অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদ
From Wikipedia, the free encyclopedia
অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্ম (ইংরেজি: Anglo-Saxon paganism, অ্যাংলো-স্যাক্সন প্যাগানইজম ; অথবা Anglo-Saxon heathenism, অ্যাংলো-স্যাক্সন হিদনইজম) বলতে খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে, অর্থাৎ, আদি মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের প্রারম্ভিক পর্যায়ে অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতিগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাস এবং সেই যুগের ইংল্যান্ডে প্রচলিত প্রথা ও রীতিনীতিগুলিকে বোঝায়। এই ধর্মবিশ্বাসটি অ্যাংলো-স্যাক্সন প্রাক্-খ্রিস্টীয় ধর্ম (ইংরেজি: Anglo-Saxon pre-Christian religion, অ্যাংলো-স্যাক্সন প্রি-খ্রিশ্চান রিলিজিয়ন) অথবা অ্যাংলো-স্যাক্সন ঐতিহ্যবাহী ধর্ম (ইংরেজি: Anglo-Saxon traditional religion, অ্যাংলো-স্যাক্সন ট্র্যাডিশনাল রিলিজিয়ন) নামেও পরিচিত। জার্মানীয় পৌত্তলিক ধর্মের একটি প্রকারভেদ বহুবিধ আঞ্চলিক রূপভেদ সহ উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে প্রসার লাভ করেছিল। সেই ধর্মের বিভিন্ন ধরনের মতবিশ্বাস ও কাল্ট-প্রথা নিয়ে গড়ে উঠেছিল অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতির পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাস।
অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্মের উৎপত্তি মহাদেশীয় উত্তর ইউরোপের আদি লৌহযুগীয় ধর্ম থেকে। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে অ্যাংলো-স্যাক্সন অনুপ্রবেশের পর এই ধর্ম প্রবেশ করে ব্রিটেনে। এরপর খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে সেই দেশের অন্তর্গত রাজ্যগুলির খ্রিস্টীয়করণের পূর্বাবধি ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই ছিল অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্মের অনুগামী। ক্রমে এই ধর্মের মধ্যে মিশে গিয়েছিল কিছু লোককথাও। খ্রিস্টান অ্যাংলো-স্যাক্সনরাই প্রথম এই ধর্মটিকে নিন্দাসূচক প্যাগানিজম ও হিদনিজম (ইংরেজি: paganism ও heathenism; দু’টি শব্দেরই আক্ষরিক অর্থ পৌত্তলিকতা ধর্ম বা বিধর্মীদের ধর্মবিশ্বাস) শব্দদ্বয় দ্বারা অভিহিত করে। সমসাময়িক গবেষকেরা অনুমান করেন, এই পৌত্তলিক ধর্মের অনুগামীরা তাদের ধর্মকে কোনও নির্দিষ্ট নাম প্রদান করেনি। সেই জন্য এখনও এই ধর্মকে উক্ত দুই খ্রিস্টীয় পরিভাষায় চিহ্নিত করার যথার্থতা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। অ্যাংলো-স্যাক্সনদের পৌত্তলিক ধর্ম সম্পর্কে বর্তমানে যা কিছু জানা যায়, তার সূত্র-উপাদান প্রধানত তিনটি: বিড ও অল্ডহেম প্রমুখ খ্রিস্টান অ্যাংলো-স্যাক্সন রচিত সাহিত্যকর্ম, স্থাননাম-সংক্রান্ত প্রমাণ এবং কাল্ট-প্রথাগুলির প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ। এছাড়া নর্স ইত্যাদি প্রতিবেশী জাতিগোষ্ঠীগুলির অধিকতর সুপ্রত্যয়িত প্রাক্খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে তুলনার মাধ্যমেও অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্মের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু কিছু ধারণা পাওয়া গিয়েছে।
অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্ম ছিল একটি বহুদেববাদী ধর্মবিশ্বাস। এই ধর্মের কেন্দ্রে ছিল ése (একবচনে ós) নামে পরিচিত এক দেবমণ্ডলীতে বিশ্বাস। এই দেবদেবীদের মধ্যে সর্বপ্রধান ছিলেন সম্ভবত ওয়াডেন। এছাড়া থুনোর ও টিউ ছিলেন অন্য দুই গুরুত্বপূর্ণ দেবতা। সেই সঙ্গে অ্যাংলো-স্যাক্সনেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাসকারী এলফ, নেক ও ড্রাগন সহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক সত্ত্বাতেও বিশ্বাস করত। কাল্ট-প্রথাগুলির কেন্দ্রে থাকত বিভিন্ন ভক্তিমূলক আচার-অনুষ্ঠান এবং সেই ধরনের অনুষ্ঠানের অন্যতম ছিল দেবদেবীদের উদ্দেশ্যে দ্রব্যসামগ্রী উৎসর্গীকরণ ও পশুবলি। বাৎসরিক ধর্মীয় উৎসবেও বলিদানের আয়োজন করা হত। কাষ্ঠনির্মিত মন্দিরের অস্তিত্বেরও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। অবশ্য অন্যান্য কাল্ট-অনুষ্ঠান আয়োজিত হত খোলা আকাশের নিচেই। এই ধরনের অনুষ্ঠানের অঙ্গ ছিল কাল্ট-সংক্রান্ত গাছপালা ও বিভিন্ন বৃহদাকার প্রস্তরখণ্ড। পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাসী অ্যাংলো-স্যাক্সনদের পরকাল-সংক্রান্ত ধ্যানধারণার কথা বিশেষ জানা যায় না। তবে পরকাল-বিশ্বাস সম্ভবত তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রক্রিয়াগুলিকে প্রভাবিত করেছিল। অ্যাংলো-স্যাক্সন সমাজে মৃতদেহ সমাধিস্থ অথবা দাহ করা হত। সাধারণত নির্বাচিত কিছু সামগ্রী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যবহৃত হত। সম্ভবত জাদু ও ডাকিনীবিদ্যা-সংক্রান্ত ধারণা এবং শামানবাদের শ্রেণিভুক্ত করা যায় এমন কিছু উপাদানও এই ধর্মবিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্মের দেবদেবীদের নামগুলি ইংরেজি ভাষায় সপ্তাহের বারের নামগুলির উৎস। এই ধর্ম এবং এটির সঙ্গে সম্পৃক্ত পুরাণকথা সম্পর্কে যা জানা যায়, তা সাহিত্য ও আধুনিক পৌত্তলিকতাবাদ উভয়কেই প্রভাবিত করেছে।