ইন্দো-গ্রিক রাজ্য
From Wikipedia, the free encyclopedia
ইন্দো-গ্রিক রাজ্য বা গ্রিকো-ইন্ডিয়ান রাজ্য হল এক হেলেনীয় রাজ্য যার বিস্তৃতি ছিল বর্তমান আফগানিস্তানজুড়ে আর ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চল ( পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ও ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল) পর্যন্ত যা খ্রিষ্টপূর্ব সময়কালের শেষ দুই শতাব্দী সময়জুড়ে ত্রিশেরও অধিক সংখ্যক রাজার শাসনাধীন ছিল যারা প্রায়শই পরস্পরের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়তেন।
ইন্দো-গ্রিক রাজ্য | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
180 খ্রিস্টপূর্ব–খ্রিস্টাব্দ ১০ | |||||||||
ইন্দো-গ্রিক অঞ্চল আনু. ১০০ খ্রিস্টপূর্ব | |||||||||
রাজধানী | Alexandria in the Caucasus (Kapisi/Bagram) তক্ষশীরা (Sirkap) Chiniotis (Chiniot) সগল (শিয়ালকোট) Peukelaotis (Charsadda, Pushkalavati) | ||||||||
প্রচলিত ভাষা | গ্রিক (গ্রিক লিপি) পালি (খারোষ্ঠি লিপি) সংস্কৃত প্রাকৃত (ব্রাহ্মী লিপি) | ||||||||
ধর্ম | গ্রিক বহুঈশ্বরবাদ বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্ম জরাথ্রুস্ট্রিয়ান | ||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||
রাজা | |||||||||
• ১৮০–১৬০ খ্রিস্টপূর্ব | অ্যাপোলোডটাস I | ||||||||
• ২৫ খ্রিস্টপূর্ব – খ্রিস্টাব্দ ১০ | Strato II & Strato III | ||||||||
ইতিহাস | |||||||||
• প্রতিষ্ঠা | 180 খ্রিস্টপূর্ব | ||||||||
• বিলুপ্ত | খ্রিস্টাব্দ ১০ | ||||||||
আয়তন | |||||||||
১৫০ খ্রিস্টপূর্ব[1] | ১১,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪,২০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ |
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে গ্রিকো-বাকট্রিয়ান রাজা ডেমেট্রিয়াসের ভারতীয় উপমহাদেশে আক্রমণের মধ্যদিয়ে এই রাজ্যের গোড়াপত্তন ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশের গ্রিকরা পরবর্তীকালে বাকট্রিয়ায় (বর্তমানে আফগানিস্তান ও উজবেকিস্তানের মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চল) অবস্থানরত গ্রিকো-বাকট্রিয়ান ও বর্তমান ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সেসময় বসবাসকারী ইন্দো-গ্রিকদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়। ইন্দো-গ্রিক শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন মিনেনডার (মিলিন্দ)। তার রাজ্যের রাজধানী ছিল পাঞ্জাবের শকল এ (বর্তমান শিয়ালকোট)।
"ইন্দো-গ্রিক রাজ্য" বলতে সাধারণ অর্থে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন রাজবংশের শাসনাধীন রাষ্ট্রকে বোঝান হয় যেসব রাষ্ট্রের প্রথাগতভাবে কয়েকটি আঞ্চলিক রাজধানী ছিল যেমন তক্ষশীলা (বর্তমান পাকিস্তানের অধীনস্থ পাঞ্জাব), পুষ্কলবতী এবং শকল। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো সম্পর্কে সামান্যকিছু ধারণা পাওয়া যায় মাত্র; উদাহরণস্বরূপ টলেমির জিওগ্রাফিয়া ও পরবর্তী গ্রিক রাজাদের নামাবলী থেকে পাওয়া তথ্য ইঙ্গিত করে যে একসময় ইন্দো-গ্রিক রাজ্য বলয়ের দক্ষিণে থিওফিলাস এর আধিপত্য ও তার অধীন এক সত্রপ বা রাজ্যাংশ ছিল।
দুই শতাব্দীব্যাপী শাসনামলে, ইন্দো-গ্রিক রাজারা গ্রিক ভাষা ও প্রতীকের সাথে ভারতীয় ভাষা ও প্রতীকগুলোকে সংযুক্ত করেন যা তাদের মুদ্রাগুলোর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় এবং গ্রিক ও ভারতীয় বিভিন্ন কলাকৌশলের মধ্যে সমন্বয় ঘটান যা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। ইন্দো-গ্রিক সংস্কৃতির ব্যাপ্তি বর্তমান সময়েও যে বিস্তর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত গ্রিকো-বুদ্ধিস্ট শিল্পের মাধ্যমে তা সহজেই নজরে পড়ে। জাতিগত দিক থেকে ইন্দো-গ্রিকরা কিছু পর্যায়ে বর্ণসংকর ছিল। পলিবিয়াসের মতে প্রথম ইউথুডেমাস ছিলেন একজন মেগনেসীয় গ্রিক। পিতার দিক থেকে বিবেচনা করলে পুত্র হিসেবে ইন্দো-গ্রিক রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম ডেমেট্রিয়াসের জাতীয়তা ছিল গ্রিক। সেলুউকিড শাসক তৃতীয় এনটিওকাস (যিনি পারস্য বংশোদ্ভূত ছিলেন) এর কন্যার সাথে ডেমেট্রিয়াস বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তী সময়কার ইন্দো-গ্রিক শাসকদের জাতীয়তা খুব একটা স্পষ্ট নয়। যেমন, আর্টিমিডোরাস (খ্রিস্টপূর্ব ৮০ সাল) ইন্দো-সিথিয়ান বংশোদ্ভূত বলে মনে করা হয়, যদিও এনিয়ে বতর্ক রয়েছে।
মিনেনডারের মৃত্যুর পর তার রাজ্যের সিংহভাগ অঞ্চল বিভক্ত হয়ে যায় এবং ইন্দো-গ্রিক প্রভাব তুলনামূলকভাবে ক্ষীণ হয়ে পড়ে। রবি নদীর উত্তরে নতুন ছোট-বড় বহু রাজ্যের উত্থানের পাশাপাশি এসব রাজ্যে নতুন মুদ্রারও প্রচলন শুরু হয় যেসব মুদ্রায় যুদ্ধবিজয়ের চিহ্ন অঙ্কিত হয়েছিল। এসব রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হল অযোধ্যা, অর্জুনযান, অদম্বর। অযোধ্যা ও অর্জুনযান এই দুই রাজ্যই যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে বলা হয়। দত্ত রাজ্য ও মিত্র রাজ্য এই দুই মথুরা রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ১০ম খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইন্দো-সাইথিয়ানদের আক্রমণের পর ইন্দো-গ্রিকদের বিলুপ্তি ঘটলেও আত্মগোপনে থাকা কিছুসংখ্যক গ্রিক পরবর্তী ইন্দো-পার্থিয়ান আর কুশান শাসকদের শাসনামলে বহু শতাব্দী পর্যন্ত বসবাস করেছিল।