Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অ্যানোনিমাস একটি বৈশ্বিক হেকটিভিস্ট দল। এই হেকটিভিস্ট দলটি সাধারনত কোন ওয়েবসাইটে ডিনাইয়াল অভ সার্ভিস (ডিডিওএস) এর মাধ্যমে হামলা করে থাকে। ২০০৩ সালে এই দলটি সাড়া বিশ্বের কিছু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দ্বারা গঠিত হয়। অ্যানোনিমাসের সদস্যরা “অ্যানোন” নামে পরিচিত। তারা সাধারনত কোন প্রতিবাদ মিছিলে আসলে এক ধরনের মাস্ক ব্যবহার করে।[2]
নীতিবাক্য | We Are Anonymous |
---|---|
গঠিত | আনু. ২০০৩ |
ধরন | একাধিক নাম ব্যবহার/অ্যাভাটার;ভার্চুয়াল কমিউনিটি;সেচ্ছাস্বেবক সংস্থা |
উদ্দেশ্য |
|
যে অঞ্চলে কাজ করে | বৈশ্বিক |
সদস্যপদ | যে কেউ সদস্য হতে পারে। |
ওয়েবসাইট | https://www.anonymoushackers.net/ |
অ্যানোনিমাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অনেক দেশে সাইবার হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন দেশের সরকারি ওয়েবসাইটেও হামলা করে থাকে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, তিউনিসিয়া , উগান্ডা এবং আরো অনেক। এছাড়া শিশু পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট, কপিরাইট প্রোটেকসন এজেন্সি, দ্য ওয়েস্ট বোরো বেপটিস্ট গির্জা ও বহুজাতিক কোম্পানি যেমন, পেপ্যাল, মাস্টার কার্ড, ভিসা এবং সনি তাদের সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। অ্যানোনিমাস বিকল্পধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসকেও সমর্থন করে। কারণ ২০১০ সালে উইকিলিকস হাজার হাজার কুটনৈতিক বার্তা প্রকাশ করে দেয়ার পর পেপ্যাল, মাস্টার কার্ড এবং ভিসা উইকিলিকসের সঙ্গে তাদের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছিল। এরই প্রতিবাদে পেপ্যালে কয়েকদফা মারাত্মক সাইবার হামলা করেছিল অ্যানোনিমাস।
অ্যানোনিমাস সমর্থিত লালজসেক ও অপারেশন এন্টিসেক যুক্তরাষ্ট্র সরকার, সংবাদমাধ্যম, ভিডিও গেম কোম্পানি, মিলিটারি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, আর্মি অফিসার এবং পুলিস অফিসারের ওয়েবসাইটে সাইবার হামলা চালায়। বিভিন্ন দেশ যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, স্পেন ও তুরস্ক থেকে এ পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি লোককে অ্যানোনিমাসের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দলের সদস্যরা সাড়া বিশ্বেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অ্যানোনিমাসের সমর্থকরা এই হেকটিভিস্ট দলকে “মুক্তিযোদ্ধা”[3] ও “ডিজিটাল রবিনহুড” নামে আখ্যায়িত করে থাকে। কিন্তু সমালোচকরা এদেরকে “সাইবার মাফিয়া”[4] ও “সাইবার সন্ত্রাসী” হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।[5] অ্যানোনিমাস ২০১২ সালে বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকীর বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান পেয়েছিল।[6]
২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও তুরস্ক[7] সরকার অ্যানোনিমাসের সাইবার হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে কয়েক ডজন লোককে গ্রেফতার করে। অ্যানোনিমাস তাদের বিবৃতিতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে অবিলম্বে মুক্তি ও তাদের আন্দোলনের শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে।[8] জুলাই ২০১১ সালে লালজসেক সদস্য “তপিয়ারি” গ্রেফতার হলে অ্যানোনিমাস তাকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন শুরু করে ও এর নাম দেয় “ফ্রি তপিয়ারি”।[9]
অ্যানোনিমাসের ডিডিওএস হামলায় জড়িত সন্দেহে সর্বপ্রথম ডমিট্রি গাজনার নামে এক আমেরিকান ১৯ বছরের যুবককে জেলে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে অবৈধ ভাবে নিরাপদ কম্পিউটার ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয় এবং ৩৬৬ দিন কারাদন্ড দেওয়া হয়।[10][11]
১৩ জুন, ২০১১ সালে তুরস্ক সরকার তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে ডিডিওএস হামলা চালানোর জন্য ৩২ জনকে গ্রেফতার করে। অ্যানোনিমাসের এই সদস্যদের তুরস্কের বিভিন্ন শহর যেমন, ইস্তামবুল ও আঙ্কারা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তুরস্ক সরকার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছে তথ্য ফিল্টার করার দাবী করলে এই সদস্যরা সরকারি ওয়েবসাইটে আক্রমণ করে।[12][13] এর পরই তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ক্রিস ডুয়ন (কমান্ডার এক্স নামে পরিচিত) যাকে অ্যানোনিমাসের দলনেতা ভাবা হয়, তিনি সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা ক্লস কাউন্টির ওয়েবসাইটে হামলার জন্য গ্রেফতার হন।[14][15] তিনি ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে জামিন লাভ করেন এবং সীমান্ত পার হয়ে কানাডা চলে যান।[15] সেপ্টেম্বর, ২০১২ সালে সাংবাদিক ও অ্যানোনিমাসের মুখপাত্র বলে পরিচিত ব্যারেট ব্রাউন গ্রেফতার হন। একজন এফবিআই এজেন্টকে শারীরকভাবে নির্যাতনের হুমকি দিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। ব্রাউনের বিরুদ্ধে ১৭ টি অভিযোগ গঠন করা হয় যার মধ্যে স্টার্টফর হ্যাকের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ফাঁস করার অভিযোগও আনা হয়।[16]
অ্যানোনিমাস যখন অপারেশন অ্যাভেঞ্জ অ্যাস্যাঞ্জ শুরু করে তখন কয়েকটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে।[17] জানুয়ারি ২০১১ সালে ব্রিটিশ পুলিশ ১৫-২৬ বছরের পাঁচ জন যুবককে গ্রেফতার করে অ্যানোনিমাসের ডিডিওএস হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে।[18] এরপর ১৯-২০ জুলাই ইংল্যান্ড সহ যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডস পুলিস ২০ বা তার অধীক লোককে গ্রেফতার করে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্যমতে, অভিযুক্তদের আলাবামা, অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, ওয়াশিংটন ডিসি, ফ্লোরিডা, ম্যাসাচুসেট্স, নেভাডা, নিউ মেক্সিকো এবং ওহাইও থেকে গ্রেফতার করা হয়। দক্ষিণ লন্ডন থেকে পুলিস ১৯৯০ সালের কম্পিউটার অপব্যবহার আইনের আওতায় ১৬ বছরের এক বালক কে গ্রেফতার করে এবং নেদারল্যান্ড পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করে।[19][20][21][22]
ডিসেম্বর ২০১২ সালে অ্যানোন-অপস এডমিন ২২ বছরের যুবক “ক্রিসটোফার ওয়েদারহেডকে” (নেরদু) অপারেশন পেব্যাক পরিচালনা ও সংগঠিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।[23] বিচারে তার ১৮ মাস সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। অ্যাশলে রোডিস, পিটার গিবসন, এবং আরো অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয় ও বিচারে তাদের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড দেওয়া হয়।[23][24]
২০১১ সালের মে মাসে অ্যানোনিমাসের একটি ছোট দল “এইসবিগ্যারে” হ্যাক করে। এই দলের সদস্য “টিফ্লু”, “টপিয়ারি”, “সাবু” ও “ক্যালা” মিলে পরবর্তীতে লালজ সিকিউরিটি নামে একটি হ্যাকার দল গঠন করেন। যা সংক্ষিপ্তভাবে লালজসেক নামে পরিচিত। এই দলের প্রথম সাইবার হামলা ছিল ফক্স.কমের বিরুদ্ধে। তারা ফক্সের সাইট হ্যাক করে কিছু পাসওয়ার্ড, লিংকডইন প্রোফাইল এবং এক্স ফ্যাক্টরের ৭৩ হাজার প্রতিযোগীর তথ্য ফাঁস করে দেয়। ২০১১ সালের মে মাসে তারা আমেরিকান পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (পিবিএস) হ্যাক করে পরিচিতি লাভ করে। তারা সেখান থেকে ইউজার ডাটা চুরি করে এবং একটি ভূয়া খবর প্রকাশ করে যে র্যাপার টাপেক ও বিগি স্মল এখনো বেঁচে আছেন ও তারা নিউজিল্যান্ডে আছেন।[25] বিকল্পধারার ওয়েবসাইট উইকিলিকস ও এর তথ্যদাতা মার্কিন সেনা কর্মকর্তা ব্র্যাডলি ম্যানিংকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ করাই ছিল এই হ্যাকের উদ্দেশ্য।[26]
২০১২ সালের জুনে লালজসেক সনি পিকচার্স হ্যাকের কথা জানায় এবং তারা সেখান থেকে হাজার হাজার গ্রাহকের নাম, ইউজারনেইম, পাসওয়ার্ড, ইমেইল ঠিকানা, বাড়ির ঠিকানা ও জন্মদিনের তথ্য ইত্যাদি প্রকাশ করে দেয়।[27] জুনের প্রথম দিকে তারা পর্নোগ্রাফি.কম ওয়েবসাইট হ্যাক করে সেখান থেকেও ২৬,০০০ ইমেইল ঠিকানা ও পাসওয়ার্ড চুরি করে প্রকাশ করে দেয়।[28] ১৪ জুলাই, ২০১২ সালে তারা তাদের এক ভক্তের অনুরোধে মাইনক্রেফ্ট, লিগ অফ লেজেন্ড, দ্য এসকেপিস্ট ও আইটি নিরাপত্তা কোম্পানি ফিনফিশারের ওয়েব সাইট হ্যাক করে বন্ধ করে দেয়।[29] এছাড়াও মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন গেম ইভিই এর লগিন সার্ভারে হামলা করে যার ফলে গেমের প্রধান ওয়েবসাইট অকার্যকর হয়ে যায়। অধিকাংশ ওয়েবসাইটই বন্ধ করা হয় ডিডিওএসের মাধ্যমে।[30]
এছাড়াও লালজসেক সরকারি ওয়েবসাইট ও সরকারের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হামলা চালায়। তারা এফবিআই এর একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাগ্রেডে হামলা করে ইনফ্রাগ্রেডের কিছু ব্যবহারকারীর ইমেইল ঠিকানা ও লোকাল ইউজার ডাটাবেজ প্রকাশ করে দেয়।[31][32] ১৩ জুন লালজসেক যুক্তরাষ্ট্র সিনেটির ওয়েবসাইটে (senate.gov) হামলা করে ব্যবহারকারীদের ইমেইল ও পাসওয়ার্ড তাদের টুইটার একাউন্টে প্রকাশ করে।[33] ১৫ জুন সিআইএ এর ওয়েবসাইটে ডিডিওএস পদ্ধতিতে হামলা করে সিআইএর ওয়েবসাইট কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয়।[34] লালজসেকের একটি শাখা দাবীকারী লালজসেক পর্তুগাল নামে একটি হ্যাকার দল পর্তুগালের সরকারি ওয়েবসাইট যেমন, পর্তুগাল ব্যাংক, অ্যাসেম্বলি অফ রিপাবলিক, অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয়সহ আরো কয়েকটি ওয়েবসাইটে হামলা করে যার ফলে সাইটগুলো কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়।[35]
২৬ জুন, ২০১১ সালে লালজসেক ঘোষণা দেয় তারা তাদের ৫০ দিনের হ্যাকিং সম্পন্ন করেছে এবং আর কোন হ্যাকিংয়ে অংশ নেবে না।[36] যদিও শোনা যাচ্ছিল অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা “সাবো” এফবিআইএর হাতে ধরা পড়েছেন ও তিনি এফবিআইকে তথ্য দিতে রাজি হয়েছেন। সাবোর সহযোগিতায় লালজসেকের সদস্যরা একে একে গ্রেফতার হতে থাকেন।[37] টিফ্লো ১৯ জুলাই, ২০১১,[38] তপিয়ারি ২৭ জুলাই,[39] এবং ক্যালা ৬ মার্চ, ২০১২ সালে গ্রেফতার হন।[40] তপিয়ারি, ক্যালা, টিফ্লো ও ক্লিয়ারিকে এপ্রিল, ২০১৩ সালে দোষী প্রমাণ করে মে মাসে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়।[41] এপ্রিল, ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ ক্রোডি ক্রেটসিংগার নামে একজনকে গ্রেফতার করে যিনি নিজেকে লালজসেক দলনেতা অসোক বলে দাবী করেন।[42]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.