অ্যাডিলেড
সাউথ অস্ট্রেলিয়ান শহর / From Wikipedia, the free encyclopedia
অ্যাডিলেড (ইংরেজি: Adelaide) অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী শহর। জনসংখ্যার বিচারে এটি সমগ্র অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ৫ম বৃহত্তম শহর (সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন ও পার্থের পর)। ২০১৭ সালের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী অ্যাডিলেড শহরে ১৩ লক্ষেরও বেশি লোক বাস করে।[1] অ্যাডিলেড শহরে সাউথ অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ বাস করে; ফলে অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে এই রাজ্যের জনসংখ্যাই সর্বাধিক কেন্দ্রীভূত।
অ্যাডিলেড দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
এল্ডার পার্ক এবং অ্যাডিলেড ওভাল | |||||||||
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক | ৩৪°৫৫′৪৪″ দক্ষিণ ১৩৮°৩৬′৪″ পূর্ব | ||||||||
জনসংখ্যা | ১৩৩৩,৯২৭ (২০১৭)[1] (৫ম) | ||||||||
• জনঘনত্ব | ৪০৯.৪৬৯/কিমি২ (১,০৬০.৫২০/বর্গমাইল) | ||||||||
প্রতিষ্ঠার তারিখ | ২৮ ডিসেম্বর ১৮৩৬; ১৮৭ বছর আগে (1836-12-28) | ||||||||
আয়তন | ৩২৫৭.৭[2] | ||||||||
সময় অঞ্চল | ACST (ইউটিসি+৯:৩০) | ||||||||
• দিবালোক সংরক্ষণ সময় | ACDT (ইউটিসি+১০:৩০) | ||||||||
লর্ড মেয়র অফ অ্যাডিলেড (নগরপাল) | স্যান্ডি ভারশুর | ||||||||
অবস্থান | |||||||||
রাজ্য নির্বাচনী এলাকা | Adelaide | ||||||||
|
অ্যাডিলেড শহরটি ফ্লোরিও উপদ্বীপের উত্তরে, অ্যাডিলেড সমভূমির উপরে অবস্থিত। এর একপাশে ভারত মহাসাগরের সেন্ট ভিনসেন্ট উপসাগর, অপর পাশে নিম্ন উচ্চতার লফটি পর্বতমালা শহরটিকে ঘিরে রেখেছে। শহরটি সমুদ্র উপকূল থেকে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং উত্তর প্রান্তের গলার (Gawler) এলাকা থেকে দক্ষিণে সেলিকস সৈকত পর্যন্ত এটি প্রায় ৯৪ থেকে ১০৪ কিলোমিটার দূরত্ব ধরে প্রসারিত হয়েছে। নগরের মধ্য দিয়ে টরেন্স নদী প্রবাহিত হয়েছে।
অ্যাডিলেড শহরটিকে যুক্তরাজ্যের রাজা ৪র্থ উইলিয়ামের রাণী অ্যাডিলেডের (জাক্স-মাইনিঙেনে থেকে আগত) নামে নামকরণ করা হয়। শহরটিকে ১৮৩৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার একটি ব্রিটিশ প্রদেশের রাজধানী হিসেবে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়। অ্যাডিলেডের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন কর্নেল উইলিয়াম লাইট শহরটির নকশা করেন এবং টরেন্স নদীর কাছে শহরটির অবস্থান নির্বাচন করেন, যেখানে আদিবাসী কাউরনা জাতির লোকেরা বাস করত। লাইট শহরটিকে বর্গজালিকার মত করে সাজান, যাতে অনেক বৃক্ষশোভিত রাজপথ বা বুলেভার্ড এবং বড় বড় নাগরিক চত্বর ছিল এবং গোটা শহরটিকে অ্যাডিলেড পার্কল্যাণ্ড উদ্যানটি ঘিরে রেখেছিল। ইতিহাসের প্রথম পর্যায়ে অ্যাডিলেড ছিল একটি সমৃদ্ধ ও ধনবান শহর। ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এটি অস্ট্রেলিয়ার ৩য় বৃহত্তম শহর ছিল। অপরাধীদের উপনিবেশ নয়, এরকম গুটিকয়েক অস্ট্রেলীয় শহরের মধ্যে অ্যাডিলেড একটি।[8][9] অ্যাডিলেড শহরটি অন্যান্য শহরের তুলনায় ধর্মীয় স্বাধীনতা, রাজনৈতিক উদারপন্থার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা এবং নাগরিক স্বাধীনতার ব্যাপারগুলিতে এগিয়ে ছিল।[10] ১৯শ শতকের মধ্যভাগ থেকে এটি "গির্জার শহর" ("City of Churches") হিসেবে পরিচিত; এই তকমাটি অ্যাডিলেডের মানুষের ধর্মপরায়ণতা নয়, বরং তাদের ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে নির্দেশ করে।[11] অ্যাডিলেডের অধিবাসীদেরকে স্থানীয় ইংরেজি ভাষাতে "অ্যাডিলেডিয়ান" ("Adelaidean") নামে ডাকা হয়।[12][13]
অ্যাডিলেড সাউথ অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রশাসনিক ও আর্থ-বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এই ভবনগুলি শহরের কেন্দ্রে নর্থ টেরেস রাজপথ ও কিং উইলিয়াম সড়কের উপরে এবং মহানগর এলাকার বিভিন্ন অংশে অবস্থিত। বর্তমানে অ্যাডিলেড এর বহুসংখ্যক উৎসব, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, উঁচুমানের খাবার ও ওয়াইন, দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত, এবং এর বৃহৎ প্রতিরক্ষা ও শিল্পোৎপাদন খাতের জন্য পরিচিত। শহরটির জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত উচ্চ। এটি প্রায়ই বিশ্বের সেরা ১০টি বাসযোগ্য শহরের তালিকাতে স্থান পায়, যে তালিকাটি দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী প্রতি বছর ১৪০টি শহরের উপর প্রকাশ করে থাকে।[14][15][16][17][18] ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে প্রপার্টি কাউন্সিল অফ অস্ট্রেলিয়া অ্যাডিলেডকে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের মর্যাদা দান করে।[19][20][21] অ্যাডিলেডে ইলেকট্রনিক, মোটরগাড়ীর সরঞ্জাম, শিল্প যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক পদার্থ, বস্ত্র ও প্লাস্টিকের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অ্যাডিলেড বন্দরে জাহাজ নির্মাণের সুবিধাদি বিদ্যমান। অ্যাডিলেডের উত্তর-পূর্বাংশে ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) দূরে অবস্থিত বারোসা উপত্যকায় মদ উৎপাদন করা হয়। উল্লেখযোগ্য স্থান হিসেবে - বোটানিকাল গার্ডেন্স, গভর্নমেন্ট হাউজ, ন্যাচারেল হিস্ট্রি মিউজিয়াম (প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর)। ১৮৭৪ সালে অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৯১ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।