মারু-গুর্জর স্থাপত্য
উত্তর ভারতীয় মন্দির স্থাপত্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
মারু-গুর্জর স্থাপত্য বা সোলাঙ্কি শৈলী,[1] হল পশ্চিম ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যের এক শৈলী। এটি ১১শ থেকে ১৩শ শতকের মধ্যে গুজরাট এবং রাজস্থানে চৌলুক্য রাজবংশের অধীনে (যাকে সোলাঙ্কি রাজবংশও বলা হয়) তৈরি হয়েছিল।[2] যদিও হিন্দু মন্দির স্থাপত্যে এটি একটি আঞ্চলিক শৈলী হিসাবে উদ্ভূত হয়েছিল। কিন্তু এটি বিশেষ করে জৈন মন্দিরগুলিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং প্রধানত জৈন পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথমে ভারত জুড়ে, তারপরে বিশ্বব্যাপী প্রবাসী সম্প্রদায়গুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।[3]
অনেকগুলি মারু-গুর্জর স্থাপত্য শৈলীকে বহিরাংশ থেকে দেখলে, এটি সেই সময়ের অন্যান্য উত্তর ভারতীয় মন্দির শৈলী থেকে আলাদা। "মন্দিরগুলির বাইরের দেয়াল ক্রমবর্ধমান সংখ্যক অভিক্ষেপ এবং খুপরি দ্বারা গঠিত হয়েছে, যথাযোগ্য স্থানে তীক্ষ্ণভাবে খোদাই করা মূর্তিগুলি স্থান পেয়েছে। এগুলি সাধারণত ছাঁচের নিম্ন বন্ধনী থেকে শুরু করে একটির ওপর আর একটি এইভাবে অবস্থান করছে। পরবর্তী কাজগুলিতে ঘোড়সওয়ার, হাতি এবং কীর্ত্তিমুখের (মহিমান্বিত মুখ) সারি অবিচ্ছিন্ন রেখায় দেখা যায়। উপরিতলের খুব কম অংশই অভূষিত রাখা হয়েছে।" প্রধান শিখর স্তম্ভের সঙ্গে সাধারণত অনেকগুলি সহায়ক উরুশৃঙ্গ ফলক থাকে এবং বড় মন্দিরগুলিতে বারান্দা সহ দুটি ছোট প্রবেশপথ দেখা যায়।[4]
অভ্যন্তরীণ অংশ আরও অনেক বেশি সৌখিনভাবে সজ্জিত, বেশিরভাগ পৃষ্ঠতল বিস্তৃতভাবে খোদাই করা। বিশেষ করে, জৈন মন্দিরগুলিতে অভ্যন্তরে প্রায়শই একটি অত্যন্ত জটিল রোসেট নকশার (বৃত্তাকার বিন্যাস) সাথে খোদাই করা ছোট নিচু গম্বুজ থাকে। এর আরেকটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল স্তম্ভের মধ্যে "উড়ন্ত" খিলান-সদৃশ উপাদান, যেটি ওপরের অনুভূমিক কড়িকাঠের কেন্দ্রকে স্পর্শ করে। এটিতেও বিশদভাবে খোদাই কাজ করা হয়। এগুলোর কাঠামোগতভাবে উপযোগিতা নেই এবং এটি সম্পূর্ণরূপে আলংকারিক। এই শৈলীতে বড় স্তম্ভযুক্ত কক্ষের বিকাশ হয়েছিল, যার পাশের অনেকগুলি দিক খোলা। জৈন মন্দিরগুলিতে প্রায়শই মন্দিরের রাস্তার মূল অক্ষের দিকে ক্রমানুসারে একটি বন্ধ এবং দুটি স্তম্ভযুক্ত কক্ষ দেখা যায়।[5]
১৩শ শতকে এলাকাটি মুসলিম দিল্লি সালতানাতের হাতে চলে যাওয়ার কারণে হিন্দু মন্দিরগুলিতে শৈলীর ব্যবহার করা বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু, ভারতীয় মন্দির শৈলীর জন্য অস্বাভাবিক হলেও, এটি জৈনরা সেখানে এবং অন্যত্র ব্যবহার করতে থাকেন। ১৫শ শতকে এর কিছু উল্লেখযোগ্য "পুনরুজ্জীবন" ঘটে।[6] তারপর থেকে জৈন এবং কিছু হিন্দু মন্দিরে এর ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে এবং ২০শ শতক থেকে ভারতের বাইরে নির্মিত মন্দিরগুলিতে এই শৈলী ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে উদাহরণ হিসেবে রয়েছে হিন্দু স্বামীনারায়ণ ঐতিহ্য দ্বারা নির্মিত অনেক বড় মন্দির, লণ্ডনের নিসডেন মন্দির (১৯৯৫) ও জৈন প্রবাসীদের দ্বারা নির্মিত ছোট মন্দিরগুলি, যেমন বেলজিয়ামের এন্টওয়ার্প-এর জৈন মন্দির, ইংল্যাণ্ডের পটারস বার ও লেস্টারের মন্দিরগুলি।[7]