Loading AI tools
১৯১৪ সালে রচিত, রবীন্দ্রসঙ্গীত উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে হল একটি জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত। এই গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতি-সংকলন গীতবিতান গ্রন্থের ‘পূজা’ পর্যায়ভুক্ত ‘দুঃখ’ উপপর্যায়ের গান।[1] এটি ‘পূজা’ পর্যায়ের ২১২ সংখ্যক গান।[2] রবীন্দ্রসংগীতের স্বরলিপি-সংকলন স্বরবিতান গ্রন্থের ৪৩শ খণ্ডে এই গানটির স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছে। গানটি রবীন্দ্রনাথের ৫৩ বছর বয়সের রচনা।[2] এটি রবীন্দ্রনাথের গীতালি কাব্যগ্রন্থের ১৮ সংখ্যক কবিতা।[2]
১৯১৪ সালের আগস্ট মাসে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে কৃষি-বৈজ্ঞানিক কাজের জন্য শান্তিনিকেতনের নিকটবর্তী সুরুল গ্রামের (বর্তমানে শ্রীনিকেতনের পার্শ্ববর্তী গ্রাম) কুঠিবাড়িতে আসেন। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সময় বেণুকুঞ্জের একটি খড়ের ঘরে থাকতেন। এই সময় গীতালি কাব্যগ্রন্থের জন্য যে নতুন গানগুলি তিনি রচনা করেছিলেন, সেগুলি প্রতিদিন সন্ধ্যায় এসে দিনেন্দ্রনাথকে শিখিয়ে যেতেন।[3] সুরুলে অবস্থানকালেই ২৮ অগস্ট রবীন্দ্রনাথ "আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে" গানটি রচনা করেন।[4]
১৯১৪ সালের প্রবাসী পত্রিকার অগ্রহায়ণ সংখ্যায় ‘গীতিগুচ্ছ’ শিরোনামে গীতালি কাব্যগ্রন্থের ২৪টি গান মুদ্রিত হয়। "আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে" গানটি ছিল এই প্রকাশিত ২৪টি গানের অন্যতম।[5] ১৯১৪ সালে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের গীতালি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত হয় এই গানটি। এটি উক্ত কাব্যের ১৮ সংখ্যক কবিতা।[2] ১৯১৫ সালে ব্রাহ্মসমাজের ৮৫তম মাঘোৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় আসেন। ২৫ জানুয়ারি (১১ মাঘ) মহর্ষিভবনের সান্ধ্য উপাসনায় ‘সায়ংকালের উদ্বোধন’ ও ‘সন্ধ্যার উপদেশ’ ভাষণের মাঝে যে দশটি গান গাওয়া হয়, তার মধ্যে পঞ্চম গানটি ছিল "আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে"।[6] ওই বছর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-য় ফাল্গুন সংখ্যাতেও গানটি প্রকাশিত হয়।[2] ১৯১৬ সালের আনন্দ সঙ্গীত পত্রিকা-র আশ্বিন-কার্তিক সংখ্যায় এই গানটি প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্তকুমার পাল লিখেছেন, “শেষ গানদুটির ("মোর মরণে তোমার হবে জয়" ও "আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে") স্বরলিপিকারের নাম উল্লেখিত হয়নি। সম্ভবত ইন্দিরা দেবীর করা।”[7] তবে গানটির মুদ্রিত স্বরলিপিতে স্বরলিপিকার হিসেবে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম উল্লিখিত হয়েছে।[2] ১৯৩১ সালে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের কবিতা-সংকলন সঞ্চয়িতা গ্রন্থে এই গানটি ‘পরশমণি’ শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়।[8]
"আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে" গানটির কথা নিম্নরূপ:[9]
গানটি গৌর সারং রাগ ও দাদরা তালে নিবদ্ধ। এই গানটির স্বরলিপিকার হলেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯২০ সালে গীতলেখা স্বরলিপি গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে এই গানটির স্বরলিপি প্রথম প্রকাশিত হয়।[2]
হিন্দুস্তান রেকর্ডস থেকে অঞ্জনা দাস ও হরিপদ চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এই গানটি প্রথম রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড নং ছিল এইচ ২৪৬।[2] পরবর্তীকালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র, চিত্রলেখা চৌধুরী, প্রমিতা মল্লিক, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রাবণী সেন, শ্রীকান্ত আচার্য, কুমার শানু প্রমুখ শিল্পীরা এই গানটি রেকর্ড করেন। দেবব্রত বিশ্বাস ও গীতা নাহা, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সুমিত্রা রায় এবং সুবিনয় রায় ও বনানী ঘোষ দ্বৈতকণ্ঠে গানটি রেকর্ড করেছেন।
এই গানটি সম্পর্কে রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ অমল মুখোপাধ্যায় লিখেছেন:[1]
দুঃখের আগুনে কবির জীবন নবচেতনার দীপ্তি লাভ করুক, জীবন তাঁর কলুষমুক্ত হোক, ‘পুণ্য’ হোক– এ গানে কবির এই প্রার্থনা। মৃত্যুদুঃখও তাঁর কাছে দুঃখ নয়। মরণের দুঃখপথেই তিনি লাভ করেন জীবনবল্লভকে। তাঁর মরণোত্তর দেহখানি এক নতুন দীপ্তিতে ঈশ্বরের দেবালয়ে দীপশিখা হয়ে জ্বলুক। তাই কবি ঈশ্বরের দেওয়া দুঃখের দহনস্পর্শ প্রার্থনা করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.