রগতিশীলতার উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ্য, ১৯১০ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কানাডার শিখ বিবাহ,[47] ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকানদের মাঝের স্বসঙ্গমসম্ভাবী আপাত-বিবাহ,[48] হাসিডিকভাবে ইহুদীদের মাঝের আনুষ্ঠানিক বিবাহ,[49][50] এবং ১৯৬০ সালের পূর্বের জাপানি আমেরিকান অভিবাসীদের মাঝের বিবাহ, তারা পরিবারের পছন্দ করা জীবনসঙ্গীকে বিবাহ করার জন্যে জাপানে ফিরে আসত এবং পুনরায় ফিরে যেত। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যেত, জাপানী মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে "কনেবেশে" প্রবেশ করত, সেখানে অবস্থানরত অ্যামেরিকা নিবাসী জাপানিকে পূর্বপ্রস্তুতি মোতাবেক বিবাহ করার জন্যে যাকে মেয়েটি পূর্বে কখনও দেখিনি।[51]
কিছুক্ষেত্রে শারীরিক অক্ষমতা এ সম্ভাবনা বৃদ্ধির আয়োজন করে, এমনকি বিশ্বের কিছু স্থানে বলপূর্বক বিবাহ আয়োজিত হয়।[30][52] ওক্যাঞ্জো বলেছেন যে নাইজেরিয়ায় পাত্রীর যেকোন শারীরিক অক্ষমতা অথবা পাত্রের ক্ষেত্রেও অক্ষমতার জন্যে বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে।[53]
প্রচুর সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যগতভাবে অন্তর্বিবাহ পচ্ছন্দ করে। এর ব্যবহারিক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিন্দু সংস্কৃতি যেখানে বড় ও কনে উভয়েই একই সামাজিক শ্রেণীভুক্ত, কিন্তু অনাত্মীয় অর্থ বর-কনে রক্তের সম্পর্কের নয় এবং তাদের বর্ধিত পরিবারের অংশীদার নয়। অন্তর্বিবাহ অনুসরণকারী অপর উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রের আমিশ গোত্রের আয়োজিত বিবাহ,[54][55] কানাডার, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং পশ্চিমা ইউরোপের গোঁড়া ইহুদী,[56][57] আরব খ্রিস্টান[58] অনুরুপভাবে মিসরীয় কপটিক খ্রিস্টান।[59] আদিমসমাজ থেকে বিবাহ ঐতিহ্যগত কেন্দ্রীয় কাজ হিসাবে রয়েছে। সন্তানের সঠিক পারিবারিক পরিচয়, অন্তরভুক্তি এবং লালনের জন্যে স্বাধীনভাবে বিবাহে নিষেধাজ্ঞা ছিল, এবং নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বা গোত্রের বাহিরে উভয় বিবাহই এড়িয়ে যাওয়া হতো[60] কখনও বিবাহ নির্ধারিত হয়ে যায় শিশু অবস্থায়; অনেক মেয়ের ক্ষেত্রে বিবাহ নির্ধারিত হয়ে যায় যখনও সে জন্মগ্রহণ করে নাই। তরুন নারী ও পুরুষের মাঝে গড়ে উঠা প্রতিশ্রুতি, তৈরি করে একটা আজীবন দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা।[60] পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার ইসলামিক জাতির মাঝে আনুষ্ঠানিক বিবাহ ঐতিয্য হিসাবে প্রচলিত, কিন্তু একইসাথে কিছু ব্যতিক্রমও পরিলক্ষিত হয় সর্বমোট বিবাহের শতকরা ১৭ ভাগ থেকে অধিকাংশ সগোত্রীয় বিবাহ হয়ে থাকে।[61][62][63][64]
অন্তর্বিবাহ একইসাথে অনাত্মীয় বিবাহ সঙ্গী বাছাইয়ের সুযোগ কমিয়ে দেয়, বিশেষভাবে যখন সম-ধর্মের, বর্ণের অথবা শ্রেণীর জনসংখ্যা স্বল্প থাকে। সীমিত বিবাহ উপযোগী সংখ্যা উৎকৃষ্ট সঙ্গি খুজে বের করাকে কঠিন করে তুলে এবং উৎসাহিত করে আনুষ্ঠানিক বিবাহ অথবা আপাত-বিবাহ।.[65][66]
সম-বংশের এবং অন্তর্গোত্রিয় বিবাহ নাটকিয়ভাবে বিবাহ উপযোগী সমকক্ষতা হ্রাস করেছে; এটা কিছু ধর্মীয়ভাবে উৎসাহিত করত আনুষ্ঠানিক বিবাহে তাদের প্রথাগত ও জন্ম অনুসারে। শুধু ইসলামিক চিন্তাধারায় ও বিশ্বাসে ১.৩ বিলিয়নের উপর মানুষ অন্তর্গোত্রিয় স্বধর্মে আনুষ্ঠানিক বিবাহ চর্চা করে চলেছে।[67][68] আত্মীয়ের মধ্যে বিবাহের আয়োজন বর্তমানেও পরিলক্ষিত হচ্ছে, যদিও এর ব্যাপ্তি খুব সীমিত, কিছু আফ্রিকা, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পলিনেসিয়া এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকা এর আদিবাসীর মাঝে দেখা যায়।[69] পাকিস্তান এবং সৌদিআরবে সমগ্র বিবাহের অধিকাংশই (৬৫%+) অন্তর্গোত্রিয় এবং আত্মীয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিবাহ। শতকরা ৪০% ভাগের বেশি অন্তর্গোত্রিয় এবং আত্মীয়ের মধ্যে বিবাহ আয়োজন হয় ইরাক, ইরান, জর্ডান, সিরিয়া, ইয়েমেন, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সুদান, লিবিয়া ও মরিতানিয়াতে; এবং প্রতি ৫টির ১টি এইরুপ বিবাহ হয় তুরস্ক, মিশর, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, ভারত ও মালয়েশিয়ার উচ্চ মুসলিম বসতির অঞ্চলে অন্তর্গোত্রিয় এবং আত্মীয়ের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।[67][70]
কিছু প্রথা/রীতি আনুষ্ঠানিক বিবাহের সূত্রপাত করে। যেমন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের গ্রামীণ ও আদিবাসী অংশে, বিরোধ, অনাদায়ী দেনা (পরিশোধে অক্ষম) এবং হত্যার ক্ষেত্রে মীমাংসার জন্যে কিছু গ্রামীণ বয়োজ্যেষ্ঠদের পরিষদ যা জিরগা নামে পরিচিত, এ ধরনের রায় দিত।[71] কখনো এককভাবে পুরুষের দোষ থাকলেও দোষী পরিবারকে অপর পরিবারের ৫- ১২ বছরের কুমারী মেয়েকে বাধ্যতামূলক বিবাহ করতে হতো। এখানে মেয়ের কোন মতামত নেবার রীতি নাই, এমনকি তার পরিবারও অধিকার প্রাপ্ত হয়না। এই ধরনের আনুষ্ঠানিক বাল্য বিবাহকে পাকিস্তানের ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় ভানি, সাওারা এবং সাক নামে পরিচিত[72][73][74]
কিছু ইসলামিক জাতির মাঝে আরেকটি চর্চা রয়েছে,[75][76] বিশেষভাবে পাকিস্তানে, ওয়াত্তা সাত্তা, যেখানে একটি পরিবারের ভাই-বোন অপর একটি পরিবারের ভাই-বোনের সাথে জীবন সঙ্গি হিসাবে অদলবদল হয়। অন্য ভাষায় বলা যায়, স্ত্রীরা উভয় পরিবারে একে অন্যের পুত্রবধূ হয়। এই চর্চা আনুষ্ঠানিক বিবাহের অনুসারী। পাকিস্তানের পশ্চিমা গ্রামাঞ্চলে প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ বিবাহ ওয়াত্তা সাত্তা রীতি অনুসারে হয়ে থাকে, এবং ৭৫ ভাগ মুসলিম বিবাহ কাজিন বিবাহ অথবা অন্যান্য আত্মীয়ের সাথে হয়ে থাকে।[77][78][79] কিছু অভিবাসী পরিবার গতানুগতিক আনুষ্ঠানিক বিবাহের ব্যবস্থার অনুশীলন পছন্দ করে।[80]
সুদূর মানব ইতিহাস বলে সামন্ত প্রভুদের শহর, রাজ্য এবং রাজত্ব অতিক্রম করে বিবাহ আয়োজন, রাজনৈতিক মিত্রতা, ব্যবসা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার অর্থ প্রকাশ করে।[46][82][83] যখন কোন রাজা তার রাজপুত্রের সাথে প্রতিবেশী রাজ্যের রাজকন্যার সাথে বিবাহ আয়োজন করে, এটা ইঙ্গিত বহন করে যে উভয় রাজ্য সাম্য মিত্রতা বন্ধনে আবদ্ধ এবং তারা পূর্ববর্তীদের বর্তমান শ্রেষ্টত্তের বার্তা প্রদান করে। উদাহরণ হিসাবে, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির রানী মেরি থ্যরেসা এর চতুর্থ কন্যা মেরি অ্যান্টয়নেট বিবাহ করেন ফ্রান্সের ডাউফিন (ফ্রান্সের সম্রাটের জ্যেষ্ঠ পুত্রের উপাধি), যে ছিল ভবিষ্যৎ রাজা ষোড়শ লুই।[81]
মানব ইতিহাসের প্রায় সবখানেই, বিবাহ একটা সামাজিক বন্ধন যা সন্তান জন্ম দেয় এবং তৈরি করে সম্পদের উত্তরাধিকারী এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি দেখা যায়, তবে বিশেষভাবে কিছু সম্পদ্শালী রাজকীয় এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাদের সম্পদ সংরক্ষণ অথবা প্রবাহরেখা এর উত্তরাধিকারের অংশ হিসাবে আনুষ্ঠানিক বিবাহ আয়োজন করে থাকে।[84]
টং ইয়াং শি, তাইওয়ানীয়তে সিম-পুয়া বিবাহ নামে পরিচিত - আক্ষরিক অর্থ ছোট সন্তান বা ছোট পুত্রবধূ - প্রথাগতভাবে এটা একটি আনুষ্ঠানিক বিবাহ যেখানে দরিদ্র পরিবার মেয়ের কৈশোরের আগেই কোন ধনী পরিবারে দাস হিসাবে বিবাহ আয়োজন করে।[85] ছোট বালিকা দাসের মতো বিনামূল্যে শ্রম দিতে থাকে এবং একই সাথে গৃহীত পরিবারের ছেলের পুত্রবধূ হিসাবেও পরিচিত। এই ধরনের বিবাহের মূল তত্ত্ব, মেয়েটি দরিদ্রতার বন্ধন থেকে মুক্তি পায় এবং ধনী পরিবার বিনামুল্যের একজন দাস ও পুত্রবধূ পায়। প্রায় অনুরূপ এক চর্চা "ঝাওঝুহি" যেখানে একটি সম্পদ্শালী পরিবার যার উত্তরাধিকার নাই, তারা অপর কোন পরিবার থেকে ছেলে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করে। পরিবারের মেয়েকে বিবাহ করে ছেলেটি সচ্ছল পরিবারে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এবং পদবী পরিবর্তন করে নেয়। এই ধরনের বিবাহে উত্তরাধিকার নিশ্চিত হয়।[86] অনুরূপ উত্তরাধিকার ও সম্পদ রক্ষার্থে বিবাহ আয়োজন কোরিয়া, জাপান এবং বিশ্বের অন্যান্য বেশ কিছু স্থানে দেখা যায়।[87][88][89]
অনেক সংস্কৃতিতেই, বিশেষভাবে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে, বিবাহ উপযোগী মেয়েকে মুল্যবান হিসাবে দেখা হয়, কারণ পাত্র এবং তাদের পরিবারকে ঐ মেয়েকে বিবাহের অনুমতি পাবার জন্যে নগদ অর্থ বা সম্পদ প্রদান করতে হয়। এটাকে আক্ষরিক ভাবে কন্যাপণ (bride-wealth) বলে, তবে অঞ্চলভেদে স্থানীয় অনেক নামে পাওয়া যায় যেমন লাবোলা এন্ড ওয়াইন ক্যারিং।[90][91] কন্যাপণের অর্থ প্রথাগতভাবে কনের পরিবারই গ্রহণ করে থাকে, দরিদ্র পরিবারের জন্যে মেয়ের বিবাহের পর এটাই হয়ে উঠে আয়ের মূল উৎস। কনের ভাই, পিতা এবং পুরুষ আত্মিয়রা সচেতনভাবে লক্ষ্যরাখতে আগ্রহি থাকে যেন বিবাহের অনুমতির জন্যে সর্বাধিক ব্যয় ইচ্ছুক পাত্রের সাথেই বিবাহ আয়োজন করা সম্ভব হয়।[92][93]
কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী মনে করে বিবাহ শুধুমাত্র বিশ্বাসের অন্যরূপ। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম, ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারে জন্মনেওয়া মেয়েকে নিজ ধর্মের প্রতি অনুগত নয় এমন পুরুষের সাথে বিবাহে নিষিদ্ধ করেছে। অন্য ভাষায় বললে, ইসলাম কোন মুসলিম নারীর সাথে অমুসলিম পুরুষের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে,[94] এবং যারা ভিন্ন ধর্মে বিবাহ করবে তাদের ধর্মীয় শাস্তি অনেক কঠোর।[95] ইউরোপে অবস্থানকারী সংখ্যালঘু মুসলিম পরিবারে এটাই আনুষ্ঠানিক বিবাহের প্রতি আগ্রহি করে তোলে।[96][97]
কিছু খৃস্টান গোষ্ঠী খৃস্টান ও নন-খৃস্টানের মাঝের বিবাহের অনুমোদন দেয়। ১ করিন্থিয়ান্স ৭ঃ১৪ বলে যে, "অবিশ্বাসী স্বামী পবিত্রকৃত হতে পারে তার স্ত্রী দ্বারা, এবং অবিশ্বাসী স্ত্রী পবিত্রকৃত হতে পারে তার স্বামী দ্বারা"।
আনুষ্ঠানিক বিবাহ সবসময়ই বিজ্ঞ জনের মাঝে বির্তকের সূত্রপাত ঘটায়। বিতর্কের মূল প্রশ্ন থাকে আনুষ্ঠানিক বিবাহ কি আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইনের প্রতি অপব্যবহার? এটাকি স্বাভাবিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন? বিশেষ ভাবে নারী অধিকারের।[98] নাকি এটা সন্তানের বেড়ে উঠা ও পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে অধিক স্থিতিশীল বিবাহ;[99] এবং এখানে বিবাহিত যুগলের সম্মানজনক সম্পর্কের মাঝে ভালবাসা, আবেগের প্রভাব বেশি না কম?[100]
যুক্ত্ররাজ্যে প্রকাশ্য আলোচনা In the United Kingdom, public discussion[101] প্রশ্ন উঠে আসে, আন্তর্জাতিক আনুষ্ঠানিক বিবাহ কি আসলে জাল, কিছু অভিবাসী নারী ও পুরুষের জন্যে আবাসন এবং ইউরোপিয়ান নাগরিকাধিকার পাবার পাবার সহজ পন্থা যারা অন্যথায় এদেশে প্রবেশের ভিসা প্রক্রিয়ায় নাকচ হয়ে যেত। এই ধারনাকে আরও বদ্ধমুল করার সুযোগ করে দিয়েছে বিবাহোত্তর নুন্যতম একত্রে থাকার সময় পার হবার পরপরই বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা পরিলক্ষিত হওয়ায়। সংসদ সদস্য অ্যান ক্রায়ার এধরনের অনিয়মের উদাহরণ হিসাবে তার দৃষ্টিতে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম পরিবারের দিকে তুলে ধরেন[102] যুক্তরাষ্ট্রেও অনুরূপ বিতর্কিত জাল বিবাহ দেখা যায়।[103][104]
ইউনিসেফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক বাল্যবিবাহের নিষিদ্ধের দাবিতে, একই সাথে বলপূর্বক বিবাহ আয়োজনেও।[105] দ্যা কনভেনশন অন দ্যা এ্যলিমিনেশন অব দ্যা অল ফরমস অব ডিসক্রিমিনেশন এগেনেইষ্ট ওমেন (সিডিএডব্লিউ) এর অনুচ্ছেদ ১৫ এবং ১৬ বিশেষভাবে বিবাহ এবং পারিবারিক আইনের উপর কাজ করে যেগুলি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত[106][107]
আনুষ্ঠিক বিবাহ একটি বিতর্ক এবং মতবিরোধ বিষয়। এর বিপক্ষে সক্রিয় আন্দোলনকারীরা যেমন শার্লট কাঁদি বলেন যে বিবাহ বাবা-মা অথবা পরিবারের অন্য সদস্য দ্বারা আয়োজিত বিবাহ প্রকৃতপক্ষে বিষমকামী পক্ষপাত এবং মানসিক চাপের সংশ্লিষ্টতা; এটা কিছু মানুষকে বিবাহের দিকে ধাবিত করে যেন তারা সম্মতিতে কয়েদ বরন করছে।[98] Bunch suggests that marriages should be autonomous.
অপরপক্ষে, আনুষ্ঠানিক বিবাহ প্রতিরোধ কিছু মানুষের জন্যে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে যারা বিবাহ উৎসব অভিভাবকদের সাথে নিয়ে (অংশগ্রহণে) করতে চায়। যেমন, উইলভি দেখিয়েছেন[100] যে আনুষ্ঠনিক বিবাহ বেশি সফল কারণ সঙ্গী খোজার প্রক্রিয়ার মাঝেই তারা উদ্বেগ অপসারণের সুযোগ পায়। যখন একজন বর/কনে অন্য একটি মানুষকে বোঝার এবং অনুধাবনের, তার অতীত, স্বভাব এবং একইসাথে দুজনের যৌথ পারিবারিক সামঞ্জস্যতা বিশ্লেষণের প্রক্রিয়ার মাঝ দিয়ে যায় সেই মুহুর্তে অভিভাবক, পরিবার এবং বন্ধু স্বাধীনভাবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা সহায়তা করতে পারে। উইলভি আরও পরামর্শ দেন যে পিতা-মাতা এবং পরিবার পাত্র/পাত্রী বাছাইয়ের বা নির্বাচনের চাইতে বিবাহে অর্থনৈতিক সহায়তা, বাসস্থান, বিবাহের প্রস্তুতিতে মানসিক সমর্থন এবং দাম্পত্য জীবনের নেতিবাচক সময়ে মুল্যবান সহায়তা ও পরামর্শ, সন্তানপালনে সহায়তাই মূল দায়িত্ব।
মাইকেল রোজেনফিল্ড বলেছেন[100] যে ব্যক্তি পছন্দের বিবাহ বা আনুষ্ঠানিক বিবাহের মাঝে প্রায়োগিক ব্যবধান খুব সামান্য; অনেক মানুষ দেখা করে, পৃথকভাবে মিলিত হয় এবং বিবাহে সম্মত হয় অথবা একত্রে অবস্থান করে যাদেরকে মানসিকভাবে, বয়সে, আগ্রহে এবং সামাজিক মর্যাদায় কাছাকাছি মনে হয়, রোজেনফিল্ডের মতে বাছাইয়ের প্রাথমিক ধাপটি অভিভাবকেরা করে দেয়। ধারণা করা যেতে পারে ব্যক্তি পছন্দে এটা একটা বাছাই পর্যায় যেখানে অপযুক্ত দাবীদারের ব্যপ্তি অনেক বেশি, রোজেনফিল্ড দেখিয়েছেন বিবাহের দুইটা পন্থার মাঝে ব্যবধান মোটেই ততটা নয় যতটা অনেকে ধারণা করেন।[100] অন্যান্য[108] আরও অনেকে রোজেনফিল্ডের সাথে সম্মতি প্রকাশ করেছে।
বৈবাহিক জীবনে ব্যক্তি পছন্দের না আনুষ্ঠানিক বিবাহ বেশি সন্তোষজনক নিরূপণ করার জন্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জরিপ চালান হয়। ফলাফল পাওয়া যায় মিশ্র - কিছু বলেছে ব্যক্তি পছন্দের বিবাহে সন্তষ্টি থাকে অনেক উচ্চ, অন্যরা কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পায়নি।[109] জনসন এবং বাচান একটা ক্ষুদ্র আঙ্গিকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও নিরিক্ষা করেছে এবং সেখান থেকে সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে।[110]
বিজ্ঞরা[100][111] দ্বিধান্বিত বৈবাহিক জীবনের ভালবাসা এবং সম্মান কি ব্যক্তি পছন্দের থেকে আনুষ্ঠানিক বিবাহে বেশি থাকে। এপস্টাইন বলেছেন দিয়েছেন যে অনেক আনুষ্ঠানিক বিবাহে ভালবাসা বাড়তে থাকে সময়ের সাথে। তবে ব্যক্তি পছন্দ বা আনুষ্ঠানিক বিবাহ কোনটাই কোন নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম নয়। অনেক আনুষ্ঠানিক বিবাহ ভেঙ্গে যায় শীতল ক্রিয়াহীনভাবে আবার বিশ্বাসভঙ্গেরও প্রতিবেদন পাওয়া যায়[112][113][114]
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তি পছন্দের বিবাহের বৃদ্ধির সাথে সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ আনুষ্ঠানিক বিবাহের হারের স্থানেই সর্বনিন্ম বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বিদ্যমান, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের আমিশ রীতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ (১%),[115] ভারতে হিন্দু (৩%),[100] এবং ইসরাইলের আল্ট্রা-অর্থডক্স ইহুদি (৭%)।[116] ২০১২ সালের স্ট্যাটিক ব্রেন এর একটি প্রতিবেদনে,বিশ্বে সর্বমোট বিবাহের শতকরা ৫৩.২৫ ভাগ আনুষ্ঠানিক বিবাহ এবং বিশ্বব্যাপী আনুষ্ঠানিক বিবাহের বিবাহ বিচ্ছেদের হার লক্ষণীয়ভাবে সীমিত মাত্র ৬.৩%। পরিসংখ্যানের এই নিন্ম হার বুঝিয়ে দেয় আনুষ্ঠানিক বিবাহের সাফল্যের হার।[117] এই পরিসংখ্যান বিজ্ঞদের প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে যে আনুষ্ঠানিক বিবাহ ব্যক্তি পছন্দের চাইতে বেশি স্থায়ী, এবং এই পরিসংখ্যান কি আসল স্থায়িত্বের নিদর্শন? অনেকে দেখিয়েছে এই স্বল্প বিচ্ছেদের হার স্থায়িত্বের প্রকাশ নয়, বরং এটা প্রকাশ করে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন হবার ভয়, এবং ফলাফল যেকোন ব্যক্তি ক্রিয়াহীন দাম্পত্য জীবন বজায় রাখতে চায় বিবাহ বিচ্ছেদের পরিণতির মুখোমুখি হবার চাইতে।[100] একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ বিবাহ বিচ্ছেদের হার ব্যক্তি পছন্দের বিবাহ পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে[118] এবং ভারতের হিন্দু সমাজে নিন্ম বিবাহ বিচ্ছেদের হারের উপর কোন প্রামাণিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিবাহ বিচ্ছেদের হারের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক বিবাহে আরও কিছু ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। ইসলামিক দেশ সমূহে একই বংশীয় আনুষ্ঠানিক বিবাহের বিচ্ছেদের হার সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশর, কাতার, জর্ডানে শতকরা ২০-৩৫ ভাগ,[119] অপরপক্ষে, আমিশ গোত্র, হিন্দু এবং অর্থডক্স ইহুদিদের অনাত্মীয় আনুষ্ঠানিক বিবাহ বিচ্ছেদের হার ১০% এর নিচে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.