আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম-ঢাকা বাংলাদেশের একটি ইসলামী জনকল্যাণ সংস্থা। বাংলাদেশে এটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম নামেই পরিচিত। গরিব, দুঃস্থ ও অসহায় মুসলমানগণের সাহায্যার্থে ১৯০৫ সালে তৎকালীন নেতৃস্থানীয় মুসলিম সমাজ দরদীগণের সহায়তায় একজন সুরাটবাসী মুসলিম সমাজকর্মী জনাব ইব্রাহিম মোহাম্মদ ডুপ্লের উদ্যোগে ভারতের কলকাতায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কার্য্যক্রম শুরু হয়।[1] ১৯৪৭ কলকাতা থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রধান অধিকর্তা এস, এম সালাহউদ্দিন সাহেবকে সর্বময় কর্তৃত্ব দিয়ে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের শাখা অফিস স্থাপন ও তার কার্য্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ঢাকায় পাঠানো হয়। ১৯৪৭ খ্রীস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কার্য্যক্রম শুরু হয়।

কাকরাইলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম-এর শাখা অফিস

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের উদ্দেশ্য ও কার্য্যক্রম

এই শতাব্দীজীবি প্রতিষ্ঠানের উদ্যো্ক্তা ইব্রাহিম মোহাম্মদ ডুপ্লে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে লক্ষ্য করেন যে কলকাতায় বেওয়ারিশ মুসলমানদের লাশ ইসলামী রীতিতে দাফর না-করে, কাফন-জানাজা ব্যাতিরেকে, হিন্দুদের ন্যায় পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। ১৯০৫ খ্রীস্টাব্দে যখন তিনি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন তখন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামিক রীতি অনুসরণপূর্ব্বক বেওয়ারিশ মুসলমানদের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা। কালক্রমে এই সংস্থা নানারূপ মানবতাবাদী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে। কেবল মুসলমান নয়, বর্তমানে সকল ধর্মেল মানুষ এই সংস্থার সেবা পেয়ে থাকে। এর প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপঃ

  • মুসলমানদের বে-ওয়ারিশ লাশ দাফন ও অসমর্থ লোকদের লাশ দাফনের ব্যবস্থা।
  • ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান (জাতি ধর্ম নির্বিশেষে)।
  • মুসলিম এতিমখানা পরিচালনা।
  • স্কুল ও কলেজ পরিচালনা।
  • ঈদে দুঃস্থ মুসলিম পুরুষ ও মহিলাদের মাঝে নূতন কাপড় বিতরণ, দুঃস্থ ও অক্ষম মুসলিম পরিবারদের সাহায্য প্রদান।
  • বিভিন্ন দুর্যোগের সময় দুর্গত এলাকায় ত্রাণকার্য্য পরিচালনা।

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা

ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ প্রভূত্ব স্থাপনের প্রথমদিকে মুসলমানদের প্রতি ব্রিটিশদের ঘৃণা ও বৈরী মনোভাবের কারণে মুসলমান জাতি হিসেবে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান ধ্বংস মুখে এসে দাঁড়ায়। এই সময় ভারতীয় মুসলমানদের মাঝে একটি উন্নয়নমুখী বিপ্লবের প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভূত হয়। কলকাতায় এ বিপ্লবের শিক্ষা ও সমাজ-সংস্কৃতি ভিত্তিক শুভ সূচনা হয় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।[2]

ঢাকায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের প্রতিষ্ঠা

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর ঢাকায় আঞ্জুমানের শাখা অফিস স্থাপন ও এর কার্য্যক্রম সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। এই জন্য কলকাতা থেকে সালাউদ্দিন সাহেবকে সর্বময় কতৃত্ব দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়। তারই অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এবং এ, এফ, এম আব্দুল হক ফরিদী, মির্জা আব্দুল কাদের সরদার , মৌলবী গোলাম আলী সরদার , মৌলবী মোহাম্মদ ইলিয়াস সরদার সাহেব, খানবাহাদুর ইসমাইল সাহেব, আব্দুল বারী, তাজউদ্দিন আহমদ, মৌলবী আব্দুল জব্বার , এ, এম, সলিমুল্লাহ ফাহ্‌মী (পি, এম, এ), আব্দুল কাশেম (ডেপুটী সেক্রেটারী, পূর্ববাংলা সরকার) ও বহু স্থানীয় দানশীল লোকের সাহায্য-সহযোগীতায় ১৯৪৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের শাখা অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭১-এ বাংলাদেশের অভ্যূদয়

১৯৭১ খ্রীস্টাব্দে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ স্থাপিত হওয়ার পর তৎকালীন সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে একটি মৌলবাদী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করে আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে সংগঠনটির টিকে থাকা দোষ্কর হয়ে পড়ে। তবে ১৯৭৪ খ্রীস্টাব্দের দুর্ভিক্ষের সময় এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয় এবং সরকার এ প্রতিষ্ঠানটিকে উজ্জীবিত করার নীতি অবলম্বন করে। সরকার ওই প্রতিষ্টানটির আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে অর্থ বরাদ্দ শুরু করে।

স্বীকৃতি

  • ইসলামী ফাউন্ডেশন পুরস্কার, ১৯৯৪।
  • স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৯৬।
  • ডাঃ ইব্রাহিম স্মারক পুরস্কার, ২০০৪।
  • রফিকুল ইসলাম ব্যাংকিং পুরস্কার, ২০০৪।
  • হিল্টন ফাউন্ডেশন এওয়ার্ড, ১৯৯৯।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.