Loading AI tools
মামলুক সালতানাত ও মঙ্গোল সাম্রাজ্যের মধ্যকার যুদ্ধ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আইন জালুতের যুদ্ধ ১২৬০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ দক্ষিণপূর্ব গ্যালিলিতে জাজরিল উপত্যকার আইন জালুতে মামলুক ও মঙ্গোলদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।[9] যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে মঙ্গোলদের সাম্রাজ্য বিস্তার থেমে যায়।[10]
আইন জালুতের যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: মঙ্গোলদের ফিলিস্তিন অভিযান | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
মামলুক সালতানাত |
মঙ্গোল সাম্রাজ্য জর্জিয়া রাজ্য সিলিসিয়ান আর্মেনিয়া | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
সাইফউদ্দিন কুতুজ বাইবার্স | কিতবুকা † | ||||||
জড়িত ইউনিট | |||||||
হালকা অশ্বারোহী, অশ্বারোহী তীরন্দাজ, ভারি অশ্বারোহী, পদাতিক, হাত কামানধারী | বর্শাধারী, অশ্বারোহী তীরন্দাজ, ৫০০ সিলিসিয়ান আর্মেনীয় সৈনিক, জর্জিয়ান সেনাদল স্থানীয় আইয়ুবীয় সেনাদল | ||||||
শক্তি | |||||||
১,২০,০০০[2][3][4] | ৫০,০০০ সৈনিকের বাহিনী[1][2][5][6][7][8] | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
অজ্ঞাত | প্রায় সম্পূর্ণ বাহিনী |
১২৫১ সালে মংকে খান খাগান হন। তিনি তার দাদা চেঙ্গিস খানের বিশ্বব্যপী সাম্রাজ্যের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি তার ভাই হালাকু খানকে পশ্চিমের জাতিসমূহকে অধিকার করার দায়িত্ব দেন।[11]
পাঁচ বছর যাবত সেনাদল গঠনের পর ১২৫৬ সালে হালাকু খান অভিযান শুরু করেন। তিনি দক্ষিণ দিকে যাত্রা করেন। আত্মসমর্পণ না করলে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য মংকে খানের নির্দেশ ছিল। হালাকু খান অভিযানকালে অনেক রাজ্য জয় করেন। তাদের অনেকে তার দলে সৈনিক সরবরাহ করেছে। বাগদাদ অভিযানের সময় সিলিসিয়ান আর্মেনীয়রা তার সাথে ছিল। পাশাপাশি এন্টিওকের ফ্রাঙ্ক সেনারাও তার সাথে যোগ দেয়। অভিযানের সময় হাসাসিনরা তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাগদাদ ধ্বংসের ফলে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন আব্বাসীয় খিলাফত ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর দামেস্কের আইয়ুবীয়দের পতন হয়। হালাকু খান দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে মামলুক সালতানাত জয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এসময় মামলুকরা প্রধান মুসলিম শক্তি ছিল।[11]
১২৬০ সালে হালাকু খান কায়রোতে সুলতান কুতুজের কাছে দূত পাঠিয়ে আত্মসমর্পণ দাবি করেন:
পূর্ব ও পশ্চিমের শাহেনশাহ মহান খানের পক্ষ থেকে এটি প্রেরিত হচ্ছে মামলুক কুতুজের উদ্দেশ্যে যিনি আমাদের তলোয়ার থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। অন্যান্য রাজ্যসমূহের কী পরিণতি হয়েছে তা চিন্তা করে আপনার উচিত আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা। আপনি শুনেছেন কীভাবে আমরা একটি বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছি এবং পৃথিবীকে দূষিতকারী বিশৃঙ্খলা থেকে একে বিশুদ্ধ করেছি। আমরা বিশাল অঞ্চল জয় করেছি, সব মানুষকে হত্যা করেছি। আপনি আমাদের সেনাবাহিনীর ত্রাস থেকে বাঁচতে পারবেন না। আপনি কোথায় পালাবেন? আমাদের কাছ থেকে পালানোর জন্য আপনি কোন পথ ধরবেন? আমাদের ঘোড়াগুলি দ্রুতগামী, আমাদের তীর ধারালো, আমাদের তলোয়ার বজ্রের মত, আমাদের হৃদয় পর্বতের মত কঠিন, আমাদের সেনারা বালুর মত অগণিত। দুর্গ আমাদের আটকাতে পারবে না, কোনো সেনাবাহিনী আমাদের থামাতে পারবে না। আল্লাহর কাছে আপনার দোয়া আমাদের বিরুদ্ধে কাজে আসবে না। অশ্রু আমাদের চালিত করে না এবং মাতম আমাদের স্পর্শ করে না। শুধুমাত্র যারা আমাদের সুরক্ষা চাইবে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠার আগে দ্রুত আপনার জবাব দিন। প্রতিরোধ করলে আপনি সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবেন। আমরা আপনাদের মসজিদগুলি চুরমার করে দেব এবং আপনাদের আল্লাহর দুর্বলতা দেখতে পাবেন এবং এরপর আপনাদের সন্তান ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করা হবে। এই মুহূর্তে আপনি একমাত্র শত্রু যার বিরুদ্ধে আমরা অগ্রসর হয়েছি।
— হালাকু, [12]
কুতুজ দূতদেরকে হত্যা করে এর জবাব দেন। দূতদের কাটা মাথা কায়রোর বাব জুলাইলা ফটকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।[11]
এসময় মংকে খানের মৃত্যুর ফলে হালাকু খানসহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় মঙ্গোলরা নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য মঙ্গোলিয়া ফিরে আসেন। হালাকু তার বাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে তার সাথে নিয়ে যান। তার রেখে যাওয়া বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন কিতবুকা।[13]
মঙ্গোলদের প্রতিহত করার জন্য সুলতান কুতুজ দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করে ফিলিস্তিনের দিকে অগ্রসর হন।[14] অভিযানকালে বাইবার্স তার সাথে যোগ দেন।[10]
আগস্টের শেষদিকে মঙ্গোলরা তাদের বালবিকের শিবির থেকে দক্ষিণ দিকে যাত্রা করে। তারা এসময় আক্কাকেন্দ্রীক ক্রুসেডার জেরুজালেম রাজ্যের সাথে মিলে ফ্রাঙ্ক-মঙ্গোল মৈত্রী গঠনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু পোপ চতুর্থ আলেক্সান্ডার এতে সায় দেননি। এছাড়া সাইদার শাসক জুলিয়ানের কারণে কিতবুকার নাতি মৃত্যুর ফলে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। কিতবুকা রাগান্বিত হয়ে সাইদা আক্রমণ করেন। অন্যদিকে মামলুকরাও মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে সহায়তার জন্য ক্রুসেডারদের প্রতি বার্তা পাঠায়।[10]
মামলুকরা ফ্রাঙ্কদের দীর্ঘদিনের শত্রু হলেও আক্কার ব্যারন মঙ্গোলদেরকে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করেন। এসময় ক্রুসেডাররা দুই পক্ষের মধ্যে কারো সাথে সরাসরি যোগ না দিয়ে ক্ষতি না করার শর্তে মামলুকদেরকে ক্রুসেডার এলাকার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার সুযোগ দেয়।[15] মঙ্গোলদের জর্ডান নদী অতিক্রম করার খবর পাওয়ার পর সুলতান কুতুজ দক্ষিণ পশ্চিমে জাজরিল উপত্যকার আইন জালুতের দিকে অগ্রসর হন।[16]
মামলুকরা স্থানীয় ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত ছিল। কৌশল হিসেবে কুতুজ তার বাহিনীর একটি অংশকে স্থানীয় পাহাড়ে লুকিয়ে রাখেন এবং বাইবার্সকে একটি ক্ষুদ্র সেনাদল দিয়ে পাঠানো হয়।
দুইপক্ষ মুখোমুখি হওয়ার পর মঙ্গোলদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য বাইবার্স হিট-এন্ড-রান কৌশল কাজে লাগান। আক্রমণ করে মামলুকরা পালিয়ে যাচ্ছে দেখে মঙ্গোলরা তাদের ধাওয়া করে। মঙ্গোল সেনাপতি কিতবুকা এই ফাঁদ বুঝতে না পেরে অগ্রসর হন ফলে পাহাড়ি এলাকায় পৌছার পর মামলুকরা আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ চালায়। ফলে মঙ্গোলরা চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
মঙ্গোলরা বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্ট চালায়। কুতুজ কিছু দূরে তার নিজস্ব সেনাদল নিয়ে যুদ্ধের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এসময় মঙ্গোলরা মামলুক বাহিনীর বাম অংশকে প্রায় ভেদ করতে সক্ষম হয়। কুতুজ এসময় তার যুদ্ধের হেলমেট খুলে ফেলেন যাতে সৈনিকরা তাকে চিনতে পারে। এরপর তিনি তার সেনাদল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন। মঙ্গোলরা পিছু হটে কিছু দূরে গিয়ে সংগঠিত হয়ে পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসে। তবে যুদ্ধের গতি মামলুকদের পক্ষে চলে যায়।[16] কিতবুকা যুদ্ধে নিহত হন এবং এই অঞ্চলের মঙ্গোল বাহিনীর প্রায় সম্পূর্ণ অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।
হাত কামান ব্যবহার হয়েছে এমন যুদ্ধসমূহের মধ্যে আইন জালুতের যুদ্ধ অন্যতম প্রাচীন যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।[17] মঙ্গোল ঘোড়া ও অশ্বারোহীদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য মামলুকরা এসমস্ত বিস্ফোরক ব্যবহার করে। পরবর্তীকালে আরব রসায়ন ও সামরিক নিয়মকানুনে বিস্ফোরক হিসেবে বারুদ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।[18][19]
আইন জালুতের বিজয়ের পর কুতুজ কিছু আমিরের হাতে নিহত হন। এরপর বাইবার্স নতুন সুলতান হিসেবে ক্ষমতায় বসেন।
বারকা খান ইতিপূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বাগদাদ আক্রমণ নিয়ে হালাকু খানের উপর ক্ষুব্ধ হন। ইতিহাসবিদ রশিদউদ্দিন হামাদানি লিখেছেন যে মংকে খানকে লেখা একটি চিঠিতে বারকা খান প্রতিবাদ করে বলেছেন: "সে (হালাকু খান) মুসলিমদের সব শহরে হামলা করেছে এবং খলিফাকে হত্যা করেছে। আল্লাহর সাহায্য নিয়ে আমি তার কাছ থেকে এসব নির্দোষ মানুষের রক্তপাতের হিসাব আদায় করব।"[20] বারকা খানের মনোভাবের কথা জানতে পেরে মামলুকরা তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে।
কুবলাই খানের ক্ষমতাপ্রাপ্তির পর হালাকু খান ১২৬২ সালে ফিরে আসেন এবং মামলুকদের উপর হামলার প্রস্তুতি নেন। এদিকে বারকা খান উত্তরে হালাকু খানের এলাকায় আক্রমণ শুরু করেন। ১২৬৩ সালে এরূপ একটি লড়াইয়ে তিনি পরাজিত হন। এটি ছিল মঙ্গোলদের মধ্যকার প্রথম উন্মুক্ত যুদ্ধ।
মামলুকদের বিরুদ্ধে হালাকু খান একটি ক্ষুদ্র বাহিনী প্রেরণ করেছিলেন। মামলুকরা তাদের প্রতিহত করে। ১২৬৫ সালে হালাকু খান মারা যান। এরপর তার ছেলে আবাকা খান তার উত্তরসূরি হন।
রবার্ট শেয়া রচিত দ্য সারাসেন উপন্যাসে আইন জালুতের যুদ্ধ ও সুলতান কুতুজের হত্যাকান্ডের উল্লেখ রয়েছে।
সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ এর মূল নাম মাহমুদ বিন মামদুদ। তিনি ছিলেন খাওয়ারেজম সাম্রাজ্যের সুলতান জালালুদ্দিন খাওয়ারেজম শাহের ভাগ্নে। খাওয়ারেজম সাম্রাজ্যেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.