শ্বেতকণিকা
দেহের প্রতিরক্ষা তন্ত্রের এক ধরনের কোষ / From Wikipedia, the free encyclopedia
শ্বেত কণিকা (ইংরেজি: white blood cells) হলো অনাক্রম্যতন্ত্রের কোষ যেগুলো সংক্রামক রোগ ও বাহ্যিক আক্রমণকারী বস্তু থেকে দেহকে রক্ষার কাজে জড়িত। চিকিৎসা পরিভাষায় এগুলো লিউকোসাইট নামেও পরিচিত। শ্বেতকণিকাকে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ভ্রাম্যমান একক বলা হয়। তারা আংশিক অস্থিমজ্জা (দানাদার কোষগুলো ও মনোসাইটসমূহ ও কিছু লিম্ফোসাইট) ও আংশিক লসিকাগ্রন্থির টিসুতে (লিম্ফোসাইট ও প্লাজমা কোষ) গঠিত হয়। গঠনের পর, দেহের যে-সকল স্থানে প্রয়োজন হয় সেখানে রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়, বিশেষ করে গুরুতর প্রদাহ ও সংক্রমণের স্থানে সংক্রমণকারী বস্তুর বিরুদ্ধে খুব দ্রুত ও শক্তিশালী সাড়া প্রদানে এদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শ্বেতকণিকার তিনটি প্রধান উপধরন রয়েছে; দানাদার কোষসমূহ, লিম্ফোসাইট (লসিকা কোষ) ও মনোসাইট (এককেন্দ্রক কোষ)।[1] সকল শ্বেতকণিকা অস্থিমজ্জায় হিমাটোপোয়েটিক স্টেম সেল বা রক্তোৎপাদী মাতৃকোষ নামক মাল্টিপটেন্ট বা বহুজনিকোষসমূহ থেকে উদ্ভূত হয়।[2] রক্তোৎপাদী মাতৃকোষ থেকে দুটি বংশানুক্রমিক ধারায় শ্বেতকণিকা উৎপাদিত হয় তা হলো মায়েলোসাইটিক বা মজ্জাকোষগত বংশ ও লিম্ফোসাইটিক বা লসিকাকোষগত বংশ। দানাদার কোষ ও মনোসাইট বা এককেন্দ্রক কোষসমূহ মায়েলোসাইটিক বংশ থেকে উদ্ভূত, অন্যদিকে লিম্ফোসাইটসমূহ লিম্ফোসাইটিক বংশ থেকে উদ্ভূত।[3]
শ্বেত রক্তকণিকা বা শ্বেতকণিকা | |
---|---|
বিস্তারিত | |
পূর্বভ্রূণ | রক্তোৎপাদী মাতৃকোষ |
তন্ত্র | অনাক্রম্যতন্ত্র |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | লিউকোসাইট |
আদ্যক্ষরা | WBC |
মে-এসএইচ | D007962 |
টিএইচ | H2.00.04.1.02001 |
এফএমএ | FMA:62852 |
মাইক্রো শারীরস্থান পরিভাষা |
শ্বেতকণিকাসমূহ রক্ত ও লসিকাতন্ত্রসহ সারা দেহেই উপস্থিত থাকে।[4] সকল শ্বেতকণিকার নিউক্লিয়াস থাকে,যা তাদের অন্যান্য রক্তকণিকা যেমন, নিউক্লিয়াস বিহীন লোহিত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা থেকে পৃথক করে। শ্বেতকণিকার ধরনগুলো হলো দানাদার কোষ (নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল, বেসোফিল) ও অদানাদার কোষ (মনোসাইট ও লিম্ফোসাইট)।[5] মায়েলয়েড কোষসমূহ (মায়েলোসাইট) হলো নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল, বেসোফিল, মাস্ট কোষ বা পৃথুল কোষ ও মনোসাইট।[6] মনোসাইটসমূহকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় ডেনড্রিটিক কোষ ও ম্যাক্রোফেজ। নিউট্রোফিল ও মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। লিম্ফোয়েড কোষসমূহ (লিম্ফোসাইট) হলো টি কোষ ( এটি আবার সাহায্যকারী টি কোষ, স্মৃতি টি কোষ, কোষ-বিষাক্তকারক টি কোষ উপভাগে বিভক্ত), বি কোষ (এটি প্লাজমা কোষ ও স্মৃতি বি কোষ নামক দুটি উপভাগে বিভক্ত) এবং প্রাকৃতিক মারণ কোষ। ঐতিহাসিকভাবে, শ্বেতকণিকাকে তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিভক্ত (দানাদার কোষ ও অদানাদার কোষ) করা হতো, কিন্তু বর্তমানে এই শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি খুব কম ব্যবহৃত হয়। অস্থিমজ্জাতে উৎপাদিত হয়ে, শ্বেতকণিকা দেহকে সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করে। সংক্রমণ বা প্রদাহ ঘটলে রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। অল্পকিছু ক্ষেত্রে, শ্বেতকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি কিছু রক্তের ক্যান্সার বা অস্থিমজ্জার রোগ কে নির্দেশ করে।
রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যার ওঠানামা প্রায়শই কিছু রোগকে নির্দেশ করে, তাই শ্বেতকণিকা গণনা পূর্ণাঙ্গ রক্ত গণনার একটি অংশ। শ্বেতকণিকার স্বাভাবিক সংখ্যা হলো ৪ × ১০৯/L থেকে ১.১ × ১০১০/L। যুক্তরাষ্ট্রে এটি প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে ৪,০০০-১১,০০০ হিসেবে লেখা হয়।[7] একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মোট রক্ত আয়তনের প্রায় ১% হলো শ্বেতকণিকা,[8] যা লোহিত রক্তকণিকার (৪০-৪৫%) তুলনায় অনেক কম। তবে, রক্তের এই ১% স্বাস্থ্য রক্ষায় বড়ো পার্থক্য তৈরি করে দেয়, এর উপরে দেহের অনাক্রম্যতা বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্ভরশীল। শ্বেতকণিকার সংখ্যা স্বাভাবিক ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করলে তাকে লিউকোসাইটোসিস (শ্বেতিকাধিক্য) বলে। যখন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার স্বাভাবিক সাড়াদান হিসেবে ঘটে, তখন এটিকে স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করা হয় যা প্রায়শই ঘটে থাকে। তবে, যদি ক্যান্সার বা অটোইমিউনিটির জন্য ঘটে থাকে, তাহলে এটি অস্বাভাবিক বলা হয়। কোষ সংখ্যা নিম্নসীমার নিচে চলে গেলে তাকে লিউকোপিনিয়া (শ্বেতিকাস্বল্পতা) বলে। অনাক্রম্যতন্ত্র দুর্বল হলে এমন হয়।