শাক্তধর্মের ইতিহাস
শাক্ত সম্প্রদায়ের ইতিহাসের দিক / From Wikipedia, the free encyclopedia
হিন্দুধর্মের মহাশক্তি বা দেবীউপাসনা-কেন্দ্রিক শাক্ত সম্প্রদায়ের শিকড় ভারতের প্রাগৈতিহাসিক যুগেই গভীরভাবে প্রথিত হয়েছিল। যতদূর জানা যায়, আজ থেকে ২০,০০০ বছরেরও আগে ভারতের প্রাচীন প্রস্তরযুগীয় জনবসতিগুলিতে দেবীপূজা প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। সিন্ধু সভ্যতার যুগে দেবী কাল্টের পরিমার্জনা ঘটে। এরপর বৈদিক যুগে দেবী-উপাসনার ধারাটি কিছুটা ম্লান হলেও উত্তরকালের সংস্কৃত ঐতিহ্যে সেই প্রথার পুনরুত্থান ও প্রসারলাভ দেখে অনুমান করা হয় যে, বহু উপায়েই "হিন্দু ঐতিহ্যের ইতিহাসকে নারীশক্তির এক পুনরুত্থান হিসেবে দেখা যেতে পারে"।[1]
আধুনিক যুগে প্রচলিত শাক্তধর্মের মূল নিহিত রয়েছে বৈদিক সাহিত্যের মধ্যে। হিন্দু মহাকাব্য দু’টির (রামায়ণ ও মহাভারত) গঠনাত্মক যুগে এই মতবাদ আরও বিকাশলাভ করে অবশেষে গুপ্ত যুগে পূর্ণতা লাভ করে। এর পরেও ভারতে শক্তিবাদের সম্প্রসারণ ও বিবর্তন অব্যাহত থাকে।[2] শাক্ত সম্প্রদায়ের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ চণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্ খ্রিস্টীয় পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ শতাব্দীর রচনা।[3] এই গ্রন্থেই প্রথম "বিভিন্ন দেবী-সংক্রান্ত পৌরাণিক, কাল্ট-সংক্রান্ত ও ধর্মতাত্ত্বিক উপাদানগুলিকে এমনভাবে একত্রিত করা হয়েছে 'দেবী-প্রথার স্ফটিকীকরণ' বলা হয়।"[4] ললিতাসহস্রনাম স্তোত্র, [5] দেবীগীতা,[6] আদি শংকর রচিত সৌন্দর্যলহরী[7] ও তন্ত্র [8] এই মতবাদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যের অন্যতম।
শাক্তধর্মের সাম্প্রতিক বিবর্তনগুলির নিদর্শন দেশজননী রূপে ভারতমাতার প্রতীকতত্ত্বের উদ্ভব, হিন্দু সাধ্বী ও স্ত্রীগুরুগণের ক্রমশ সংখ্যাবৃদ্ধি[9] এবং ১৯৭৫ সালে জয় সন্তোষী মা ছবিটির মুক্তিলাভের পর "নতুন" দেবী সন্তোষী মাতার অত্যদ্ভুত উদ্ভব ও অতিদ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ।[10] জনসনের মতে:
"১০,০০০ বছর আগের মতো আজও দেবীর প্রতিকৃতি ভারতের সর্বত্র চোখে পড়ে। এই প্রতিকৃতি আপনি দেখতে পাবেন ট্রাকের গায়ে অঙ্কিত অবস্থায়, ট্যাক্সির গায়ে আঠা দিয়ে সাঁটা অবস্থায়, দোকানের দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টারের আকারে। দেবীর রঙিন ছবি হিন্দুর বাড়িতে প্রায়শই খুব সহজে চোখে পড়ে। সাধারণত সেই সব ছবি দেওয়ালের এত উঁচুতে টাঙানো থাকে যে আপনাকে ঘাড় পিছনে কাত করে সেদিকে তাকাতে হয় আর আপনার দৃষ্টি পড়ে দেবীর পদদ্বয়ের দিকে। […] ভারতে দেবীপূজা কোনও ‘কাল্ট’ নয়, বরং একটি ধর্ম, […] অসাধারণ আধ্যাত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে পরিপক্ব এক প্রথা। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন জগজ্জননীর প্রতি আন্তরিক ব্যাকুলতা অনুভব করেন।"[11]